মেঘলার হারিয়ে ফেলা ডায়েরি

মেঘলার হারিয়ে ফেলা ডায়েরি

এই আবহাওয়াতে খোলা চুলে হাঁটতে ভীষণ ভালো লাগে। এলোমেলো বাতাস এসে আলতো করে গা ছুঁয়ে দিয়ে যায়। আর সেই বাতাসকে ফিসফিস করে বলতে ইচ্ছে করে,

চল হারিয়ে যাই।

কোনো এক অজানা দেশে।
যেখানে ছোট্ট কুঠরিতে সংসার হবে আমাদের।
রোজ তোর শীতল পরশে,
আমি নিজেকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখবো।
আর তুই বর্ষার কদম হয়ে,
আমার দৃষ্টিপটে পাখনা ছড়াবি।

—-মেঘলা

এইরকম আবহাওয়াতে না লিখে থাকা যায়? তাই ছোট্ট করে বাতাসের সাথে নিজের প্রেমকাহিনীর অংশ বিশেষ তুলে ধরেছিলাম আমার ডায়েরির মাঝ পৃষ্ঠায়।

গত পরশু এই ছোট্ট দুটি লাইন বাতাসকে নিয়ে লিখেছিলাম।
আজও আবার বাতাস সেই পুরোনো রোমান্টিকতা নিয়ে আমার নিকট এসে ধরা দিয়েছে।
আবার খুব লিখতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু আজ ডায়েরিটা কোথাও খুঁজে পাচ্ছিনা।
পুরো ঘর তন্নতন্ন করে খোঁজা শেষ।

কিন্তু কোথাও আমার ডায়েরিটা পেলাম না। ভীষণ রাগ হচ্ছিলো, কিন্তু এই দুষ্টু বাতাস আমার রাগটাকে বারবার জব্দ করে নিজের আয়ত্বে নিয়ে যাচ্ছে। আর পরিস্থিতি বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে, এখন রাগ করাটা শোভনীয় হবে না। কারণ তোমার বাড়িতে সবাই ভোরের ঘুমে আচ্ছন্ন।

তখন থেকে বকবক করছি।নিজের পরিচয়টা দিতেই ভুলে গেছি। আমি মেঘলা।খালার বাড়িতে থেকেই পড়াশোনা করছি। খালা,খালু আর তাদের দুমেয়ের সংসারে আমি এসে ভাগ বসিয়েছি।বড় মেয়ে জারা।

তার বিয়ে হয়ে গেছে।আর ছোটো মেয়েটাও আমার সিনিয়র,সারা আপু। উনার লেখাপড়া শেষ। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জব করছেন।

যেটা বলছিলাম, ডায়েরিটা কোথাও পাচ্ছিনা। মন খারাপ করে বসে আছি। কিচ্ছু ভালো লাগছেনা। ঐ ডায়েরিটা জুড়ে আমার কত্ত যে স্মৃতি জড়িত । তাছাড়া বাতাসের সাথে কাটানো মূহুর্তগুলো ঐ ডায়েরির মাঝেই বিরাজমান।

-মেঘলা,টেবিলে নাস্তা দিয়েছি।খেতে আয়।

-উনি আমার খালা।ভীষণ বদমেজাজি। তাছাড়া আমি উনাকে বাঘের মতো ভয় পাই। তাই কখনো কিছু দরকার পড়লে বা হারিয়ে গেলেও সাহস করে বলিনা।

খালা ডাকছে। এখন নাস্তা খেতে না গেলে ভীষণ বকাবকি শুরু করবে।
তাই খাবার টেবিলে গেলাম নাস্তা খাওয়ার জন্য।

আমি, সারা আপু আর আঙ্কেল তিনজনে একসাথে বসে নাস্তা করছি।
হঠাৎ খালা সারা আপুকে বলছে,

-হ্যাঁ রে, গতকাল পবন কেন এসেছে?কতদিন পর ছেলেটাকে দেখলাম।প্রায় ২ বছর পর ওকে দেখতে পেলাম।

-হ্যাঁ মা।পবন এসেছিলো কারণ আমার নিকট ওর বেশ কিছু উপন্যাস ছিলো।আমি সময়ও পাইনা, আর ওর বইগুলা ফেরতও দিতে পারিনা।তাই পবন আসছিলো ওর বইগুলা নেওয়ার জন্য।জানো মা, পবন একটি পত্রিকার অফিসে জব করছে।

-বাহ্ ! ভীষণ ভালো খবর তো।

-সারা আপু আর খালা দিব্য পবন নামের একজন ভদ্রলোককে নিয়ে কথা বলছেন। অবশ্য আমি কখনো উনাকে দেখিনি। দেখবো কি করে? আমি খালার বাড়িতে এসেছি মাত্র একবছর হলো। আর পবন লাস্ট ২বছর আগে এখানে এসেছিলো। সুতরাং দেখারতো প্রশ্নই উঠে না। কিন্তু আমি ভাবছি অন্য বিষয় নিয়ে।
সারা আপুর থেকে” হুমায়ূন আহমেদ “এর ৭টা উপন্যাসের বই আমি পড়ার জন্য এনে আমার টেবিলে রেখেছিলাম ডায়েরির সাথে। সারা আপু ভুল করে উপন্যাসের সাথে আমার ডায়েরিটা দিয়ে দিলো নাতো?
হ্যাঁ, তাই হতে পারে। সারা আপু পবন নামের ছেলেটাকে আমার ডায়েরিটা যদি দিয়ে থাকে তাহলে ছেলেটা ডায়েরিটা আদৌ পড়বে কি?

পড়লে পুরো কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। ডায়েরি জুড়ে কত্ত আবল তাবল জিনিস লিখেছি। না জানি পড়ে আমাকে পাগল ভাববে কিনা?

নাস্তা শেষ করে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বের হলাম। মাথায় প্রচুর চিন্তা ডায়েরিটা নিয়ে। তাছাড়া আমিতো নিশ্চিত নয়,যে সারা আপু সত্যি ডায়েরিটা ঐ ছেলেটাকে দিয়েছে কিনা?

আমাদের ভার্সিটিতে যাওয়ার পথে রাস্তাঘেষে একটা বিশাল মাঠ রয়েছে। মাঠে কিছু সিনিয়র ভাইয়ারা ক্রিকেট খেলছে। আমি আবার সর্বদা নিজেকে পিচ্চি ভাবি। রাস্তাঘাটে বা যেকোনো জায়গায় জুনিয়র কাউকে দেখলেও আজকাল সিনিয়র বলে মনে হয়। আবার মাঝে সিনিয়রদের ক্ষেত্রে উল্টাটা মনে হয়। সেদিন একবার ভার্সিটিতে একটা ছেলের সাথে হেব্বি তুলকালাম কান্ড করেছি। ছেলেটি কই যেন যাচ্ছিলো তাড়াহুড়ো করে। উনি দূর থেকেই নাকি আমাকে ইশারা করে সাইড দিতে বলেছেন আর আমি কিছুই বুঝতে পারিনি। যেহেতু বুঝতে পারিনি সেহেতু সাইড দেওয়ার প্রশ্নই উঠে না। তাই আমি সাইড দেই নি। তাই উনি দৌঁড়ে যাওয়ার সময় পায়ে পা লেগে হোঁচট খেয়ে ধপাস করে পড়ে গেলো। কি ভাবলেন আমি পড়ে গেছি?আরে নাহ্ মশাই ঐ ভাইয়াটাই পড়ে গেছে। উনি পড়ে গিয়ে সেকি রেগে গেলেন আমার উপর। আমিও রেগে গেলাম। হুদাই উনি রাগ দেখাবেন আর আমি হজম করবো? ঐরকম মেয়ে আমি নয়। হ্যাঁ আমি এমনিতে ভীষণ ভালো।

শুধু আমাকে না ক্ষেপালেই হলো। কিন্তু উনি রেগে আমাকে হেব্বি ঝারি দিয়েছেন। আমিও তাই ক্ষেপে গিয়ে উনাকে ঝারি দিয়েছি। পরের দিন জানতে পারি উনি আমার সিনিয়র ভাইয়া।

সত্যি যদি জানতাম সিনিয়র তবে এতোটা অসম্মান করতাম না। আমি উনাকে জুনিয়র ভেবেই হেব্বি রাগ ঝারছি। উনি সিনিয়র জানার পর নিজেই থ হয়ে গেলাম। এই পিচ্চি ছেলে নাকি আমার সিনিয়র। তার পর থেকেই সিনিয়র জুনিয়রের মধ্যে হেব্বি গুলিয়ে ফেলি।

জুনিয়রকে সিনিয়র ভেবে ঝগড়া করা যায়,সেটা ব্যাপার না। কিন্তু সিনিয়রকে জুনিয়র ভেবে ঝগড়া করলে পরে বড্ড বিব্রতবোধ হয়। আর তাই সেদিনের পর থেকেই আমি অপরিচিত কাউকে দেখলেই আমার সিনিয়র ভাবি।

তাই রাস্তার পাশের মাঠে খেলছে যারা, তাদের পুরো ক্রিকেট টিমকে সিনিয়র এর কাতারে ফেলে দিয়েছি।

তো আমি রাস্তা ধরেই হাঁটছিলাম। হঠাৎ মাঠ থেকে একটা বল উড়ে এসে পড়লো আমার পায়ে। সেই লেভেলের একটা ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলাম ধপাস করে। ওরে বাপরে কি ব্যাথা বলে আমি কান্না শুরু করে দিলাম।

মাঠ থেকে পুরো ক্রিকেটটিমটা দৌঁড়ে এসে আমার চারপাশে গোলাকৃতি হয়ে দাঁড়ালো। ওদের দেখে মনে হচ্ছে আমি এখানে সার্কাস করছি। যতটুকু ব্যাথা পেয়েছি তার থেকেও বেশি মেজাজ খারাপ হচ্ছে। কিন্তু বিশ্বাস করেন আমি একমূহুর্তের জন্যও কান্না থামিয়ে রাখিনি। থামাবো কি করে বলেন? প্রচুর ব্যাথা পেয়েছি।কিন্তু এরা সবাই আমার তামাশা দেখছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। হঠাৎ একটা ছেলে ফ্রিজেরএক টুকরো বরফ নিয়ে এসে পায়ের পাতার পেছনটাতে লাগাতে বলতেছে। আমি উনার হাত থেকে বরফের টুকরোটা নিয়ে পায়ে অনবরত ঘষছি।

আসলে আমরা স্যরি। বুঝতে পারিনি বলটা এভাবে আপনার পায়ে এসে লাগবে। আর আপনি এভাবে পড়ে যাবেন। (বরফের টুকরো নিয়ে আসা ছেলেটি অতিরিক্ত অনুতপ্ত হয়ে আমাকে এ কথাগুলো বলছিলো।)
আমি কিচ্ছু বলছিনা। এখনো কান্না করছি। আসলে আমি একটু ন্যাকা বেশি। অল্পতেই কাঁন্নাকাটি শুরু করে দেই। শেষ করতেও সময় লাগে।

-আচ্ছা চলুন আপনাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই।
-তার দরকার হবেনা। এমনিতেই সেরে যাবে।
-আচ্ছা চলুন, তাহলে আপনাকে বাসায় পৌঁছে দেই।
-কেন? বল মেরেও শান্তি হয় নি? এবার বাসায় গিয়ে বাকি ঝামেলা বাঁধাবেন?
-আরে না না,তা নয়। আপনি এই পা নিয়ে হাঁটবেন কি করে, তার জন্যই বললাম। আর শুনুন,বলটা ইচ্ছে করে মারিনি। আপনি ওদের জিজ্ঞেস করুন। শুধু শুধু আপনাকে বল কেন মারবো বলুন?
-সেটা আমি কি করে জানবো, বল কেন মেরেছেন? বাই দ্যা ওয়ে, বলটা কে মেরেছে? ঐটা কি আজকে মরা গরুর মাংস খেয়ে আসছে? শরীরে কি জোর রে বাবা।

এত্তজোরে বলটা মারছে,ইচ্ছে করতেছে আমিও রিটার্ন বলটা মেরে ওর মাথাটা ফাটাই দেই।

-ইয়ে মানে,বলটা আর কেউ না,আমি-ই মেরেছি। আপনার কাছে কিন্তু স্যরিও বলেছি।
-আপনি? শরীরে নেই এক কিলো মাংস,তার আবার এমন জোর? (ফিসফিস করে বলেছি)
-কিছু বল্লেন?
-জ্বী না।

এই শোন্,

তোরা যে যার বাড়িতে চলে যা, আজ আর খেলবো না। এমনিতে বেচারির পা’টা গেছে।
আচ্ছা চলুন,সবাই যেহেতু চলে গেছে,আপনাকে পৌঁছে দেই।

-তার আর দরকার হবেনা। আমি একাই যেতে পারবো। আপনি ব্যাস, একটা রিকশা ডেকে দিলেই হবে।

-ওকে।

ছেলেটাকে ধন্যবাদ দিয়ে রিকশায় উঠে বাসায় চলে আসলাম।
রিকশা থেকে নেমে আমি আর এক পা’ও হাঁটতে পারছি না।পা ভীষণ ফুলে গেছে।
-কিরে, তোর পায়ে কি হয়েছে? ব্যাথা পাইলি কিভাবে?(খালা)
-ঐ খালা পা মচকে ব্যাথা পেয়েছি।তুমি চিন্তা করো না।সেরে যাবে।
-এত্ত অসতর্ক ভাবে চললে এমনটাই হবে। দেখি আমার হাত ধরে উঠে আয় তো।
-খালার হাত ধরে নিজের রুমে গেলাম।

প্রায় সন্ধ্যায় সারা আপু আমার ঘরে এসে উপস্থিত হলো।
-কিরে মেঘলা পা মচকে গেলো কি করে?

-আর বলোনা আপু। ভার্সিটির সামনে যে মাঠটা আছে, ওখানে কিছু ছেলে ক্রিকেট খেলছিলো। ওখান থেকেই বলটা এসে আমার পায়ে লাগলো।

-কসকি? মাকে খবরদার বলিস না।
-আমি খালাকে কিচ্ছু বলিনি। তুমিও কিছু বলোনা।
-আচ্ছা, এখন কেমন ফিল করছিস?
-একটু ব্যাথা আছে।
আচ্ছা আপু একটা কথা বলি?
-কি কথারে? বল।

-আপু তুমি তোমার ঐ ফ্রেন্ডটাকে যে উপন্যাসগুলো ফেরত দিয়েছো সেখানে আমার নিয়ে আসা ৭টা উপন্যাস ছিলো?

-হ্যাঁ,আমিতো ওকে সবগুলোই দিয়ে দিয়েছি। কেন তোর পড়া হয়নি?
-হু।পড়া হয়েছে,বাট একটা সমস্যা হয়ে গেছে আপু।
-কি সমস্যা রে?

-আমার মনে হয় তুমি ভুল করে আমার ডায়েরিটাও তোমার বন্ধুকে দিয়ে ফেলেছো!
-কি বলিস? ক্যালো করেছে, আমার সবগুলো কাজেই এমন ঘ্যাপলা লাগে কেন, বলতে পারিস?
-আপু আমি নিশ্চিত নয়,বাট মনে হয় তাই তোমাকে বলেছি।
-আচ্ছা দাঁড়া,আমি পবনকে ফোন করে জিজ্ঞেস করি।
-আচ্ছা।

তারপর সারা আপু ওর পবন নামের বন্ধুটিকে ফোন দিলো।

-এই যাহ্ ! মেঘলা,
আমার ফোনেতো ব্যালেন্স শেষ। কল যাচ্ছে না।
দেখি তোর ফোনটা দে তো। তোর ফোনে ব্যালেন্স আছে তো?
-হ্যাঁ, আছে।তবে…?

-তবে কি? আরে প্রবলেম হবে না। তুই ফোনটা দে, আমি পবনকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করে নেই।

-আচ্ছা।

তারপর আমি সারা আপুকে ফোন দিয়েছি পবন নামের ভদ্রলোকটিকে ফোন করার জন্য।

-মেঘলা,

-হু আপু।

-কিরে পবন তো ফোন ধরছেনা। মনে হয় ব্যস্ত! আচ্ছা এখন থাক।পরে না হয় আবার ফোন দিয়ে ট্রাই করবো।

-আচ্ছা। (মন খারাপ করে)

-মন খারাপ করিস না পাগলী।পবনের কাছে থাকলে ঠিক ডায়েরিটা তুই পেয়ে যাবি।

আচ্ছা শোন্,
তুই বরং একটু রেস্ট নে।আমি যাই।
-আচ্ছা।

সারা আপু চলে যাওয়ার পর আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। কিছুক্ষণ ঘুমানোর পর হঠাৎ আমার ফোনটা বেজে উঠলো। ঘুমঘুম চোখে ফোনটা রিসিভড করতেই ওপাস থেকে একটা পুরুষ কন্ঠ ভেসে আসলো।

-কে বলছেন?(পুরুষ কন্ঠ)

-স্যরি,আপনি কে বলছেন? এতো রাতে আপনি নিজে ফোন দিয়ে আমাকে বলছেন, আমি কে? আজব তো।

-এক্সকিউজ মি ম্যাম,

এই নম্বর থেকে সন্ধ্যায় আমার নম্বরে ফোন করা হয়েছে।
-ঐ মিঞা, এত রাতে ফোন দিয়ে ভন্ডামি করা হচ্ছে? মেয়ের গলা পেলেই ভন্ডামি করতে মন চায়,তাইনা?
-আরে আজব মেয়েতো আপনি? শুনুন, এরকম মনমানসিকতা আমার নেই। মেয়ের গলা পেলেই ভন্ডামি করার মানেই হয় না। এনিওয়ে আপনি ফোন না দিলে মনে হয় এলিয়েন আপনার নম্বর থেকে আমায় ফোন দিয়েছে।

-এই যে শুনুন,আমি এলি…
যাক বাবা, ফোনটা কেটে দিলো? আজব তো! অত্তোরি কাটছে ভালোই হয়েছে। এরকম আউলফাউল লোকের

সাথে কথা বলার কোনো মানেই হয় না।

ফোনটা রেখে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। হঠাৎ সারা আপু এসে ডাকতে শুরু করলো।
-মেঘলা,দরজা খোল।
-ধুর আপুটা না। এতো রাতে আসছে দরজা খুলতে বলার জন্য। (মনে মনে বললাম)
-কিরে? মরার মতো ঘুমাচ্ছিস নাকি? দরজাটা খোল। তোর সাথে কথা আছে।
-আসছি। ওয়েট করো।(কি আর করার,আরামের ঘুম হারাম করে গেলাম দরজা খুলতে।)

-কিরে মেঘলা,কয়টা বাজে দেখছোস? তোর পায়ের কি অবস্থা?
-কয়টা বাজে? হ্যাঁ,একটু ভালো আছে।

-প্রায় সকাল ৮টা বাজে। মা যদি জানতে পারে এতো বেলা পর্যন্ত ঘুমাচ্ছিস, তাহলে সেই লেভেলের বকা দিবে।
-যাক বাবা,৮টা বেজে গেলো !
-হু, আচ্ছা শোন্,
পবন নাকি তোকে ফোন দিয়েছিলো?
-কই,কখন?

-আরে হ্যাঁ, আমি ওকে ফেসবুকে বলেছিলাম সন্ধ্যায় কোথায় ছিলো, এতবার ফোন দিয়েছি।ফোন না ধরার কারণ কি?

ও বললো ব্যস্ত ছিলাম রে। বাট ফোন কখন দিয়েছিস? তোর নম্বর থেকে কোনো ফোন আসেনি তো। তখন আমি বললাম, সন্ধ্যায় আমার একটা কাজিনের নম্বর থেকে তোকে ফোন দিয়েছি। তারপর ও বললো, আরে ঐ নম্বরে আমি ফোন দেওয়ার পর একটা মেয়ে আমায় সেই লেভেলের ঝারি দিয়েছে।
-এ্যাঁ ! আমি ঝারি দিয়েছি? কখন? (মনে পড়ছেনা তো, কখন দিলাম ঝারি?)
-কি জানি? আচ্ছা শোন্,

তোর ডায়েরিটা পবনের কাছেই আছে।আমি ভুল করেই ওকে দিয়েছি। ও বলেছে সময় করে ফেরত দিয়ে যাবে।
যা,মা টের পাওয়ার আগে ফ্রেস হয়ে নাস্তার টেবিলে চলে আয়।
-আচ্ছা আপু।

সারা আপু আমার সিনিয়র, কিন্তু আমার সাথে সবসময় বন্ধুর মতো আচরণ করে। বড় বা ছোট এসব বিচার খুব কম-ই করে। সারা আপু চলে যাওয়ার পর ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলাম, প্রায় রাতের ১১টায় একটা আননোন নম্বর থেকে কল এসেছে।

তার মানে সত্যি ঝারি দিয়েছি। ইস্ রে ঘুমের ঘরে এই কাজটা করেছি।

ফ্রেস হয়ে নাস্তা খেয়ে আস্তে আস্তে বের হলাম ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। হঠাৎ রাস্তায় ফুচকাওয়ালাকে দেখে খুব ফুচকা খেতে ইচ্ছে করলো। কোনোকিছু না ভেবেই চলে গেলাম ফুচকা খেতে।
-এই মামা,এক প্লেট ফুচকা দাওতো।
-ঝাল দিমু?
-না মামা।ঝাল দিওনা।
হঠাৎ সেই ছেলেটাকে দেখতে পেলাম। গতকাল যেই ছেলেটা আমার পায়ে দেওয়ার জন্য বরফ নিয়ে এসেছে।কিন্তু ছেলেটা ফুচকা খাচ্ছে আর আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে জীবনে মেয়ে দেখেনি।যত্তসব!

-এই যে নেন আফা,ফুচকা রেডি।
-আমি মামার হাত থেকে ফুচকা নিয়ে আবার ঐদিক তাকাতেই দেখলাম ছেলেটা এখনো তাকিয়ে আছে! এবার আর সহ্য হলোনা।
ফুচকার প্লেটটা হাতে নিয়ে ঐ ছেলেটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম আর বললাম,
-ঐ জীবনে মেয়ে দেখোস নাই? এমন করে তাকাইয়া আছোস কেন?
-স্যরি, আমি কেমন করে তাকাইছি?
-এই যে ড্যাবড্যাব করে।
-ওমা, সেটা কি করে তাকায়? একটু শেখাবেন?
-ঐ তুই আমার সাথে মশকরা করোস? থাবড়াইয়া গালের বত্রিশটা দাঁত বের কইরা আনুম।চিনোস তুই?
-না চেনার কি আছে? আপনি তো একটা ন্যাকা মেয়ে।

-জুতা খুলে মারবো।বজ্জাত ছেলে। আর যদি তাকাস তাহলে তোর চোখ আমি কলম দিয়া গুতাইয়া তুলে নিবো।বুঝছোস?

-এইতো, আবার তাকালাম।হাজারবার তাকাবো।ঐ চোখ দুটোতেই অনেক জাদুভরা। না তাকিয়ে থাকা যায়? আমি তাকিয়েই থাকবো।
-তবেরে। ইয়ার্কি মারোস তুই আমার লগে? (যেইনা ব্যাগে হাত দিয়েছি অমনি ছেলেটা দশ হাত দূরে ব্যাঙের মতো লাফ মেরে চলে গেলো নাগালের বাহিরে।)

শালা এই সাহস নিয়া আসছে মেঘলার সাথে ইয়ার্কি মারার জন্য।ফুচকা খেয়ে আবার ধীর গতিতে হাঁটা শুরু করলাম। যথাসময়ে ভার্সিটি উপস্থিত হতে পারলাম না।কারণ এই পা নিয়া হাঁটা অসম্ভব ছিলো।আবার বাসায় বসেও বিরক্ত হচ্ছিলাম,তাই বের হয়ে আসা।

ভার্সিটি গিয়ে কোনো লাভই হলোনা।তাই একটা রিকশা নিয়ে প্রায় ২ঘন্টা ঘুরলাম একা একা। আমি আসলে বাসায় খালার ভয়ে একটু বিড়াল বিড়াল হয়ে থাকি।কিন্তু বাহিরে বের হলে নিজেকে বাঘ মনে করি। যাই হোক কিছুক্ষণ ঘুরে বেড়ানোর পর রিটার্ন বাসায় ফেরত আসলাম।

-মেঘলা,তোর মা ফোন দিয়ে বলেছে, এসপ্তাহে তোকে বাড়িতে যাওয়ার জন্য।(খালা)
-এখন হঠাৎ বাড়িতে যাবো কেন? কোনো সমস্যা হয়েছে কি খালা?

-নারে।সমস্যা নয়।তোকে ছেলেপক্ষ দেখতে আসবে।তাই তোর মা আমাকে খবরটা দিয়েছে। বুঝিনা,বুবু এত্ত তাড়াতাড়ি তোকে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন কেন?
-খালা, তুমি মা’কে বোঝাও। সারা আপুর উদাহরণ দিয়ে বুঝাও।
-নারে তোর মা একদম বুঝতে চাচ্ছেনা।আমি অনেক বুঝিয়েছি।
-খালা,মেয়েরা কি দেখতে জোকারের মতো? ছেলেপক্ষ সার্কাস দেখতে আসবে?
যত্তসব! মেয়ে দেখার কি আছে?
-এইটাই বরাবর হয়ে আসছে রে মা।আজও বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় জোকারেে স্থানেই অদৃশ্যভাবে মেয়েদের নামটাই রয়েছে। তাইতো এখনো ছেলেপক্ষ মেয়ে দেখতে আসে।

যাই হোক, তোর পা’টা একটু ভালো হলে বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়িস। নতুবা বুবু আবার আমার সাথেই রাগারাগি করবে। তুইতো তোর মা’কে চিনিস।
-হু।ঠিক আছে।

দেখতে দেখতে দু’দিন পার হয়ে গেলো। দু’দিনে আমার মনে হয় ২০০বার ঐ ছ্যাঁচড়া ছেলেটা আমার সামনে পড়েছে।বিশ্বাস করেন পা ঠিক নেই,তাই ধরার আগেই হাত ফসকে বেরিয়ে যেতো।যদি পা ঠিক থাকতো তাহলে দৌঁড়াইয়া হলেও এই ছ্যাঁচড়া ছেলেটারে ধইরা ইন্টারন্যাশনাল থেরাপি দিতাম।শালা আস্তো একটা উইপোকা।

যাই হোক,দু’দিন পার হয়ে গেছে। বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সব গোছগাছ করে নিয়েছি।
খালা একটুখানি এগিয়ে দিয়েছেন। সারা আপু আমাকে পুরো ট্রেন স্টেশন পর্যন্ত এগিয়ে দিয়েছেন।
একটু অপেক্ষা করার পর ট্রেন এসে গেছে। আমি সারা আপু’কে বিদায় জানিয়ে ট্রেনে উঠে গেছি।

ট্রনে উঠার পর আমি যে কামরায় উঠেছি সেই একই কামরায় ঐ বজ্জাত ছেলেটা উঠেছে।বুঝতে পারছিনা,এই ছেলে কি আমায় অনুসরণ করছে নাকি? না,এই ছেলেকে সুযোগ দেওয়া যাবেনা।যদি ঘাড়ে চেপে বসে। এই উইপোকারে থ্রেটের উপর রাখতে হবে।

-কি ম্যাম,কোথায় যাওয়া হচ্ছে?
-কেন?
-এমনিতে।দেখি আমিও আপনার সাথে যেতে পারি কিনা?
-নাট বল্টু ঢিলা হয়ে গেছে?
-জ্বী। একটু টাইট করে দিবেন ম্যাম,প্লিজ?
-দেখুন,একই কামরায় বসছি,তার মানে আপনি আমাকে অনবরত বিরক্ত করবেন না,প্লিজ।
-ওমা,বিরক্ত কই করছি? আমি তো জাস্ট হেল্প চেয়েছি।করবেন হেল্প প্লিজ।
-আসেন আপনার নাট বল্টুরে টাইট দিমু।পেন্সিল কম্পাসটা কাছেই আছে।
-কি বোকা মেয়েরে! পেন্সিল কম্পাস দিয়ে নাট বল্টু টাইট করে তা আমি বাপের জন্মেও শুনিনি।
-উফ্,অসহ্য লাগছে।
-আচ্ছা, আপনার নাম কি?
-ঐ চুপ করবি? নাকি তোর মুখে সুপারগ্লু লাগাই দিতাম?
-ব্যাগে সুপারগ্লুও আছে?আর কি কি আছে বলুনতো, শুনি।

-আল্লাহ্ আমারে উদ্ধার করো।তুইল্লা নাও আমায়।অথবা দড়ি দাও আমি নিজেই ঝুলে ঝুলে তোমার কাছে চলে যাই।

-ওমা,আপনার ব্যাগে দড়ি নাই?
-বিশ্বাস কর ভাই,আমি ছ্যাঁচড়া দেখছি মাগার তোর মতো ছ্যাঁচড়া জীবনে দেখি নাই।
-ভাই? না না মেনে নিবো না।এটা অপমান করছেন।
-যাক, তাহলে তোর অপমানবোধ আছে? আমিতো ভাবলাম গন্ডারের চামড়া তোর।
-আপনার তুই তোকারি ভাষাটা আমার জোশ লাগে।তাইতো আপনাকে বারবার ক্ষেপাই।
-ওরে চান্দু! ইচ্ছা করেই আমাকে ক্ষেপানো হচ্ছে?
-জ্বী ম্যাম।এনিওয়ে আমি কিন্তু এতদিন যাবত আপনার সাথে মজা করেছি।তার জন্য সত্যি দুঃখিত।
তবে আপনি কিন্তু খুব সুন্দর লিখেন।

-মানে!
-মানে খুব সুন্দর ডায়েরি লিখেন।
-আমি সুন্দর ডায়েরি লিখি,সেটা আপনাকে কে বললো?
-কেন,আপনার ডায়েরি বললো।
-স্যরি,আমি বুঝতে পারছিনা।আমার ডায়েরি তোর ইয়ে মানে আপনার সাথে কথা বলে,মানে কি?
-মানে আপনার ডায়েরিটা সারা ভুল করে আমায় দিয়ে দিয়েছে।
-সারা আপু ! তার মানে আপনি পবন?
-জ্বী।আমি পবন।
-এই সেরেছে,জায়গায় বসেই কেইস খেয়ে গেলাম!
আপনি পবন আগে বলবেন না? শুধু শুধু বাজে ব্যবহার করলাম আপনার সাথে।ছিঃ ছিঃ।
-আরে নাহ্।সমস্যা নেই।আমি কিন্তু বেশ উপভোগ করেছি।
-তার মানে আপনি জেনেশুনে মজা নিয়েছেন? আপনি আমাকে চিনতেন?

-চিনতাম না।তবে আপনার ডায়েরিটা যেদিন সারা আমাকে দিয়েছে আমি জানতাম না।ঐ বইগুলোর সাথে

একটা ডায়েরি আছে।ব্যাস ঐদিন সারা ডায়েরির কথা বলাতে আমি ভাবলাম,একবার ডায়েরিটা খুলে দেখবো।তাছাড়া আপনি ফোনে আমার সাথে এমন আচরণ করেছেন।তারপর সারা ডায়েরির কথা বলতেই
খুব ক্ষেপে গিয়েছিলাম।ভেবেছিলাম ডায়েরিটা পুড়েই ফেলবো।কারণ যে মেয়ে এত্ত বদমেজাজি তার জিনিস ফেরত দিবোইনা।কিন্তু আমি ডায়েরেটি খোলার সাথে সাথেই একটা ছবি নিচে পড়ে যেতে দেখেছিলাম।ছবিটা দেখেই টাস্কি লেগে গেলো।ভাবলাম,আরে এটাতো ঐ মেয়েটার ছবি, যাকে সেদিন ভুলবশত বল মেরে আঘাত করেছিলাম।তারপর থেকেই আপনাকে রাগানোর জন্যই আপনার পেছনে লাগা।
-আচ্ছা ! এই ব্যাপার? তা ক্ষেপিয়ে কি মজা পেলেন? বরং শুধু শুধু কতগুলো বকা শুনলেন!
-আরে সেটাইতো মজার ছিলো।

এনিওয়ে আমি কিন্তু আবার স্যরি বলে নিলাম।স্যরি।আর আপনার ডায়েরিটা কিন্তু আপনি আর পাবেন না।ওটা আমার গিফ্ট।
-আপনার গিফ্ট? হিহিহি, নিজেই নিজেকে গিফ্ট করলেন?
-জ্বী।(মৃদু হেসে)
-ওকে, ঠিক আছে।
আচ্ছা আমাকে নামতে হবে।আমার গ্রাম চলে আসছে।
-আচ্ছা ঠিক আছে।ডায়েরি দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
ভালো থাকুন।খোদা হাফেজ।
-স্বাগতম।আপনিও ভালো থাকুন।

প্রায় ৫ঘন্টা ট্রেনে চড়ার পর বাড়িতে এসে পৌঁছালাম। ভীষণ টায়ার্ড।মা কত্ত মজার মজার খাবার রান্না করেছে।আমি টায়ার্ড ছিলাম ঠিকই।বাট খাবার রেখে রেস্ট করাটা উচিৎ হবে না।সবার উপরে খাবার সত্য, তাহার উপর নেই(নিজের মতো করে আবিষ্কার করলাম)।
খাবার খেয়ে একটু রেস্ট নিয়ে নিলাম।

প্রায় সন্ধ্যায় ঘুম থেকে উঠলাম।মা বিভিন্ন ধরনের পিঠা বানিয়েছে।আমাদের যৌথ পরিবার।সবাই একসাথে বসে আড্ডা দিচ্ছি আর পিঠা খাচ্ছি।

অনেক রাত পর্যন্ত কাজিনরা সবাই আড্ডা দিলাম।অনেকদিন পর বাড়িতে আসছি।সবার কথা জমা ছিলো।ঐগুলো বলেই আমাদের আড্ডা জমে উঠলো।অনেক রাত হয়ে গেছে।তাই মা বকাবকি শুরু করে দিলো।তারপর বাধ্য হয়ে ঘুমাতে গেলাম।

বেশ ভালোই ঘুম হয়েছে।ঘুম ভাঙ্গার পর দেখলাম, মাই গড ১২টা বেজে গেছে?
আমি বাহিরে বের হয়ে দেখলাম, কাকি, মা,ভাবিরা সবাই পিঠা বানানো নিয়ে ব্যস্ত।
কি ব্যাপার? আজ এতো পিঠা বানাচ্ছে কেন ওরা? আজ কি ছেলেপক্ষ দেখতে আসবে আমায়?
-কিরে মেঘলা ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? আয় এদিকে।(আমার ভাবনার সমাপ্তি ঘটিয়ে ভাবী এই কথাটি বললো।)

ভাবীর কাছে যেতেই সবাই ইয়ার্কি শুরু করে দিলো।সবাই নিশ্চিত যে ছেলেপক্ষের আমাকে পছন্দ হবে।এতো নিশ্চিত কি করে হলো উনারা?
আজব তো!

আমি ওখান থেকে উঠে নিজের রুমে চলে আসলাম।এসে সারা আপুকে ফোন দিয়ে সব বললাম।সারা আপু বললো টেনশন করতে না।সব ঠিক হয়ে যাবে।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলো।সবার প্রস্তুতির সমাপ্ত ঘটলো।আমি তো অবাক! বিয়ের আগেই ছেলেপক্ষকে বরণ করার এত্ত আয়োজন? না জানি বিয়ে হলে এরা কি করবে?

কিছুক্ষণ পর শুনতে পেলাম ছেলেপক্ষের লোকজন এসে গেছে।ভাবীরা আমাকে রেডি করিয়ে দিচ্ছেন। আমি তো চিন্তিত হয়ে পড়ছি।কি জানি জিজ্ঞেস করবে? আল্লাহ্ জানে।
একটু পর ড্রয়িংরুম থেকে বলা হলো আমাকে ছেলেপক্ষের সামনে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
তারপর ভাবী আমায় নিয়ে গেলো।আমি উনাদের সামনে গিয়ে বসলাম।কিন্তু উপরে তাকাতে পারছিনা।কেমন আনইজি লাগছে।চুপ করে নিচের দিকে ই তাকিয়ে আছি।যাই হোক উনারা তেমন কোনো প্রশ্নই করেন নি।কেবল নাম টা জিজ্ঞেস করেছে, ব্যাস।

তারপর আমাকে ভেতরের রুমে নিয়ে আসা হলো।যাক বাবা চিন্তা দূর হলো।তেমন কিছু জিজ্ঞেস করেনি।কিন্তু ছেলেকে তো দেখতে পেলাম না!

একটু পর ভাবী এসে বললো, উনাদের নাকি আমাকে পছন্দ হয়েছে এবং আগামী সপ্তাহে বিয়ে।
কেমনডা লাগে এবার? এই পিচ্চি বয়সে বিয়ে করবো আমি? সারা আপু এখনো বিয়ে করেনি।তাছাড়া আমিতো ছেলেকে দেখতেও পেলামনা। মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো নিউজটা শুনে।

কিছুক্ষণ পর সারা আপু ফোন দিয়ে বললো আগামী সোমবার ওরা আসছে গ্রামের বাড়িতে।ধ্যাৎ, এটা কেমন বিয়ে? হঠাৎ একটা কাজিন এসে জানালো আমাকে যারা দেখতে এসেছেন তাদের মধ্যে পাত্র ছিলোনা।তার মানে পাত্র আমাকে দেখতে আসেনি?
তাহলে ঐ ছেলেও আমাকে অন্ধের মতো বিয়ে করবে।না দেখেই বিয়ে !
এই তো পুরো আমার মতো অবস্থায় পড়েছে।

দেখতে দেখতে বিয়ের সময়টা ঘনিয়ে আসলো।সারা আপু,জারা আপু আঙ্কেল খালা এবং আরো অনেক আত্মীয় চলে আসলো। পুরো বাড়ি মেহমানে ভরে গেছে।আজ আমার হলুদ সন্ধ্যা।
কি আর করার,বংশের বড় মেয়ে। সবারই একটু বেশি শখ আমায় নিয়ে।তাই সবার মন রক্ষার্থে বিয়েটা করতে রাজি হয়েছিলাম।হলুদসন্ধ্যা বেশ আনন্দে কাটিয়েছে সবাই।

আজ আমার বিয়ে।বিয়ের সব রীতিনীতি পালন করা শেষ করে আমাকে ফুলশয্যার ঘরে বসিয়ে রেখেছে।ভাবছি কি জানি হয়? দুজনেই অন্ধের মতো বিয়েটা করলাম।
কিছুক্ষণ পর মি.বর মশাই আসলো।আমি চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়েই বসে আছি।
উনি এসে আমার পাশে বসে একটা কবিতা আবৃত্তি করতে শুরু করলো,
চল হারিয়ে যাই।
কোনো এক অজানা দেশে।
যেখানে ছোট্ট কুঠরিতে সংসার হবে আমাদের।
রোজ তোর শীতল পরশে,
আমি নিজেকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখবো।
আর তুই বর্ষার কদম হয়ে,
আমার দৃষ্টিপটে পাখনা ছড়াবি।

—-“মেঘলা+পবন”

আমি কবিতা শুনেই চোখ তুলে তাকাতেই দেখলাম পবন সাহেব সেদিন ফুচকা খাওয়ার সময় যেমন ড্যাবড্যাব করে আমায় দেখেছিলেন।আজও ঠিক তেমনি আমায় ড্যাবড্যাব করে দেখছে।
-এই ছেলে কি দেখোস, হু?
-একটা গুন্ডিকে দেখছি আর ভাবছি, এই বুঝি আমার চোখ তুলে নিলো গুন্ডিটা।
-তবেরে ! তোর ভাগ্য ভালো আজ আমার সাথে ব্যাগ নেই।নতুবা কলম দিয়ে গুতাইয়া তোর চোখ নয় হার্ট তুলে জব্দ করতাম।এত্ত সাহস। আমায় বিয়ে করেই নিলি তুই?
-জ্বী মহারাণী, সেদিন ফটো দেখেইতো টাস্কি খাইছি।কিন্তু টাস্কিটা হজম করতে ফটোর মালিকের দরকার ছিলো।তাইতো এত্ত প্ল্যান করা।
-শালা টোটকা। তুই আসলেই উইপোকা।
-হ্যাঁ গো। তোমার উইপোকা।আর এই নিন ম্যাম,

মেঘলার হারিয়ে ফেলা ডায়েরি।ধন্যবাদ ডায়েরিটাকে। মানুষ নানাভাবে বউ পায়, আর আমি ডায়েরির গুণে গুন্ডি পাইছি।
-ঢং করো?
-না,ভালোবাসি।
-হু।আমিও
-আমিও কি?

-আমিও তোর ভালোবাসার তেরোটা বাজানোর চিন্তা ভাবনা করুম ভবিষ্যতে।
-আসলেই গুন্ডি একটা।তবে আসলেই ভালো লিখো। এবারের পত্রিকায় বর্ষাঋতু উপলক্ষে তোমার এই লিখাটা চাপিয়ে দিবো।
-লোভ দেখানো হচ্ছে?
-সত্যি ভালো লিখো মেঘলা।
-ঐ যাতো। একদম পাম মারবি না।
-ফুলশয্যার ঘরে বসে বউকে পাম মারা উচিৎ।
-তবেরে !!

-বউ আমার রেগে গ্যাছেরে। ভাই এবার বকবক শেষ করি।বউ আমার রেগে গেছে। সবাই দোয়া কইরেন।সূরা পড়ে বুকে ফু দিয়ে বউ এর কাছে যাচ্ছি উনার রাগ ভাঙ্গাতে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত