সত্যিকারের বউ

সত্যিকারের বউ

এই উঠেন,নামাজে যাবেন না? অধরা,আমার মাথায় পরম যত্নে হাত ভুলিয়ে দিতে দিতে বললো।আর আমিও চোখ বুঁঝে থেকে তার হাতের স্পর্ষটা উপভোগ করতে লাগলাম।

:-কি হলো?চোখ বুঝে আছেন কেন?নামাজে যাবেন না?
:-হুমম।(আমি)
:-তাহলে শুয়ে আছেন কেন?
:-হুমম।
:-তাড়াতাড়ি উঠেন।আজান দিতেছে।

এই বলে অধরা আমার কপালে একটা চুমু একে দিলো। আর আমি ও শুয়ে না থেকে উঠে পড়লাম। কারণ,ও জানে যে আমি এতক্ষন ধরে ওর ঠোঠের স্পর্ষ পাওয়ার জন্যই শুয়ে আছি।

:-যান তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিয়ে ওযু করে আসেন।(অধরা)
:-হুমম,যাচ্ছি।তার আগে একটু এইবলে আমি ওকে জড়িয়ে ধরে ওর কপালে একটা চুমু একে দিলাম। অমনি অধরা আমার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে…

:-এই,আপনি কি নামাজে যাবেন না?
:-হুমম,যাবো তো।
:-তাহলে যান তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে ওযু করে আসেন।
:-হুমম।

এই বলে আমি ফ্রেশ হতে চলে আসলাম। ও,আপনাদের পরিচয়টা দিয়ে দিই। আমি রাজু।মা-বাবার একমাত্র সন্তান।পড়া-লেখা শেষ করে একটা সরকারি প্রতিষ্টানে চাকরি করি। বিয়ে করেছি,প্রায় দুইমাস তো হবেই।  এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করার নিয়ত আমার ছিলোনা। বেশ কয়েকদিন ধরে মা-বাবা বিয়ে কর, বিয়ে কর,করে করে আমার মাথা খেয়ে নিচ্ছিলো।

তাই আমি মা-বাবার খেদমত ও সংসার পরিচালনার কথা ভেবে বিয়ের জন্য মা-বাবাকে বিয়ের জন্য হ্যা বলে দিই,যেহেতু মা-বাবার বয়স হয়েছে। আমি মা-বাবাকে হ্যা বলার পরদিন থেকে মা-বাবা মেয়ে দেখার কাজে লেগে যায়। যেহেতু আমার পছন্দের মত কেউ ছিলো না। যাইহোক অবশেষে মা-বাবার পছন্দের মেয়েকেই আমায় বিয়ে করতে হয়। আর সে মেয়ে আর কেউ নয়,অধরা। মেয়েটা যেমন দেখতে সুন্দরী তেমনি মায়াবীও। আচ্ছা ওসব কথা পরেও বলা যাবে।এখন আমি ফ্রেশ হয়ে ওযু করে নিই,জামাত ধরতে হবে,কি বলেন আপনারা? যাইহোক আমি ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখি অধরা নামায পড়তেছে। তাই আমিও আর কিছু না ভেবে মসজিদে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে লাগলাম। আমি প্রস্তুত হতে হতে অধরার সুন্নত দুই রাকাত নামাজ শেষ হলে….

:-কি হলো দাড়িয়ে আছেন কেন?তাড়তাড়ি মসজিদের দিকে যান(অধরা)

:-যাবো তো।তার আগে একটু এদিকে আসো। অতঃপর অধরা আমার কাছে আসলে,আমি আমার দুহাত ওর কাধে রেখে ওর কপালে একটা চুমু একে দিলাম।

:-এবার হলোতো।যান,তাড়াতাড়ি।জামাত ধরতে হবে না?

:-হুমম।

এই বলে আমি মসজিদের দিকে পা বাড়ালাম। আপনারা হয়তো ভাবছেন,আমি অধরাকে ডেকে ওর কপালে চুমু খেলাম।অথচ ও কোন কিছুই বললো না।কারণ কি? তাহলে শুনুন, ওর কপালে আমি চুমুটা দিয়ে নবীজি (সাঃ) এর সুন্নাত পালন করেছি।কারণ,নবীজি (সাঃ) প্রত্যেক ওয়াক্তে নামাজে যাওয়ার আগে তিনি তার বিবির কপালে একটা করে চুমু খেতেন। আর তাই আমিও প্রত্যক ওয়াক্ত নামাজে যাওয়ার আগে আমার বউয়ের কপালে একটা করে চুমু খাই। আবশ্যক,আমি এটা জানতাম না।অধরাই আমাকে বলেছে।

যাইহোক,নামাজ শেষ করে আমি বাসার দিকে রওয়ানা দিলাম। এখনও সকাল হয়নি। তাই আমি বাসায় গিয়ে,আরো একটা ঘুম দেওয়ার কথা ভাবতে ভাবতে বাসার সামনে চলে আসলাম। তখনই আমার কানে ভেসে আসলো কুরআন তেলওয়াতের সুমধুর সুর। আমার আর বুঝতে বাকি রইল না যে,এটা অধরার কন্ঠের তেলওয়াত। ও প্রত্যকদিন নামাজের পরই কুরআন তেলওয়াত করে। আর আমি? আমি খাটে শুয়ে শুয়ে ওর কুরআন তেলওয়াতের সুর টা শুনি। আবশ্যক আমিও মাঝে মাঝে কুরআন তেলওয়াত করি। দাড়িয়ে এসব ভাবছি কেন? যাই ভেতরে ডুকি।

আমি ভেতরে ডুকে সোজা খাটে গিয়ে শুয়ে রইলাম। অধরা আমার দিকে একনজর তাকিয়ে আবার কুরআন তেলওয়াতে মনোযোগ দিলো। আমি সত্যিই খুব ভাগ্যবান। তা না হলে আমার কপালে এমন একটা বউ ঝুটত না। সত্যি বলতে কি,আমি আগে অতিরিক্ত নামাজ মিস দিতাম। কিন্তু এখন আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করি,তাও আবার জামাতের সহীত। আর এটার জন্য সবচেয়ে বেশী অবধান,অধরার। মেয়েটা আমার জীবনে আসার পর থেকেই আমার জীবনটাকে সাজিয়ে তুলেছে। সত্যিই মেয়েটার সবকিছুই প্রশংশনীয়। মা-বাবার খেদমত,সংসার পরিচালনা সবকিছুই এখন অধরাকে করতে হয়। মা-বাবাও খুশি,এমন একটা মেয়েকে ছেলের বউ হিসেবে পেয়ে। আমি এসব ভাবতেছি। তখনই অধরা এসে আমার পাশে বসেই বললো,

:-অফিসতো এক সপ্তাহের ছুটি,তাইনা?(অধরা)

:-হুমম।কেন?(আমি)

:-আব্বু-আম্মু বলেছে আমরা যেন,দুইদিনের জন্য হলেও আমার বাবার বাড়ি থেকে ঘুরে আসি।আবশ্যক আমি যাবো না বলে না করেছি।কিন্তু উনি বলেছেন যেতেই হবে।এখন আপনি কি বলেন?

:-আমি আর কি বলবো।যেখানে আব্বুই যেতে বলে দিয়েছি।

:-কিন্তু আমরা যদি দুদিনের জন্য যাই,তাহলে উনাদের দেখাশোনা করবে কে?

:-তুমি এতটা ঘাবড়িও না।আম্মুই সব সামলে নিবে।

:-তারপরেও তো।

:-এটা নিয়ে তোমার চিন্তা করতে হবেনা।

:-আচ্ছা।

এই বলে অধরা আমার পাশ থেকে উঠে গেলো।এখন গিয়ে আব্বু-আম্মুর জন্য নাস্তা তৈরি করে রাখবে।যেন,আব্বু মসজিদ থেকে আসলেই নাস্তা দিতে পারে। সত্যিই মেয়েটার কোন তুলনাই হয় না। দেখলেন তো আমার মা-বাবার জন্য মেয়েটা কতটা ভাবে। আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি,আমাকে এমন একটা বউ দেওয়ার জন্য। আর এটাও দোয়া করি,আপনারাও যেন আমার মত একটা বউ পান।

সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত