অনামিকা

অনামিকা

অনামিকাকে ভুলে যেতে হবে..! নয় বছরের সম্পর্ক আমাকে ভুলে যেতে হবে! এটা কি করে সম্ভব..!?

এটা আমি ভাবতেই পারিনা। কোনোদিন কল্পনাও করিনি। একটি সম্পর্কের শেষ পরিনতি হয় বিয়ে না হয় ব্রেকআপ।

আমাদের সম্পর্কটাও সেই প্রান্তে এসে দাড়িয়েছে।
.
কোনো সম্পর্ক শুরুর আগে অথবা শুরুর সময় কেউ এটা ভাবেনা যে, সম্পর্কটির শেষ পরিনতি কি হবে..!

আমাদের বেলাও ভাবা হয়নি। আর আমাদের সম্পর্ক যখন শুরু হয়, তখন তো আমার দুজনেই অনেক ছোট।

সম্পর্কের শেষ পরিনতি ভাববার তো প্রশ্নই আসেনা। আমাদের জায়গায় অন্য কেউ থাকলেও হয়তো শেষ পরিনতির কথা ভাবতোনা।

কচি দুটি প্রাণ শেষ পরিনতির কিইবা বুঝবে..!?
.
আজ বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে বুঝতে পারছি, কোনো সম্পর্ক শুরু করার আগে একটু ভাবা উচিৎ এর শেষ পরিনতি কি হবে।

আসলে কচি বয়সে এতকিছু ভাববারও সময় থাকেনা। তখন তো মনের মধ্যে শুধু ভাললাগাই কাজ করে।

বাস্তবতা কি জিনিস এটা বুঝবার বয়স তখন হয়না।
.
বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে, বাবা মা ছেলেকে বিয়ে দিবে এটাই স্বাভাবিক।

মা বাবা আমাকে বিয়ের কথা বললে আমি তাদের সরাসরি অনামিকার কথা জানিয়ে দেই।

যদিও তারা আগে থেকেই জানতো আমার আর অনামিকার সম্পর্কের কথা।

কিন্তু আমি যখন আমাদের সম্পর্কের কথা জানালাম, তারা সরাসরি না বলে দিলো। বললো অনামিকাকে তারা ঘরের বৌ হিসেবে মেনে নিতে পারবেনা।
.
আমাদের সম্পর্ককে শুধু মা বাবাই নয়, কেউই মেনে নিতে চাইলোনা। এমনকি অনামিকার পরিবারেরও কেউ না।

তাহলে কি আমাদের এতোদিনের সম্পর্কের কোনো মূল্য নেই..!? তবে কি আল্লাহ’তায়ালা আমার আর অনামিকার মিলন লিখে রাখেননি..!?
.
মা বাবার মনে কষ্ট দিয়ে একা একা বিয়ে করবো, এটাও ভাবতে পারিনি কোনোদিন।

তাই নিজেকেই তিলে তিলে শেষ করে দিবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। অনামিকাকে ভুলতে হলে নিজেকেই যে ভুলে যেতে হবে।

তাই ভাবলাম নিজেকে শেষ করেই অনামিকাকে ভুলতে হবে।
.
আমার মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিলো অনামিকাকে চিরতরে ভুলে যেতে হবে..!

অনামিকাকে আমার জীবন সঙ্গিনী করতে পারবোনা…! কি করে সম্ভব এটা..!

নয় বছরের সম্পর্ক ভুলে যাওয়া কি এতো সোজা..!? অন্য কারো কাছে সম্ভব হলেও আমার কাছে অসম্ভব ছিলো।
.
রাত হলে ঘুম যেন আমার থেকে পালিয়ে বেড়ায়। কিছুতেই ঘুম নামক জিনিসটা ধরা দিতোনা আমার চোখের পাতায়।

কত যে নির্ঘুম রাত পার করেছি তার হিসেব নেই। তাই বাধ্য হয়ে ঘুমের ওষুধ সেবন করা শুরু করি।

একটা সময় এটা আমার নেশায় পরিণত হয়। আর নিকোটিনের ধোয়া তো আমার চব্বিশ ঘন্টার সাথী ছিলো।
.
বেশ কয়েকমাস এভাবে চললো। আমাকে দেখে সবাই কেমন যেন অবাকই হয়ে গেলো। সবার মুখে একই কথা..!

আমি এতো শুকিয়ে গেছি কেন..!? চোখের নিচে কালো দাগ পরে গেছে কেন..!?

একদিন আয়নার সামনে গিয়ে নিজেকে খুব ভালভাবে দেখলাম। সত্যিই অনেকটা বদলে গেছি আমি..!
.
কিন্তু একটা জিনিস আমি কিছুতেই বদলাতে পারিনি..!

যতই ভুলে যাবার চেষ্টা করেছি, ততই যেন বেশি বেশি মনের মধ্যে এসে বসে থাকতো অনামিকা।

আসলে ভালবাসার মানুষকে ছাড়া জীবটা যে সত্যিই অচল, আমি এটা প্রতি মূহুর্তে অনুভব করেছি।
.
একটা সময় মা বাবা আমার শারীরিক অবস্থা দেখে চিন্তায় পড়ে গেল।

তারা যদি আমার ভেতরের অবস্থা দেখতে পেত, হয়তো সহ্য করার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলতো তারা।

অবশেষে অনেকটা নিরুপায় হয়েই আমার মা বাবা অনামিকাকে ঘরের বৌ করে আনতে রাজি হলো।
.
আমি বাবার মুখের দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারলাম বাবা তার সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে,

সন্তানের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে অসহায় হয়ে অনামিকাকে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। তখন কেন যেন মনে হলো আমি অনেক বড় অপরাধী।
.
সেদিন হঠাৎই বাবাকে বুকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কেঁদে দিলাম।

বললাম, বাবা আমি মনে হয় অনেক বড় অপরাধ করে ফেললাম। আমাকে ক্ষমা করে দাও।

বাবাও আবেগাপ্লুত হয়ে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো… “তোর কষ্ট আমি সহ্য করতে পারিনিরে বাবা।

সন্তানের কষ্ট যে কোনো মা বাবাই সহ্য করতে পারেনা। তোর সুখই যে আমাদের সুখ।”
.
বাসরঘরে অনামিকাকে বলেছি, আমার মা বাবাকে কখনও কষ্ট দিওনা।

তারা যেন তোমার ব্যবহারের মুগ্ধ হয়ে বলে.. আমার সন্তান ভুল মানুষকে ভালোবাসেনি। আমি যেন তোমাকে নিয়ে গর্ব করতে পারি।
.
জানিনা ও আমার কথা রাখতে পারবে কিনা.! তবে ওর জায়গায় আমি থাকলে যথাসাধ্য চেষ্টা করতাম শ্বশুর শ্বাশুড়ির মুখে হাসি ফুটাতে।

কারণ আমি দেখেছি, আমি অনুভব করেছি মা বাবাকে সন্তানের জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে..!
.
আলহামদুলিল্লাহ্! অবশেষে অনামিকাকে পেয়েছি। আমাদের এতো বছরের ভালোবাসাটা আজ স্বার্থক হয়েছে।

একটা জিনিস দেখে ভীষণ খুশি হয়েছি আমি। অনামিকা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ শুরু করেছে।

সত্যিই ভীষণ খুশি হয়েছি আমি। খুশি হয়েছেন আমার মা বাবাও…!
.
তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা আরও বেড়ে গেলো অনামিকা..!

সত্যিই অনেক ভালোবাসি তোমাকে। অনেক…!

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত