ভালোবাসার প্রতিদান

ভালোবাসার প্রতিদান

-নিপা তুমি আমাকে ভুলে যাও। (আকাশ)
> কেনো,ভুলে যাবার জন্য তো ভালোবাসিনি তোমাকে,
তোমাকে যেদিন থেকে ভালোবেসেছি,সেদিন থেকে এই মন প্রাণ সবকিছু তোমাকে দিয়ে দিয়েছি (নিপা)
-তোমার বাবা মা আমাদের এই সম্পর্কটা কখনো মেনে নিতে চাইবে না।(আকাশ)
> বাবা মা যদি মেনে না নেই তাহলে আমরা পালিয়ে বিয়ে করবো। তবুও আমি তোমাকে হারাতে পারবো না। (নিপা)
-এটা কোনভাবেই সম্ভব না নিপা।(আকাশ)
> কেনো সম্ভব না,তুমি চাইলে সব সম্ভব।(নিপা)
-তোমার বাবা মাকে কষ্ট দিয়ে আমাদের বিয়ে করা ঠিক হবে না, আমার বাবা মাও এটা মেনে নিবে না।

আমরা এমন করলে সব থেকে বেশি কষ্ট পাবেন ওনারা।(আকাশ)
> ওরা কষ্ট পাবে,আর আমরা কি সুখি হবো, তাহলে তুমিও মনে রেখো,জীবন দিয়ে দিবো, তবু অন্য কাউকে বিয়ে করবো না।(নিপা)
-পাগলামী করো না নিপা।(আকাশ)
> তুমি থাকো তোমার মতো,আর মনে রেখো, তোমাকে আমি না পেলে, আর কেউ আমাকে পাবে না, কেউ না।
যদি সত্যিই ভালোবেসে থাকো তাহলে ঠিকি আমাদের দুজনের মিলন হবেই।
কথাটি বলে নিপা চলে গেলো (নিপা)
-নিপা দাড়াও যেও না।
নিপা,
এই নিপা।(আকাশ)
.
নিপা আর পেছনে ফিরে তাকালো না, আকাশ অনেকবার ডেকেও নিপাকে থামাতে পারলো না।
.
আকাশ হতাশ হয়ে মাটিতে বসে পড়লো।
আকাশ মাটিতে বসে থেকে ভাবছে, কি করবে এখন।
নিপাকে কি করে বুঝাবে সে, সেতো কোনভাবেই কিছু বুঝতে চাইছে না ।
.
আজকাল কোন বাবা মা চাই না,নিজের মেয়েকে বেকার কোন ছেলের সাথে বিয়ে দিতে।
প্রতিটা বাবা মা চাই নিজের মেয়ের সুখ।
সেইজন্য তারা দেখেশুনে ভালো পরিবারে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেই।
যেনো তাঁদের মেয়ে সুখে থাকে।
.
.
-আকাশ আর নিপার সম্পর্ক কখনো মেনে নিবে না নিপার পরিবার।
কারন নিপার পরিবার একটু উচ্চবিত্ত, আর আকাশের পরিবার নিম্নবিত্ত।
তারপরেও নিজের বাবা মা মানবে কিনা সেটা আকাশ ভাবতে থাকে।
.
.
আসলে সবদিকে ভাবলে কোনদিন ভালোবাসার সৃষ্টি হতো না, সবদিক ভেবে কখনো ভালোবাসা হয় না।
.
আকাশ অনেকভাবে নিপাকে বুঝিয়েছে, কিন্তু নিপা বুঝতে চাইছে না।
সে শুধু আকাশকে চাই, আর কিছু তার প্রয়োজন নেই।
আকাশকে পেলে সে সব ছেড়ে চলে আসবে।
.
.
ভালোবাসার মানুষটিকে ঘিরেই তো সবাই ছোট ছোট স্বপ্ন বুনে, আর সেই মানুষটিকে কেউ হারাতে চাই না।
.
.
আকাশ কি করবে সেটা সে কোন ভাবেই বুঝতে পারছে না।
এখন যদি কেউ আকাশের পাশে থাকতো, সুন্দর করে আকাশকে বুঝাতো।
তাহলে হয়তো এমন পরিস্থিথিতে সে কি করবে সেটা সে বুঝে উঠতে পারতো।
কিন্তু কেউ এখন তার পাশে নেই, কারন বিপদের সময় কেউ পাশে থাকে না।
.
.
আকাশ একদম ভেঙ্গে পড়ে, বিষন্ন মন নিয়ে আকাশ নিপাকে কল করে।
.
অাকাশ ওপাশ থেকে নিপার মুখে শুধু একটি কথায় বলতে শুনে, সেটা হলো তোমাকে না পেলে আমি নিজেকে কারো হতে দেবো না,
আর আমার মৃত্যুর পরে তুমি দায়ী থাকবে চিরজীবন।

.
আকাশ ফোন কেটে দেয়।
ফোন পকেটে রেখে আকাশ একবার আকাশের দিকে তাকাই, আর একবার মাটির দিকে।
চিৎকার করে বলে আকাশ, কেনো তুমি আমাকে এমন পরিস্থিতিতে ফেললে সৃষ্টিকর্তা।
এখন আমি কি করবো।
.
ফোন পকেটে রেখে আকাশ বাড়িতে চলে আসে।
নিজের মনকে আকাশ বার বার প্রশ্ন করতে থাকে এখন আমার কি করা উচিত।
একদিকে পরিবার অন্য দিকে ভালোবাসার মানুষটি।
.
দুপুরে খাবার টেবিলে আকাশ বাবা মার সাথে বসে থেকে খাবার খাচ্ছে।
বাবা মাকে কি বিষয়টি বলবে নাকি, বলবে না সেটা ভাবতে থাকে আকাশ।
.
-বাবা একটা কথা ছিলো (আকাশ)
> কি কথা আকাশ (বাবা)
-বাবা আমি একটি মেয়েকে ভালোবাসি।
> এটা তুই কি বলছিস।
– হ্যাঁ বাবা,যেটা সত্যি সেটাই বলছি।
> তুই আমার সব স্বপ্ন গুলো শেষ করে দিয়েছিস, আমি ভাবতে পারিনি তুই এমনটা করবি।
– আমি সরি বাবা।
> তুই ওই মেয়েকে ভুলে যা।
– আমি পারবো না।
> কেনো পারবি না।
– কারন আমি ওকে অনেক ভালোবাসি।
> টাকা ছাড়া আজকাল ভালোবাসার দাম নেই।
তুই আমার একমাত্র সত্নান। অনেক কষ্টে তোকে বড় করেছি, প্রেম করে বিয়ে করার জন্য।
আমি তো তোর বিয়ে ঠিক করে রেখেছিলাম।
-কি বলো তুমি এসব।
> হ্যাঁ ঠিকি বলছি।
-কার সাথে।
> পাশের গ্রামের জমিদারের মেয়ের সাথে। তোর সাথে ওর বিয়ে দিলে জমিদারের সবকিছু আমাদের হয়ে যাবে, এক বাবার একটি মাত্র মেয়ে।
আর বিয়ের সময় আমাদেরকে জমিদার দশ লাখ টাকা দিতে চেয়েছে।
-এসব তুমি কি বলছো।
> হ্যাঁ বাবা, তুই তোর ভালোবাসা ভুলে যা, কারন তুই যাকে ভালোবাসিস, তার বাবা কোনদিনও আমাদেরকে দশলাখ টাকা দিবে না।
আর আমরা বড়লোক হতেও পারবো না।
-তোমার কাছে টাকা সবথেকে বড় হয়ে গেলো।
> আজকাল সবাই টাকা চাই, টাকা থাকলে আজকাল সব কিছু পাওয়া যায়।
-আমি পারবো না ওকে বিয়ে করতে।
> তুই যদি জমিদারের মেয়েকে বিয়ে না করিস, তাহলে আমার মরামুখ দেখবি তুই।
-এটা কেমন কথা বলছো বাবা।
> হ্যাঁ সত্য কথাই বলছি, তোকে এতো বড় করতে আমার অনেক টাকা ফুরিয়েগেছে, সেগুলো এখন তোর বিয়ে দিয়ে নিয়ে নিবো।
– বাবা তুমি এসব কি বলছো।
> এতো কথা বাদ দিয়ে নিজের ঘরে ”’যা, তোর বিয়ে জমিদারের মেয়ের সাথে হবে,

আর ওর সবকিছু আমরা পেয়ে যাবো, অনেক টাকা হয়ে যাবে আমাদের।
আমি আজকেই ওদের বাড়ি গিয়ে বিয়ের দিন ঠিক করে আসবো।

আর কোন কথা বলবি না।
.
আকাশের মনটা অারো খারাপ হয়ে গেলো। তার বাবা তাকে এমন কথা বলবে সেটা আকাশ কখনো কল্পনাতেও ভাবেনি।
এটা নিজের বাবা আকাশ সেটা ভাবতে পারছে না।
.
আকাশ নিজের রুমে এসে রুমের দরজা লক করে দেয়।
রুমের ভেতরে আকাশ ফুফিয়ে ফুফিয়ে কান্না করতে থাকে।
যে কান্নার শব্দ কেউ দেখেও না বুঝেও না।শুধু রুমের ইটগুলো বুঝতে পারে।
কিন্তু তারা বুঝেও অবুঝের মতন দাড়িয়ে থাকে।
.
আকাশের আজকে সবকিছু বিষের মতন লাগে।
এই বাড়ি,এই ঘর,এই পরিবার সবকিছু তার কাছে বিষাদময় হয়ে উঠেছে, মনে হয় সবকিছু ছেড়ে তার চলে যাওয়া উচিত।
এইসবের কোন প্রয়োজন মনে করেনা আকাশ।
.
যদি এই জগতে ভালোবাসার চেয়ে টাকার মুল্য বেশি হয় তাহলে সেখানে বেঁচে না থেকে মরে গেলে ভালো হয়।
দুঃখে ভরা এই জীবনে সুখের দেখা আর হয়তো আর মিলবে না।
.
.
নিপাকে এখন কি বলবে আকাশ,কোন মুখ নিয়ে সে নিপার কাছে যাবে।
কি বলবে সে নিপাকে।
.
আজকে নিপার বিয়ে,
নিপাকে নিয়ে পালিয়ে যাবার কথা ছিলো আজ।
কিন্তু জন্মদাতা পিতা মাতার মুখের দিকে চেয়ে আকাশ না করতে পারেনি।
নিজের সকল সুখ গুলো বির্সজন দিয়ে আকাশ বাবা মার সুখ,খুশি, মতামত আনন্দ গুলোকে বেশি প্রাধ্যন্য দেই।
কারন তারা তো এই আকাশের জন্মদাতা পিতামাতা।
.
.
একদিকে নিপার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে আকাশ নিজের রুমে বসে থেকে বৃষ্টির পানির মতন চোখের জল ফেলছে।
আকাশের বুক আগুনের মতন দাউদাউ করে জ্বলছে, নিজের ভেতরটা আগুনে পুড়লে যেমন ছাই হয়ে যায়, তেমনি হয়ে গেছে।
.
.
হটাৎ করে আকাশের ফোন বেজে উঠে।
কান্নারত অবস্থায় ফোন হাতে নিয়ে দেখে আকাশের বন্ধু রিহান ফোন করেছে।
.
-হ্যা রিহান বল।
> একটা খারাপ সংবাদ আছে।
-বলে ফেল।
> নিপা।
-কি হয়েছে নিপার।
> সে আর বেঁচে নেই।
.

রিহানের মুখে এমন কথা শুনে আকাশের হাত থেকে ফোনটা পড়ে যায়।
আকাশ ধুপ করে ফ্লোরে বসে পড়ে।
মুখ দিয়ে কোন কথা বের হয়না তার।
সবকিছু তার দিনের আলোতেও অন্ধকার হয়ে যায়।
বুকে চিনচিন ব্যাথা শুরু হয়ে যায়।

.
সুন্দর আকাশে জমে উঠে কালো মেঘ,
আকাশের কান্নার শব্দে আকাশ, বাতাস, সবকিছু এক সাথে কেঁদে ওঠে।
প্রিয়জনকে না পাওয়ার বেদনা যে কত মর্মান্তিক, সেটা সেই বলতে পারবে যে তার প্রিয়জনকে হারিয়েছে।
.
আকাশ নিজেকে অপরাধী ভাবতে শুরু করে,আকাশের জন্যই আজকে এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে ওপারে চলে যেতে হলো নিপাকে।
এই সুন্দর পৃথিবীতে আর তার যায়গা হলো না।
এই সুন্দর পৃথিবীর মানুষগুলো বড়ই নিষ্ঠুর।
কেউ চাইনা সবাই সুখে থাকুক।
একজন আরেকজনের ক্ষতি করার চিন্তা নিয়ে সকালে ঘুম থেকে উঠে।
.
আকাশ ভেবে ফেলে যেখানে ভালোবাসার দাম নেই সেখানে সেও থাকবে না।
যেখানে ভালোবাসার কোন মর্যাদা নেই সেখানে থেকে কষ্ট পাওয়ার দরকার কি।
যেখানে ভালোবাসার সম্মান সবার উপরে সেখানেই সে চলে যাবে।
থাকবে না সে এই নিষ্ঠুর পৃথিবীর নিষ্ঠুর মানুষদের কাছে।
চলে যাবে ওপারে, নিপার কাছে যেখানে রয়েছে ভালোবাসার সম্মান।
যেখানে গেলে সে নিপাকে পাবে।।
.
সত্যিই আজও পৃথিবীতে সত্যিকারের ভালোবাসা গুলোর মর্যাদা কেউ দেয় না।
হয়তো নিজের পরিবার বা যাকে মন থেকে ভালোবাসে, সেই একসময় পাল্টি খাই।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত