গম্ভীর

গম্ভীর

সবার মাঝে হৈহুল্লর উৎফুল্ল এক অবকাশ,নির্বাক শ্রোতা শুধু অর্ক।
ছেলেটা এমনি,হাজার লোকের ভিরে সবসময় নিজেকে আড়াল করে রাখে।কারণটা হয়তো পরিবারের মাত্রা অতিরিক্ত চাপ।ছোটো থেকে বাবা-মায়ের কড়া শাসন এবং একাকীত্ব আজ তাঁর এমন অবস্থার কারণ।
সেটা অবশ্য ভার্সিটির কারো চোখে পড়েনি আবার হয়তো বা পড়েছে তবে চোখ এড়ায়নি স্নেহার।মেয়েটা কিছুদিন যাবৎ ঠিক খেয়াল করেছে অর্কর এমন আচরণ,তাইতো একদিন ক্লাস শেষে ব্যাপারটা বুঝতে তাকে ডাক দিলো “এই অর্ক শুনো।”
অর্ক পেছন ফিরে কিছুক্ষণ ড্যাব ড্যাব করে চেয়ে থেকে কাছে এগিয়ে এসে বললো “জ্বি,কিছু বলবেন?”

– উমমম,কেমন আছো?
– ভালো।
– কোথায় যাচ্ছিলা?
– মাঠে।
– চলো যাই তবে।
– হুম।
তারপর দুজন একসাথে মাঠের মাঝে এসে বসলো।
– একটা কথা বলবো?
– জ্বি,বলেন।
– তুমি কারো সাথে মিশো না কেনো?
– এমনি।
– তোমার কোনো বন্ধু নেই?
– আছে।
– কে কে!
– বাবা আর মা।
– আমি তোমার বন্ধু হতে পারি?
– নাহ্।
– প্লিজ।
– সরি।
– প্লিজ..প্লিজ..প্লিজ।
– মনেহয় আমার এখন ক্লাসে যাওয়া উচিত।

কথা শুনে স্নেহা নিজের রাগ ধরে রাখতে পারলোনা,ফরসা মুখ রক্তাক্ত রূপ ধারণ করে।অতঃপর বালিকা উঠে দাঁড়িয়ে অর্কর কলার চেপে ধরে বললো “ভালোভাবে বলছি গায়ে লাগেনা!তুই আজ থেকে আমার বন্ধু,আর আপনি আপনি করলে থাপরায়ে দাত ফেলে দিবো।চল এখন ফুচকা দিয়ে নতুন বন্ধুত্ব সেলিব্রেট করবো।”

অর্ক হতভম্ব,ঘাবড়ে কিছু না বলে স্নেহার পাশাপাশি হেঁটে ফুচকার দোকানে গেলো।সেখানে একসাথে ফুচকা খেয়ে বিল মিটিয়ে সোজা বাড়ি।এর মধ্য দিয়ে স্নেহা কতো কথা বলেছে হিসাব নেই।কিছু হয়তো অর্ক শুনেছে কিছু বাতাসের সাথে মিলিয়ে গেছে।
.
পরেরদিন ভার্সিটিতে এসে স্নেহার সাথে দেখা।মেয়েটা ডেকে নিজের পাশে বসালো।অর্ক কিছু বলেনি,নির্বাক এক মেশিন।
(০২)
এভাবে ধীরে ধীরে দুজনের মাঝে এক সুন্দর বন্ধুত্ব গড়ে উঠলো।
বদলে গেলো অর্ক,বদলায় তাঁর আচরণ।সাধাসিধা ছেলেটা সবার মাঝে চলতে শিখে।কারো সাথে কথা বলতে গেলে এখন আর তাঁর মাঝে জড়তা কাজ করেনা।
যার ফুল ক্রেডিট স্নেহা।

খুব তো চলছিলো সবকিছু,তবে কেনো মোড় ঘুরলো শেষটায় এসে!

বন্ধুদের কথা শুনে না চাওয়া সত্তেও কোনো এক ক্লান্ত দুপুরে লাল,নীল,হলুদ গোলাপ হাতে অর্ক স্নেহার সামনে হাটু গেড়ে বসে চোখ বন্ধ করে বলে-

“বদলেছি আমি,
বদলেছে জীবন।
যাহার পুরোটা জুড়ে,
তোমারি সমীকরণ।
একটুখানি চাই তোমায়,
হাতটা যদি বাড়াও।
আগলে রাখবো হৃদয় মাঝে,
ভালবাসবো হাজার জনম।!
I LOVE YOU SNEHA

মুগ্ধ এবং অবাক চোখে স্নেহা অর্কর দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে গালে “ঠাস” করে একটা চর মেরে বললো “তোকে সবচেয়ে ভালো বন্ধুর স্থান দিয়েছিলাম,কিন্তু তুই তো অন্য কিছু ভেবে বসলি।দূর হয়ে যা চোখের সামনে থেকে,প্লিজ আমার সামনে কখনো আসবিনা।”

মুহূর্রে চতুর্দিক হাসির রোল পড়ে গেলো।অর্ক চারিপাশে তাকিয়ে বোকা বোকা একটা ভাব নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো।
.
থমকে গেলো সময় স্তব্ধ আবার অর্ক।
ভার্সিটিতে ঘটে যাওয়ার আপমানের পর সে আর ভার্সিটির গেটে পা রাখেনি।নির্ঘুম রাত এবং টিভির মধ্য দিয়ে তাঁর জীবন অতিবাহিত হতে লাগলো।

এভাবে কেটে গেলো একটি মাস।

অর্কর দেখা না পেয়ে স্নেহাও এলোমেলো হয়ে যেতে লাগলো।অজান্তে সারাদিন অর্কর কথা ভাবে।শেষ স্মৃতি হিসেবে ফেলে যাওয়া তিনটি গোলাপ খুব যত্ন সহকারে রেখে দিয়েছে সে।অর্ক হীন স্নেহা অপূর্ণ তা বুঝতে দেরী হলেও অর্কর বাড়ি যেতে দেরী হয়নি।
(০৩)
– আন্টি অর্ক কোথায়?
– দেখো টিভির রুমে।
– ওকে।
– তুমি কে মা?
– অর্কর ফ্রেন্ড।
– ওহ্,দেখো গিয়ে..টিভি দেখছে হয়তো।

স্নেহা কিছু না বলে সোজা টিভির রুমে গিয়ে অর্কর পাশে বসে নিচু স্বরে বললো “সরি।”
আনমনে টিভির দিকে চেয়ে থাকা অর্ক নিশ্চুপ বসে রইলো।
এমন ব্যবহার স্নেহার রাগ দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিলো।মেয়েটা রেগে গিয়ে অর্কর হাত থেকে রিমোট নিয়ে এক আছাড়ে ভেঙে ফেললো।অর্ক ছিটকে উঠে স্নেহাকে দেখে থতমত খেয়ে গেলো “তুমি এখানে?”

– ভার্সিটিতে যাও না কেনো?
– এমনি।
– আমার ওপর রেগে আছো?
– তুমি কে!তোমার ওপর রাগার আমি বা কে!
– অনেক কথা শিখে গেছো।
– চা খাবা না কফি?
– ছাদে চলো বলছি।
– ওকে চলো।
.
নিশ্চুপ বিকেলে রোদের তেজ কমে দক্ষিণা শীতল হাওয়া বইছে।সন্ধ্যা নেমে আসার আগ দিয়ে যার যার বাড়ি ফিরতে বাস্ত আছে পাখিরা।
নীল আকাশ আড়াল করে ভেসে চলেছে সাদা মেঘ।ঠিক তাঁর নিচে সামনাসামনি দাঁড়িয়ে আছে অর্ক এবং স্নেহা-

– আজ হঠাৎ এভাবে!
– তোমার সমস্যা?
– কারো ওপর রেগে আছো?
– তুমি জানার কে?
– ওকে ওকে..গরীবের বাসায় আসছো,নাস্তাপানি কি খাবা বলো?
– উমমম,তোমার ঠোঁটের ছোঁয়া।
– Are you crazy?
– হুম।
– ধ্যাত।
তারপর স্নেহা কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে অশ্রু ঝড়াতে লাগলো।
এমন অবস্থা অর্ক নিচু স্বরে শুধু বললো “কান্না করছো কেনো?”
ব্যাস,বালিকা দ্বিগুণ বেগে কান্না বাড়িয়ে চিল্লায়ে বলতে শুরু করলো “আব্বু সেদিন অনেক বকা দিয়েছিলো,তাই তুমি প্রপোজ করার পর সব রাগ তোমার ওপর মিটাই।কিন্তু জানতামনা পরে কি হবে।এখন বুঝতেছি,তোমায় আমি অনেক ভালবেসে ফেলেছি।আমায় ক্ষমা করে দাও অর্ক,I love you,I love you so much.”
অর্ক ব্যাপারটা বোঝার পর বললো “আমিও সরি,বন্ধুদের সাথে মজা করে তোমায় প্রপোজ করেছিলাম।কে জানতো তুমি সেটা সিরিয়াস মাইন্ডে নিবা!”
কথাটা শোনা মাত্র স্নেহা রাগে গজগজ করতে করতে অর্কর কলার টেনে কাছে এনে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে চোখে আঙুল দিয়ে বলে দিলো “শোন শালা,তুই আজ থেকে আমার।একমাসের ঘুম নষ্ট করে এখন বলিস ফাজলামি করছিলাম।মন চাচ্ছে ইচ্ছা মতন থাপড়াই,কিন্তু কষ্ট আমারি লাগবে।so,এবার ভদ্র ছেলের মতন জড়িয়ে ধর।”
অর্ক মোটা ফ্রেমের চশমার ভেতর থেকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে কাঁপতে কাঁপতে জড়িয়ে ধরলো।
*
সে নারী-
জন্ম,ভালবাসা এবং আগলে রাখা তাঁর মাঝে বৃদ্যমান।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত