এক চুমুতে সমাপ্ত

এক চুমুতে সমাপ্ত

রুমে প্রবেশ করেই দুস্তর ডাইরিটা হাতে নিলাম। লাল কলমে লেখা একটা নোট। দেখেই খুব পড়তে ইচ্ছে হল আমার।

আজ শুক্রবার,বৃহস্পতির পরবর্তী দিন শুক্র এটা সবাই জানে। বৃহস্পতি নামটা আমার খুব প্রিয়। অবশ্য প্রিয় হবার একটা কারন তো অবশ্য আছে। তবে তা আজ গোপন রাখলাম।

এখন মাঘের সন্ধা।বিকেল শেষে গোধুলীর সরল রেখা মিশে গেছে পশ্চিমের আকাশে আর তারমধ্য দিয়েই রাত্রির আবির্ভাব। আমি এখন পড়ার টেবিলে, কিছুক্ষন আগে আমি আর বশির(ত,ভাই) একসাথে মোড়ের টি স্টলে চায়ের স্বাদ নিলাম। বশির সিগারেট টানে, যা তা সিগারেট না, এক্কেবারে গোল্ডলীপ। তার এ অভ্যাস টা আমি আজ ই আবিষ্কার করতে পারলাম। যাই হোক ওশব কথা না টানা-ই ভাল। আসলে ওর হাতে গোল্ড লীপ দেখে আমার একটা কথা মনে পরে গেল। আর তা হচ্ছে আমার আর “রিয়ার” কয়েকদিনের অসমাপ্ত প্রেম।

একদা আমার একটা ভাল বান্ধবি ছিল। যার নাম রিয়া। শুধু রিয়া বললে ভুল হবে। ওর পুরু নাম পারভিন আক্তার রিয়া। ওড় মুখে শুনেছি ওড় মা বড় আদর করে মেয়ের নাম রেখেছে পারভিন। রিয়া বলতে গেলে আমার অষ্টাদশী প্রেমিকা। তার সাথে প্রথম দেখা হয় তাদের বাড়ির চিলেকোঠায়। আমি বাড়ির পাশের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার পূর্বমুহূর্তে। রাস্তার পাশেই তার বাবার মস্ত বড় দালান। আর সেই দালানের চিলেকোঠায় চশমা চোখে দাঁড়িয়ে আছে এক বৈকেলীনি।যার পড়নে চিল বাসন্তি রঙের হলুদ শাড়ি। কাকের পালকের মত কেশ, ভিঞ্ছির আঁকা কারুকার্যের মত মুখ, চোখ যেনো সুতিক্ষ্ণ মনি। খোপায় মালা পড়া। ঠিক যেন নাটরের বনলতা সেন।

মনের অন্তরালে তার জন্যে কবিতার তাজমহল বানিয়েছি, শুধু ভাবছি কবে যে সে হবে আমার প্রিয়তমা। রিয়ার একজন ভাই ছিল। রাশেদ উনার নাম। ফুল হাতা শার্ট পড়া হাবাগোবা একটা চরিত্র। রাশেদ আমার বন্ধুর মত। একদিন রাশেদের সাথে তাদের বাড়ি যাই। সেদিন আমি রাশেদের আমন্ত্রিত অতিথী ছিলাম। ভেতরে ডুকেই মেয়েটি সামনে! রাসেদ বলল আয় পরিচয় করিয়ে দেই, “এ হচ্ছে আমার বোন পারভিন আক্তার রিয়া আর এ হচ্ছে দেলোয়ার” । তারপর আমাকে নাস্তা দিতে বলে রাশেদ ভেনিস হয়ে গেল। মেয়েটা এক মঘ কফি আনলো। আম্য দিয়ে পাশের চেয়ারে বসে পরলো।
কথা হল আমাদের মাঝে। এভাবেই আমার প্রেমময় কথা আর লেখা শহস্র চিরকুটের অনুদিয়ে গড়ে উঠে ভালবাসা নামক পরমানু। তার পর কেটে গেল কত দিন………।

রোজ না হলেও দিন অন্তর অন্তর আমাদের দেখা হত। বিকেলে রিয়া আমাদের এ দিকটায় হাটতে আসতো। রাতের অন্ধকারে পাখি যখন নিড়ে ফিরে তার সাথীর সাথে ভালবাসা বিনিময় করতো, জনশূন্য রাজপথে ভুতেরা করতো খেলা কিংবা পাপী পুরুষ যখন তার সহধর্মীনির সাথে পিজিক্স এর ম্যাথলজী কষতো ঠিক তখন কেউ চিরকুট লিখতাম আবার কেউবা পড়তো তার প্রিয়তমার দেয়া চিঠি। আমার আর ওড় মধ্যে প্রায় ঝগড়া হত, খেয়ালি মনের ঝগড়া। হয়তো সে ঝগড়া করে আনন্দ পেত।

একদিন তুমুল ঝগড়া বেধে ফেলে ও। কার কাছে যেনো শুনেছে আমি নাকি সিগরেট টানি। তাও আবার গোল্ডলীপ। আমি ওকে বললাম যে আমি এর ধারে কাছেও নেই।কিন্তু ও যে ছিল নআরাজ বান্দা। অল্পতে কি আর বিশ্বাস করে? যাই হোক অবশেষে সিদ্ধান্ত হল ওর কাছে আমাকে পরীক্ষা দিতে হবে। আর যদি আমি উর্তিন্য হই তবে আমার মুক্তি।

সে আমার কাছে আসে, খুব ভয় লাওগছিল। কাছে আরো কাছে আসে। আমার শরীর স্পর্স করে। আমার ঠোটে রাখলো তার ঠোট। আমি বুঝতে পারলাম লিপিস্টিক মিশ্রিত তার ঠোট বুঝি আমায় কামড়ে ধরবে। তারপর একের পর এক সে চুমু খেতে লাগলো। তার বিষাক্ত চুমুয় ক্লান্ত হচ্ছে আমার ঠোট। আমি জানি সে আজ ঘোরে আছে, গভীর ঘোর তার উপর ভর করেছে। কিন্তু কিছুক্ষন পর সে তার ঘোরের প্রলয় ধরতে পারে। সে বুঝতে পারে সে আজ ইশ্বরের কাছে বড়ই অপরাদি এক মানবী। “হয়তো তার বিষাক্ত চুমুটা ছিল প্রলয় মিশ্রিত অকাল বসন্ত”।

“বৈকেলীনি তোমার চুমু খেলাম বলে
অকাল বোধনে বসন্ত এলো,
কৃষ্ণচুরা অবনত হল ফুলে
প্রেম হল সমাপ্ত,
কেবল তোমার চুমু খেলাম বলে”

হিস্টোরিতে পড়েছিলাম, “হিরুসিমার বোমার কারন-ই নাকি ছিল দ্যা সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ার এর সমাপ্তির একমাত্র কারন। তাই বলা যায় তার পরীক্ষা আর ঘোরের চুমুই ছিল এ প্রেম সমাপ্তের একমাত্র কারন। এখনো আমাদের দেখা হয় মাঝে মাঝে। তবে আগের মত এতোটা ভালবাসাময় মন আর আজ নেই।

ছেলেটা লিখেই চলে ভোর অব্দি,
তারপর রক্তবর্ণ ঢুলুঢুলু চোখে
পড়তে থাকে, আস্তে আস্তে পান্ডুলিপিটা
ভরে যায় ঘিজিমিজি দাগে,
দুমড়ানো-মুচড়ানো পেজগুলোর
শেষ ঠিকানা সেই ময়লার ঝুড়ি।
এভাবেই লেখা ছিল দুস্তর ডাইরিটায় তার সমাপ্ত প্রেমের কাহীনি।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত