শিরোনামহীন

শিরোনামহীন

“তুমি কি আমায় এখনো ভালোবাসো না?” আকুতি মিনতির সুরে বলল রাকিন।“বলব না।” তাচ্ছিল্যের সুরে বলল হিয়া।“কেন? আমাকে ভালো লাগে না?” একটু হতাশ হয়ে বলল রাকিন।“জানি না।”( হিয়া )“আমার ভালোবাসা বুঝতে পারো না?”( রাকিন)“অনুভব করতে পারি না।” ( হিয়া)“কেন? অনুভব করে দেখো। ভালোবাসা মানে কি জানো?” ( রাকিন) “না।” মিটিমিটি হাসল হিয়া।“আবার মজা করছো? এখনো ছেলেমানুষ রয়ে গেলে?” ( রাকিন)“না, আমি মেয়েমানুষ।” বিদ্রূপ করে বলল হিয়া।

“উফফ। আমাদের ভালবাসার তাহলে কি হবে? এতদিনের প্রেম কই যাবে যদি তুমি আমায় ভালোই না বাসো।” ( রাকিন)“জানি না।”( হিয়া)“তোমার জন্য তো আমি কিছুই না। আচ্ছা ভালো। একদিন যখন মরে যাব তখন বুঝবে” কথা শেষ করতে পারলো না রাকিন। তার আগেই মুখে কোমল হাতের স্পর্শ পড়েছে।“এমন কথা আর কোনোদিনও বলবে না।” রাগীস্বরে বলল হিয়া।“বুঝতে পেরেছি আমি।” মুখ থেকে হাতটা সরিয়ে আনন্দের স্বরে বলল রাকিন।“কি বুঝেছ?” কিছুটা অবাক হয়ে বলল হিয়া। “তুমি আমাকে ভালোবাসো। নাহলে এভাবে আটকাতে না, ” বিজয়ের ভঙ্গিতে বলল রাকিন। “ জানি আমি। তুমি আমায় ভালোবাসো – এটা বলতে লজ্জা লাগে তোমার। তাই বলো না। কিন্তু এবার কোনোকিছু শুনছি না। পরের বার দেখা হলে কোনো লজ্জা চলবে না। তুমি আমায় প্রপোজ করবে। ব্যস।” লাফাতে লাফাতে কলেজ ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে গেল রাকিন। হিয়ার ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসির রেখা ফুটে উঠল।

রাকিন আর হিয়া দুবছর ধরে প্রেম করছে। কিন্তু হিয়া কখনো রাকিনকে প্রপোজ করেনি। তবে রাকিন হিয়াকে অনেকবার প্রপোজ করেছে। উত্তরে হিয়া শুধু ‘হুমম’ ই করে এসেছে। কলেজ লাইফেই ওদের পরিচয়। সেই থেকেই কথা বলা, ভালো লাগা ধীরে ধীরে ভালোবাসায় পরিণত হয়। রাকিন হিয়াকে বেশি ভালোবাসত। হিয়াও রাকিনকে ভালোবাসত। শুধু প্রকাশ করত না। দুবছর ধরে প্রেম করার পরেও ‘ভালোবাসি’ কথাটা বলতে লজ্জা লাগত তার। তবে লুকিয়ে লুকিয়ে ঠিকই বলত,‘রাকিন, আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।’

রাকিনকে রাগিয়ে বেশ মজা পেত হিয়া। ঠাট্টাও করত। রাকিনের ছেলেমানুষীগুলো ভালো লাগত হিয়ার। যার কারণে প্রতিবারই ভালোবাসার কথা উঠলে হাসি ঠাট্টা করত। আর রাকিন রেগে যেত। তারপরেও হিয়ার ভালোবাসা বুঝতে কোনো অসুবিধে হতো না রাকিনের। শুধু মাঝেমাঝে সন্দেহ হতো। সত্যিই কি হিয়া তাকে ভালোবাসে? নাহলে এমন আচরণ করে কেন? মাঝেমাঝেই ভয় হতো রাকিনের। কিন্তু হিয়ার চোখের দৃষ্টি দেখে সব ভুলে যেত। মনে হতো এক মায়াজালে আটকে পড়েছে সে। বাড়িতে বসে রাকিন ভাবতে থাকে কখন তারা বিয়ে করবে। এখনো তো বিয়ের বয়স হয়নি। তাছাড়া হিয়াতো এখনো ওর মনের কথা বলেইনি। কাল যেকরেই হোক ওর থেকে মনের কথাটা আদায় করে নিতে হবে। কলেজের সামনের ব্যস্ত রাস্তার ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে রাকিন। হঠাৎই হিয়াকে নজরে পড়ল কলেজের পাশের লাইব্রেরিতে। রাস্তার ওপারে।

“এই, হিয়া।” রাস্তার এপার থেকে চিৎকার করে উঠল রাকিন। হিয়া শুনতে পেয়ে তারদিকে তাকালো। তখনই গতকালের কথাটা মনে পড়ে গেল। আজতো রাকিনকে প্রপোজ করতে হবে। নাহলে ও রাগ করবে। কিন্তু কি করে? এইভেবে লজ্জায় মুখ লাল হয়ে আসে হিয়ার। রাকিন ভাবে, “ আজ তো প্রপোজাল শুনেই ছাড়ব। হিয়া আমার কথা রাখবেই।”হিয়ার মনের কথা শুনতে মরিয়া হয়ে ওঠে রাকিন। আর তর সইছে না ওর। ওপারে হিয়া ঘামতে থাকে।

রাকিন আর অপেক্ষা করতে না পেরে দৌড়ে রাস্তা পার হতে যায়। হিয়ার চোখের মায়াবী জালে আটকে গিয়ে দূর থেকে তীব্র গতিতে আসা ট্রাকটাকে লক্ষ করে না সে। পরমুহূর্তেই ট্রাকটা ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। কয়েকফুট দূরে গিয়ে ছিটকে পড়ে রাকিনের শরীর। ওপারে থাকা হিয়ার চারপাশে অন্ধকার নেমে আসে। অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায় সে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় রাকিন আর হিয়াকে। কিন্তু হিয়া বেঁচে গেলেও রাকিন আর বাঁচে না। কয়েক বছর পর “ভালোবাসো?” কৌতূহলী নিশাদ জিজ্ঞেস করল।“না।” স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল হিয়া।“তাহলে আমাদের দুইবছরের প্রেমের কি হবে?” ( নিশাদ)“জানি না।” ( হিয়া)“আমাকে ছাড়া বাঁচবে?” ( নিশাদ)  জানি না।” মুচকি হাসি দিল হিয়া।

যদি ভালো না বাসো তাহলে এই পৃথিবী থেকেই বিদায় নিয়ে নেব। বলে দাও।” ( নিশাদ) কথাগুলো হিয়ার কানে বেজে উঠলো। মনে পড়ে গেল অতীতের কথা। ভালোবাসি শোনার জন্যই হিয়ার প্রথম প্রেমের মৃত্যু হয়েছিল। আজ আবার ভবিষ্যতের মুখোমুখি অতীত!“ জানি, তুমি খুব লজ্জাবতী। তাই ভালোবেসেও ভালোবাসো বলতে পারছ না। আচ্ছা, আজ থাক। কিন্তু কাল অবশ্যই শুনতে চায় যে তুমি আমাকে ভালোবাসো।”

হিয়ার চোখের সামনে ভাসছে অতীত। রাকিনের ভালোবাসো। চোখের কোণায় জল চলে এল তার। সেই জল লুকিয়ে হিয়া বলল,“ না, আমি আজই বলে দিতে চাই। আই লাভ ইউ টু।”

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত