ভাই বোনের খুনসুটি

ভাই বোনের খুনসুটি

ভাইয়া এই ভাইয়া তোর ফোনটা একটু নিলাম। আমি ঘুমের মধ্যে বললামঃ না না ফোন নিবি না তোরে আমার ফোন দেওয়া যাবে না। কখন কি করে ফেলিস। তোর উপর আমার একটুও বিশ্বাস নাই। এখান থেকে বিদায় হ আমি ঘুমাব। মেঘলা আমার কোনো কথা না শুনে ফোনটা নিয়েই গেলো। ফোন নিয়ে কি করবে সেই চিন্তায় ঘুম আকাশে উঠে গেছে। ঘন্টা দুঘণ্টা পর এসে ফোনটা দিয়ে গেলো যাওয়ার সময় বলে গেলোঃ ভাইয়া ভাবি ফোন দিছিলোঃ আমি বলছি ভাইয়া ঘুমে আছে পরে ফোন দিন। মেঘলার কথা শুনে বিছানা থেকে এক লাফে বসে পড়লাম। এই মেঘলাটা দিন দিন বেশি বাড় বেড়ে গেছে। বিয়া করি নাই আর উনি কোথ থেকে ভাবি যোগাড় করে ফেললো। রুমের পাশ দিয়ে আম্মু যাচ্ছিলো। মেঘলা আমার রুম থেকে বের হওয়ার সময় না জানি আম্মুকে কি বলে। চিন্তা আরো বেড়ে গেছে। বানিয়ে বলাটা তার একটা স্বভাব। আমি ঘুমের ভান করে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিলাম ঠিক তখন আম্মু এসে নাকে টিপ দিয়ে বললো। তোর মেশিন বন্ধ কর আর উঠ। কি আর করা মেশিন বন্ধ করে উঠে বসলাম। আম্মু বললোঃ মেয়েটা কে? আমি আশ্চর্য হয়ে বললামঃ কিসের মেয়ে? কোন মেয়ে? কার মেয়ে? আম্মু এবার কান ধরে বললোঃ তাহলে মেঘলা যে বললো তুই নাকি একটা মেয়েকে। আমি রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বললামঃ আম্মু তুমি জানো না মেঘলার এটা প্রতিদিনের কাজ। আমার বিষয়ে বানিয়ে না বললে উনার পেটের ভাত হজম হয়না সেটা কি তুমি জানো না। আম্মু এবার আর সন্দেহ না করে বললোঃ আচ্ছা ঠিক আছে ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়। আমি হালকা নিশ্বাস নিয়ে বললামঃ আচ্ছা যাও আসতেছি। এই বলে আম্মু রুম থেকে বের হয়ে গেলো। তারপর আমি ফোনটা বের করে দেখলাম কে ফোন দিছিলো। ফোনের নাম্বার দেখে মুখ আমার শুকিয়ে গেছে। বৃষ্টির ফোন আসছিলো। আমার বেষ্ট বান্ধবী। আজকে দেখা হলে আমারে কুচিকুচি করে ফেলবে। কি করবো বুঝতেছি না। রুম থেকে বের হয়ে মেঘলার রুমে গেলাম। রাগটা কন্ট্রোল করে বললামঃ মেঘলা ঐ মেয়েটাকে আর কি কি বলছিস? মেঘলা আমার কথা কানেই নিচ্ছে না। আমি আবার বললামঃ কি হলো বলবি না? এবার আমার দিকে তাকিয়ে বললোঃ ভাইয়া তুই কি আমার পড়ালেখা করতে দিবি না। এই কথা শুনে মনেমনে ভাবতেছি পড়ালেখা করো নাকি ঘোড়ার আণ্ডা করো সেটা আমি বুঝে গেছি। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে বললামঃ প্রত্যেকবার তুই ফেইল করিস। আমি তোকে অভিশাপ দিলাম তুই এইবারও ফেইল করবি। এই কথার বলার পর উত্তরে মেঘলা বললোঃ যা যা শকুনের কথায় কখনো গরু মরে না। আমি রুম থেকে বের হয়ে যাবো কিন্তু এই কথা শুনার পর আবার ফিরে এসে বললামঃ আমি যদি শকুন হই তাহলে তুই ঘোড়া। আমি ঘোড়া হলে তুই হাতি। এসব আমার আর মেঘলার প্রতিদিনের ঝগড়া। আম্মু আব্বু ওরা ভালো করেই জানে আমাদের প্রায় সময় ঝগড়া হয়। তারপর আমি আম্মুর রুমে গেলাম। গিয়ে বললামঃ আম্মু তুমি শুনছো মেঘলা আমাকে কি বলছে? নিজের বড় ভাইকে এসব বলার পরও আম্মু তুমি চুপ থাকবা? আম্মু কান থেকে তুলা বের করে বললোঃ এতক্ষণ তোরা কি বলছিস না বলছিস কিছুই শুনিনি। তোদের কারণে কানে তুলা লাগাতে বাধ্য হইলাম। আমি হা করে তাকিয়ে আম্মুর কথা শুনছিলাম। কোনোকিছু না বলে সোজা আমার রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। মোবাইল বাজতেছে। বৃষ্টির ফোন কি করবো বুঝতেছি না ধরবো কি ধরবো না ভাবতেই ফোনটা কেটে গেলো। তারপর আবার ফোন আসলো। এবার আর ফোনটা না ধরে পারলাম না। ফোন ধরতেই। এক নিশ্বাসে বৃষ্টি অনেক কথা বলে ফোনটা রেখে দিলো। বললোঃ তুই আমাকে আর জীবনেও ফোন দিবি না, দেখাও করবি না, আমাকে ভুলে যা। আমাদের বন্ধুত্ব এখানেই শেষ। আমাকে কোনো কথা বলার সুযোগ দিলো না। মেয়েরা এত ভুল বুঝে কেন বুঝি না। সব দোষ এই মেঘলা মেয়েটার।
.
একদিন…
আগে থেকেই বুঝে গেছিলাম মেঘলা আমার রুমে আসবে তাই আগে থেকে খাটের নিচে গেলাম তারপর মেঘলা রুমে আসলে আমি আস্তে আস্তে বের হয়ে দেখি উনি কি কি করে। মানুষের চলতে হলে কি লাগে। টাকা লাগে। উনি প্রথমে আমার মানিব্যাগ থেকে ১০০ টাকার কচকচে নোট গুলো হাতে নিলো। তারপর মোবাইল থেকে কিছু একটা করছে। হয়তো আমার ব্যালেন্স থেকে ওর মোবাইলে ট্রান্সফার করছে। আমি গুটিগুটি পায়ে আস্তে করে মেঘলার হাতে ধরলাম। আর জোরে চিৎকার করতে লাগলাম। আম্মু দেখো তোমার মেয়ে আমার সবকিছু চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। আজ শয়তান বোনটাকে হাতে নাতে ধরলাম। ভাইয়া হাতটা ছাড় লাগছে তো। আম্মু না আসা পর্যন্ত তোকে ছাড়ছি না। তারপর আম্মু আসলো। বললোঃ কি হইছে চিৎকার চেঁচামেচি করছিস কেন? আমি বললামঃ আম্মু দেখো তোমার মেয়ে আমার রুমে এসে কি কি করছে। টাকা তো নিছেই সাথে মোবাইলের টাকাও নিছে। আম্মু বললোঃ বোন যদি ভাইয়ের টাকা না নেয় তাহলে কার টাকা নিবে বল? দুইদিন পর তোর বোনের বিয়ে হয়ে গেলে কি আর টাকা নিতে আসবে? সেদিন আম্মুর কথা গুলো শুনার পর খুব খারাপ লাগছিলো। এত খারাপ এর আগে কখনো লাগেনি। আসলেই বোন আজ আছে দুইদিন পর অন্যের ঘরে চলে যাবে।
.
৫ মাস পর মেঘলার বিয়ে। মেঘলার বিয়ের কথা শুনে খুব খারাপ লাগছিলো। আর সকালে কেউ আসবে না ভাইয়া ডাকতে। আর আসবে না আমার মানিব্যাগ থেকে টাকা নিতে। আর আসবে না বানিয়ে কথা বলে আম্মুর কাছে বিচার দিতে। আর আমাদের মধ্যে ঝগড়া হবে না। একেবারে চলে যাবে। মেঘলা চলে যাওয়ার পর খুব কেঁদেছিলাম। হয়তো মেঘলাও আমার জন্য কাঁদছে। এসব ঝগড়া একসময় খুব মিস করবো যখন ঝগড়ার মানুষটি পাশে থাকবে না।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত