স্বার্থপর প্রেম

স্বার্থপর প্রেম

–কেমন আপনি? সারাদিন একা একা কেমনে থাকেন বলেন তো!
–কি আমাকে বলছেন?
–কাকে বলবো আর! আমরা দুজন ছাড়া কাউকে দেখতে পাচ্ছেন ক্লাসে?
–না!
–উত্তর পেলাম না এখনো!
–কিসের?
–এখনই তো জিজ্ঞেস করলাম।
–কি?
–কি অন্যমনষ্ক হবার ভান করছেন নাকি ভাব নিচ্ছেন?
–ভাব কেন নিতে যাব?
–আচ্ছা বাদ দেন। আবার জিজ্ঞেস করছি, আপনি সারাদিন কিভাবে একা একা থাকেন, বোরিং লাগে না?
–না। একাকীত্ব আমার সর্বসময়ের সঙ্গী।
–বন্ধু বানাতে ইচ্ছে হয় না? সবাইতো নতুন কলেজে এসে একে অপরের সাথে পরিচিত হচ্ছে। কিন্তু আপনাকে দেখলাম সেই প্রথমদিন থেকেই একা। কারো সাথে কথা বলেন না।
–আমার ভালো লাগে না কারো সাথে কথা বলতে।
–কারন জানতে পারি আপনার এমন অদ্ভুত আচরণের?
–কিছু কিছু আচরণের কারণ থাকে না।
–এত ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কথা বলেন কেন? এখনতো মনে হচ্ছে আপনি ভাব নিচ্ছেন!
–কারো মনে করা না করা নিয়ে আমি ভাবি না।
–ভাববেন কেন! এখন তো মনে হচ্ছে আপনি একগুঁয়ে।
–আপনার মনে হলে আমার কিছু করার নেই।
–আমার মনে হচ্ছে আপনারর বিরক্ত হচ্ছে আমার কথা বলায়!
–হুম….খুব।
–আচ্ছা আপনাকে আর বিরক্ত করলাম না। লাস্ট প্রশ্ন… আমার সাথে ফ্রেন্ডশীপ করবেন?
–সরি, আমি কারো সাথে বন্ধুত্ব করি না।
–আচ্ছা বন্ধুত্বসুলভ আচরণ তো করা যায়।
–চেষ্টা করবো।
–হুম। ধন্যবাদ
–হুমম।
–আচ্ছা পরে কথা হবে।টাটা
.
[[পরের দিন]]
–আপনার পাশে বসতে পারি?(মেয়েটি)
–হুম। সরকারি সিট,খালি আছে বসে যান।
–ওহ জানতাম না সরকারি সিট। ধন্যবাদ জানিয়ে দেয়ার জন্য।
–(চুপ)
–ফ্রি আছেন?
–না
–একা একা বসেই তো আছেন কোনো কাজ করতে তো দেখছি না।
–এটাই আমার কাজ।
–আপনার মতই অদ্ভুদ আপনার কাজ গুলো।
–হুম
–আপনি কেমন হ্যা? আমি মেয়ে হয়ে আপনার সাথে বার বার কথা বলতে আসছি। আর আপনি এড়িয়ে যাচ্ছেন।
–আমার মেয়েদের সাথে কথা বলা ভালো লাগে না।
–কেন? সব ছেলেরা তো মেয়েদের সাথে কথা বলার সুযোগের অপেক্ষায় থাকে।
–সবাই তো এক হবে কথা নেই।
–আপনি সবার মত না কেন?
–আমি আমার মতই।কারো মত হতে চাই না
–তাই তো আপনার সাথে কথা বলতে আসলাম। আপনি আসলেই অদ্ভুদ।
–না আমি মোটেই অদ্ভুদ না। আমার কাছে আমিই পার্ফেক্ট।
–হুম। আমার মনে হচ্ছে আপনার মনে অধিক পরিমানে কষ্ট জমে আছে।আর অধিক কষ্ট মানুষকে শক্ত করে দেয়। আপনিও তা হয়েছেন।
–(চুপ)
–আমার মনে হচ্ছে আপনার এমন চুপ হয়ে যাওয়ার পেছনে কোনো গল্প আছে। শেয়ার করবেন আমার সাথে?
–পারবো না। প্লিস আমাকে একা ছাড়ুন।
–প্লিস বলেন না। কষ্ট শেয়ার করলে তো কমে। হয়ত আপনার সমস্যার কোনো সমাধান দিতে পারি।
(কিছু না বলে সেদিনের মত রুম থেকে বেড়িয়ে গেলাম। তারপর কিছুদিন শরীর অসুস্থ থাকার কারনে ভার্সিটি তে যেতে পারি নি। ৭ দিন পর)
ক্লাসে ঢুকে পিছনের সিট দেখে বসে গেলাম।
–এইযে মিস্টার!! এতদিন কই ছিলেন? জানেন কত খুজেছি আপনাকে? প্রায় সবার থেকে জিজ্ঞেস করা শেষ।কিন্তু কেউ তো চিনে না আপনাকে, কখনো যদি হারিয়ে যান কেউ তো খুজেও পাবে না আপনাকে।
–কি প্রয়োজন আমাকে দিয়ে আপনার?
–অনেক প্রয়োজন। আপনার কাহিনী টা শোনার জন্য রাত্রে ঘুমাতে পারছি না।
–আমার কাহিনী শোনার জন্য কেন ইন্টারেস্ট জাগলো আপনার?
–প্লিস বলেন না। বললে আর বিরক্ত করবো না আপনাকে।
–ঠিক আছে, বলছি শুনুন………
প্রথমত আমি এমন ছিলাম না। খুব হাসিখুশি থাকতাম। দিনরাত বন্ধুদের সাথে আড্ডা,ঘুরাফেরা করেই দিন চলতো আমার।একা একদমই থাকতে পারতাম না। গিটার বাজাতাম গানও পারতাম হালকা হালকা। বন্ধুদের নিয়ে প্রতিদিন আড্ডা দিতাম বাসার পাশের পার্কে। বন্ধুদের প্রতিদিন গান শোনাতে হতো। প্রতিদিনের মত একদিন গান করা শেষ হবার পর লক্ষ করলাম দুইটা মেয়ে পাশে দাড়িয়ে গান শুনছিলো। গান শেষ হবার সাথে সাথেই চলে যায়। এমন টা বার বার লক্ষ করি। প্রায় সময় ঝোপের আড়ালে থেকে আমার গান শুনতো। বেশ কয়েকবার লক্ষ করি কিন্তু কিছু বলি নি। একদিন আড্ডা শেষ করে বাসায় ফিরছিলাম তখন মেয়েটা ডাক দেয়। আমার গানের প্রশংসা করে অনেক। পরে আমাদের আড্ডাতে মেয়েটাও যোগ দিতো মাঝে মাঝে। এভাবে বন্ধুত্ব হয় আমাদের। ওর নাম ছিলো নিধী। মাঝেমাঝে মোবাইলেও কথা হতো আমাদের। কেন জানি না মেয়েটার কথার মধ্যে আলাদা যাদু ছিলো, যত কথা বলি ততই এক অদ্ভুদ মায়াজালে হারিয়ে যেতাম। সময় অসময়ে,রাত্রে, মাঝরাতে কল করে গান শোনাতে বলতো আমিও বাধ্য ছেলের মত গান গাইতাম ওর জন্য। সব ভালোই চলছিলো।
একদিন হঠাৎ করে নিধী নিজেই আমাকে প্রপোস করে। আমি নিজেও দুর্বল ছিলাম ওর প্রতি তাই আমিও এক্সিপ্ট করে নি। আমাদের বন্ধুত্ব ভালোবাসায় রূপ নেয়। যেন আমরা একে অপরের সাথে মিশে গিয়েছিলাম। আত্মার সম্পর্কে আবদ্ধ হয়েগেছিলাম দুজন। কথা ছিলো আমি জব পেলে দুজনের বাসায় জানাবো। কিন্তু সবার জিবনে সুখ সয় না। একদিন নিধী এসে বিনাকারণে প্রচুর ঝগড়া করে আমার সাথে। অবহেলা শুরু করে দেয়। পরে জানতে পারি ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে ছেলে উঁচু পোষ্টে চাকরি করে।নিধী নিজেও রাজি ছিলো বিয়েতে। আমি যোগাযোগের চেষ্টা করলে নিধী চাইতো না। কিছুদিন পর নিজের এলাকা ছেড়ে চলে যায়। কোথায় গেছে কেউ জানে না।হয়ত বিয়ের জন্য চলে গেছে। তারপর থেকে মনটা একে বারে ভেঙ্গে গেছে। আর আমি এমন হয়েগেছি।
.
–তাই বলে অন্য একটা মেয়ের জন্য নিজের এতবড় ক্ষতি করবেন? নিজেকে কেন শাস্তি দিচ্ছেন?
–কোথায় নিজেকে শাস্তি দিচ্ছি! আমি অামার নতুন জীবন নিয়ে খুব খুশি। কষ্ট পাওয়ার কোনো চান্স নাই আর। একা থাকার মধ্যেই আনন্দ খুজে পাই এখন।
— বন্ধুত্ব করবেন আমার সাথে??
–দয়া হচ্ছে আমার জন্য?
— না না। আপনার গল্প শুনে ইচ্ছা করছে আপনার বন্ধু হই। দেখুন এখনো আপনার নাম টাই জানা হলো না। আমি সাথী। আপনি??
–আমি জয়।পরে কথা বলবো আপনার সাথে।

((বেড়িয়ে গেলাম ক্লাসরুম থেকে।পারলে আবার কিছুদিন যাব না ভার্সিটি তে। কারো মায়ার জড়াতে পারবো না আর। মেয়েরা হচ্ছে ছলনাময়ী,মায়াবতী, মায়াবী। কথা বললেই আটকে যাবো মায়াজালে। আমি যে আর কারো মায়াতে আবদ্ধ হতে পারবো না।যে ভুল করে সে মানুষ আর যে একই ভুল বার বার করে সে অমানুষ))

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত