চোখের বাধ ভেঙে গেছে

চোখের বাধ ভেঙে গেছে

শ্রাবণী অার সিয়ামের রিলেশনের প্রায় একবছর হতে যাচ্ছে।তবে তাদের মনেহয়না সম্পর্কটা মাত্র কয়েকমাসের মনেহয় সম্পর্কটা বহুবছরের।সত্যিকারের ভালবাসায় মনেহয় এটাই ফিল হয়। খুবই সুন্দর ভাবে চলছে তাদের সম্পর্কটা।দুজন দুজনকে ততটাই ভালবাসে।যতটা ভালবাসলে মনেহবে ভালবাসার মানুষকে ভালবাসার সর্বোচ্চ পর্যায় এটা।

তবে,শ্রাবণী কে নিয়ে সিয়ামের ইদানিং খুবই টেনশন হচ্ছে।কিছু বখাটে ছেলে নাকি তাকে ডিস্টার্ব করে।গতরাতেই এটা জানতে পারল।তাই ঠিক করল,পরদিন ছেলেগুলোর সাথে দেখা করতে যাবে অার বুঝিয়ে বলবে।
পরদিন সকালে নাস্তা খেয়ে তাদের সাথে দেখা করতে গেল। দেখল অদূরেই দাড়িয়ে কয়েকটা ছেলে ধূমপান করছে (Smoking is injurious to health) । সে মনে খুব সাহস নিয়ে তাদের সামনে গেল।

— ভাই অাপনাদের সাথে কিছু কথা ছিল।শ্রাবণীর ব্যাপারে।
— তোর নাম সিয়াম? (একজন বলল)
— জ্বী

এই কথা বলার পরই সে ভারি কিছু দিয়ে তার মাথায় অাঘাত করল।অার সাথে সাথে মাথা থেকে ব্লাড বের হতে লাগল।

— সালার! অনেকদিন ধরেই শুনছি শ্রাবণীর সাথে একটা ছেলে খুব মেলামেশা করে।অার একসময় জানতে পারে ছেলেটার নাম সিয়াম।অার তোরে অাজ চোখের সামনে পাইলাম।ছেড়ে দেই কিভাবে বল? তুই জানিস! সেই অনেক অাগে থেকেই শ্রাবণীকে অামি পছন্দ করি।অার তুই কিনা..!!
— ভাই অামাকে যত পারেন মারেন।কিন্তু ওরে অার ডিস্টার্ব করিয়েন না প্লিজ।মেয়েটা অাপনাদের খুবই ভয় পায়।
এই কথা শোনার পর সবাই মিলে সিয়ামকে অাচ্ছামত ধোলাই দিল..একসময় সে সেন্সলেস হয়ে গেল।

জ্ঞান ফেরার পর দেখে ওরাই অাবার হসপিটালে নিয়ে অাসছে।
— ভাই অামাকে মেরে অাপনার রাগ কমছে? কিন্তু বলেন, অাপনি ওরে অার ডিস্টার্ব করবেন না তো? (সিয়াম)
— তোরা একটু বাইরে যা.. সিয়ামের সাথে অামার কথা অাছে।(ছেলেটা সবার উদ্দেশ্যে বলল,বাকি সবাই বাহিরে চলে গেল)
— শোন সিয়াম।
— জ্বী বলেন।

— জানিস! একসময় অামিই তোর মতই ছিলাম। এইযে এত বন্ধুবান্ধব ! কেউ ছিলনা তখন।অামার পৃথিবীটাও ছিল সাধারণ একটা মেয়েকে নিয়ে।কিন্তু হঠাৎ সে উড়াল দিল অামার কাছ থেকে।নিজেকে অার মেনে নিতে পারিনি।তাই নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়লাম..ওদের সাথে অাড্ডায় চলে যায় সারাদিন।অার শ্রাবণী কলেজ থেকে অাসার সময় একদিন তোকে দেখেছিলাম।তখন থেকেই ভাল লাগা কাজ করে..যা তোর জন্য ছেড়ে দিলাম।কারণ তোর মাঝে অামি অামার পুরণো অামিকে দেখতে পেয়েছি। অাচ্ছা,অামরা চলে যাব এখন।অার হসপিটালে বলেছি ছেলেটা এক্সিডেন্ট করেছে।অামরা নিয়ে এসেছি….লাগছে খুব?
— লাগছিল ..কিন্তু অাপনার কথা শোনে সব চলে গেছে।অাচ্ছা অাপনার ভালবাসার মেয়েটা এখন কোথায়?
— জানিনারে…তবে অামার ধারণা সুখেই অাছে।অাচ্ছা ভাল থাকিস …
— একটা কথা রাখবেন?
— কি?
— অাপনার অাগের অামিতে ফিরে যাবেন?
— হাহা চেষ্টা করব।
— অাচ্ছা,অাপনিও ভাল থাকবেন।

এখন অার শ্রাবণীকে কেউ ডিস্টার্ব করেনা।তবে শ্রাবণীকে একটা মিথ্যে বলতে হয়েছে যে,সে এক্সিডেন্ট করেছিল।
সিয়ামের কোন কাজ নেই পড়াশোনা ছাড়া।তবে নিজের খরচ নিজেকেই চালাতে হয়।তাদের এলাকায় ঘোরার মত অনেক জায়গা অাছে কারণে,অনেক পর্যটক অাসে এখানে।তাই অনেক কষ্টে একটা ক্যামেরা কিনেছে।ছবি তুলে দেয় মানুষকে।তা দিয়ে যা অাসে ভালভাবেই দিন চলে যায়।অার শ্রাবণী ব্যাপারটা জানে অার এটা নিয়ে সে খুব খুশি কারণ সে ভাবে সিয়াম নিজের দায়িত্ব নিজে নেয়া শিখেছে।

একদিন সকালে খুব ভোরে সিয়াম শ্রাবণী ফোন দেয়।
— এই একটু বাহিরে অাসো রাস্তায়।
— এখন এত সকালে!
— জাস্ট 5মিনিটের জন্য।
— অাচ্ছা দাড়াও তুমি।
শ্রাবণী অাসে, দেখে সিয়ামের হাতে একটা ছোট ব্যাগ। সে ব্যাগটা শ্রাবণীকে দেয়।শ্রাবণী ব্যাগটা খুলে দেখে পলাশ ফুলে ভরা ব্যাগ।
— কি করব ফুল দিয়ে?
— ফুল গুলো তুমি উপরের দিকে ছুড়বা,অার ফুল গুলোর দিকে তাকাবা অামি তোমার ছবি তুলব।
— হাহা পাগল একটা তুমি।
— তারাতারি কর ।
শ্রাবণী ফুল গুলো উপরের দিকে ছুড়ে মারে অার ক্লিক ক্লিক করে কয়েকটা ছবি তুলে নেয় সিয়াম।
শ্রাবণীকে ছবি গুলো দেখানোর পর সে চমকে যায় কারণ তার বিশ্বাস তার জীবনে যতগুলো ছবি তুলেছে।তারমাঝে এই ছবিগুলো সবচেয়ে ভাল হয়েছে।
— সত্যিই তুমি খুব ভাল ছবি তুল….ইশ অামাদের বিয়ের ছবিগুলো তুমি তুলতে পারবানা কিযে অাফসোস হচ্ছে।
— কেন কেন!
— অারে অামি অার তুমি একসাথে থাকব ছবি তুলবে কে!
— ও তাইত হাহাহাহা।
হাসতে থাকে দুজনে।
— অাচ্ছা ম্যাডাম যাই এখন পরে ছবি গুলোর কপি দিয়ে দিব।
— অাচ্ছা যাও টাটা……!!

পরদিন কলেজে ছবিগুলোর কপি প্রিন্ট করে দিয়ে দেয় শ্রাবণীকে।

কয়েকমাস পর রাত্রে..
— সিয়াম খাইছ ?
— সিয়াম খাইছি না ভাত খেয়েছি।
— মজা করনা তো।

সিয়াম একটু চিন্তিত হয়ে যায়।কারণ প্রতিদিন এই মজার মজার কথাগুলো শোনে, শ্রাবণী হাসত..অার বলত তুমি যে কি না!পাগল একটা ..

সিয়াম ভাবল শ্রাবণীর মন খারাপ।তাই তাকে ফোন দিল..ফোন রিসিভ করার পর দেখল কান্না করতেছে ও।এবার একটু বেশিই টেনশনে পড়ে গেল।

— এই কি হয়েছে?
— কালকে একটু দেখা করিও।
— কোথায় কোথায়? অার তোমার কি হয়েছে বল!!
— নদীর পারে অাসবা ঠিক সকাল 10 টায়।বলেই সে ফোন কেটে দিল।
সিয়াম খুবই চিন্তিত হয়ে গেল।কারণ এরকম পরিস্থিতি অাগে সৃষ্টি হয়নি। এইবারই প্রথম…সারারাত অার ঘুম হলনা।কারণ সিরিয়াস কিছু হয়েছে মনেহল।

পরদিন সকালে তাদের দেখা হল..
— কি হয়েছে শ্রাবণী?
— তোমার ক্যামেরা সঙ্গে নিয়ে অাসছ?
— না তো..!!
— তারাতারি যাও ক্যামেরাটা নিয়ে অাস। সিয়াম সাইকেল নিয়ে বাড়িতে চলে গেল।অার 10মিনিটের মাঝেই ক্যামেরা নিয়ে ব্যাক করল।
— এবার অামার কয়েকটা ছবি তুল তো সিয়াম নদীর ঢেউ সহ তুলবা।
সিয়াম কাপাকাপা হাতে কয়েকটা ছবি তুলে।কারণ সে ভেবেই পাচ্ছিলনা।কি হয়েছে শ্রাবণীর।
— দেখি তো ছবিগুলো।
— বাহ অাজকের গুলোও সুন্দর হয়েছে।

— শ্রাবণী কি হয়েছে তোমার! সারারাত কতটা টেনশনে ছিলাম.. তুমি ঠিকমত কথাও বলনি।সারারাত অামি ঘুমাতেও পারিনি।

এবার শ্রাবণীর চোখ থেকে সত্যিই অশ্রুর স্রোত নামে।

— সিয়াম,অামার দেখা সবচেয়ে ভাল ছেলে তুমি।প্রেম ভালবাসায় অামি কখনোই বিশ্বাস করতাম না।কারণ,বান্ধবীদের দেখেছি প্রেমের পরিণতি তাদের মনে কতটা অাঘাত দিছে।কিন্তু,তোমার সাথে সম্পর্ক হবার পর সব ধারণাই অামার পাল্টে গেছে।

— শ্রাবণী!! তুমি কি অামার সাথে ব্রেকঅাপ করবা? প্লিজ এমনটা করনা।অামি খুব শ্রিগই একটা চাকরিতে জয়েন করব,এক লোক ঘুরতে এসে অামার কাছে ছবি তুলে তার ছবিগুলো খুবই ভাল লেগেছে। অার তার কোম্পানিতেই অামার চাকরির ব্যবস্খা হয়েছে ফটোগ্রাফার হিসেবে বেতনও ভাল!! তোমাকে সারপ্রাইজ দিব বলে বলিনি..কিন্তু অাজ অার না বলে পারছিনা। চাকরিটা হয়ে গেলেই তোমায় বিয়ে করব।

— অামার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে সিয়াম।
— কি বলছ তুমি এসব!
— হ্যাঁ, ছেলে বিয়ের পর অামেরিকা নিয়ে চলে যাবে অামাকে।
— অামি তোমায় যেতে দিবনা।
— বাবা সব কথা দিয়ে ফেলেছে..অামি অামার বাবাকে কষ্ট দিতে পারবনা।
— তারমানে অামাকে কষ্ট দিতে পারবা?
— প্লিজ অামায় মাফ করে দিয়।

এটা বলেই সিয়ামকে জড়িয়ে ধরে ।যার হাতটাও কখনো ধরা হয়নি অাজ তাকে জড়িয়ে ধরল..

— সিয়াম অামি কখনোই তোমাকে হারাতে চাইনি।বাবার বন্ধুর ছেলেকে তোমার তুলে দেয়া ছবিগুলো পাঠায়।তাদের নাকি অামায় খুব পছন্দ হয়েছে..অার তাই খুব শ্রিগই বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।যদিও অামাকে এখনি নিবেনা,কাগজ-পত্র রেডি করে।

— প্লিজ অামায় ছেড়ে তুমি যেয়না..তোমায় ছাড়া একটা দিনও থাকতে পারবনা।
— থাকত হবে,প্লিজ তুমি নিজের কোন ক্ষতি করনা।যখন অামার কথা খুব মনে পড়বে এই খানে চলে এসো।নদীর ঢেউ গুলোকে ভাববা অামি…অার বারবার তোমার সামনে অাসছি।
শ্রাবণীর সাথে সিয়ামের কান্নাটাও বেড়ে গেল।

— ছোট্ট এই জীবনে তোমাকে অামি পাবনা! স্বপ্নেও ভাবিনি….জানিনা কিভাবে থাকব অামি।যাইহোক ভাল থেক তুমি…যাও এখন চলে যাও প্লিজ।

শ্রাবণী অারো কিছু বলতে যায় কিন্তু সিয়ামের পাগলামিতে চলে যেতে বাধ্য হয়।
কাদতে কাদতে সে চলে যায়..
তখন পাশ দিয়ে সেই ছেলেটা যাচ্ছিল..
সিয়াম কে দেখেই দৌড়ে অাসে।

— কি হয়েছে সিয়াম?

সিয়াম কাদতে কাদতেই ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরে বলে।

— সব শেষ হয়ে গেছে ভাই।ও অার অামার হবেনা..অামিও ওর হবনা।ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।অামি অাম্মাকে গতকালকেই ওর ছবি দেখাইছি অাম্মা খুব পছন্দ করছে ওকে।

বলেছে ওর সাথেই অামার বিয়ে দিবে।এখন অামার মাকে কি বলব ভাই? এতদিন টাকা জমায়া ওর জন্য একটা স্বর্ণের চেইন কিনছি।দুইটা শাড়ি কিনছি।এগুলা অামি এখন কাকে দিব ভাই?

একনাগাড়ে কথা গুলো সে বলে নেয়।ছেলেটা কিছু বলেনা।কারণ মানুষের মন বেশি খারাপ থাকলে, সে চায় তার মনের কথাগুলো কাউকে বলে মনটা হালকা করতে সে তাই করল।
ছেলেটা কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থাকল..

— দেখ সিয়াম। অামার তখন কিছু করার ছিলনা।তাই কিছু করতে পারিনি।চোখের সামনে অামার প্রেমিকা অন্যের হয়ে গেছে।কিন্তু তোর বেলায় এটা হতে দিবনা।এই বিয়ে অামি ভেঙে দিব।

— না ভাই অাপনি কিছু করবেন না প্লিজ।অামি চাই সুখে থাকুক ও….প্লিজ ভাই রিকোয়েস্ট।
— তুই অাসলেই পাগল।ওর জন্য তোরে কত মারলাম।ও তোকে ফেলে চলে গেল..! অার তুই বলসিছ সুখে থাকুক ও?
— হ্যাঁ ভাই সুখে থাকুক..সুখে থাকুক ..সুখে থাকুক।

10 দিন পর..
অাজ শ্রাবণীর বিয়ে।

সিয়াম নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করেছে..শ্রাবণীর বাবাও জানে সিয়াম ভাল ছবি তুলে।মেয়েতো কিছুদিন পর অামেরিকা চলে যাবে।তাই মেয়ের বিয়ের ছবিগুলো সে বাধায় করে রাখতে চায়।যারজন্য সিয়ামের সাথে যোগাযোগ করেছে।সিয়াম হাসি মুখেই রাজি হয়ে যায় ছবি তুলতে।
বিকালবেলা….

একটু পরই কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানোর কাজ শুরু করলেন।অার সিয়াম এদিকে একটার পর একটা ছবি তুলেই যাচ্ছে।

বিয়ে পড়ানো শেষ হলে..

শ্রাবণীর বাবা ওদের একসাথে ছবি তুলতে বললেন।

শ্রাবণীর বর শ্রাবণীর কাধে হাত রাখল।সিয়ামের তখন মনে হচ্ছিল তার মনে কেউ একটা লাথি মারল।কিন্তু সে ছবি তুলল।

অনেকগুলো ছবি তুলল ওদের।চোখ দিয়ে পানি পড়ছে খুব..

কেউ একজন জিজ্ঞাস করাতেই।সিয়াম বলল চোখে হয়ত কিছু পড়ছে।তাই পানি পড়ছে।কিন্তু শ্রাবণী অার সিয়াম তো ঠিকই জানে কেন পানি পড়ছে।

বরযাত্রী বউকে নিয়ে চলে যাবার জন্য গাড়িতে উঠল।
অার গাড়িটা অাস্তে অাস্তে যাওয়া শুরু করল।

সিয়ামের মনে হচ্ছিল একটা রাবার তার থেকে কেউ টেনে নিচ্ছে। অাস্তে অাস্তে সেটা লম্বা হচ্ছে এবং একসময় সেটা ছিড়ে গেল।

শ্রাবণীর বাবা টাকা দিছিল ছবি তুলার জন্য কিন্তু সিয়াম নেয়নি।

কয়েকমাস হয়ে গেছে শ্রাবণীর বিয়ের।
মাঝে মাঝেই তেখা যায় সিয়াম নদীর পারে একা বসে অাছে।অার নদীর ঢেউ দেখছে। অার , শ্রাবণীও তাদের বিয়ের দিনের ছবি গুলো দেখে প্রায়ই কারণ ছবিগুলো যে তার ভালবাসার মানুষটায় তুলে দিছিল। তার ভালবাসার মানুষটার একদম শেষ স্মৃতি !

কাচে বাধাই করা সুন্দর ছবি গুলো। সবসময়ই ছবি গুলো দেখার একটু পরই খেয়াল হয়,কাচ পানিতে ভরে যাচ্ছে। তখন মনে অাসে যে,চোখের বাধ ভেঙে গেছে….

(সমাপ্ত)

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত