পাগল স্বত্বা!

পাগল স্বত্বা!

আমার সারাটা দিনই কাটে হাসপাতালটায়! বসে থাকি নিশির পাশে! এটা একটা মানুষিক হাসপাতাল! নিশি মানুষিক রুগী!

আমার এক বন্ধুর বাবা কে এই হাসপাতালে দেখতে এসে নিশির সাথে দেখা।
ওইদিন নিশি জোরে জোরে চিৎকার করছিলো নার্সদের সাথে।
আমি নিশিকে দেখে চোখের পলকই ফেলতে পারিনি! এতো সুন্দর মেয়ে ! মুখের কাছটায় এতো সুন্দর একটা তিল!
অথচ মেয়েটা মানুষিক রুগী!
ভাবা যায়. ?
আমার আগ্রহ বাড়তে লাগলো !
আমি ওর সামনে গেলাম। আমি ওর সামনে যাওয়াতে ও কেমন শান্ত হয়ে গেলো আর আমার দিকে নিশপলক চেয়ে রইলো।
আমি আরো সামনে যাওয়াতে বললো “তুমি এসেছো ?
আমি কত করে এদের বলেছি ও মরে নি বেচেঁ আছে! ও আসবে!
কিন্তু কেউই আমার কথা শুনছে না!
আমি ওর পাশটায় বসলাম আর ও আমাকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে!
আর বাকি নার্স আর ডাক্তাররা অদ্ভুত নয়নে আমাদের দিকে তাকিয়ে রইলো!!

পরে নার্স থেকে জানতে পারলাম …ও একজন কে খুবই ভালোবাসতো।
এবং ওদের বিয়েও ঠিক হয়ে ছিলো দুই ফেমিলির সম্মতিতে!
কিন্তু বিয়ের ১ দিন আগেই নাকি ছেলেটা রোড এক্সিডেন্ট এ মারা যায়!
এরপর থেকেই নিশি অন্যরকম হয়ে যায়। ঘটনাটা সে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারে নি!
মনের মাঝে নিজে নিজেই তৈরি করে নিয়েছে যে ছেলেটা মরে নি!
ছেলেটা বেচে আছে! আর আমার মাঝে ওই ছেলেটার ছায়া ও খুজে পায়!
এরপর নার্স বলে …ওর ভিতরের সত্ত্বা টাকে বিলীন করতে হলে …এমন একজনের প্রয়োজন .যাকে মনে হবে ওই ছেলেটা!

তারপর কিছুদিন ওই ছেলেটার সাথে সম্পর্ক ঘটিয়ে …হঠাৎ একদিন বুঝাতে হবে যে সে নেই! সে সত্যিই মারা গেছে!
নার্স রিকুয়েস্ট করলো আপনি তো ডাক্তার …আপনার যদি সময় থাকে তাহলে এই এক্সপিরিমেন্ট টা দেখতে পারেন! যদি আপনার চেষ্টায় একটা মেয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে!

তারপর থেকে আমি প্রতিদিনই নিশির পাশে বসে থাকি। ওর সাথে কথা বলি …ওর দেখাশোনা করি।
ওরে নিজের হাতে খাইয়ে দেই।
এ এক জেনো অন্যরকম অনুভূতি!
এই জীবনে এমনভাবে কোনো এক মানুষ আসবে যে আমার রাতের ঘুম হারাম করে দিবে তা কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি!
শুনেছি মানুষের জীবনে প্রেম নাকি হুট করেই চলে আসে!
তবে নিশি আর আমার ব্যাপারটা প্রেম কি না তা আমি বুঝতে পারিনা! কিন্তু যতক্ষণই নিশির পাশে থাকি আর নিশির সাথে কথা বলি …তখন মনের মধ্যে এক অজানা শিহরণ কাজ করে!

নিশির সাথে আমার প্রণয় আরো বাড়তে লাগলো। যতই দিন যেতে লাগলো  নিশির প্রতি আমার দুর্বলতা আরো বাড়তে লাগলো।

সারাদিন ওর সাথে অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলতাম!
ওরে নিয়ে ঘুরতে যেতে খুব ইচ্ছে করতো! কিন্তু ইচ্ছে করলেই তো আর তা সম্ভব না!
নিশির হাতে হাত রেখে কথা বলতে ওর চোখে চোখ রেখে সারাক্ষণ থাকতে ইচ্ছে হতো!
নার্স এসে যখন ওকে ইঞ্জেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতো তখন নিজেকে খুব একা একা লাগতো!
মন চাইতো ওর সাথে সারাক্ষণ কথা বলি!
মন চাইতো শিশিরভেজা দুর্বা ঘাসে ওকে নিয়ে ঘুরে বেড়াই আর শীতের সকাল দেখি।
রাতের আকাশে যখন তারায় তারায় পরিপূর্ণ থাকে তখন তার কাদে মাথা রেখে সেই সুন্দর আকাশটাকে দেখি।
ওর মায়ায় আমি বিভোর হয়ে সত্যিই হারিয়ে যেতে চাই অন্য ভুবনে!
মনের কল্পনাতে যে ওকে নিয়ে কত স্বপ্ন বুনেছি তা বলে শেষ করা যাবেনা!

যতই দিন যাচ্ছে ততই ওর প্রতি আমি আসক্ত হয়ে পড়ছি।
খুব ইচ্ছে করে ওরে নিয়ে হারিয়ে যাই অজানা এক জগতে!
যেখানে শুধুমাত্র ওরই বিচরণ!
ওর পৃথিবীতে শুধু আমিই থাকতে চাই!

এরপর একদিন এসে দেখি নিশি নেই! আমি পাগলপ্রায় হয়ে উঠি!
ছুটে যাই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে!
ছুটে যাই এই কেবিনের নার্সের কাছে …গিয়েই বলি আমার নিশি কোথায়?
কোথায় গেছে ও? আমাকে ফেলে?
নার্স জবাব দেয় নিশি নেই. !
আমি বাকরুদ্ধ হয়ে যাই! অথচ এই নার্সই বলেছিলো নিশির ট্রিটমেন্ট করতে! আর আজ বলছে নিশি নেই. !
একটু পর দেখি নার্স আমার হাতটা শক্ত করে ধরলো !আমি বললাম এ কি!
আমাকে এইভাবে ধরছেন কেনো ?
একটু পর দেখি আরো কয়েকজন এসে আমাকে শক্ত করে ধরলো !
আমি তাদের থেকে ছুটতে চাইলাম! কিন্তু পারলাম না !

ওরা সবাই আমাকে নিয়ে সে কেবিনটায় যাচ্ছে!
যেখানে আমি আর নিশি এক সাথে কাটিয়েছি অনেকটা সময়!

একটু পর একটা ডাক্তার আসলো!
যাকে দেখে আমার মনের অজান্তেই চিৎকার বেড়িয়ে আসলো।
আমি প্রাণপণ শক্তি দিয়ে ছুটতে চাইলাম ওদের কাছ থেকে! কিন্তু ওদের শক্তির কাছে আমি পেরে উঠলাম না !
ওরা আমাকে জোর করে শুয়ে দিলো আর সবাই আমাকে ধরে রাখলো শক্ত করে!
জানি আমাকে এখন ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া হবে!

পরিশিষ্টঃ – ডাক্তার আমাকে ইঞ্জেকশন দিয়ে দিলো আর আমার ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ……
ঘুমের রাজ্যে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কানে বাজতে লাগলো ডাক্তারটা নতুন এক ডাক্তার কে আমাকে নিয়ে কি জানি বলছে …ঘুমের ঘোরে যতটুকু কানে আসলো তা হলো – ছেলেটির নাম সোহান. ! মানুষিক রুগী।
নিশি নামের এক মেয়েকে প্রচন্ড ভালোবাসতো!!
ফেমিলির সম্মতিতে ওদের বিয়েও ঠিক হয়েছিলো! কিন্তু বিয়ের ১ দিন আগেই নিশি রোড এক্সিডেন্ট এ মারা যায়।
এরপর থেকেই ছেলেটা অন্যরকম হয়ে যায় এবং মনের কল্পনাতে নিশি কে আকতে থাকে! ওর ধারণা নিশি বেচে আছে আর ওর কাছেই ফিরে আসবে!
প্রায় দুই বছর ধরে ট্রিটমেন্ট করা হচ্ছে!
কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না!
প্রায়ই নিশিকে নিয়ে কল্পনা করে আর প্রলাপ বকতে থাকে!!
আপনাকে আনা হয়েছে এজন্যই দেখেননা কিছু করতে পারেন কিনা !

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত