বন্ধন

বন্ধন

– প্রেম করেছেন কতো ডজন?
কথাটা শুনে নীল বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে যায়।
এটা কোন কথা হলো? প্রেম করেই বিয়ে করা উচিৎ ছিলো। নীল মনে মনে বললো।

– কয়টা বললেও মানা যেত কতো ডজন?
একটু ভ্যাংচি দিয়ে নববধূ বললো।

– করতেই পারেন দেখতে তো চ্যাহারা মাশাল্লাহ। শুনেছিলাম দেখতে হ্যান্ডসাম আর ইনুসেন্ট লুক ছেলেরা নাকি ভীতরে ভীতরে খুব খারাপ হয়।
রাগে বললো নীল।

– সব ছেলেরা এক হয়না বোঝলেন? এখন যদি আপনাকে বলি আপনি কতো ডজন প্রেম করেছেন? তখন?
– উত্তরটা হতো একটাও না।

– তাহলে আমার উত্তর এটাই। তবে একটা মেয়েকে ভালো লাগতো কিন্তু প্রেম করিনি। এবার বধূর চোখ বড় বড় করে বললো

– কিহ বিয়ের আগে বলেন নি কেন?

– আজব তো বিয়ের আগে আপনার সাথে আমার কথা হয়েছিলো নাকি? আর প্রেম তো করিনি.. ভালো লাগতো আর আমি সত্যি বলেছি।

– তাও ঠিক.. এখন ভালো লাগেনা.?
– কিজানি.. তবে আগের মতো মনে পড়েনা, মনে হয় লাগেনা।
– গুড না পড়লেই হলো ।

বাসর রাতের খন্ডচিত্র। নবযৌবনা বধূর নাম “অর্পা জান্নাত” আর বরের নাম “নাফি মাহমুদ নীল”। একেবারে আহামরি আধুকিনাও না আবার সহজ,সরল, গল্পের নায়িকাদের মতোও না। যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু স্মার্ট। যতটুকু বিয়ের পরে জানলো নীল। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। বোনদের মাঝে সবার বড় আর ভাইদের মাঝে সবার ছোট। ভাইদের বললে ভুল হবে। এক ভাই আর তিন বোন। আর জানা লাগবেনা আপনাদের এটুকুই জানুন হেহে। ছাদের পূর্বপাশে বসে নীল গান শুনছে আর এফবিতে গল্প পড়ছে । সকালে একবার আর রাতে। দিনে দুবার এ জায়গায় বসে ব্যাস্ত শহরটাকে দেখে নীল। অর্পা,নিশা (নীলের ছোটবোন) সাথে গল্প করছিলো। গল্পের ফাঁকে নিশাকে জিজ্ঞেস করে।

– তোমার ভাই কোথায় নিশা? সন্ধার পরে আর দেখলাম না।
– নদীর পাড় নাহয় ছাদে।
– নদীর পাড়ে সন্ধার পরে কি করে..?
– ভাইয়াদের আড্ডাখানাই ওখানে.. এখন মনে হয় ছাদে আছে কারন গেলে আমি দেখতাম।
– আচ্ছা চলোতো একটু ছাদে যাই।
– তোমাদের মাঝে আমি থাকতে পারবোনা বাপ.. তুমি যাও।
– পাকনামী করো না।
– হিহিহি ।

রাত ৮ বাজতে চললো প্রায়। গিয়ে দেখে নীল খুব করে ফোনের দিকে তাঁকিয়ে কি দেখছে হা করে।

– এহেম এহেম।

নীলের খোঁজ হলো। অর্পা কে দেখেই ফোনটা লুকিয়ে ফেললো। হকচকিয়ে বললো।
– আপনি…? বসুন।

অর্পা বসে।

– কি দেখছিলেন ওভাবে ফোনে?
– কই কিছুনা।
– ফোনটা এখন আমার হাতে দিবেন না মা’র কাছে বিচার দিবো?
– কিহ আম্মার কাছে? বিচার..!।

নীল ভাবলো আম্মায় এটা দেখলে লজ্জা হবে আমাদেরই। – নাহ বিচার দেয়ার কি আছে এই নিন।
নীল ফোনের হোম বাটনে ক্লিক করলেও রিসেন্ট অপশন থেকে ডিলিট করেনি তাই অর্পা দেখলো বিয়ের আগে একটা ছবি দিয়েছিলো দেখার জন্য। কারন ব্যাস্ততার জন্য নীল মেয়ে দেখতে যায়নি কথাও হয়নি। অর্পা দেখে লজ্জা পেলো খুব।

-ওভাবে দেখার কি আছে?

নীল চুপ করে আছে কি বলবে বোঝতে পারছেনা। কিছুক্ষন দুজনেই চুপ। তারপর অর্পা কড়া সূরে বললো।

– কানে শুনেন না নাকি?
নীল ভয়ে ভয়ে বললো।

– জানিনা তো। আর সুন্দর কিছু মানুষ মুগ্ধ হয়ে দেখবে এটাই স্বাভাবিক।
– বাহ। বোবা হলেও কথা কিন্তু ভালই বলতে পারেন।
– বোবা মানে? কোন দিক দিয়ে আমাকে বোবা মনে হয়?
– হাতটা দিন।
– আজব তো।

– এতো কথা বলেন কেন? দিতে বলেছি দেন।।

নীল হাতটা দিলো। অর্পা হাতটা ধরে লজ্জায় অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে।

– একটু এদিকে তাকান তো।
– পারবোনা।
– তাহলে হাত ধরলেন কেন?
– ধরবোই। অধিকার আছে।
– থ্রেড দেওয়র সময় চোখে চোখ রেখে কথা বলেন আর এখন লজ্জা পাচ্ছেন।
– এখন আপনি প্রপোজ করবেন।
– কেন নতুন করে বিয়ে করার জন্য?
– করেন আগে।
– খালি হাতেই?
– হুম হবে ।
– কিন্তু কি বলবো?
– সেটা আমি বলে দিবো নাকি?

নীল বসে থেকে অর্পার হাত ধরে বলে।

– তুমি কি আমার সারাজীবনের জন্য ঝগড়া করার সঙ্গী হবে?
অর্পা হাসছে।

– হুম হবো তো।
– কিন্তু আপনি করে বলছো কেন?
– বলবোনা তুমি করে।
– আমিও বলবোনা।
– তাহলে আমি ঝগড়াও করবোনা।
– দরকার নেই।
– একটু আগে না প্রপোজ করছেন ভুলে গেছেন?
– হুম গেছি।
– কত্ত বড় সাহস।
– সাহসের দেখছেন কি?
– তুমি করে বলেন বলতেছি।
– আপনি বললেই বলতে হবে নাকি আমার?
– আপনি তো ঝগড়াটে একটা ছেলে।
– আপনিও ঝগড়াটে মেয়ে।

খুব সকাল। নীল অর্পার হাত ধরে শুয়ে আছে। অর্পা ছাড়ানোর চেষ্টা করতেছে কিন্তু পারছেনা। এরকম ভাবে শুয়ে আছে মনে হয় ঘুমিয়ে আছে। কিন্তু হাত ছাড়ছে না। অর্পা নীলের দিকে তাকিয়ে আছে। হটাৎ নীল
চিৎকার দিয়ে উঠলো। অর্পা চমকে গেলো।

– চিৎকার দিলেন কেন? কি হইছে আপনার?
– দুঃস্বপ্ন দেখছিলাম।
– কি দুঃস্বপ্ন?

– আমার থেকে তোমাকে একজন লোক নিয়ে যেতে চাইছে। কিন্তু আমি তোমার হাত ছাড়ছি না। লোকটা খুব জোরে টানছে যখন আমার হাত থেকে তোমার হাত ছুটে গেলো। তখনই…..।
– আমি পানি আনছি একটু বসুন।

নীল হাত দিয়ে টান দিয়ে অর্পাকে কাছে টেনে বললো।

– লাগবেনা পানি। তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে না তো?
– হ্যাঁ যাবো তো আমার যখন অন্য আরেকটা সংসার আছে বোকা।
– আমার ভয় হয়।
– পাগল একটা। ছাড়ো তো।

অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে নীল। যাওয়ার আগে একটু দুষ্টুমী না করলে যেন কি মিস হয়ে যায়। অর্পা নীলের জন্য লাঞ্চের খাবার তৈরি করছে।

– অর্পা…ও অর্পা…।

রান্নাঘর থেকে অর্পা বললো।
– টাই,জুতো,ঘড়ি সব তো আমি রেডি করে রাখছি। আবার কি?

– একটু দেখে যাও না।
রান্নাঘর থেকে আসছে আর বলছে।

– উফফ তুমি না!

নীল রেডি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অর্পা পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখলো। সব তো ঠিকই আছে।

– তোমার সব তো ঠিকই আছে। দাঁড়িয়ে আছো কেন? যাও ।

নীলের চাহনি দেখে অর্পা বোঝে গিয়েছে আর কি বাকি আছে। লজ্জায় মুখ লাল করে বললো।

– আজকে পারবোনা। শখ কত!
নীল দাঁড়িয়ে আছে নড়ছেনা।

– যাওনা দাঁড়িয়ে আছো কেন?
নীল চুপ করে দাঁড়িয়েই আছে।

অবশেষে নীলের পাওনাটা না দিয়ে উপায় নেই। নাহলে এক পা’ও নড়বেনা। লাঞ্চ টাইম। নীল জানে এখনই অর্পা ফোন দিবে। এ কথা ভেবে ফোনের ডিসপ্লেতে তাকানো আর অর্পার ফোন এক কথা।

– শুনো… আজকে আসার সময় আইস্ক্রিম নিয়ে আসবা।
– ফ্রিজে তো আইস্ক্রিমের অভাব নাই।
– ওসব আইস্ক্রিম ভাল লাগেনা।
– তুমি বলার পরেই তো আমি এনেছিলাম।
– এতো কিছু জানিনা আনবা ব্যাস।

বলেই মহারাণী ফোন কেটে দেয়। নীল আসার সময় আইস্ক্রিম আনে। আইস্ক্রিম আনলেই হয়না। নীলের নিজের হাতে খাইয়েও দিতে হয়। মধ্য রাত। দুজনেই ঘুমাচ্ছে। হঠাৎ অর্পার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। দেখলো চাঁদনী রাত। আজকের চাঁদটা না দেখলেই নয়। নীলকে ডাকছে। কয়েকবার ডাকার লরে উঠলো।

– কি হলো এতোরাতে ডাকছো কেন?
– জানালা দিয়ে একটু তাকাও দেখো কত সুন্দর চাঁদ উঠেছে আজ।
– এরকম চাঁদ আমি প্রতিদিনই দেখি। ঘুমাও তো।
– মানে কি? কোথায় দেখো?

– এইযে আমার সামনে বসে আছে যিনি। উনি কা চাঁদের থেকে কম সুন্দর? চাঁদ উনাকে দেখলে লজ্জা পাবে। লজ্জায় ডুবে গেলে অন্যরা আর দেখতে পারবেনা।

– ইশশ…. এসব কথায় হবেনা। আমি চাঁদ দেখবোই দেখবো। সাথে তোমাকেও দেখতে হবে।
– সকালে অফিস তো।
– যেতে পারবা সমস্যা নাই। একটু চলোনা।

নীল আর অর্পা ছাদে বসে চাঁদ দেখছে। নীলের কাঁধে অর্পার মাথা। নীলের ডান আর অর্পার বাম হাত একসাথে বন্ধি। নীল বলে উঠলো।

– আকাশে এতো তারা আমার ভাল লাগেনা।
– কেনো কেনো?
– থাকবে শুধু চারটা তারা। একটা আমি একটা তুমি আর দুটি হলো আমাদের ছেলে মেয়ে।
– ইশশ… মাত্র চারটা তারা থাকবে। বাকি তারা যাবে কোথায়?
– এজন্যই তো ভাল লাগেনা।
– তোমার লাগতে হবেনা। আমার লাগে।
– তোমার ভাল লাগাই তো আমার ভাল লাগা।
– ইশ..

[ছোট ছোট ইচ্ছে পূরণেই অনেক তৃপ্তি আছে। যা হিরে সোনা নেকলেসে হয়না। সুখী থাকতে বেশি কিছু লাগেনা। একতু বিশ্বাস, ভালবাসা, সুখ দুঃখ ভাগ করার মতো একজন। গল্পের মতো সবার কপাল হয়না। কিন্তু যাদের হয়। তারা পৃথিবীর শীর্ষ সুখীদের দুজন।]

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত