পবিত্র ভালোবাসা

পবিত্র ভালোবাসা

:ফেসবুকে এত কি কর তুমি?
আমি কিছুটা বিরক্ত হয়ে কথাটা বললাম মিহিনকে। ও চুপ করে থাকল। কিছু বলল না।মোবাইলের দিকে তাকিয়ে কি জানি করছে।

খুব ব্যাস্ত মনে হচ্ছে।আমি যে ওকে কিছু বলছি সেটা ওর মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে না।আমি আরেকটু বিরক্ত হয়ে বললাম,
:কি আছে এই ফেবুতে? কি এত মজা পাও হুম?কার সাথে এত চ্যাটিং কর?
ও চট করেই মাথা তুলে তাকাল আমার দিকে।মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে মেয়েটা রেগে যাচ্ছে।মোবাইলটা হাতে রেখে নাক ফুলিয়ে বলল
: প্রতিদিন এই একই কথা শুনতে ভালো লাগে না তাসফি। সারা দিন অফিস করে বাসায় এসে রান্না করি।এতটুকু সময়ও পাই না রেস্ট নেওয়ার।

ফেসবুকিং করা তো দূরের কথা । বাসায় আসলে এই সময়টাতে একটু ফ্রি হই।তাই একটু ফেসবুকিং করি। জাস্ট এতটুকুই।

এটাও কি তোমার সহ্য হয় না? নাকি সন্দেহ কর? কোনটা? আমি বিয়ের পর থেকেই দেখে আসছি তুমি আসলেই একটা সন্দেহবাদি।

কথা প্যাঁচানোর স্বভাব তোমার।ধুরর! মুডটাই অফ করে দিলে।
খুব তাড়াতাড়ি কথা গুলো বলল ও।একটু চেঁচিয়ে বলল।বলেই মোবাইলটা হুট করেই বন্ধ করে দিল। আমি কিছু বললাম না।

চশমাটা ঠিক করে ওরল্ল দিকেলল্যম তাকিয়ে থাকলাম।কিছুটা ব্যাথা পেলাম হৃদয়ে। কিছুটা ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে।

সেখানে চিনচিনে ব্যাথা করছে।আমি তা লুকিয়ে ফেললাম।বাইরে প্রকাশ করলাম না।খুব চেষ্টা করলাম যেন ও বুঝতে না পারে।

আমি ওর দিকে সরল দৃষ্টিতে তাকালাম। বললাম,
:অফিস আমিও করি।তুমি হয়ত রান্নাটা একটু বেশি কর।রান্না আমি পারলে আমিও রান্না করতাম।প্রতিদিন তুমি এই সময় শুধু ফেবুতেই থাক।

আর আমি থাকি একা।খুব বোর লাগে।বাইরেও যেতে পারি না তোমাকে রেখে।তুমি বসিয়ে রাখ।বাসায় মানুষ বলতে শুধু তুমি আর আমি।

সেই তুমিই যদি আমার সাথে কথা না বল তাহলে আমি কি করব বল।বল কি করব?
আমি ওর দিকে তাকিয়ে কথা গুলো বললাম।ঠিক ওর মুখ বরাবর বসলাম।ওর রাগত চাহনিটা ভেঙ্গে মায়ার চাহনি দেখা দিল।

কিছুটা অপরাধ বোধ কাজ করছে ওর মাঝে সেটা আমি ঠিকি বুঝতে পেরেছি।কিন্তু আমি যে বুঝতে পেরেছি সেটা ওকে বুঝতে দিলাম না।

আমি দেখলাম ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে।খুব মায়া ভরা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি আর থাকলাম না সেখানে।

ওর সামনে থেকে উঠে এলাম।ওকে ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি ওকে আমি।কিন্তু তাই বলে ও আমাকে এভাবে আঘাত করতে পারে না।

এভাবে ক্ষত করতে পারে আমার হৃদয়টাকে।ওকে এই হৃদয় আঘাত করার জন্যে দেওয়া হয় নি।একটু ভালোবাসার জন্যে দেওয়ার দিয়েছি।

ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখার জন্যে দিয়েছি ওকে।ওকে আঘাত করতে দেওয়া হয় নি।আঘাত দেওয়ার কয়েকটা শ্রেনি আছে।

কিন্তু এভাবে ও আঘাত দিতে পারে না।বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম।কিছুদুর হাঁটলাম।একটা সিগারেটও খাওয়া হয়েছে এর মাঝে।

খুব লুকিয়ে।সাবধানে! যেন কোন ভবেই মিহিন টের না পায়।

খাবার টেবিলে দুজনেই বসে আছি।আমি মাঝে মাঝে আড়চোখে মিহিনকে দেখছি।আর অল্প অল্প করে ভাত মুখে দিচ্ছি।মিহিন খুব কথা বলছে।

কোথায় কি করছে,কি হয়েছে,ছোট বেলায় কি করেছে এই জাতিয় অনেক কথা বলছে মিহিন।যেগুলো আমি আগেও বেশ কয়েকবার শুনেছি।

তবুও বলছে।যেন ও আমাকে একটু ইম্প্রেজ করতে পারে।যেন আমার আঘাত তা পুরিয়ে যায়।কিন্তু এই আঘাত এইসবে শুকাবে না মিহিন।

কোন ভাবেই না।ও কথা বলছে।আমি মাঝে মাঝে হুম হাম করছি।ও অনেকটাই বুঝতে পারছে যে আমার মন ভালো নেই।

আমি যে বিষন্ন সেটা মিহিন ঠিকই ধরতে পেরেছে।

আমি সোফায় বসে টিভি দেখছিলাম।একটু পর মিহিন এল।এসে ঠিক আমার কোলের উপর বসল।বসে নিজের মোবাইল বের করল।

গেলারিতে গিয়ে নিজের বেশ কয়েকটা ছবি ও আমাকে দেখাল।কিছু হাস্যকর ছিব দেখাল।যা দেখে ও খুব হাসল। আমি মৃদু হাসলাম।

কিন্তু সেই মৃদু হাসিতেও কোন প্রান ছিল না।যা মিহিন বুঝতে পেরেছে।কিছু সময় আমাদের মাঝে নিরাবতায় কাটল।কেউ কিছু বলল না।

ও আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। কিন্তু আমি ওর দিকে বিন্দু পরিমানেও তাকালাম না।টিভির দিকে ঠায় তাকিয়ে রইলাম।

দুজনেই শুয়ে আছি।কেউ কিছু বলছে না।একজন আরেক জনের বিপরিতে শুয়ে আছি। ও বেশ কয়েকবার আমার দিকে ফিরেছে।

আমার দিকে তাকিয়েছে।কয়েকবার ঢাক দিল।কিন্তু আমি উত্তর দিলাম না।বেশ কিছুক্ষণ পর আমি শোয়া থেকে উঠে গেলাম।ভালো লাগছে না।

যেখানে ওকে জড়িয়ে না ধরলে আমার ঘুম আসে না সেখানে একা একা আমার কিভাবে ঘুম আসবে।নাহ্! ঘুম আসবে না।তাই উঠে গেলাম।

ছাদে গিয়ে একেবারে চাঁদের দিকে মুখ করে তাকিয়ে রইলাম।চাঁদের আলো আমার মুখে পড়ছে।

অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করলেও বুকের সেই ক্ষতটা বার বার নড়ে উঠছে।যেন বার বার যেন জানান দিচ্ছে যে তোমার ভালো লাগার সময় এখন না।

তুমি এখন কোন ভাবেই কোন কিছু ভালো লাগাতে পারবে না।তোমার বুকের আঘাতটা এখনও শুকায় নি।তাই তুমি চাইলেই সেটা পারবে না।

হঠাৎ ই একটা মিষ্টি সুভাষ পেলাম।খুব চেনা সেই গন্ধ। খুব ভালোবাসি গন্ধ টাকে।আমি পাশে তাকাতেই দেখলাম মিহিন দাঁড়িয়ে আছে।

কিছুসময় ও চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকল।আর আমি ওর দিকে।তারপর আমার দিকে চাইল।বলল,
:খুব বেশি মন খারাপ করেছে তোমার?
আমি ওর দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম।অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম,
:নাহ্! আমার মন খারাপ করে নি।
:একদম মিথ্যা কথা বলবা না।আমি ঠিক বুঝতে পেরেছি যে তোমার মনটা কত খারাপ। আর সেটার জন্যে দায়ি এক মাত্র আমিই।
ও একটু থামল।আমি কিছু বললাম না।ওর দিকে তাকালামও না।ও আবার বলল,
:খুব আঘাত লেগেছে তাই না?
আমি ওর দিকে ফিরলাম।বললাম,
:আঘাত দেওয়ার মত কাজ করলে আঘাত লাগবে না?
:তখন খুব রেগে গিয়েছিলাম।তাই কি না কি বলেছি।কিন্তু তুমি বিশ্বাস কর আমি নিজের থেকে ইচ্ছে করে কিছু বলি নি।

তুমি তো জানই আমি রেগে গেলে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি।কি না কি করি তার কিছুই মনে থাকে না আমার।

মুখে যা আসে তা বলে দেই।
আমি চাঁদের দিকে তাকিয়ে থেকে বললাম,
:মানুষের মনে যে কথা গুলো সব সময় ঘুরপাক খায়,কিছু বাধার কারনে যেগুলো বের হয়ে আসতে পারে না,

সব সময় সুযোগ খুঁজে কখন বের হবে এবং উপযুক্ত সময় হয়ে গেলে তারা ঠিকই বের হয়ে আসে।যখন নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না ঠিক তখন।
এই বলে ওর দিকে তাকালাম। দেখলাম মেয়েটার চোখ খানিকটা ভিজে আসছে।চারপাশ থেকে একটু একটু পানি জমা হচ্ছে।

একটু বেশি হলেই ক’ফোটা গাল বেয়ে পড়বে।আমি আবার চোখ ফিরিয়ে নিলাম।ও ভেজা কন্ঠে বলল,
:দেখ সবার সাথে তো এরকম হয় না।সবার সাথে এরকম হবে সেটা তো কথা না।
আমি খুব দ্রুত ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,
:সবার সাথেই এমন হয় এবং সবার সাথেই এমন হয়ে আসছে।
ও থেমে গেল। ওর কথা শেষ।আর কিছু বলতে পারছে না।এরপর আর কোন কথা বলার থাকে না।শুধু স্বীকার করা ছাড়া।

নিজের দোষ স্বীকার করা ছাড়া। আমি চাঁদের দিকে তাকিয়ে রইলাম।হঠাৎ ই মিহিন আমাকে জড়িয়ে ধরে।

খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,
:তুমিই তো আমার সব।তুমি যদি আমার সাথে এমন কর তাহলে তাহলে আমার কষ্ট হয় না।আমি জানি আমি ভুল করছি।

কিন্তু তাই বলে এত শাস্তি পেতে হবে।এমন শাস্তি দিও না গো।খুব কষ্ট হয়। খুব!
কেন জানি আমার খুব খারাপ লেগে উঠল।মেয়েটার এমন কান্না আমার একেবারেই সহ্য হয় না।হৃদয়ের ক্ষতটাকে আরো বাড়িয়ে দেয়।

আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলি,
:কান্না করে না পাগলি। তুমি কান্না করলে আমার খুব কষ্ট হয়।বুকের ক্ষতটা যেন আরেকটু বেড়ে যায়।
ও আমার বুক থেকে মাথা তুলে আমার দিকে তাকায়।বলে,
:খুব বেশি ক্ষত হয়ে গিয়েছে?
আমি অভিমানি স্বরে বললাম,
:হুম! খুব ক্ষত হয়ে গিয়েছে গো।
:একটু অপেক্ষা কর। আমি এখনই তোমার ক্ষতটা শুকিয়ে যাবার ঔষুধ দিচ্ছি।দেখবা খুব তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে।
:কই দাও দাও।খুব…
আমি আর বলতে পারি না।গোলাপি রঙের ভেজা ঠোট আমার আমার শুকনো ঠোট দুটিকে স্পর্শ করে।আমি সাথে সাথে শিউরে উঠি।

ও আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আমাকে।যেন আমি নড়ে না উঠি।ততক্ষনে আমার ভেতরে ভালো লাগার বন্যা বইছে।

ক্ষত স্থান গুলো যেন খুব তাড়াতাড়িই শুকিয়ে যাচ্ছে।আমি আনন্দের সাথে তা অনুভব করি।

অসাধারণ এক অনুভুতির ঢেউ খেলে যায় আমার হৃদয়ে। চাঁদের সম্পুর্ন আলো আমাদের উপর পড়ছে।

যেন চাঁদ ইচ্ছে করে আলো গুলো আমাদের উপর ঢালছে।আমাদের এমন মিলন দেখে চাঁদ যেন খুব হাসছে।

হাসির প্রতিটি ঝলকেই যেন এক ঝাক আলো বের হচ্ছে। সাথে একঝাক ভালো লাগা ও মৃদু বাতাস।

কাছের কোন একটা গাছ থেকে বকুন ফুলের গ্রান আসছে।খুব অমায়িক সেই গ্রান।যেন হৃদয় জুড়িয়ে যায়।সত্যিই এ এক অসাধারণ পরিবেশ।

মুগ্ধকর পরিবেশ। এমন পরিবেশ আমার দুজন জমে আছি ভালোবাসার অতল গহ্বরে……।।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত