আজ কোন রুপকথা নেই

আজ কোন রুপকথা নেই

আজ মন প্রচন্ড ভালো । এর পিছনে দুটো কারণ হতে পারে । প্রথমত, আজ আমার জন্মদিন (এইটা নিয়ে আমি ১০০% নিশ্চিত) । দ্বিতীয়ত, অভ্র নিশ্চয়ই আমার জন্য কোন একটা সারপ্রাইজ প্ল্যান করে রেখেছে (প্রতিবারই রাখে; তাই এই ব্যাপারে আমি ২০০% নিশ্চিত) ।

অনেক কাজ আজকে । তবুও অন্যদিনের মতো আলসেমি করে ঘুম থেকে উঠে অনেক সময় নিয়ে গোসল সারলাম। তারপর গালভরা হাসি নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বললাম, “শুভ জন্মদিন রুপকথা” । রুপকথা নামটা অভ্রের দেয়া; আমার নাম শুধুই কথা । প্রথম যখন পরিচয় হয় আমাদের, অভ্র আমাকে বলেছিলো, “কথা আবার কেমন নাম? শুনলেই চোখের সামনে কেমন বাচাল টাইপ মেয়ের ছবি ভেসে উঠে ?”

দিন গড়ায় । এরপর বন্ধুত্বের কোন এক বিকেল বেলায়,অভ্র বলে, “তোর নাম রুপকথা হলে বেশ হয় । তুই যা আজগুবি, এইরকম মনে হয় বাস্তবে কোন মেয়ে হয় না ।”

“রুপকথা” নামটা আমার ভীষণ পছন্দের,তাই ফেবু নামও “রুপকথা” দিয়ে রেখেছি । ইচ্ছা আছে,নামটা বিয়ের পর পরই এফিডেভিড করে পারমানেন্ট করে ফেলার ।

এখন সবাই হয়তো ভাবছেন, অভ্র-কথার রিলেশনে সামথিং ফিশি গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে । যা ভাবছেন,আসলে তাই । তবে,সামান্য ক্যাঁচাল আছে । কয়েক বছর আগেই আবিষ্কার করেছি,আমি অভ্র নামের ছেলেটার প্রেমে প্রবল ভাবে পড়ে বসে আছি । কিন্তু,খুব ভালো বন্ধু হওয়ায় সামান্য ঝামেলায় আছি । বলি বলি করেও গোপন কথাগুলো বলা হচ্ছেনা । তাছাড়া মেয়েদের নাকি আগে প্রপোজ করতে নাই । দাম থাকে না ।

আমি দিব্যি বুঝতে পারি গাধাটাও আমাকে পছন্দ করে । কিন্তু,ওই যে ছেলেরা যদি সব বুঝেই ফেলে তাহলে “গাধা” নামকরণের কি সার্থকতা ?

নিজের জন্মদিনে অভ্রের জন্য সামান্য চমক রেখেছি আমি । গাধাটা আমাকে সারপ্রাইজ দিতে এসে নিজেই সারপ্রাইজ্‌ড হয়ে যাবে । আজ অনেকদিনের ভেবে রাখা কথাগুলো অভ্রকে বলবো । ওকে বলবো, “তুই বুঝিস না,তুই আমাকে ভালোবাসিস ?তোর বুঝাবুঝির কাজ নাই । আমি ভালোবাসি এটাই ইম্পর্টেন্ট । এখন নিজ থেকে আমার হাত ধরবি ? নাকি এটাও আমারই করতে হবে ?”

ওর চেহারা যা হবে ভেবেই মজা পাচ্ছি…

সবকিছু চিন্তা করে রেখেছি, প্ল্যান ফেল হওয়ার প্রশ্নই আসে না । প্ল্যানের প্রথম পর্ব মোটামুটি ভালো ভাবেই সম্পন্ন হয়েছে । অভ্র যাতে রাতে ফোন করতে না পারে তাই ফোন সুইচ্‌ড অফ করে রেখেছিলাম । সকালে অভ্রের ম্যাসেজ দেখে বুঝলাম,প্ল্যানের দ্বিতীয় পর্বও সাকসেসফুল । মোবাইল স্ক্রীনে কমা-ফুলস্টপ ছাড়া এক লাইনের ম্যাসেজ ভেসে উঠেছে “১১টায় মেডিকেলের সামনে” । আমার মুখে হাসি ফুটে উঠে ।

রেগে গেছে অভ্র ।

 

প্রথমে ভাবছিলাম ভুল দেখছি । পৌনে একঘন্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে হ্যালুসিনেশন হচ্ছে নিশ্চয়ই । শাড়ি পরা একটা মেয়ে হাসিমুখে আমার দিকে হেঁটে আসছে । আমি আশেপাশে বার দুয়েক তাকিয়ে মেয়েটার দিকে আবার তাকাতেই বুঝলাম,মেয়েটা আসলে কথা ।

হালকা নীল রঙের শাড়িতে অপূর্ব লাগছে মেয়েটাকে । অনেক চেষ্টা করছি রাগটা ধরে রাখতে । পারা যাচ্ছে না । আমি অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে ফেললাম ।

“কিরে,বেশিক্ষণ দাঁড় করিয়ে রেখেছি নাকি?”

“পৌনে বারটা বাজে । আর আসছিস কেন? আমি নাহয় ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকলাম,সবাই তো আর আমি না ।”

বলতে বলতেই এই বিচ্ছু মেয়েটার দিকে তাকালাম । দেখে মনে হচ্ছে খুব অবাক হয়েছে আমার কথায় । চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞেস করলো, “সবাই মানে ? আর কে অপেক্ষা করছে ?”

আমি বললাম, “সবাই । তোর জন্মদিন,আর বন্ধুরা আসবে না ? রাহীন,সামান্তা,তরু,আবির আরো ১০-১২ জনের গ্যাং তোর জন্য অপেক্ষা করে আছে । আজ তোর কপালে খারাবি আছে ।”

কথা আমতা আমতা করে একবার শুধু বললো, “সবাই এসেছে !”

 

আমি আর কথা না বাড়িয়ে উঁচু গলায় রিকশাওয়ালাকে ডাকলাম । অন্য সাধারন দিনগুলোর মতো চুপচাপ রিকশায় উঠে না পড়ে, ভাড়া নিয়ে অহেতুক ঝগড়া করতে শুরু করলাম । একটু পরে খেয়াল হলো,মেয়েটা কান্না থামানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে । কাঁদুক একটু । বেশিরভাগ মেয়েকে কাঁদলে ডাইনীর মতো লাগে । এই মেয়ের কাহিনী অন্য । এ যাই করে,তাতেই অপূর্ব লাগে । আমি আড়চোখে তাকাই । বুকের বাঁ পাশটা কেমন যেন করছে,আমি অবাক হয়ে ভাবি “এর নামই কি ভালোবাসা?” ।

 

“আরণ্যক” নামের আলো-আঁধারি এক রেস্তোরায় বসে আছি । এক হাত দূরত্বের মানুষটার চেহারাও এখানে স্পষ্ট হচ্ছে না । এই টাইপ রেস্তোরায় সবার আসতে চাওয়ার কারণ কি,কে জানে ? একটু লজ্জা লজ্জাও লাগছে । এভাবে সেজেগুজে এসেছি,সবার কাছে কি পঁচানিটা জানি খেতে হয় । আর ছেলেটাও কেমন । এখানে বসিয়ে দিয়ে, “আসছি” বলে হাওয়া হয়ে গেছে ।

প্রচন্ড মাথা ধরেছে । কেমন অদ্ভুত একটা কষ্ট হচ্ছে । অনেকদিনের গুছিয়ে রাখা কথাগুলো সাহস করে আর বলা হবে না হয়তো । আচ্ছা,এমন কি হতে পারে অভ্র আমাকে ভালোই বাসে না ? অন্ধ পিপীলিকার মতো আগুনের চারপাশে আমি একলাই জ্বলে মরছি…

অভ্রের কথায় চিন্তায় ছেদ পড়লো ।

আমার দিকে বড় একটা ঠোংগা এগিয়ে দিয়ে বললো, “নে ধর্‌”

প্রথমে মনে হলো,রেস্তোরায় বসিয়ে রেখে বাদাম নিয়ে আসার মানে কি । ঠোংগাটা হাতে নিয়েই বুঝলাম,ভেতরে শিউলি আর বেলী ফুল মোড়ানো । কোন একদিন বলেছিলাম,এই দুই ফুল আমার খুব প্রিয় । এই নিরেট শহরে শিউলি ফুল সে কই পেয়েছে কে জানে ?

এরপর প্রায় শোনা যায় না এমন ভাবে অভ্র বলে উঠলো, “তুই কি জানিস,তুই ই আমার দেখা একমাত্র মেয়ে যাকে কাঁদলেও ইন্দ্রানীর মতো লাগে । তোর চোখে আমার জন্য যে অনুভূতিটা দেখি,তা যদি সত্যি হয়,তাহলে বিপদে পড়ে যাবি । তোর কান্না দেখার লোভে আমি তো ইচ্ছা করে তোর সাথে ঝগড়া করবো ।”

কি বলতে চেয়েছিলাম,অনেক চেষ্টা করেও আর মনে করতে পারলাম না । গাধার মতো নিঃশব্দে কেঁদেই যাচ্ছি । চোখ ভর্তি করে একটু পরপর পানি জমছে । জানি,আমার পাগলামি দেখে অভ্র হাসছে ।

প্রচন্ড ইচ্ছা করছে অভ্রের হাত ধরতে । আমি কি বলবো, “তোর হাত ধরতে ইচ্ছা করছে খুব”

ভাবতে ভাবতেই দেখি অভ্র হাত বাড়িয়ে বলছে, “তোর জন্য ফুল আনতে গিয়ে বেখেয়ালে হাত ছিলে ফেলেছি। এই দেখ !

ভেজ়া চোখেই আমি হেসে উঠি । আচ্ছা,অভ্র কি দেখতে পাচ্ছে ? দেখুক ও চাইলেই কাঁদতে হবে নাকি?

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত