অনুভব

অনুভব

প্রিয় সোনা,
প্রথমে আমার বুক ভরা ভালবাসা নিস, জানিনা তুই ছেলে না মেয়ে, তবে তুই যে ই হোস আমি তাতেই খুশি। বিশ্বাস কর সেদিন তোর আসার খবর টা শুনে বিশ্বাসই হচ্ছিল না,তোর হয়তো এখন ছোট্ট ছোট্ট হাত পা হয়েছে, মজার ছলে লাথি মারছিস তোর মাকে, তুই হয়তো এখন তোর মায়ের গর্ভে আছিস আনন্দে। তোর মা তোকে অনুভব করতে পারে, কিন্তু আমার যে সেই উপায় নেই রে, তাই আমাকে তোর কর্ম কান্ড গুলো কল্পনা করে নিতে হয়। জানিস তোকে নিয়ে আমার কতো স্বপ্ন, তুই ও আমার মতন মহাকাশ বিজ্ঞানী হোস। অনন্ত নক্ষত্র বীথির মাঝে খুঁজে দিস আলোর দিশা পরবর্তী প্রজন্ম কে। জানিস ডাক্তার আন্টি যেদিন তোর বাইরে আসার দিন ঠিক করছে সেদিন আমিও মহাকাশ থেকে ফিরে আসবো এই পৃথিবীতে, তোকে ছেড়ে, তোর মাকে ছেড়ে একদম যেতে ইচ্ছে করছে না কিন্তু কালই এই পৃথিবী ছেড়ে আমাকে রওনা দিতে হবে মহাকাশে। তবে তুই ভাবিস না তুই যেদিন বাইরে আসবি আমিও সেদিনই ফিরে আসছি, ভালো থাকিস, আর মায়ের সাথে বেশি দুষ্টুমি করিস না।
ইতি- তোর আদরের বাবা।

চিঠি টা লিখে ড্রয়ারে ঢুকিয়ে রাখলো তার আগত সন্তানের উদ্দেশ্যে অভিরূপ। কালকেই তাকে রওনা দিতে হবে পৃথিবীর কক্ষপথের উদ্দেশ্যে 22 দিনের জন্যে । এর আগেও সে বেশ কয়েক বার মহাকাশে গেছে। কিন্তু এবার তার মন মানছে না। এক অদ্ভুত ভয় যেন তার মধ্যে কাজ করছে যদি সে ফিরতে না পারে? তার সন্তান কে দেখতে না পারে? কিন্তু সে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার একজন বিজ্ঞানী তাকে তো যেতে হবেই। আজ 3 অক্টোবর, সকাল 7টা বেজে 20 মিনিটে অভিরূপ রওনা দিল এই পৃথিবীর ছেড়ে মহাকাশে। দেখতে দেখতে কেটে গেল 20টা দিন, মহাকাশে গিয়ে অভিরূপের তার সন্তানের কথা , তার স্ত্রী অপরূপার কথা সবথেকে বেশি মনে পড়ছিল। অবশেষে তার দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হবে, আজ আবার অভিরূপ পৃথিবীতে রওনা দেবে। এবং আজ ই তার সন্তানের ভূমিষ্ঠ হওয়ার দিন । আজ 23 সেপ্টেম্বর ভারতীয় সময় সকাল 11টা বেজে 20 মিনিটে অভিরূপ দের মহাকাশযান পৃথিবীর মাটি স্পর্শ করবে।

অপর দিকে অভিরূপের মত অপরূপা ও অভিরূপের অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে আছে। অভিরূপ কে আজ কাছে পেলে যেন তার আজ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাওয়া হবে , একটি মেয়ের জীবনে তার স্বামী আর সন্তানের থেকে আর মূল্যবান হতে পারে। সকাল 10টা বেজে 20 মিনিট, কন্ট্রোল রুম থেকে জানান দেওয়া হলো অভিরূপের মহাকাশযান এবার মহাশূন্য ছেড়ে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে অর্থাৎ atmosphere এ প্রবেশ করছে। সব ই ঠিক ছিল হঠাৎ করে স্পিকারে শোনা গেল এক প্রচণ্ড বিস্ফারনের শব্দ, মনিটরের স্ক্রিন ঝলসে উঠলো লাল নীল বর্নের আলোর রশ্মি তে। কারো আর বুঝতে বাকি রইলো না, পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের সাথে প্রবল সংঘর্ষে বিস্ফারিত হয়েছে অভিরূপের মহাকাশযান টি। যে সন্তানের প্রথম কান্না শোনার জন্য উদগ্রীব হয়ে ছিল অভিরূপ সেই কান্না তার আর শোনা হলো না।

যেন সেদিন পৃথিবীর প্রানদায়ী বায়ুমন্ডল ই সেদিন প্রাণনাশির ভুমিকা পালন করেছিল , দমকা হাওয়ায় নিভে গেছিল অভিরূপের আশার প্রদীপ। সেদিন খবর টা পাওয়ার পরে অপরূপা ও অভিরূপের বৃদ্ধ মা একদম কাঁদেনি, বরং সেদিন তাদের অভিরূপের জন্য গর্বে বুক ফুলে উঠেছিল। আজ অভিরূপের 28 তম মৃত্যুবার্ষিকী, আজ অভিরূপ ও অপরূপার মেয়ে কল্পনা নির্বাচিত হয়েছে পরের মাসে মহাকাশ যাত্রার জন্য, অভিরূপের মৃত্যুর পর কল্পনা বড় হওয়ার পর কল্পনার হাতে অপরূপা তুলে দিয়েছিল তার জন্য লেখা তার বাবার লেখা চিঠি টা যা এতদিন সযত্নে তুলে রেখেছিল অপরূপা । কল্পনা তার মায়ের মুখের কথাতে নয় বরং সেই চিঠির মধ্যে দিয়ে অনুভব করতো তার বাবা কে। আজ সে তার বাবার লেখা সেই চিঠি টা বুকে জড়িয়ে ধরে আনন্দাশ্রুপূর্ণ চোখে বললো। “পেরেছি বাবা আমি তোমার স্বপ্ন সত্যি করতে, আশীর্বাদ করো আমাকে বাবা যেন সফল হতে পারি, হয়ে উঠতে পারি তোমার যোগ্য উত্তরসূরি।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত