প্রেম শিরোনাম

প্রেম শিরোনাম

(১) শীতের সকালে শুরুটা এক কাপ চায়ের সাথে সিগারেট না হলে ঠিক জমে ওঠে না। অবশ্য এই নিয়ম অল্প কিছু মানুষের জন্য তালিকাভুক্ত।

রনি অনুরূপ তালিকার। চা দোকানে বসে গরম চায়ে চুমুকের সাথে সিগারেট টানছে। ভাগ্যক্রমে আচমকা অরনি হাজির।কাঁধে ব্যাগ,চোখে চশম এবং হাতে বিশাল এক লাঠি। রনি অরনির দেখা পেয়ে আস্তে করে সিগারেট ফেলে দিলো। অরনি তাতে সাই দিয়ে এমন ভান করলো যেন সে কিছু দেখে নাই।

হাতে লাঠি নাচাচ্ছে,তবে ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি বিরাজমান। মেয়েদের হাসি দেখে বোঝা যায় এই মুহূর্তে সে ঠিক কি চায়।কিন্তু অরনির হাসিতে তেমন কিছু বোঝা যাচ্ছে না।এই হাসি ভয় এবং খুশি উভয়ের বহিঃপ্রকাশ।রনি চা শেষ করে বিল দিয়ে বেড় হয়ে এলো। আপনি এখানে! প্রাইভেটে যাচ্ছিলাম। তো হাতে লাঠি কেন?

এমনি। সাব্বির ভাই কোথায়?তাকে দেখছি না। ওনাকে কি আপনার প্রয়োজন? না,কিন্তু ভাই তো আপনার ছায়ার মতন থাকে।তাই বললাম। কোনভাবে জ্বলার গন্ধ পাচ্ছি। নাক রুমাল দিয়ে আটকে রাখেন। হুম। সিগারেট খাচ্ছিলেন কেন? কই নাতো। আমি কি তাহলে ভুল দেখলাম? জানিনা। কোন ব্রান্ডের সিগারেট ছিলো? মালব্রু। দাম কত? বারো। নিয়ে আসেন।আমিও খাবো। ক্যান্সার হয়ে মরার ইচ্ছা আছে? আপনি মরলে আমি মরতে সমস্যা কি? বুঝলাম না। ভালবাসি।

কেন এমন পাগলামি করছো অরনি?এভাবে প্রতি সেকেন্ডে প্লিজ কষ্ট দিও না।ছেড়ে গিয়েছো ভালো কথা কিন্তু প্রতিদিন এভাবে সামনে আসার মানে কি?আমায় দেখে মানুষ মনে হয় না?আঘাতে আমিও ব্যথা পাই।এই আঘাত শরীরে না,বুকের বাম পাশে গিয়ে লাগে।সাব্বির ভাইয়ের সাথে তোমার কি আছে জানিনা।জানার ইচ্ছা আমার নেই।আমি নিজের মতন করে নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছি।হয়তো ভালো নেই।তবে তাতে আমার কিছু যায় আসে না।জন্মের পর থেকে ভালো না থাকার অদ্ভুত শক্তি নিয়ে জন্মেছি।সো প্লিজ,লিভ মি এলোন। বাব্বাহ্,বক্তব্য তো ভালোই দিতে পারেন। আমার সামনে দয়াকরে আর এসো না। আচ্ছা আসবো না।কিন্তু হ্যা,আমিও আপনার মতন একটা বক্তব্য দিয়ে বিদেয় হতে চাই। ওকে।

ভুল বুঝে তুমি চলে গেছো,আমি না।সাব্বির ভাই আমার পেছনে ঘুরে,এটা ঠিক।তবে এটাও ঠিক আমি সাব্বির ভাই’কে পাত্তা দেই না।তুমি অবশ্য সবই জানো।তাও সেদিন ঝামেলা করেছিলা।আমায় কি বিশ্বাস করা যায় না?আমি বিন্দু মাত্র বিশ্বাসের যোগ্য নই?তোমার মস্তিষ্ক বলে,আমার আর সাব্বির ভাইয়ের মাঝে কিছু আছে।কিন্তু এটা বলে না আমি তোমায় পাগলের মতন ভালবাসি।সবকিছু স্বাভাবিক তাইনা?তোমার কাছে আমার বলা সব কথা স্বাভাবিক।অস্বাভাবিক শুধু অহেতুক সন্দেহ।

থাকো তুমি তোমার সন্দেহ নিয়ে।এই মুহূর্তে আমি সুইসাইড করে প্রমাণ করে দিবো আমার ভালবাসার কথা।গুড বাই। দাঁড়াও। হুম। সাব্বির ভাইয়ের সাথে যে কয়েকদিন আগে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিলা? হুহ্,কথা বলা দেখছো।ভালো খুব ভালো।শেষটায় চড় মারা নিশ্চই দেখোনি? চড় মারার জন্য কিছুদিন যাবত সাব্বির ভাই তোমার পেছনে আসে না।  মোটা মাথায় এই বিষয় ঢুকছে তাহলে।

– অপমান করলা?

– করলাম।তো?

– বিনীময়ে শাস্তি দেই?

– কি শাস্তি?

একটু জড়িয়ে ধরা সাথে মিষ্টি পাপ্পি। এখানে? হিহিহি। অতঃপর অরনি চোখ বন্ধ করে ফেললো।রনি এক নজর চারিপাশ দেখে নিয়ে মনে মনে বললো,’ইগনোর অল,ইগনোর অল,ইগনোর অল। তারপর দুটি দেহ একে অপরের বাহু বদ্ধ।ঠোঁট এগোচ্ছে পিপাসা মেটাতে।শেষে স্পর্শ পেতে উভয় কেঁপে উঠলো। স্বস্থি!এবার তো স্বস্থির নিশ্বাস ফেলার পালা।

(২) আকাশ এখন তারাদের দখলে।মাঝে অল্প জায়গা করে নিয়েছে চাঁদ।চাঁদের সাদা কিরণ গাছপালার ওপর পড়ে অলংকার রূপ প্রদান করছে। মুগ্ধতা!এটা মুগ্ধতার এক হ্রাস। অরনি ছাদে দাঁড়িয়ে প্রকৃতির এই মুগ্ধতায় মুগ্ধ হতা ব্যস্ত।এমন সময় মনে পড়লো রনি’র কথা।ব্যস,সাথে সাথে নাম্বার ডায়েল করা সারা। এই কি করো? ঘুমাই। এত তাড়াতাড়ি? হুম। তোমায় খুব দেখতে ইচ্ছা করছে। এখন আসতে হবে?

হিহিহি। আমার লাভ?  সকালে যা দিয়েছি তা আবার দিবো। তুমি গেট খুলে রাখো।আমি দুই মিনিটে আসতেছি। ওকে। ফাঁকা পথ ঘাট।মাঝে মাঝে বাতাসে ভেসে আসছে ভয়ংকর প্রাণীর ডাক। কুয়াশার ঘন আবরণে ঘিরে আছে চারিপাশ। এমন পরিবেশে মাঝ পথে রনি খেয়াল করলো কেউ একজন তাঁর পিছু হাঁটছে। ভাগ্যক্রমে রনির ঘাড় ঘুরিয়ে দেখার সাহস নেই। তারপরই গাছে ডাল ভেঙে পড়ার শব্দ। রনি এবার দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না।চোখ বুজে শুরু করলো ভৌ দৌড়। এক দৌড়ে অরনিদের বাড়ির সামনে। অরনি ছাদ থেকে রনির উপস্থিতি দেখে নিচে নেমে এলো। হাপাচ্ছো কেন? ভয়ে। কিসের ভয়?  ভূত।

ধ্যাত পাগল!এই যুগে কেউ ভূতে ভয় পায়? কিছু পিছু নিলে ভয় পাবো না তো কি করবো?  কি পিছু নিয়েছিলো? জানিনা। সম্ভবত কুকুর। কুকুর না।কুকুর হলে আমি বুঝতে পারতাম। আচ্ছা বাদ দেউ।চলো ছাদে যাই। তা না হয় গেলাম।কিন্তু যাওয়ার সময় বাসায় ফিরবো কিভাবে? বাসায় ফিরতে হবে না।রাতে আমার রুমে থাকবা। এখন চলো। তোমার রুমে থাকলে যদি কন্ট্রোল না করতে পারি?

– মানে?

ভুলক্রমে আম্মু বানায়ে ফেললে? ফাজিল!ওইটা পরে দেখা যাবে।আপাতত আমরা এই গভীর রাত’কে সাক্ষী রেখে দুজনে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হবো। তাহলে তো বাসর রাত! একদম চুপ।পাপ্পির বেশি কিচ্ছু আশা করবা না।বাকি সব ফ্যামিলিগত বিয়ের পর। আচ্ছা।

এবার দুজন মুচকি হাসলো।তারপর হাত রাখলো একে অপরের হাতে। তাঁরা জানে,আবেগ যত চেষ্টা করুক উভয়ের প্রতি বিশ্বাস টপকে কখনো বাজে উদ্দেশ্যের দিকে পা বাড়াতে পারবে না।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত