চাচাত বোন

চাচাত বোন

নিরু এই নিরু এই দিকে আয় তো। (আমি) কী হল বলেন। (নিরুপমা) এখানে একটা ফাইল ছিল, তুই দেখেছিস??? ডয়ারে দেখেন, কোন জিনিস তো আপনি ঠিক করে রাখবেন না।প্রতিদিন ঘর গুছিয়ে রাখি, পরের দিন আবার সব এলোমেলো। জানেন সারা দিন বাসার এত কাজ আমি আর চাচি কি করে করি???? যখন বিয়ে করে বউ আনব তখন আর তোকে বা মাকে আর করতে হবে না। সেই সব করবে। হা হা হা, আপনার মতন অগোছাল ছেলেকে মেয়ে দিবে কে???? সারা দিন বউয়ের ঝারির উপর দিয়ে যেতে হবে আপনাকে।

বেশি হাসিস না। দেখিশ খুব সুন্দর একটা মেয়েকে বিয়ে করব, তোর মতন শাকচুন্নি না। আমার বউ হবে খুব সুন্দর। যে দেখবে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকবে। কই থেকে এক পেত্নী ধরে আনবেন তাঁর নেই ঠিক। আবার বলে লোকে নাকী তাকিয়ে থাকবে সে দেখা যাবে। এখন তুই যা দেখ মায়ের নাশতা তৈরি হল কি না। হুম দেখছি। আমি রাশেদ, বাবা মায়ের একমাত সন্তান। আর ও নিরুপমা, সবাই নিরু বলেই ডাকি। আমার ছোট চাচার মেয়ে। একটা দুর্ঘটনায় চাচা চাচি মারা যান তখন ওর বয়স মাত্র ৮ বছর। এর পর থেকে নিরু আমাদের এখানেই মানুষ, ওর নানা নানী অবশ্যই ওকে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। বাবা মা দেয় নি। বলেছে আমাদের মেয়ে আমাদের কাছেই থাকবে।

ওর নানা মাঝে মাঝে এসে দেখে যান, অনেক ভাল মানুষ। নিরুও যায়। মামা মামি ও মামাত ভাই বোন আর নানীর সাথে সময় কাটাতে। নানী অসুস্থ বলেই আর আসেন না। নিরুই গিয়ে দেখে আসে। নাশতা রেডি, চাচি ডাকছে।(নিরুপমা) তুই যা আমি আসছি।(আমি) রেডি হয়ে নাশতা করতে এলাম। বাবা মা নিরু আমার জন্য অপেক্ষা করছিল। আমি আসতেই সবাই খেতে শুরু করল। কিরে নিরু তোর পড়াশোনা কেমন চলছে মা। (বাবা) ও নিরু পড়াশোনায় খুব ভাল তাই বাবা ওকে যত দুর চাই পড়ার অনুমতি দিয়েছে। নিরু এবার অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। জি চাচা খুব ভাল চলছে তোমাদের দোয়ায়।(নিরু) রাশেদ তোর অফিস। জি বাবা খুব ভাল। (আমি) পড়াশোনা শেষ করে এই মাস দুয়েক হল চাকরিতে ঢুকেছি। যে কাজ করবা সবসময় মন দিয়ে করবা, মনে রেখ কাজকে সন্মান করলে কাওকে তোশামোদ করতে হবে না। জি বাবা। যাওয়ার সময় নিরুকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে যাবে। জি বাবা, সেটা তো রোজই করি। তা কর, তারপরো।

নাশতা করে বের হলাম অফিসের উদ্দশ্য, বাইকের পেছনে নিরু। আচ্ছা তোর একা ফিরতে ভয় করে না।(আমি) কেন নিজের এলাকাই ভয় কিসের???(নিরু) দেখছিস তো চারিদিকে কি হচ্ছে??? হুম হচ্ছে, আমি আল্লাহর ভয়ে ভিত এই ভয়ে না। আমি যে করমের পর্দা করি তাতে পর্দার আড়ালে যে যুবতি না বুড়ি তা তো কেও বুঝতেই পারে না। তাই ভয়টা নেই। তাঁরপরো একটু দেখেশুনে চলাচল করি তা ঠিক, আমিই মাঝে মাঝে গুলিয়ে ফেলি, দেখ এই যুগের মেয়েরা কি ধরনের পর্দা করে??? এইটা ইসলামের নির্দেশিত সেই পর্দা যা একজন নারীকে হেফাজত করতে সক্ষম। আজ কাল সবই ফ্যাসান হয়ে গেছেরে। না তা নয়, আর তা নয় বলেই আজ আমাদের সমাজের এই অবস্থা। হুম হয়ছে, তোর কলেজে এসে পরছি। যা মন দিয়ে ক্লাস করবি। সাবধানে যায়েন।

এরপর অফিসে চলে এলাম। কেবিনে বসে কাজ করছি সাহেদ ভাই এসে বললেন  কী ভাই বাইকে কাকে নিয়ে এলেন??? খুব তো বলেন। এখন তো দেখি তলে তলে সবই করেন (সাহেদ ভাই, সহ কর্মী) কি যে বলেন, মাইন্ড চেন্জ করেন। সহাইকেই কী নিজের মতন ভাবেন?????? ও আমার ছোট চাচার মেয়ে। আর রোজই তো ওকে সাথে নিয়েই আসি। ওর কলেজে নামিয়ে দিয়ে অফিসে আসি। (আমি) কথাটা বলতেই সাহেদ ভায়ের মুখটা শুকিয়ে গেলো। ফাটা বেলুনের মতম হয়ে গেলো মুখটা আর কিছু না বলে তিনি চলে গেলেন। এই ধরনের কিছু মানুষের জন্যই আজকাল আপন ভাই বোন রিকসা চড়তে চাইনা। এরা একটা ছেলে ও একটা মেয়েকে একসাথে দেখলেই লাভার ভাবতে শুরু করে। ওরা যে ভাই বোনও হতে পারে সেই চিন্তা কখনই মাথায় রাখে না। এরা ঠিকই অন্যর বোনের সাথে প্রেম করবে, কিন্তু নিজের বোন কাওকে ভালবাসলেই সব দোষ ঐ ছেলের… আরে এক হাতে কী তালি বাঁজে?????? সারাদিন হাতটা উচু করে রাখত দেখি কী করে শব্দ হয়????? য়খন এক হাত দিয়ে অন্য হাতকে আঘাত করা হয় তখনই শব্দ হবে নিজের কাজে মন দিলাম, আজ দুটো ফাইল সম্পুর্ন করতে হবে। আজ জমা না দিলে ঝাড়ি খেতে হবে।

খুব ব্যাস্ততাই কাটছে আজকের দিনটা। দুপুরে নামাজ পড়ে এসে কোনরকমে লান্স করেই আবার কাজে বসলাম।
যাক সময় মতন কাজ শেষ। যাই স্যারের কাছে জমা দিয়ে আসি। আসসালামুআলাইকুম । আসব স্যার????? (আমি) ওয়ালাইকুমআসসালাম, আরে রাশেদ সাহেব আসুন।, তা কি খবর বলুন??? (বস) ফাইল দুইটা জমা দিতে এলাম স্যার। তা দাঁড়িয়ে কেন, বসুন। কই দেখি ফাইল। ফাইল দুটি বাড়িয়ে দিলাম। অনেক খন হল স্যার মন দিয়ে দেখছেন। স্যারের মুখ দেখে তো কিছুই বোঝা যাচ্ছে নি, কি যে হয়। অনেক ভার ভার লাগছে স্যারের মুখটা। গুড, খুব ভাল কাজ করেছ। এমন কাজ করলে খুব তারাতারি এগিয়ে যাবে। অনেক সুন্দর ও পরিস্কার আপনার কাজগুলো ধন্যবাদ স্যার। তাহলে এখন আসি স্যার??? আসুন। স্যারের রুম থেকে বেরিয়ে এলাম, স্যারের কথাটা শুনে খুব খুশি লাগছে। আজ আর হাতে কোন কাজ নেই। ছুটি হতেও বেশি সময় নেই যাই বাড়ি যায়।

কিছু মিষ্টি কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। কিরে তোর হাতে মিষ্টি কিসের??? (মা) আগে মুখে নাও বলছি। (আমি) বলেই মায়ের মুখে মিষ্টি পুরে দিলাম। এবার বল। আজ স্যার আমার অনেক প্রসংসা করছে। দুটো ফাইল জমা দিলাম কোন ভুল নেই। এই নাও বাবা ও নিরুকে দিও। আমি ফ্রেশ হতে গেলাম। যা, আমি খাবার দিচ্ছি খাওয়াদাওয়া করে বের হলাম, এলাকার ভেতর একটু ঘোরাঘুরি করি।  সন্ধায় মাগরিবের নামাজ পড়ে বাড়ি ফিরলাম। একটু ফেসবুকে যাব, কিন্তু ঘরে ল্যাপটপ নেই। নিরু আমার ল্যাপটপ নিয়েছিস??? (আমি) হুম, এই কাজটা করেই. দিচ্ছি…..(নিরু) আচ্ছা কর। পরে দিলেও চলবে। মোবাইল নিয়ে গেম খেলতে লাগলাম। এশার আযান হলে গিয়ে নামাজ পড়ে বাড়ি ফিরলাম। নিরু ল্যাপটপ রেখে গেছে তাই ল্যাপটপ নিয়ে ফেসবুকিং করছি। চাচি খেতে ডাকছে। খাইতে আসেন। (নিরু) তুই যা আমি আসছি। (আমি)

কিছুখন পরে সবাই আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। যা না আসছি বললাম তো। ও চাচি তোমার ছেলে আমাকে ধমক দিচ্ছে। ঐ চাচির সেক্রেটারি তোরে কখন ধমক দিলাম। কারেকসন, ঐটা আমার চাচি আপনের না। আপনের মা। তুই যাবি। দৌড়ে চলে গেলো, আমিও ল্যাপি সাউট ডাউন দিয়ে খেতে গেলাম। রাশেদের মা রাশেদ তো এখন চাকরি করছে। এবার ওর জন্য মেয়ে দেখি কি বল??? ( বাবা) হুম, আমিও সেই কথাই ভাবছি…. (মা) চাচা-চাচী তোমার এই আনরোমান্টিক, মেজাজী ছেলেকে তে মেয়ে দিবে????? আর যাকে বউ করে আনবে সার কপাল শেষ…(নিরু) ঐ তুই থামবি না দিব একটা???????(আমি) আমি তো ঠিকই বললাম, অগোছাল আনরোমান্টিক একটা এই তোরা থামবি???? যখনই দেখি লেগেই আছিস। (মা) আত্নী স্বজনের ভেতর কোন ভাল মেয়ে থাকলে খোঁজ নিয়ে দেখ। বা তাদের খোঁজে কোন মেয়ে আছে কি না।

কোন রকমে খাওয়া শেষ করে উঠে এলাম। আসব??? দরজাই টোকা দিয়ে আই, তোর আবার অনুমতি লাগে। বল কি বলবি। এই বিষয়টা একটু বুঝিয়ে দিন না। এখন কেন এই ক্যাবলা কান্তের কাছে আসছিস???? পারব না যা। আরে তখন তো মজা করলা, আপনি কত ভাল, স্মার্ট ভদ্র। পামে কাজ হবেনা, আমি বুঝিয়ে দিব না। একটু পরে আবার ওসবই বলবি তুই আরে দিন না। আর বলব না তো এই কানে ধরছি এর পরে এরকম করলে কিন্তু খবর আছে। তারপর ওকে বিষয়টা বুঝিয়ে দিয়ে পাঠিয়ে দিলাম। রাতে ঘুমাতে যাব, পানির পিপাশা পেয়েছে। তাই ডাইনিংএ যাব পানি খেতে। বাবা মায়ের ঘরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় শুনলাম বাবা মা আমার বিয়ে নিয়ে কথা বলছে।
তাই একটু দারালাম।

আচ্ছা নিরুকে রাশেদের সাথে বিয়ে দিলে কেমন হয়। ঘরের মেয়ে ঘরেই থাকল। এমনিতেই বাবা মা ছাড়া আমাদের কাছে বড় হয়ছে। মায়ায় জরিয়ে গেছে মেয়েটা। অন্যর বাড়ি যাবে শুনলেই কেমন লাগে। ছোট থেকেই কষ্ট করে মানুষ হয়ছে একা একা, পরের বাড়ি গিয়ে যদি আবার কষ্ট পাই (মা) আমিও তাই ভাবছিলাম, কিন্তু তুমি আবার কি বল না বল। এমনিতেই এতদিন আমাদের ঘরে আছে মেয়েটা। নিজের মেয়ে ছাড়া অন্য কিছু তো ভাবি নি। (বাবা) আমি আবার কি বলব??? সব সময় তুমি একটু বেশিই ভাব। আমি কি কখন নিরুকে অন্যর মেয়ে ভেবেছি। সবসময় নিজের মেয়ের মতই আদর করি। তা ঠিক তারপরো। কিন্তু রাশেদ আর নিরু কি রাজি হবে এই বিয়েতে????? হবে না কেন। আমরা কি ওদের কম ভালবাসি, আমরা কি ওদের খারাপ চাইছি কখনোআর না কখনো চাইব??? আমাদের কথা শুনবে না???? বললেই হলো, আমাদের কোন অধিকার নেই ওদের উপর????? দেখি কি হয়। ওরা রাজি হলেই সব ঝামেলা শেষ। দেখ রাজি হবেই। ওরা তো কখনই আমাদের অবাধ্য হয় নি। এবারো হবে না।

আর না দাড়িয়ে পানি খেয়ে এসে শুয়ে পরলাম। ঘরে এসে শুয়ে শুয়ে বাবা মায়ের বলা কথা গুলোই ভাবছি। বাবা মা যা সিদ্ধান্ত নিবে তাই হবে। না চাইতেই সব দিয়েছে। আর আল্লাহ হয়ত তাই চায়, আল্লাহ না চাইলে যে কিছুই হবার নয়।  আর না ভেবে ঘুমিয়ে পরলাম। সকালে নাশতা করছি সবাই। বাবাই প্রসঙ্গটা আনল নিরু আমি আর তোর চাচি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশাকরি তুই আপত্তি করবি না। আপনি নিদ্ধিধায় বলেন। ছোট কাল থেকে আপনাদের কাছেই মানুষ হয়েছি। কোন কিছুর অভাব বুঝিনি। না বাবা মায়ের না অন্য কিছুর। আমার বিশ্বাস আছে এমন কোন সিদ্ধান্ত আপনারা নিবেন না যাতে আমার ক্ষতি হয়। আমরা তোর সাথেই রাশেদের বিয়েটা দিতে চাই। অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে পর করতে চাই না। আপনারা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আমার মনে হয় অনেক ভেবেই নিয়েছেন। আরনারা যা বলবেন তাই হবে। রাশেদ তোর কি আপত্তি আছে এই বিয়েতে????

তোমাদের সিদ্ধান্তের উপর আমার পুর্ন আস্থা আছে। তোমাদের যেটা ভাল মনে হয় তাই কর। আর নিরুর যেখানে আপত্তি নেই আমার আপত্তি করার মানেই হয় না। বলেই খাবার টেবিল থেকে উঠে আসলাময় আলহামদুলিল্লাহ । বলেছিলাম না রাশেদের মা। ওরা আপত্তি করবে না। (বাবা) আপত্তি করলেই শুনছে কে। (মা) তাহলে আত্নীয় স্বজনকে দাওয়াত দেয়া শুরু করি। আর মেজকে ডেকে দিনটা ফাইনাল করে ফেলি কি বল??? যা ভাল বুঝ কর। তবে আমার মেয়ের পড়া কিন্তু বন্ধ হবে না। ও যত দুর চাই পড়বে। আপত্তি নেই। রেডি হয়ে বাইরে নিরুর জন্য অপেক্ষা করছি। ওকে কলেজে দিয়েই অফিসে যেতে হবে। কিছুখন পরে নিরু এলো, আজ আর এসেই তোন কথা বলল না, মাথাটা নিচু করে আছে।  মনে হয় লজ্জা পাচ্ছে, এই প্রথম ও আমার সামনে এত নিশ্চুপ বাইকে উঠে, কিরে উঠবি না দাঁড়িয়েই থাকবি????? কোন কথা না বলে চুপ করে বাইকে উঠে বসল।

জ আর পথের মাঝে কেও কারো সাথে কথা বলিনি কোন বিষয়ে। ওকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে অফিসে চলে এলাম। পরের দিন ও একই কোন কথা হল না বাড়িতেও তেমন আর কথা হয় না। আমার সামনেও তেমন আর আসে না, যতটা পারে আড়ালেই থাকে। পরের দিন বাড়ি থেকে কিছু দুর যেতেই নিরুই কথা শুরু করল  আপনি আর আমার সাথে কথা বলছেন না কেন??? সেদিন বিয়ের কাথা হবার সময় থেকেই লক্ষ করছি। বিয়েই তো হচ্ছে, আপনাকে ফাসি তো দিতে চাইনি। না আপনি মন থেকে রাজি না???? মেয়ে বলে কী???? নিজেও তো কথা বলে না, আর আমার সামনেই তো আসে না কথা বলা তো দুরের কথা। আর এখন নিজেই অভিযোগ তুলছে আসলে তোমাকে তো সেভাবে কখন দেখি নি। আর বাহ, “তুমি” এখন থেকেই। বলেই একটা হাসি দিল, পেছনে বসে বলে দেখতে পারলাম না।

এখনো কি তুই করেই বলব??? না তা না, তবে চলেন এই কদিন আমরা প্রেম করি। কি??? প্রেম। না এতদিন যখন করিনি তখন এখনো না। বিয়ের পরেই। হুম পাশ। পাশ মানে??? আপনাকে পরিক্ষা করলাম। যে প্রেমে রাজি হন কি না। আমাকে আর পরিক্ষা করতে হবে না, কলেজে এসে গেছি। ক্লাসে যান ম্যাডাম। আর মন দিয়ে পড়বেন, বিয়ের আনন্দে যেন পড়া ভুলে না যান। বলেই চলে আসব তখনই এই শোনেন শোনেন। কিছু টাকা দিয়ে যান। টাকা কি করবা??? বাহরে আমি বাড়ি যাবনা??? আর দুপুরের চটপটি ফুসকার বিল কে মেটাবে শুনি??? কেন বাবার থেকে নাও নি??? বাবার থেকে নিব কেন??? এখন থেকে আপনিই দিবেন। বাহ শুরু হয়ে গেছে। বিয়ের কথা হতেই অধিকার খাটানো শুরু হুম, অন্য কারো থেকে তো চাই নি। হবু স্বামীর থেকে চেয়েছি। না হলে চাচাত ভাই হিসাবেই দেন।

বলেই মিটি মিটি হাসছে, বুজলাম মজা করছে। তাই আমিও মজা করার জন্য মানিব্যাগ ওর হাতে দিয়ে বললাম যাই ইচ্ছা নে নিরু সবগুলে টাকা বের করে আগে গুনে নিল। তারপর ২০০ টাকা নিয়ে বাকিটা মানিব্যাগে রেখে ফেরত দিল। কিরে মাত্র দুইশত টাকা নিলি। আরেকবার তুই বললে মাথা ফাটামু কিন্তু। আর আমার হবু বরের কষ্টে উপার্জন করা টাকা নষ্ট করব কেন হুম। থাকলে তো আমারি থাকবে। এখন অফিসে যান। হুম যাচ্ছি তুই ক্লাসে যা। কী বললেন??? না কিছু না যাও, ক্লাসে যাও। গুড বয়। সাবধানে যাবেন। তুমিও সাবধানে থেকো। বলেই চলে এলাম, যাক মজা তাহলে ভালই হল। কিছু দিন পরে এই তোরা আমার দরজার সামনে কেন, যা এখান থেকে???? আগে বল দুলাভাই বলব না ভাই বলব??? যা ইচ্ছা বল, তবে এখন তোরা যা।

আচ্ছা দুলাভাই বলি পরে ভাই বলবনে। যাবতো তার আগে আমাদের পাওনা দেন। কিসের পাওনা??? তোদের আবার পাওনা কিসের???? এই যে ফুল দিয়ে বাসর ঘর সাজালাম। আমাদের পাওনা না দিয়েই বাসর ঘরে যাবেন তা হবে না। আগে দিবেন তারপর ভেতরে যাবেন। বল কি চাস??? মাত্র পাঁচ দিলেই হবে। পাঁচ টাকা?? এই নে। ঐ আমরা কি ফকির নাকি যে পাঁচটাকা নিব??? পাঁচ হাজার লাগবে। বলে কি এগুলো। পাঁচ হাজার টাকা দিতে হবে। আর দুলাভাই না ভাই বলবে এই কথা বলছে কারন। আমার দিক থেকে ধরলে ভাই হয়। কিন্তু নিরুর দিক থেকে ধরলে তো দুলাভাই। এদের মাথায় এই বুদ্ধি দিল কে। পিচ্চি গুলোও এক একটা চিজ কি বললি পাঁচ হাজার টাকা??? এক টাকাও পাবিনা। তাইলে ভেতরেও যাওয়া হবে না। এই দেখ দরজাই লক করা আর চাবি আমাদের হাতে। কি আর করা অনেক কষ্টে তিন হাজারে এসেছে, তাই দিয়েই ঘরে ঢুকলাম। ভেতরে যেতেই নিরু এসে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে গেলো।

এই কি করছ??? বাহরে সালাম করছি। আরে তোমার স্থান এই বুকে পায়ে নয়। এখন থেকে এইবুকই তোমার স্থান। এখন চল অযু করে আসি। নামাজ পড়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায়করে নতুন জীবন শুরু করি। হুম চলেন। এই অনেক আপনি হয়েছে। এখন থেকে তুমি করে বলবা॥ চেষ্টা করব। দুজনে অযু করে দুরাকাত নফল নামাজ পরে আল্লাহর কাছে দোয়া করলাম। নামাজ শেষ করে এসে দুজন খাটে বসলাম পাশা পাশি। কিছুখন কেও কোন কথাই বলতে পারি নি হঠাৎ আবুলের মতন বলে ফেললাম অনেক রাত হয়ছে চলো শুয়ে পরি। বলেই জিহ্বাতে কামড় দিলাম, কি বলতে কী বললাম। আল্লাহই জানে এখন নিরু কী বলে। আমাকে তেমন কিছুই না বলে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল। একটা বালিশে আমি শুলাম, পাশে নিরু শুবে, কিন্তু সে আমার বুকের উপর মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ল।

আমিও কিছু বললাম না কিছুখন পরে আমিই বললাম এই তুমি এত সহজে সব মেনে নিলে??? কেন নিবনা, আর আমাকে যার নিজের মেয়ের মতন মানুষ করল তারা কিছু চাইল আর আমি কিভাবে না বলি। যে কোন মেয়েই তোমার মতন স্বামী পেতে চাইবে। সহজ সরল বোকা টাইপের আনরোমান্টিক যদিও, ওসব আমি ঠিক করে নিব কী করব কোন দিন কারো প্রতি তো নজর পড়েনি, ভাবতাম যা করার বউয়ের সাথেই করব এখন তুমি আসছ তুমিই সব দেখবে তবে তোমার একটা কথা আজ কিন্তু ঠিক বলেই প্রমানিত হলো কোন কথাটা????

ঐযে বলছিলা, আমার পেত্নীর মতন বউ হবে। আজ দেখ ঠিকই একটা পেত্নী আমার বুকের উপর শুয়ে আছে কী বললে আমি পেত্নী???  শাথে কিল ঘুষি চলছেই বুকের উপর। আরে তুমি পেত্নী হবে কেন, পেত্নী তো আমার বউ। তাহলে আমি কে??? সত্যিই তো তুমি কে????? ফাজলামো হচ্ছে না???? ও তুমিই তো আমার একমাত্র বউ। তাহলে কি হল??? আরে না আমার বউটা খুব সুন্দর আর মিষ্টি। একটা কিউটের ড্রাম। হুম মনে যেন থাকে। অন্য কারো দিকে নজর দিলে একদম চোখ উপড়ে ফেলব বুঝলেন মসাই???? অবশ্যই থাকবে। এখন ঘুমাও। শক্ত করে জরিয়ে ধর। এই ধরলাম।

সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত