মেয়েটির কথা

মেয়েটির কথা

বাড়িওয়ালাকে অনেক অনুরোধ করা সত্বেও থাকতে দিলেন না। মেজাজ অনেক খারাপ হয়ে গেল। তাতো হওয়ারি কথা। অনেক খোঁজাখুঁজির পর আল্লাহর দয়ায় সেই এলাকায় আর একটা বাসা পেলাম। তিন তলা বাড়ি। ছাদের নিচে তিন রুম বাথরুম আর কিচেনের সমন্বয়ে বাসাটা আমার। বাড়িওয়ালা মনেহয় বেশ শৌখিন লোক। সামনে বিরাট বর লন। একদিকে বাগান সেখানে আবার দোলনা। অনেক এলাহি ব্যাপার।

আজকেই উঠলাম। আমি একা মানুষ কিভাবে সামলাই। তবে বলতে গেলে দুজন কিন্তু তা ধরা না ধরা একি ব্যাপার। সে কি কাজ করবে বরং ওকে আমার সামলাতে হচ্ছে। মেয়েটা ঠিক তার মায়ের মত হয়েছে, চঞ্চল আর খুব দুষ্টু। আমি কাজ করতে হিমশিম খাচ্ছি আর আমার মেয়েটা খেলতে সময় পাচ্ছে না। আম্মু পরে যাবে তো? বাবাই আমি খেলছি তো। বারবার বারণ করা সত্বেও আমার পায়ের কাছে ঘুর ঘুর করছে। শেষএ ওকে বাচাতে গিয়ে আমি ভুমিতে চিতপটাং হয়ে গেলাম। তাই দেখে মেয়ের কি হাসি। আরে হাসিটাও তো ওর মায়ের মত হয়েছে। কিন্তু আমার মেয়ে মিতুর হাসির সাথে আর একটা হাসির শব্দ শুনে দরজার দিকে চোখ গেল। রুপবতি একটা মেয়ে দারিয়ে আছে। বেশি ফর্শা না তবে গায়ের রং চেহারার সাথে মানিয়ে গেছে।

আরে আপনি কেমন মানুষ হে। দেখছেন বাচ্চা মেয়েটা কেমন কাজ করছে আর আপনি? মেয়েটি চোখে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। আরে কি হল, হয় এই পিচ্চিকে সামলান নয়ত আমাকে হেল্প করুন? মেয়েটা চলে গেল। আরে সর্বনাশ কি বলে ফেললাম। এই মেয়ে যদি বাড়িওয়ালার কিছু হয় তো। তাহলে আজকেই আমাকে আবার বাসা ছারতে হবে। মিতু (আমার মেয়ে) এসব তোর জন্যে হয়েছে? মামুনি… মামুনি! কিসের মামুনি? আমার কাজ বাড়ালে খালি। বাবাই মামুনি মামুনি আরে বাবা কোথায় তোর মামুনি? মেয়ে ইশারা করে দরজার দিকে দেখিয়ে দিল। দেখলা সেই মেয়েটা আবার আসছে। এই যে আপনি মেয়েটাকে দেখেন। কেন? আ দেখুন যা বলছি করেন আর বেশি কেন কেন করবেন না। মেয়েটি ওরনা কোমরে পেচিয়ে কাজে নেমে পরল। তার ঠিক এক ঘন্টা পর আমার বাসা, বাসা বলে মনে হল। আসলেই মেয়েদের হাতে যাদু থাকে। কেমন করে পুরা ঘর ডাইনিং সাজিয়ে ফেললো।

আচ্ছা আপনি কে? আপনাকে ঠিক চিনলাম না! আ মেয়েটি আমার দিকে ভুরু কুচকে তাকিয়ে আছে। রুপবতি মেয়েরা সচারাচর এই কাজ টা করে না। যারা রাগি তারা এই কাজ করে। মনে হয় এই মেয়েটাও রাগি। এতগুলো কাজ করিয়ে নিলেন আর এখন বলছেন কে আমি! না, আমি ভাবলাম আপনি হয়ত এই বাসার কাজের লোক। কি! আমাকে দেখে কি আপনার তাই মনে হল? না হওয়ার তো কিছু নেই। তাছারা পরিচয় না দিলে কিভাবে চিনব? আমি অরিন। এই বাসার মেয়ে। আর আমি আপনার ছোট তাই তুমি করে বলবেন। হুম, ভালো। কি.. ইইই বাড়িওয়ালার মেয়ে। একি করলাম তার হাতেই আমি কিনা ঘর সাফ করে নিলাম। কিন্তু মুখের ভাব গম্ভির করে বলল, আচ্ছা এখন তুমি আসতে পার। মেয়েটা রেগে বের হয়ে গেল। যাক বাবা পরে কি হবে দেখা যাবে।

মেয়েটির কথা, আচ্ছা কেমন লোক উনি। এত্ত গুলা কাজ করে দিলাম। একবার তো অত্যন্ত ধন্যবাদ জানাবে। কিন্তু কি করল, মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিল। আচ্ছা বেয়াদপ লোক।আর বাবা কি না একেই বাসা ভারা দিল। বাসা ভারা নিয়ে যেদিন আসল ভাব দেখে তো মনে হল খুব ভাল মানুষ। ভাজা মাছ উল্টে খেতে পারে না। তবে উনার মেয়েটা অনেক কিউট। কি কথা বলে। একদম পাকনা বুড়ি। সেদিন তো একেবারে বাবার কোলে এসে চরল। পরেরদিন ছাদে গেলাম। ফুলের গাছগুলা এতদিনে অবহেলাভরে পরে ছিল। খেয়াল করি নি। মিতু হঠাৎ কোথা থেকে এসে আমার ফুলের গাছের পাতা ছিরে খেতে লাগল।

“আরে কি কর? পাতা কেউ খায় নাকি।” হাত থেকে পাতা কেড়ে নিলাম। কেমন মানুষ আপনি? মেয়েটাকে ক্ষুধা লাগছে। আর আপনি তাকে খেতে দেননি! না, খেয়েছে তো। (উনি) তাহলে পাতা খায় কেন? কেন খেলে কি সমস্যা । তাছাড়া আমাদের আদিম ভাইয়েরা তো পাতাই খেত। কি মিতু ঠিক না? হ্যা, বাবাই ঠিক তো, আমি বইয়ে পলেছি। এই মেয়েও হয়েছে আপনার মত। আ ধন্যবাদ, (উনি) কিসের জন্যে? আ কালকের জন্যে। আর আমি মেঘ। থাক লাগবে না। আ নিচে চলে আসলাম। এখন আসছে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে। বেয়াদপ লোক কোথাকার। আবার নামের কি বাহার মেঘ। অরিন মেঘ। মেঘ অরিন। আরে আজব আমি এসব ভাবছি কেন? আমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেল ধুর।

আমার কথা, অরিন মেয়েটা অনেক সুন্দর গান করতে পারে। আজকে যখন ছাদে উঠলাম বাপ মেয়ে মিলে চুরি করে শুনে ফেলছি। মেয়েটা রাগি খুব। তবে মিতুকে ভালই আদর করে। রুমে বসে আছি মতু পরছে, পা নাচিয়ে। ঠিক যেন মিরা। মিতুর চোখে ভারি চসমা। মায়ের মত হয়েছে মেয়েটা। এমন সময় অরিন আসল। মিতু মামুনি কি করছ? মামুনি আমি সুকুমার রায় পলছি। অরিন আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃস্টিতে তাকাল। আমি ইশারায় বুঝেইয়ে দিলাম। হ্যা, ওই রকমি। মায়ের মেয়ে বলে কথা। খুব বই পড়ার নেশা। ওর মায়েরও ছিল।” কিন্তু মিতুর মা কোথায়?” নেই, মন খারাপ করে জবাব দিলাম।” ও সরি,” আমি মনে হয় আপনাকে হার্ট করে ফেললাম। নো, ইটস ওকে। তবে মিরা এখন আছে আমাদের সাথে। আমার মেয়ের মাঝে। আমার মাঝে। ও উনার নাম বুঝি মিরা। খুব সুন্দর নাম তো। ধন্যবাদ।

আচ্ছা আমি যদি এখানে আসি তাহলে কি আপনি কিছু মনে করবেন? না, কি বল আসিও। হয়ত মিতুও একাকিত্ব থেকে বের হয়ে আসবে। আমার মেয়েটা বড় চাপা স্বভাবের। এমনিতে ঠিক। এর পর থেকে আমি অফিসে গেলে মিতু অরিনের কাছে থাকে। আমার মেয়ে দল পাল্টে অরিনের কাছে ভিরছে। সারাদিন মামুনি মামুনি। আমিও চিন্তা মুক্ত হয়ে আছি। অত্যন্ত এখন শান্তিময় জিবন পার করছি তো। কিন্তু কিছুদিন হল অরিনকে কেন জানি ভাল লাগতে শুরু করছে। মেয়েটা এতদিনে আমাদের মায়ার বন্ধনে জরিয়ে গেলছে। আচ্ছা আমি কি ভুল কিছু করছি। মিরাকে ঠাকানো হচ্ছে না তো। অফিস থেকে এসে দেখলাম মা। মায়ের কোলে মিতু বসে আছে। কতদিন পর দেখলাম মাকে। বেশ শুকিয়ে গেছে।। আমি ফ্রেশ হয়ে এসে বসলাম। মা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কেমন আছ মা? এইত ভাল। তবে বেশি ভাল না বাবা। মেঘ আমাদের ভুলে এতদিন থাকতে পারলি।

মেঘ তোর মেয়েটা অনেক লক্ষি রে। আর কি রকম পাকনা পাকনা কথা বলে।মা, এখন মায়ের মেয়েকে লক্ষি বলে কি হবে বল। যাকে লক্ষি বলার তাকে তোমরা বলনি।বরং তারিয়ে দিছিলে। আমরা ভুল করেছিলাম বাবা। তাইতো আমার ছেলে আজকে চার বছর ঘর ছাড়া। মা, যে মেয়ে আমার জন্যে এক কাপরে ঘর ছারছিল তাকে কিভাবে আমি ত্যাগ করতাম বল। আমি ভাবতাম আমার বাবা মা অন্যদের মত না। মিরাকে আমি বলছিলাম তোমরা আমাকে মেনে নিবে। কিন্তু কি করলে। যান মা, মিরা মারা জাওয়ার আগ্মুহুর্ত পর্যন্ত বলে গেছিল, মেঘ আমার জন্যে তুমি আজকে বাবা মায়ের জন্যে ঘর ছাড়া। জানি আমি কখন তাদের কাছে ক্ষমা চাইতে পারব না। তবুও বলিও যেন আমাকে মাফ করে দেয়। মা, তোমাদের প্রতি আমার রাগ বা অভিমান কোন্টাই নেই। আমি আমার মত আছি। আর কিছু বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু অরিন ইশারা করে চুপ করতে বলল।

মা, ভাল থাকিও। পারলে মাঝে মাঝে দেখতে আসিও। বাবাকে বলিও আমাকে যেন মাফ করে দেয়। মা বিকেলে চলে গেল। মনটা অনেক খারাপ হয়ে আছে। রাতে মিতুকে ঘুম পাঠিয়ে আমি বিছানায় শুয়ে আছি। মাথার কাছে মিরা বসে আমার মাথায় হাত বুলাচ্ছে। আচ্ছা মিরা আমি কি কিছু ভুল করছি? কি ভুল। মি অরিন? হুম আমি জানি। তুমি কিছু ভুল করনি। আমি জানি। অরিন তোমাকে অনেক ভালবাসে। তাকে বিয়ে করে নাও এতে তোমার আর আমার মেয়েটা ভাল থাকবে। সবাই তো থাকে না। কিন্তু বাচতে হলে একটা অবলম্বন নিয়ে বাচতে হয়। কিন্তু তুমি? আমি কি? আমার কথা ভেবে আর কত কষ্ট পাবে বল। বরং অরিনকে বিয়ে কর। ওর মাঝে নয়ত আমাকে খুঝে নিও। আর হ্যা, মা বাবার উপর রাগ করে থেক না। সব বাবা মা ই তো চায় তাদের সন্তান যেন ভাল থাকে সুখে থাকে।

অরিনের সাথে আমাদের সম্পর্ক আরো দিনকে দিন গাড় হচ্ছে। মিতু অরিনকে ছাড়া একমুহুর্ত থাকতে পারে না। আমি অরিনের উপর অনেক নির্ভর হয়ে পড়েছি। অনেক বার ভাবছি অরিনকে বলে দেই আমার মনের কথা। কিন্তু বলতে পারি না। অরিনের ভাবসাব দেখে মনে হয় ও আমাকে ভালবাসে। কিন্তু আমি অবাক হয়ে গেলাম যে এত তাড়াতাড়ি অরিনের বিয়ে ঠিক হয়ে গেল। বড় ভাবনায় পরলাম। কি করব? অরিনের গায়ে হলুদের সময় গেলাম। মেয়েটা অনেক শুখিয়ে গেছে। কান্না করে করে চোখ ফুলিয়ে ফেলছে। চোখের নিচে কালি। আমার দিকে অভিমানি চোখে তাকিয়ে দেখল। আমি কোন কথা না বলে চলে আসলাম।

আজকে অরিনের বিয়ে। আমরা বাপ বেটি রুমে বসে আছি। কিছু ভাল লাগছে না। কেমন জানি সব কিছু ফাকা ফাকা লাগছে। মিতু বলল,” বাবাই মামুনি কি এখন আর আমাদের সাথে খেলবে না?” কি জবাব দিব আমি। হঠাৎ দরজা খুলে অরিন ঘরে ঢুকল। আমার দিকে চেয়ে মিতুকে কোলে নিয়ে ফুপিয়ে ফপিয়ে কাদতে লাগল। অবাক হয়ে গেলাম। অরিন তাও আবার বিয়ের পোশাকে। মানুষ দেখলে কি বলবে। আর আংকেল।অরিন তুমি এখানে কেন? এর মধ্যে আংকেল এসে দরজায় আঘাত করছে আর আমার নাম ধরে ডাকছে। দরজা খুলে দিলাম। আংকেল আমায় বলল, অরিন কোথায় বাবা? আমি ইশারা করে দেখাই দিলাম। আরে অরিন মা চল এবার ওরা এসে গেছে। বাবা, কি? চল তো এখন। বাবা আমি এ বিয়ে করতে পারব নাহ। কি! বলিস পারবি না মানে।

বাবা আমি মিতুকে ছাড়া থাকতে পারব না। বিশেষ করে ওই হাবা লোকটাকে (আমাকে) ছাড়া। এখন এগুলা বলছিস কেন? আংকেল ও ঠিক বলছে ও যেমনি আমাদের ছাড়া থাকতে পারবে না। আমরাও পারব না। আমার মেয়েটা আপনার মেয়েকে ছাড়া একটা মুহুর্ত থাকতে পারে না। মিতু গিয়ে আংকেলের হাত চেপে ধরল। ভালো নানু তুমি মামুনিকে নিয়ে যাবে। আমি যে মামুনিকে ছালা থালতে পারি না।। কিন্তু, মেঘ এখন কি করব আমি। আমি চুপ করে থাকলাম। অরিন জবাব দিল, ” বাবা তুমি তাদের কে বলে দাও যে মেয়ে এই বিয়েতে রাজি না। আর তুমি তা জানতে না। ” আচ্ছা দেখি কি করা যায় । আয় রে বুড়ি দেখি কিছু করতে পারি কি না। অরিন আমার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে। কবে থেকে? কি? এই যে আমাকে ভালবাস? প্রথম থেকেই। কিন্তু একটা হাবা লোক বুজতই না যে একটা মেয়ে উনার কাছে ঘুর ঘুর করে। ওও ও তাই নাকি। হুম, হাবা।

মিতু, মামুনি উঠছ কি? আমি চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলাম মিতু চুপ করে আমার লেপের তলে ঢুকে পরল। আমাকে ইশারা করে চুপ করতে বলল। কিন্তু অরিন এসে আমার সাথে লেগে পড়ল। ও হ্যা, সেদিনেই আমাদের বিয়ে হয়েছিল। এই কি হল তুমি উঠনি কেন? মেয়েটাকে উঠাও গিয়ে যাও। এত ঘিম কাতুরে মেয়ে তোমার। বাবাই মামুনিকে বলে দাও আমি ভাল মেয়ে। আরে! মিতু তুই এখানে। উঠতে বলি নাই কি আমি? বাবা যেরকম মেয়ে ঠিক সে রকম। আমার বাবাই ভাল খুব। তুমি পচা। আমি ফিচ ফিচ করে হাসছি।

এই তুমি হাসবে না বলছি ম মেয়েকে আস্কারা দিয়ে ফেলছ। এমন সময় মিতু নাকে হাত দিয়ে ছি ছি করে উঠল। বাবাই তোমার গায়ে অনেক গন্ধ! হবে না, গোসল না করলে তো হবেই। তোর বাবাকেই সব ঠান্ডা এসে ধরছে। হুম বাবাই পচা। আর মা ভাল। হাহাহায়াহা , এখনি বাবা ভাল আর এখনি মা। এই হয়েছে আমার মেয়ের কাজ। মা মেয়ে মিলে আমার জীবন শেষ করে দিল। ভাবছি ভবিষ্যৎ এ আরও কিছু ঘটবে আমার জিবনে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত