আয়না দু’জন একসাথে চলি

আয়না দু’জন একসাথে চলি

>> তুমি কোথায় এখন?
>> কেন আমি তো জনতার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছি। কিছু বলবে?
>> তুমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছো। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকো। এক’পাও নড়াচড়া করবে না। তোমার খুব সাহস হয়েছে।
>> ও বাবা। আমার আবার কি সাহস হলো?
>> তুমি কিছু জানো না। দাঁড়াও। আমি আসছি।
>> আমি বেশি সময় দাঁড়িয়ে থাকতে পারব না। তুমি তাড়াতাড়ি এসো।
>> এখন আমার কথা শুনবে কেন?
যাও যাও। তোমার বান্ধবীদের সাথে আড্ডা মারো।
>> ধ্যাত রাগ করছ কেন?
আচ্ছা আসো। আমি অপেক্ষা করছি।
(২)
কি আর করার জনতার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম। একটু সময় পর দেখলাম মহা রাণী রিক্সা থেকে মুখ টা লাল করে নামলেন। মুখ লাল হওয়ার কারণ টা আমি নিজে জানতে পারলাম। মুখ লাল হওয়ার কারণ হলো মহা রানীর খুব রাগ উঠেছে।
>> তোমাকে কাল আমি ২ টা ফোন দিয়েছিলাম। তুমি ধরবে না ঠিক আছে। কিন্তু ফোন কেটে দেওয়ার মানে টা কি?
>> কখন ফোন দিলে?
>> মিথ্যা কথা বলার জায়গা পাও না। কেন ফোন কেটে দিলে সেটা আগে বলো?
>> ধ্যাত। কখন ফোন দিলে?
>> ও। এখন আমি কখন ফোন দিয়েছিলাম সেটাও বলতে হবে। ফোন দিয়েছিলাম বিকাল ৫ টায়।
>> ও। সরি। আমার ফোন টা তখন আমার ছাত্রীর হাতে ছিল। সে গেইম খেলছিল।
>> কি?
তোমার ছাত্রীর হাতে তোমার ফোন কেন?
>> আরে বাবা। আমি কফি খাচ্ছিলাম। তাই সে আমার মোবাইল নিয়ে গেইম খেলছিল।
>> তোমার মোবাইল সে ধরবে কেন?
>> মোবাইল তো সে ধরতেই পারে। সে আমার ছাত্রী।
>> আমি মোবাইল ধরলে তো চিল্লাচিল্লি করে সব এক করে পেলো। অন্য কেউ ধরলে কিছু বলো না।
>> আচ্ছা ৬ বছরের ছাত্রীর সাথে তুমি এতো হিংসা করো কেন?
>> তাও ঠিক। আচ্ছা চলো। বাসাই যাই।
(৩)
রাতে ছাত্রী কে পড়াচ্ছি। এমন সময় ফোন আসলো। ছাত্রী আমার ফোন দিয়ে গেইম খেলছিল। আমি নাস্তা করতে ছিলাম।
>> হ্যালো। (ছাত্রী)
>> কে আপনি?
>> আমি কে আমাকে প্রশ্ন করস?
এই মাইয়া তোর নাম কি?
>> কি?
তামিম কোথায়?
>> ও আমার ধারে নাস্তা খাচ্ছে।
তুই কে রে?
>> এই আপনার কন্ঠ এতো ছোট কেন?
আর আপনি আমাকে তুই করে কথা বলছেন কেন?
>> তুই আমার স্যার কে ফোন দিছত কেন? তোর খবর আছে।
>> আমি আমার প্রেমিক কে একশো বার ফোন দিব । আপনি বলার কে?
>> চুপ। চুন্নি।
আবার বলিস একশো বার ফোন দিবি।
তোর বাসা কোথায়?
>> আমার বাসা দিয়ে আপনি কি করবেন?
>> তোকে পিটে আসবো। তুই আমাকে চিনস?
>> আপনাকে আমি চিনতে যাব কেন?
>> তুই আমাকে না চিনলে আমার সম্পর্কে তোর ধারণা হবে না। জানিস আমি বড় হয়ে কি হব?
>> এই আপনি তামিম কে ফোন দেন তো।
>> আচ্ছা দিচ্ছি।
.
আমার ছাত্রী টা আমার কাছে ফোন দিল।
>> হ্যালো।
>> এই তুমি কোথায়?
এ মেয়েটা কে? মেয়েটা কত বড় বেয়াদব।
>> আরে মেয়ে কোথায় থেকে আসলো। এ মেয়েটা আমার ছাত্রী।
>> তুমি এই ডেঞ্জারাস মেয়ে কে পড়াও কেন?
>> এখন ফোন রাখি। পড়াতে হবে।
>> এই খবরদার। ফোন রাখবে না।
>> তাইলে কি করব? পড়াতে হবে না?
>> তুমি এই মেয়ে কে আর পড়াতে হবে না। তুমি বাসায় চলে আসো।
>> না পড়ালে খাব কি?
>> তোমার খেতে হবে না।
>> বলো কি?
আমি না খেয়ে থাকবো কি করে ?
>> আমি তোমাকে টাকা দিব। তবুও তুমি এই মেয়ে কে পড়াতে পারবে না।
>> আচ্ছা ঠিক আছে আমি পড়াব না।
(৪)
বাসায় বসে ল্যাপটপে গেইম খেলতে ছিলাম। এমন সময় নিশিতা ফোন দিল।
>> কি করো?
>> গেইম খেলি। তুমি কি করো?
>> এই তুমি কি দিন দিন ছোট হচ্ছ। যে এই বয়স গেইম খেলো।
>> কেন? আমি তো ছোট। সবাই আমাকে ছোট সাহেব বলে ডাকে। তুমিও আমাকে ছোট সাহেব বলে ডাকতে পারো।
>> না। আজ থেকে তোমাকে বাবু বলে ডাকবো।
>> ছিঃ ছিঃ। কি বিশ্রী ভাষা।
>> এখন বিশ্রী ভাষা। ছোট সাহেব বললে বিশ্রী ভাষা না।
>> ওই তোমার মতো আমি বুড়ি নাকি?
>> আমি বুড়ি?
>> হ্যাঁ। তুমি বুড়ির মা-বাবা।
>> তোমাকে আমি যদি এখন হাতের ধারে পেতাম তাইলে সব দাঁত আমি ফেলে দিতাম।
>> পরে তোমার ওই ক্ষতি।
>> আমার ক্ষতি মানে?
>> সেটা তুমি বুঝবে না। এখন রাখি।
শুভ রাত্রি।
(৫)
>> বন্ধু কি করিস?
(সিয়াম)
>> দেখতে পাচ্ছিস না বসে আছি।
>> বন্ধু আমার একটা কাজ করে দিবি?
>> কি কাজ?
>> আমি একটা মেয়ে কে ভালবাসি। সে মেয়ে কে আমি বলতে পারছি না।
>> তো আমি কি করব?
>> তুই শুধু মেয়ে টা কে আমার কথা বলবি। আর কিছু তুই করতে হবে না।
>> শালা লাঠি দিয়ে বেগুন পারতে চাস।
যা তুই গিয়ে বল।
>> বন্ধু একটা উপকার করে দে প্লিজ।
>> আচ্ছা আমি যদি কাজ টা করে দেই। তুই আমাকে কি দিবি?
>> তুই যা চাইবি তা দিব।
>> ঠিক আছে আমি কাজ টা করে দিব। তুই শুধু তোর বাইক টা আমাকে একদিনের জন্য দিবি।
>> একদিনের জন্য কেন? দুই দিনের জন্য দিলাম।
.
আমি খুশি হয়ে হাসতে লাগলাম। যাক বাবা অবশেষে বাইক টা পেলাম। কিন্তু কাজ তো করতে হবে। তাই মেয়েটা কে বলতে গেলাম। কাছে যেতেই আমি ভয় পেয়ে গেলাম। আরে মেয়ে টা তো আমার প্রেমিকার ছোট বোন। ভয়ে সেখান থেকে চলে আসতে যাবে। ঠিক তখনই মেয়ে টা আমাকে বলে-
>> ভাইয়া কোথায় যাচ্ছ? কিসের জন্য এসেছিলে আমাকে বলে যাও।
>> না। কিছু না।
>> ভাইয়া আমি জানি তুমি কিসের জন্য এসেছিলে। কিন্তু সেটা সম্ভব না।
>> তুমি চাইলেও আমি করতে দিব না। কিন্তু তুমি তোমার বোন কে বল না প্লিজ।
>> ঠিক আছে ভাইয়া।
.
>> শালা আমার শালির সাথে প্রেম করবি। দাঁড়া তোকে আমি দেখাচ্ছি মজা।
>> বন্ধু বিশ্বাস কর। মেয়েটা কে আমি অনেক ভালবাসি।
>> তোর ভালবাসার আমি গোষ্ঠী কিলাই।
>> বন্ধু রিশিতা তোর পিছনে।
>> কি?
>> হ্যাঁ। সত্যি দেখ পিছনের দিকে।
>> তুমি!
তুমি এখানে কি করো?
>> আমি বুঝলাম না। তোমার মতিগতি কি বলো তো?
>> কি বুঝলাম না?
>> তুমি আমার বোন কে কি বলেছ?
>> কই। কিছু নাতো।
>>সত্য কথা তো। কিছু বলো নি?
>> সত্যি। কিছু বলি নি।
>> সে আমাকে তো বলল তুমি নাকি তার কাছে বলেছ আমি তোমাকে খুব জ্বালাই।
>> এ কথা বলেছে?
>> ও। সে এই কথা বলেছে।
>> দেখছ। কত বড় মিথ্যা কথা বলেছে?
আচ্ছা তুমি বিশ্বাস করতে পারলে আমি এ কথা বলবো।
>> বিশ্বাস করব মানে কি? আমি আমার বোন কে বিশ্বাস করব না যে তোমাকে বিশ্বাস করবো।
>> আমাকে বিশ্বাস করবে।
>> চুপ। চুর কোথাকার।
একদম চুপ। তোমার সাথে কথা বলতে আমার একদম ভালো লাগছে না।
>> তোমাকে কথা বলতে বলেছে কে?
>> কি?
>> না কিছু না।
>> ওই তুমি এই মাত্র কি বললে?
>> বলছি। তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে।
>> কথা এড়িয়ে যাবে না। কি বলছ আরেকবার বলো।
>> মনে হচ্ছে বৃষ্টি আসবে। চল বাসায় চলে যাই।
>> আমি যাব না।
>> বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর আসবে।
>> আসুক। তাতে তোমার কি?
>> আমার অনেক কিছু।
>> তোমার অনেক কিছু হতে যাবে কেন? তুমি যাও।
>> আমি তোমাকে না নিয়ে যাব না। চলো বলছি।
>> এতো মায়া কেন?
তোমার পিচ্চি ছাত্রী আমাকে যা ইচ্ছা তা বলে। তুমি কিছু বলো না।
>> হিহিহি।
বাবা ওর ছোট ছোট কথায় বুঝি মন খারাপ করা লাগে।
>> ও আমাকে তুই করে বলে কেন?
>> ও শুধু তোমাকে তুই করে বলে না। আমাকেও মাঝে মাঝে তুই করে বলে।
>> এতো বেয়াদব। তুমি কিছু বলো না। তুমি কিছু বলতে যাবে কেন? তুমি তো নিজে দিন দিন বেয়াদব হচ্ছ।
>> শুনো আমাকে যা ইচ্ছা তা বলতে পারো। কিন্তু খবরদার আমার ছাত্রী কে নিয়ে কিছু বললে তা আমি মেনে নিব না।
>> মেয়েটার প্রতি তোমার এতো মায়া কেন? আমি বুঝলাম না।
>> আচ্ছা বাদ দেও তো এসব কথা।
>> কি বাদ দিব? আজ তোমাকে বলতে হবে। মেয়ে টা আমাকে তুই করে বলে তুমি কিছু বলো না কেন?
>> জানতে চাও কেন আমি কিছু বলি না?
>> হ্যাঁ।
>> তাইলে শুনো মেয়েটার ক্যান্সার।
তাই আমি কিছু বলি না। মেয়ে টা কে আমি খুব ভালবাসি। মেয়ে টা কে নিজের ছোট বোন ভাবী। আর কিছু শুনতে চাও।
>> না।
>> কান্না করতাছ কেন?
>> কই নাতো। আমি মেয়েটা কে দেখতে যাব।
>> কেন?
>> দেখতে যাব মানে দেখতে যাব।
>> ঠিক আছে। দেখতে যাবে তো ঠিক ওই আছে।
(৬)
>> স্যার মেয়েটা কে?
>> ২য় টা।
>> তোমার ২য় টাও আছে। স্যার তুমি আমার সাথে এমন করলা কেন?
>> আমাকে মাফ করে দেও। ভুল করে ফেলছি। তোমাকেও দরকার এবং এই ২য় টা কেও দরকার।
>> এই মেয়ে তোমার নাম কি?
>> রিশিতা।
>> ও চিনতে পারছি। তুমি মোবাইলের সেই মেয়ে?
>> জ্বী।
>> তুমি এতো ফাজিল। তোমার সাথে স্যার থাকবে কি করে। স্যার তোমার জীবন টা একদম শেষ।
>> কি করব বলো। সমস্যা নাই। তুমি আছ না।
>> আমি তো আর সারাজীবন থাকবো না।
>> হিহিহি। বুড়ি হয়ে যাবে বুঝি।
>> স্যার আমি আজ পড়বো না।
তোমাদের সাথে বেড়াতে যাব। বহুদিন হলো কোথায় বেড়াতে যাই না।
>> ঠিক আছে। চলো।
.
>> তুমি আমার হাত ধরো ( রিশিতা)
>> না। তুমি আমার হাত ধরো। (তামিম)
>> আমি কারো হাত ধরব না। আমি একা একা হাঁটবো। ম্যাডাম আমি এখন থেকে তোমাকে তুমি করে বলব। জানো ম্যাডাম স্যার বলে তুমি নাকি পঁচা।
(ছাত্রী)
>> কি?
>> হ্যাঁ। তুমি নাকি শুধু আইসক্রিম খাও। ফুচকা খাও। এসব খেলে তো দাঁতে পোকা হয়। পরে তুমি আমার মতো বুড়ি হয়ে যাবে।
>> হিহিহি।
তোমাকে একটা বুড়া জামাইয়ের কাছে আমরা বিবাহ দিব।
>> ধ্যাত। ম্যাডাম তুমি সত্যি পঁচা।
মাও পঁচা। আমি যদি খাওয়া দাওয়া না করি তাইলে মা বলে আমাকে বুড়া জামাই দিবে।
>> ঠিক আছে একটা পিচ্চি ছেলে দিব।
>> ম্যাডাম হাঁটতে আর ভালো লাগছে না। আমি বসবো।
>> গাছতলায় বসি চলো।
>> ম্যাডাম তোমার কোলে ঘুমিয়ে থাকি।
আমাকে ঘুম পারিয়ে দেও।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত