ভালোবাসি তোমায়

ভালোবাসি তোমায়

কিরে কেমন আছিস পিচ্ছি?(আমি) আপনি আমাকে পিচ্চি বলছেন কেনো?(তরী) পিচ্ছি মেয়েকে পিচ্ছি বলবো নাতো কী বলবো শুনি? আমি মোটেও পিচ্ছি না।আমি ইন্টারে পড়ি হু।আর একবার পিচ্ছি বললে আপনার খবর আছে। উরে বাবা পিচ্ছি দেখি আবার রাগও করতে জানে। তরী আমার কাছে এসে আমার ঠোঁটে কিস করলো। প্রথম কোন মেয়ের ঠোঁটের ছোঁয়াতে এক অদ্ভুত রকমের ঢেও খেলে গেলো আমার শরীরে।এর আগে কোনো মেয়েকে আমি কিস করিনি । আরেকবার পিচ্ছি বলে দেখেন দেখবেন তখন কী করি।(তরী)তরী আমার সামনে থেকে চলে গেলো।আমি বুঝার চেষ্টা করছি এটা কী হলো?তরীর এমন একটা কান্ড করে বসবে আমি কখনোই ভাবিনি।

আমি হুসাইন।অনার্স ২য় বর্ষের ছাএ।তরী আমার খালাতো বোন।ইন্টার প্রথম বর্ষে পড়ে।আমি সবসময় তরীকে পিচ্ছি বলি।আগে পিচ্ছি বললে ক্ষেপে যেতোনা কিন্তু ইদানিং দেখছি এমন করছে।কী হয়েছে কে যানে।তার উপর আজকে এই কান্ড করে বসলো। কিরে হুসাইন কখন আসলি?(খালা) কেবলই।কেমন আছো?(আমি) ভালো আছি।আসার আগে একবার ফোনতো দিতে পারতি। কেনো তোমাদের বাসায় আসতে কী অনুমতি লাগবে? আরে তা বলছিনা।আগে ফোন করলে তোর খালুকে দিয়ে বাজার করিয়ে রাখতাম। এত বাজার করা লাগবেনা।যা রান্না করছো তাই দিয়েই ক্ষেতে দাও খুব ক্ষদা লেগেছে। হাত মুখ ধুয়ে টেবিলে বস আমি খাবার দিচ্ছি। আচ্ছা। আমি ব্যাগ ড্রয়িংরুমে রেখেই ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।ফ্রেশ হয়ে এসে টেবিলে খেতে বসলাম।খাওয়া শেষ করে খালাকে বললাম আমার রুম ঠিক করে দিতে।

রাতের বেলা রুমে বসে আছি এমন সময় তরীর প্রবেশ।তখনকার ঘটনার পর থেকে তরীর দিকে তাকাতে কেমন জানি লজ্জা লজ্জা লাগছে।জানিনা কেনো এমন হচ্ছে।আগে যতবার খালাদের বাসায় এসেছি সবসময় তরীর পিছু লেগে থাকতাম।আজ হঠাৎ কী হলো বুঝতে পারছিনা। তোমার ফোনটা দাওতো।(তরী) আমার ফোন দিয়ে তুই কী করবি?(আমি) কী আজব।এর আগে যতবার চেয়েছি ততবারই দিয়েছো।এবার দিচ্ছোনা কেনো? সমস্যা আছে তাই দেওয়া যাবেনা। কী সমস্যা শুনি? বলবোনা। ও বুঝেছি,গালফ্রেন্ডের সাথে মেসেজ করেছেন সেটার জন্য তাইনা। হ্যাঁ তাই। তরী রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলো।আসলে তরীকে রাগাতে খুব মজা লাগে।মেয়েদের রাগলে তাদের সৌন্দর্য আরো দুইগুণ বেড়ে যায় আজ তরীকে দেখেই বুঝলাম।আরেকটা কথা কিছুতেই মাথায় ঢুকছেনা তরী আমাকে তুমি করে বললো কেনো?

আমি আর আমার বউ পাশাপাশি বসে আছি।আমার বউটা আমার কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে।আমার বউটার চুল আমার মুখে উড়ে এসে পড়ছে আর আমি মুগ্ধ হয়ে সেদৃশ্য দেখছি। কী রোমান্টিক মুহূর্ত। হঠাৎ মনে হলো কে যেনো আমার গায়ে পানি ঢেলে দিয়েছে।লাফ দিয়ে ঘুম থেকে ওঠে বসলাম।তরী বালতি হাতে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।ঠিক ডায়নি বউয়ের মত তাকিয়ে আমাকে দেখছে। ওই পিচ্ছি দিলিতো আমার সাধের স্বপ্নটা নষ্ট করে।(আমি) দিবোইতো।আমাকে বাদ দিয়ে অন্য মেয়েকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা এটা হতে পারেনা।(তরী) তোকে বাদ দিয়ে মানে? আমাকে বাদ দিয়ে মানে-মানে আমাদের সবাইকে বাদ দিয়ে। হুর ভালো লাগেনা আর।তুই যাতো এই রুম থেকে। যাচ্ছি আমি। তবে ওঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিন।আমাকে নিয়ে বাইরে যাবেন। আমার মাথা খারাপ যে তোকে নিয়ে ঘুরতে যাবো!জীবনেও যাবোনা। ঠিক আছে আমিও খালুকে ফোন দিয়ে বলছি আপনার ছেলে অন্য একটা মেয়ের সাথে লুতুপুতু প্রেম করে। ওটা করিস না।আমি রেডি হচ্ছি তুইও রেডি হয়ে নে। তরী চলে গেলো।এই মেয়ে খুব ডেন্জেরাস।আব্বুকে যা তাই বলে আমাকে বকা খাওয়াতে ওস্তাদ।আব্বুকে আমি খুব ভয় পাই।

বিছানা ছেড়ে ওঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।হালকা নাস্তা করে রেডি হয়ে ড্রয়িংরুমে তরীর জন্য অপেক্ষা করছি।১০মিনিট যায়।২০মিনিট যায় তবুও তরীর দেখা নাই।পুরো ২৫ মিনিট আমাকে বসিয়ে রেখে তারপর আসলো।তরীকে দেখে আমি হা করে তাকিয়ে আছি।তরী আজ শাড়ী পড়েছে।সাথে হালকা মেকাপ।মনে হচ্ছে ডানা বাদে কোনো পরী আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ওই এভাবে হা করে কী দেখেন?(তরী) তুই এত সুন্দরী হলি কবে?(আমি) আমি আগে থেকে সুন্দরী আপনি কানা তাই দেখেননি।এখন এত প্রশংসা না করে চলুন। চল। আমি আর তরী বেড়িয়ে পড়লাম।গেটের বাইরে এসে একটা রিক্সা নিলাম। রিক্সাতে ওঠার পর। আমরা কোথায় যাচ্ছি?(আমি) কাজি অফিসে।(তরী) কাজি অফিসে কেনো? আমরা বিয়ে করবো তাই।হি হি হি হি তরী শব্দ করে হাসছে আর আমি মুগ্ধ তাকিয়ে আছি ওর দিকে।আজ হঠাৎ আমার কীহলো? তরীর সবকিছুই আজ আমার ভালো লাগছে।জানিনা কেনো এমন হচ্ছে।মনের মধ্যে এক অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে।অচেনা এক অনুভূতি যার সাথে আমি অপরিচিত।

এভাবে তাকিয়ে কী দেখেন হু?এর আগে কোনো মেয়েকে এভাবে হাঁসতে দেখেননি মনে হয়? তরীর কথায় কী জবাব দেওয়া উচিত আমি বুঝছিনা।যেই আমি সবসময় বকবক করতাম আর আজ সেই আমিই কথা খুজে পাচ্ছিনা।হঠাৎ আমার এত পরিবর্তনে অনেক অবাক লাগছে। মামা রিক্সা থামান।(তরী) দুজন রিক্সা থেকে নামলাম।রিক্সা ভাড়া মিটিয়ে সামনে দিকে এগোলাম। একটা কলেজের মধ্যে আসলাম।এটাই তরীর কলেজ।এর আগে একবার এসেছিলাম।মাঠের মধ্যে বড় একটা প্যান্ডেল করা।স্টেজে দেখলাম একজন বক্তৃতা দিচ্ছে।আমি আর তরী গিয়ে প্যান্ডেলের সামনে চেয়ারে বসলাম।তরী বসতেই একটা ছেলে এগিয়ে আসলো। কেমন আছো?(ছেলেটি) ভালো।তুমি?(তরী) ভালো।তুমি নাচের জন্য নাম লেখাওনি? লিখেয়েছি।পরিচয় করিয়ে দিই,এ হলো আমার খালাতো ভাই।আর ভাইয়া ও হলো রাদেশ আমার ফ্রেন্ড।

আমি ভদ্রতার খাতিরে হাত বাড়িয়ে দিলাম।ছেলেটাকে দেখে আমার সুবিধার ঠেকছে না।চিটার চিটার একটা ভাব লেগে আছে চোখে মুখে। তরী চলো আমরা কোথাও গিয়ে বসি।(রাশেদ) না তুমি যাও।ভাইয়াকে রেখে আমি কোথাও যেতে পারবোনা।(তরী) ভাইয়া এখানে বসুক।আমরাতো আশেপাশেই থাকবো।ভাইয়া কী বলেন? তরী তুই যা আমি এখানে আছি।(আমি) তরী ছেলেটার সাথে চলে গেলো।তরী চলে যাওয়ার পর কেমন জানি শূন্যতা অনুভব করছি।আচ্ছা আমি তরীকে ভালোবেসে ফেলিনিতো?না না এ হতে পারেনা।খালা খালু আমাকে অনেকটা বেশি বিশ্বাস করে আমি তাদের বিশ্বাসের অমর্যাদা করতে পারবোনা। প্রায় ৪০ মিনিট হতে চললো এখনো তরীর দেখা নেই।ভালো লাগছেনা কিছু তাই তরীকে ফোন দিলাম কোথায়রে তুই?(আমি) এইতো ভাইয়া একটু এই দিকে আছি।(তরী) আমার ভালো লাগছেনা।তুই এখানে আই। আচ্ছা আমি এখনি আসছি।

আমি ফোন রাখার ৫ মিনিটের মধ্যে তরী আসলো।সাথে ওই চিটারটাও।ওকে দেখলেই কেনো জানি রাগ হচ্ছে।ইচ্ছে করছে টেনে দুইটা থাপ্পর মারি। ভাইয়া নিন বাদাম খান।(তরী) কে কিনেছে বাদাম?(আমি) রাশেদ। আমি বাদাম খাবোনা তুই খা। মেজাজটা প্রচন্ড খারাপ হচ্ছে।বুঝতেছিনা কেনো এমন হচ্ছে।এর আগে এমন কখনো হয়নি। তরী চল বাসায় যাবো।আমার এখান ভালো লাগছেনা।(আমি) একটু পর আমার নাচের প্রতিযোগিতা আছে।নাচের অনুষ্ঠান শেষ হলেই চলে যাবো।(তরী) ভাইয়া আপনাকে রিক্সা ঠিক করে দিচ্ছি আপনি চলে যান।তরীকে আমি ওরে নামিয়ে দিয়ে আসবো।(রাশেদ) তোমাকে আমি বলেছি তুমি তরীকে নামিয়ে দিয়ে আসো? ভদ্রতার সহিত কথা বলো।(আমি) ভাইয়া আমার নাচের অনুষ্ঠানে থাকতেই হবে।(তরী) তোকে নাচা লাগবেনা।এখনি আমার বাসায় চল।

আমি তরীকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হাত ধরে বাইরে নিয়ে চলে আসলাম।আসার সময় রাশেদ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলো।একটা রিক্সা ঠিক করে তরীকে নিয়ে সোজা বাসায় চলে আসলাম।বাসায় এসে তরীকে বললাম এরপর যেনো আর কোনো ছেলের সাথে কথা বলতে না দেখি।(আমি) এ আবার কেমন কথা? আমার ক্লাসমেটদের সাথে আমি কথা বলবো এতে সমস্যা কোথায়?(তরী) অনেক সমস্যা আছে।আমি বলেছি তুই কথা বলবিনা ব্যস।আমি আর কোনো প্রশ্ন করবিনা। আমার স্বাধীনতার উপর জোর করার অধিকার আপনার নেই।আর আপনি বললেও আপনার কথা শুনতে আমি বাধ্য নই।সত্যিই আমার কথা শুনবিনা? না।

শুনবি কেনো আমি তোর কে।আমাকেতো কখনো আপন মনেই করিস নি।ঠিক আছে তোর যা খুশি কর।
তরীর সামনে থেকে চলে আসলাম।রুমে এসে সবকিছু গুছিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম।এখানে আর থাকা যাবেনা।খালা কিচেনে ছিলো।খালার কাছে গিয়ে বললাম খালা আমি চলে যাচ্ছি।খালু আসলে বলো আমি চলে গেছি।(আমি) কিরে হঠাৎ কী হলো?কালকে আসলি আজই চলে যাচ্ছিস?তরীর সাথে ঝগড়া করেছিস?(খালা) না।ভালো লাগছেনা তাই চলে যাচ্ছি।ভালো থেকো তোমরা।আর কখনো তোমাদের বাসায় এসে তোমাদের বিরক্ত করবোনা। খালাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বেড়িয়ে আসলাম।আমার চোখে পানি ছলছল করছে।আর কিছু থাকলে হয়তো চোখ দিয়ে ঝড়ে পড়বে।আমি চাইনা আমি কষ্ট পেয়েছি সেটা কেউ জানুক।খালা পিছন থেকে অনেকবার ডাকলো কিন্তু আমি ফিরে তাকায়নি।ফিরে তাকালে আমার কাঁদছি সেটা দেখে ফেলতো।

আজ তিনদিন হলো খালাদের বাসা থেকে এসেছি।বাসায় এসে কোনকিছু ভালো লাগছেনা।শুধু তরীর কথা মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।তরী আমাকে ভালোবাসেনা সেটা ওর কথাতেই বুঝে গেছি।সেদিনের পর তরীর সাথে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি আমার।তরীকে অনেক বেশিই ভালোবেসে ফেলেছি এই কয়দিনে। দুপুরবেলা এসব ভাবতে ভাবতে কখন জানি ঘুমিয়ে গেছি।ঘুমের ঘোরেই শুনতে পেলাম কে যেনো কাঁদছে।আমার মুখে একফোঁটা পানি পড়তেই জেগে ওঠলাম।তাকিয়ে দেখি তরী।তরীকে দেখে যতটা অবাক হয়েছি তার থেকে বেশি অবাক হয়েছি ওকে কাঁদতে দেখে।নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম তুই কখন এলি?(আমি) নিশ্চুপ কিরে কথা বলিস না কেনো? এবার আর কোনো কথা না বলে আমার উপর ঝাপিয়ে পড়লো।আমাকে জরিয়ে ধরে কেঁদে চলেছে। ছাড় কেউ দেখে ফেলবে।(আমি) ছাড়বোনা।কোনদিনও ছাড়বোনা।আগে আমাকে ক্ষমা করে দাও।(তরী) কিসের জন্য ক্ষমা চাইছিস?

সেদিন খারাপ ব্যবহার করার জন্য।বিশ্বাস করো আমি সেদিন ইচ্ছে করে খারাপ ব্যবহার করিনি।সেদিন তুমি যখন আমার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলে তখনি বুঝেছিলাম তুমি আমাকে ভালোবাসো।এরপর কলেজে গিয়ে ভাইয়া বলেছিলাম যাতে তুমি রাগ করে আমাকে ভালোবাসি বলো কিন্তু বলোনি।এরপর বাসায় এসে তোমার সাথে কথা কাটাকাটি করলাম।ভেবেছিলাম তুমি আমাকে একটা থাপ্পর দিয়ে বুকে জরিয়ে নিয়ে ভালোবাসি বলবে কিন্তু বলোনি। নিজেই পালিয়ে চলে আসলে। এতটুকু বলেই থামলো ও।তরীর কথার মাঝে অনেক পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি।আমাকে আপনি থেকে তুমি করে বলছে।ব্যবহারেও অনেক পরিবর্তন।তরী আগে যতবার আমাদের বাসায় এসেছে সবসময় আমার সাথে ঝগড়া নিয়ে পড়ে থাকতো।

ভালোবাসো যখন তখন এই তিনদিন আমার সাথে যোগাযোগ করোনি কেনো?(আমি) আমি ভেবেছিলাম তুমি ফোন দিবে।(তরী) আমিও এটাই ভেবেছিলাম।জানো আমি আজ তিনটা রাত ঘুমাতে পারিনি। আমি মনে হয় পায়নি? আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। আমিও ভালোবাসি। আমি তরীকে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম।কখনোই হারিয়ে যেতে দিবোনা ওকে।তরীও আমাকে বুকে মাথা রেখে শুয়ে রইলো।

সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত