আত্নার সম্পর্ক

আত্নার সম্পর্ক

আজ বিয়ে।দীর্ঘ ৮ বছর অপেক্ষার অবসান হচ্ছে আজ জেরিন এবং জীবনের।তাদের সম্পর্ক আজ কলেজ লাইফ থেকে শুরু করে ভার্সিটি গড়িয়ে অনেক বাধা বিপত্তি পেরিয়ে তারা আজ এক আত্নার সম্পর্ক বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছে।
প্রথমত তাদের দুই পরিবারের কেউ রাজী ছিলোনা এ বিয়েতে।রাজী না হওয়ার কারণ হলো,জেরিন এবং জীবন কলেজ লাইফে যখন সম্পর্ক চলাকালীন দুই পরিবারের মাঝে অনেক ঝামেলা হয়। এই ঝামেলা এক পর্যায়ে মামলা পর্যন্ত গড়িয়েছিলো।পরবর্তীতে স্থানীয় মানুষজন মিলে মীমাংসা করে দেয় এবং নিজ নিজ সন্তান কে ভালো ভাবে দেখে রাখতে বলে।
এত বাধার পরো জীবন এবং জেরিন দুজনে সবার চোখ ফাকি দিয়ে সম্পর্ক চালাতে থাকে।তারা এমনভাবে সম্পর্কটা এগিয়ে নেয় বাহিরের কোন মানুষ কোন ভাবে যেন সন্দেহ করতে পারে।তারা কখনো দেখা করা তো দূরের কথা মোবাইলেও কথা বলতো না।যদিও কখনো মোবাইলে কথা হতো সেটার পরিমাণ এক থেকে দুই মিনিটের বেশি নয়।ইন্টারনেটের এ যুগে তারা কখনো ফেসবুক,হটসঅ্যাপ,ইমো,ভাইভার কোনটাতেই নিজেদের সংযোগ ছিলোনা। তাদের সংযোগ ছিলো আত্নার, তাদের সংযোগ ছিলো মনের।
পড়াশোনা চলাকালীন এক পর্যায়ে জেরিনের বিয়ে দেওয়ার জন্য পরিবারের মানুষজন আলোচনা শুরু করে।জেরিন খুব চালাক আর বুদ্ধিমতি মেয়ে হওয়ায় পরিবারকে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে পার করে দেয়।জেরিন সবসময় বাবা মাকে বলতো আমি তোমাদের একটা মাএ মেয়ে।তোমরা কি চাওনা আমি পড়াশোনা শেষ করে ভালো একটা চাকরি করি। তোমরা কি চাও আমি অন্যের ঘাড়ে বসে খাই। জেরিনের বাবা মাও একসময় জেরিনের কথায় রাজি হয়।
এদিকে ভার্সিটি শেষ করে জীবন একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি নেয়।বেতন খুব একটা বেশি না হলেও খুব একটা কম কিন্তু নয়।জেরিনো ভার্সিটি শেষ করে বিভিন্ন যায়গায় চাকরির চেষ্টা করে।এক পর্যায়ে জেরিন একটা সরকারী চাকরি পেয়ে যায়।
জেরিন চাকরী পাওয়ার কিছুদিন পর জেরিনের বাবা মা বিয়ের জন্য জেরিন কে বলতে থাকে।তারা আর অপেক্ষা করতে চায় না। কারণ একমাত্র মেয়েকে তারা সুখী দেখে মরতে চায়।জেরিন কোনভাবে পরিবার কে আর অপেক্ষা করাতে পারেনা।
একপর্যায় জেরিন ও জীবন দুজনে দেখা করে। কিভাবে পরিবারকে রাজি করানো যায় সেটা নিয়ে আলোচনা করে।যেহেতু অতীতে অনেক বড় একটা ঝামেলা হয় সেহেতু পরিবার কখনো রাজী হবে না। দুজন অনেক চিন্তায় পড়ে যায়।
জীবনকে সাথে নিয়ে জেরিন তার চাচাতো বোনের স্বামীর সাথে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করে।তাদের কথা শুনে জেরিনের চাচাতো বোনের স্বামী এতটুকু নিশ্চিত হয় যে তাদের কে আলাদা করা সম্ভব নয়।কারণ এত বড় ঝামেলার পর তারা যখন সবার চোখ ফাকি দিয়ে সম্পর্ক চালিয়ে গেছে।সুতরাং তাদের একসাথে থাকার ব্যবস্থা করাটা সবচেয়ে ভালো হবে।
জেরিনের চাচাতো বোনের স্বামী একদিন দু পরিবারে লোকজন কে দাওয়াত করে তার বাসায় নেয়।জীবনের বাবা দাওয়াত পেয়ে একটু অবাক হয়।তারাতো আমাদের কেউ না তাহলে দাওয়াত করলো কেন? দাওয়াত পেয়ে দুই পরিবারের লোকজন তার বাড়িতে যায়। দুই পরিবারের মানুষজন মুখোমুখি হয়ে যায়।যে মানুষগুলো কেউ কারো চেহারা দেখতে চায়না তারা আজ একসাথে সামনাসামনি। খাওয়া দাওয়া শেষ করে জেরিনের চাচাতো বোনের স্বামী বিষয়টা নিয়ে আলোচনা শুরু করে।আলোচনা শুনে সবাই রেগে যায়।কেউ এ সম্পর্ক মানতে চায় না। বেধে যায় হট্টগোল।শেষমেশ জেরিন এবং জীবন দুজন সবাই কে বোঝাতে চেষ্টা করে।বলতে থাকে আপনারা কি চাননা আমরা সুখে থাকি।আমাদের সুখ কি আপনারা চাননা।তারা দুজন তাদের পায়ে পড়ে কান্না করতে থাকে।তাদের কান্না শুনে, তাদের ভালোবাসা দেখে, ছেলেমেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে একপর্যায় দুপরিবার রাজি হয়ে যায়।
তাদের ভালোবাসা দিয়ে তারা দুই পরিবারকে এক করে।তাদের ভালোবাসা দিয়ে জয় করে নেয় সবার মন।
ভালো থাকুক সব ভালোবাসার মানুষ।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত