অন্য প্রেমের গল্প

অন্য প্রেমের গল্প

আমার মতন ছেলের জন্য অফিস ব্যাপারটা বেশ বিভীষিকার মতো আমার মতন ছেলের মানে ? আমায় আপনি ওই মায়ের বাধ্য ভালো ছেলেদের দলে ধরতে পারেন। ছোট বেলা থেকে মন দিয়ে পড়াশোনা করেছি, কারুর সাথে মারামারি করিনি, ক্লাসের কিছু বিচ্ছু ছেলে বদমাইশি করলে স্যার কে বলে দিয়েছি, মা যা খেতে দিয়েছে মুখ বুজে খেয়েছি, বাবাকে আপনি বলে সম্মানের সাথে সব সময় কথা বলেছি, বয়েজ স্কুল হওয়ার দরুন, মেয়েদের সাথে আলাপ কম, আর রাস্তার মেয়েদের দিকে কোনোদিন বাজে দৃষ্টি তো দূরে থাক, চোখ তুলেও তাকাইনি, ভালো রেসাল্ট করেছি, প্রথম ইন্টারভিউ তে চাকরিটাও বাঁধিয়ে ফেলেছি, আরও লাগবে নাকি ?

সাধারনত মায়েদের ভাষায়, এই গুলোই তো ভালো ছেলের লক্ষণ নাকি ? কিন্তু অফিসের ট্রেনিং-এর সময় মুম্বাইয়ের গেস্ট হাউসে আমার মত সারা ভারত থেকে আরও ৩৬ জন এসেছিল। ওরাও আমার মত ভালো নাম্বার পেয়েছে, যে যার নিজের কলেজের ভালো ছাত্র, কিন্তু ওরা আমার মত “সুবোধ বালক” নয় প্রথমদিনেই বুঝে গেলাম, ভালো ছেলের সংজ্ঞা মায়ের কাছে আলাদা, আর বাকি দুনিয়ার কাছে আলাদা। এখানে, না তো আছে মা, না আছে স্কুল কলেজের মাস্টাররা, যাদের কাছে নালিশ করা যাবে, মানে লড়াই টা করতে হবে নিজেকেই। বুঝলাম আজকের যুগে, ভালো ছেলে মানে সুবোধ বালক নয়, ভালো ছেলে হতে গেলে স্মার্ট হতে হবে। কিন্তু এটা তো কোন স্কুলে শেখায় না, কোনো বইও নেই এই সাবজেক্টের তাহলে শিখবো কি করে ?

উত্তর বসেছিল আমার ট্রেনিং হলের বাঁ দিকের বেঞ্চে- নাম বিয়াস, দিল্লির কোন একটা যেন কলেজ থেকে এসেছে, মেয়েরা তো দূরে থাক, ছেলেরাও ভয় পাওয়া শুরু করে দিয়েছে তাকে প্রথম দিন থেকেই। অসাধারণ সৌন্দর্যের অধিকারিণী, কথা শুনে মনে হয়ে যেন ওকালতি পাস করে এসেছে, যে কোন সমস্যার এক কথায় সমাধান, কিন্তু তার হাসি তে না আছে কোন দম্ভ না আছে কোন তাচ্ছিল্য।

ঘটনা টা শুরু হল, ট্রেনিংএর পঞ্চম দিন। আগে বলে রাখি- আমাদের ট্রেনিং সাকুল্যে ২৮ দিনের, তারপর যে যার মত পোস্টিং পেয়ে যাবে, আলাদা আলাদা শহরে, আলাদা আলাদা ডিপার্টমেন্ট এবং ডিভিসানে। তো যেটা বলছিলাম, আমাদের ট্রেনিংএর পঞ্চম দিনের মধ্যে আমাদের গ্রুপের বেশির ভাগ ছেলেরা বুঝে গেছিলো , যে আমি তাদের সবচেয়ে ভালো টাইম পাস হতে পারি। যে কোন ব্রেকে এসে আমায় বিরক্ত করা যেন নিয়ম হয়ে গিয়েছিলো- কিন্তু সেদিন ভগবান মনে হয় আমার দিকে মুখ তুলে চেয়েছিলেন। তামিলের রাজগোপালান আর পাঞ্জাবের সুখবীর আমার সাথে লাঞ্চ ব্রেকে মজা করছিল- এটা আবার মনে করিয়ে দি, মজা ওরা করছিল, আমি না, আমি শুধু মুখ বন্ধ করে সহ্য করছিলাম। হঠাৎ করে কোথা থেকে জানি না, বিয়াসের আবির্ভাব ঘটলো ঘটনাস্থলে- এই তোরা সব সময়ে এই ভালো ছেলেটার পিছনে লাগিস কেন রে ?

সেদিন ২ টো কথা বুঝলাম- এক, কিছু, যদিও সে সংখ্যা টা খুবই লঘু, সুন্দরীদের কাছেও, ভালো ছেলের সংজ্ঞাটা মায়েদের মতই। দ্বিতীয়ত ভগবান আজও দ্রৌপদীর সম্মান রক্ষার খাতিরে অবতার গ্রহণ করেন সেটা আমার ক্ষেত্রে বিয়াস রূপে।

সুখবীর- তোর সমস্যা কোথায় ?? বাঙালি বলে গায়ে জ্বালা ধরছে নাকি ??
বিয়াস- তোদের ভালোর জন্য বলছি, অকারণ কোন আগ্নেয়গিরি কে খোঁচাস না, যে দিন ফেটে পড়বে জ্বলে যাবি আরে ক্ষমতা থাকলে যারা রুখে দাঁড়াতে পারে তাদের সাথে ভিড়ে দেখা দেখি কত দম।

রাজগোপালান – তুই ভিড়তে দিবি তোর সাথে?
বিয়াস- তোর ক্ষমতায় কোলাবে নারে ইডলি, মাছের সাথে লড়ার
তারপরের বচসা আমার মনে নেই, আমি যেন কোথাও হারিয়ে গিয়েছিলাম। প্রথমবার আমি কাউকে দেখছিলাম আমার জন্য অন্যদের সাথে ঝগড়া করতে- এটা কত বড় পাওনা তা বলে বোঝাতে পারবো না যাই হোক কিছু সময় পরে ওরা দুজন যখন চলে গেলো, আমি মন থেকে বিয়াস কে ধন্যবাদ বলতে চাইছিলাম, কিন্তু আমার শব্দকোষ বিদ্রোহ ঘোষণা করায় আমার মুখ থেকে একটা শব্দও বেরোল না। আর ঠিক সেই সময়ে আমার চোখ সেই বিদ্রোহের ধার না ধেরে, নিজের সব কথা বলে দিলো বিয়াস কে – আর বিয়াস যাওয়ার আগে একটা স্মিত হাসি মুখে আমায় বলে গেলো- ইটস ওকে, ইউ আর ওয়েলকাম।

সেদিন এটাও বুঝলাম, যে আমার চোখ ও নাকি কথা বলে, আর সেটা বিয়াসের মত সুন্দরীরাও নাকি শুনতে পায়। সে দিনই ছুটির পরে যখন গেস্ট হাউসের দিকে হাঁটছিলাম, বিয়াস পিছন থেকে ডাকল- এই অর্জুন, একটু শোনো।

আমি- হ্যাঁ বলো।
বিয়াস- তুমি ওদের কথার উত্তর দাও না কেন ?
আমি- পারি না, শিখিনি এই সব জানি বোকা বোকা শোনাচ্ছে, কিন্তু এটাই সত্যি।
বিয়াস- সাপ কে সব সময় কামড়াতে হয় না, কিন্তু ফনা তুলে ফোঁস না করলে, যে একটা ৪ বছরের বাচ্চাও ঢিল ছুড়ে মেরে চলে যাবে এটা মাথায় রেখো।

আমি- তুমি আমায় শেখাবে ?
বিয়াস- কি?
আমি- ফোঁস করা ?

বিয়াস হাহা করে হেসে- তোমার মত ছেলেরা চাইলে সব পারে, তোমায় কাউকে শেখাতে লাগবে না।
এটা বলে সে চলে গেল- ছেড়ে গেল দুটো প্রশ্ন- ও কি আমার থেকে সুরক্ষিত দূরত্ব বজায় রাখতে চাইছে নাকি ও সত্যি মনে করে যে আমি পারবো ??

উত্তর খুঁজতে আর বুঝতে কেটে গেলো সারা রাত, কিন্তু পরের দিন সকালে যে ঘর থেকে বেরলো, সেটা পুরনো অর্জুন নয় – এটা বাকি সবার বুঝতে বেশি সময় লাগলো না। সেদিন লাঞ্চে, সুখবীর এসে বলল- কি রে বল আজ কি কি পড়াল স্কুলে সকাল থেকে?? আয় তোর পড়া ধরি।

আমি- ভাই আমি রবীন্দ্রনাথের বংশধর, আমরা স্কুলে যাই না, যা বলি, আর লিখি, তার ওপর স্কুল আর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম তৈরি হয় তো আয় আমি তোর পড়া ধরে দেখি, তুই আমার স্কুলে ভর্তি হওয়ার যোগ্য হয়েছিস কিনা?

পুরো ঘরে একটা নিস্তব্ধতা ছিল কিছু সময়ের জন্য, সবাই আমায় প্রথম বার উত্তর দিতে দেখছিল আর সেই নিস্তব্ধতার বুক চিরে কানে এলো একটা হাততালি বিয়াস দাঁড়িয়ে হাত তালি দেওয়া শুরু করলো – যদিও সেটা কিছু সময়ের মধ্যে সমবেত আকার ধারন করলো, কিন্তু আমার নজর এখনো শুধু তার দিকেই ছিল। হঠাৎ করে যেন পুরো গ্রুপ আমার বন্ধু হয়ে গেলো, আমার দুঃসময়ের অবসান ঘটলো সবাই ভাবল এটা আমার নবীন রূপের ফল, কিন্তু আমি জানি এই সিনেমার আসল ডিরেক্টার কে।

সেদিন ফেরার সময় আবার বিয়াস পিছু ডাকল- আরে রবীন্দ্রনাথের বংশজ, একটু দাঁড়াও।
আমি- আরে তুমি এরকম বলো না, ওটা তো ওদের কে শান্ত করার জন্য বলেছিলাম

বিয়াস- গুরু তুমি তো ফাটিয়ে দিয়েছ, সবাই আজ সারা দিন শুধু তোমার কথাই বলে যাচ্ছে। আমার খুব ভালো লাগলো, তোমায় এই ভাবে রুখে দাঁড়াতে দেখে।

আমি জানি না কোথা থেকে এতো সাহস পেলাম কিন্তু কথা টা বলেই ফেললাম- তার মানে কি আমি তোমার বন্ধুত্ব অর্জন করার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি বলে ধরতে পারি ?

বিয়াস- বাবাহ পারি না যে ছেলের গত কাল অবধি, কথার আড় ভাঙেনি, তার মুখ থেকে এরকম ডায়লগ জাস্ট ভাবা যায় না।

কথা টা বলে বিয়াস নিজের হাত আমার দিকে এগিয়ে দিলো – প্রথম বার আমি কোন মেয়ের সাথে হাত মেলাচ্ছিলাম- আপনাদের সেই মুহূর্তের বর্ণনা শব্দে দিয়ে ওঠার ক্ষমতা আমার নেই। পরের দিন থেকে আগামী প্রায় ২০ দিন আমি আর বিয়াস সারাটা গ্রুপ কে মাতিয়ে রাখলাম। অনেক বার ভাবলাম বিয়াস কে বলে দি নিজের মনের কথা- আশা করি আপনারা সেটা এতোক্ষণে বুঝে গেছেন কিন্তু সে গুড়ে বালি। বিয়াস মনে করে যে এই প্রেম ট্রেম নাকি ন্যাকামি। হাত ধরে ঘোরা, বাদাম ভাজা খাওয়া টা জীবন নয় কিন্তু আমি যে কটা সিনেমা দেখেছি, প্রেম বলতে এই গুলোই শিখেছি কিন্তু কিছু তো আর করার নেই, তাই আবার মুখ বন্ধ করে বিয়াসের সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত কে গুছিয়ে রাখতে লাগলাম।

সময়, বিশেষ করে ভালো সময়, যেন ঝড়ের বেগে কেটে যায় – আমাদের ট্রেনিং যেন হঠাৎ করে নিজের শেষ পর্যায় এসে পৌঁছল। শেষ দিন নাকি আমাদের পার্টি, আর পার্টি হবে লোনাভলার একটা রিসর্টে। আমরা দুপুর বেলা মুম্বাই থেকে বেরিয়ে বিকেলে পৌঁছলাম সেখানে।

সবাই নিজের ঘরে গিয়ে সেজে গুজে সন্ধে ৭ টায় আবার জমায়েত হলো হল ঘরে। আবার যেন সবার মধ্যে স্কুলের শেষ দিনের দুঃখের সাথে একে অপরের সাথে কথা বলা টা দেখতে পাচ্ছিলাম। ঠিক সেই সময়, বার খুলে গেলো আর ডি জে ঝিং চাক গান বাজাতে শুরু করায়, সব দুঃখ যেন কোথাও হারিয়ে গেলো ভুল ভাল হাত পা ছোড়ায়।
রাত তখন প্রায় ১১ টা। আমি আর বিয়াস বাইরের বাগানে দাঁড়িয়ে গল্প করছি- ইচ্ছে ছিল সারাটা রাত এই ভাবেই কাটাবো- কারণ ? কারণ হল আমার দুর্ভাগ্য আমার পোস্টিং কোলকাতায়, আর বিয়াসের দিল্লী। জানি না আবার কবে দেখা হবে বলতে ওকে কিছু পারবো না, এটা জানি, আসলে হিতে বিপরীতের ভয় টা বেশ ছিল সেই মুহূর্তে। বিয়াস কত কিছু বলছিল আমায় আমি শুনছিলাম সব, কতটা বুঝছিলাম, এটা বড় প্রশ্ন বটে। হঠাৎ করে আমাদের গ্রুপের সবচেয়ে বদজাত ছেলে নিখিল আর তার দুই সাগরেদ, যাদের নাম আজ আর মনে নেই, এসে হাজির ওখানে।

নিখিল নেশায় চুর অবস্থায় – দাদা, তুই একটু যা তো, আমার একটু কথা আছে বিয়াসের সাথে। (সারা ভারতের সমস্ত অবাঙ্গালীদের কাছে, বাঙ্গালীরা দাদা)

আমি- নিখিল, এখন যা পরে কথা হবে, তুই ঠিক অবস্থায় নেই।
নিখিল- তুই যা দাদা তুই কি ওর বডিগার্ড নাকি রে ? যা বলছি

আমি সবে ভাবা শুরু করেছি, যে আমার কি করা উচিৎ, ঠিক সেই সময় আমি আমার জীবনের সবথেকে বড় মানসিক বুস্ট টা পেলাম বিয়াস আস্তে করে আমার হাত টা ধরে নিল, তার চোখ বলছিল যে সে নিজে কে নিরাপদ মনে করছে না আসলে দোষ টা আমারই, আমি আজ প্রথম বার নিজেও একটু খেয়েছিলাম, আর ওকেও খাইয়েছিলাম। জানি বিয়াস আমার ওপর ভরসা করে তাই আমার কথা মেনেছে, কিন্তু সে নিজে এই মুহূর্তে ওই জানোয়ার টার সাথে কথার কচকচি তে যেতে চাইছে না।

ঠিক সেই সময় নিখিল বিয়াসের হাত টা ধরে কি একটা যেন বলতে গেলো, আর আমি সত্যি বলতে পারবো না যে আমার মধ্যে হঠাৎ সিঙ্ঘামের অজয় দেবগান কোথা থেকে জেগে উঠলো- না হলে আমি ওই দশাসই নিখিল কে এক চড়ে মাটি তে ফেলতে পারি ?? আরও অবাক করা যেটা, সেটা হল, তার পরের মুহূর্তে আমি নিজে গিয়ে তাকে তুলে ওর সাথের ছেলেদের বললাম- নিয়ে যা ভাই কে, ও এখন নিজের মধ্যে নেই।

বিয়াস অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো আর এই তাকানো চলল, ওকে ওর রুম অবধি পৌঁছে দেওয়া অবধি। আমি গুড নাইট বললাম, কিন্তু উত্তর পেলাম না। পরের দিন সকালে আমরা মুম্বাই তে ফিরে যে যার নিজের পোস্টিংএ চলে গেলাম। সকালে ফেরার সময় বিয়াস বাসে আমার পাশেই বসেছিল, কিন্তু পুরো দু ঘন্টার রাস্তায় কোনো কথা হয়নি আমার ফ্লাইট ছিল দুপুর ১২ টায় আর ওর বিকেল পাঁচটায় তাই এয়ারপোর্টেও দেখা হয় নি।

কি ভাবছেন? ব্যর্থ প্রেমের গল্প এখানেই শেষ? আমিও তাই ভাবতাম ফিরে আসার ৪ মাস পর অবধি, কিন্তু এক দিন হঠাৎ করে তার ফোন এলো। আমাদের কাছে একে অপরের নাম্বার ছিল না ভাবতে অবাক লাগলেও, এটাই সত্যি, তখন এই মোবাইল ব্যাপারটা ওতটাও নরমাল ছিল না।

যাই হোক, কথা যখন এক বার আবার নতুন করে শুরু হল, আমার মনে আশার নতুন একটা প্রদীপ যে প্রজ্বলিত হয়নি বলা ভুল হবে কিন্তু কথা হতো একদম সাধারণ বন্ধুদের মত। এরকম ভাবে আরও ৩ টে মাস কেটে গেলো, আর তারপর এলো আমাদের অ্যানুয়াল কনফারেন্সের সময়। সে বারের কনফারেন্স ছিল হায়দ্রাবাদের রামোজী ফিল্ম সিটিতে। বিয়াসও আসবে।

এক এক করে সব ব্রাঞ্চ পৌঁছল গন্তব্যে। আমার চোখ সারাক্ষণ খুঁজে যাচ্ছিল শুধু এক জন কে অবশেষে তার দেখা মিলল, কিন্তু কথা বলতে পারলাম না। বিয়াস আমাদের বসের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল। শুধু তখন নয়, তার পরে আরও ৩-৪ বার দেখলাম তাকে, কিন্তু ও যেন আমায় দেখেও দেখতে পেলো না। মনে হল, হয়তো আমি ওকে অকারণ বিরক্ত করার চেষ্টা করছি, তাই আর ওখানে থাকিনি। গালা ডিনারের পরে যে যার নিজের ঘরে চলে যাওয়া হল, একটু তাড়াতাড়িই, কারণ পরের দিন সকাল ৮ টায় মিটিং শুরু।

রাত তখন প্রায় ১২ টা- আমার ফোনে একটা ফোন – বিয়াস – আমি একটু অবাক হয়ে- হ্যালো

বিয়াস- ঘুমিয়ে পড়েছিলে নাকি ??
আমি- না বলো।
বিয়াস- কথা বললে না কেন ?
আমি- তোমায় অকারণ বিরক্ত করতে চাইনি, তুমি ব‍্যস্ত ছিলে।
বিয়াস- তাই ? তুমি আমায় বিরক্ত করতে পারো বলে তোমার মনে হয় ?
আমি- মানে? বুঝলাম না কিছু ?
বিয়াস- বুঝতে হবে না, বাদ দাও। যেটা বলছি মন দিয়ে শোনো

– হোটেলের সামনের যে বাগান টা আছে, তার একদম শেষ মাথায় একটা দোলনা আছে, আমি ওখানে বসে তোমার অপেক্ষা করছি, এসো তাড়াতাড়ি।

এই কথা শোনার আগে আমি নিজেও জানতাম না যে আমার মধ্যে অভিমানও জাগতে পারে- কেন ? আমার অপেক্ষা করার কি দরকার ? কথা বলার তো অনেক সময় ছিল, তখন কিছু বললে না, এখন আর অপেক্ষা দেখিয়ে কি হবে ?

ওদিক থেকে একটা মিষ্টি গান ভেসে এলো-

আমি তোমার সাথে একলা হতে চাই
তোমায় ছুঁয়ে স্বপ্ন সেই স্বপ্ন জুড়ে রঙ
রঙের নেশা গন্ধে ভালবাসায় নতুন হতে চাই
আলো আর নির্জনতায় তোমার সাথে একলা হতে চাই
আমি তোমার সাথে একলা হতে চাই…

এটা শোনার পরে নাতো আমার নিজের অভিমান কে ধরে রাখার ক্ষমতা ছিল আর না তো ছিল অন্য কোন কথা বলার ইচ্ছে ফোন টা কে ধরেই, ওই রাতের ড্রেস পরেই ছুটলাম ওই বাগান আর তার ওই দোলনার দিকে।

তারপর ? সেটা বলবো না হ্যাঁ জানি আপনারা ভাবতে পারেন, যে বলবেই না যখন পুরো গল্প টা শোনানোর কি দরকার ছিল ? কেন লিখলাম এই সাত কাহন ?
এটার উত্তর দেবো

– সেই রাতের এতো বছর পর কাল রাতে কিছু হলো যার জন্য আপনাদের সামনে এই ঘটনা টা ভাগ করে নেওয়া। গতকাল রাতে ল্যাপটপে কিছু একটা যেন করছিলাম। মেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে, মাথা টা সত্যি যেন জ‍্যাম হয়ে গিয়েছিলো চাপে। রাত তখন প্রায় ১২ টা… হঠাৎ করে বিয়াস আমার কানের পাশে এসে বলল –

চলো, শুতে চল, বাকি টা কাল করো, তোমায় দেখে মনে হচ্ছে না যে তোমার মাথা এখন কাজ করছে।

আমি- তুমি যাও, আমি আসছি।
বিয়াস- না, এখুনি এসো।
আমি- কেন ?
বিয়াস – আমি তোমার সাথে একলা হতে চাই…

আমি যেন আবার হঠাৎ করে অনেক বছর পিছনে একটা গভীর কালো রাতে, একটা বাগানের কোনের একটা দোলনায় দুলে উঠলাম আর তার পরের মুহূর্তে নিজের ল্যাপটপ বন্ধ করে ঘরের অন্ধকারে আমরা দুজনে আবার কোথাও যেন হারিয়ে গেলাম বলতে পারেন আবার নতুন করে দুজনে মিলে একলা হলাম !

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত