ঝড়ো মেঘ

ঝড়ো মেঘ

বৈশাখের প্রথম দিন,নববধূ সাথে করে রফি কোনো এক দোকানের নিচে দাঁড়িয়ে আছে।বাহির ঝড় যেন থামার নাম নেই।এদিকে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসলো বলে।
উপায়হীন রফি তখন সিন্ধান্ত নিলো এর মধ্য দিয়ে বাড়ি যাবে।তবে তাঁর একার মত এখানে একপ্রকার অগ্রাহ্য বললে চলে।তাই নববধূ নিধীর কাছে জিজ্ঞাসা করলো “বাড়ি যাবা না?”
নিধী মাটির দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে উত্তত দিলো “যাবো তো,কিন্তু কিভাবে?”
– দৌড়ে।
– এই বৃষ্টিতে?
– হুম।
– আপনার যদি ঠাণ্ডা লাগে?
– আমার কিছু হবে না।
– তবুও,আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলে হয় না?
– হয়,তবে বাবা একা বাসায়।কি করছে না করছে!
– সমস্যা নেই,বেড় হবার সময় তাঁর খেয়াল রাখতে পাশের বাসার আপুকে বলে দিয়ে এসেছি।
– তাও চলো,ঘুম আসছে।
– আপনি একটা পাগল।শাড়ি পড়ে কিকরে দৌড়াবো?
“সেটা দেখা যাবে” বলে রফি নিধীর হাত ধরে ঝড়ের মাঝে বেড়িয়ে পরলো।
নিধীও ভেবে না পেয়ে পা মিলাতে লাগলো।
অপরদিকে আকাশ অনেকটা জুড়ে আলোকিত করে বিদ্যুৎ চমকাতে শুরু হয়ে গেছে।যেটা দেখে ভয়ে নিধী চোখ বুজে দৌড়াতে লাগলো।
ভাগ্যক্রমে কিছুদূর যেতে কাঁদায় পিছলা খেয়ে বালিকা পড়ে গেলো এবং চিৎকার দিয়ে উঠলো “আআআআআআ।”
চিৎকার শুনে রফি পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে নিধী মাটিতে বসে আছে।
– পড়লা কি করে?
– হিল পড়ে দৌড়ানো যায়![কান্নার সুরে]
– দেখে দৌড়াতে পারো না?
– “কান্নার বেগ দ্বিগুণ করে দিলো”
– হইছে থামো।
– এখন যে পায়ে ব্যথা পাইছি!
– তো।
– হাঁটতে পারবোনা।
– কোলে তুলে নিবো?
– হুম।[অভিমানী সুরে]
অতঃপর বালিকাকে কোলে তুলে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে হাঁটতে লাগলো।
তবে ভালবাসায় খুনসুটি না হলে জমে!তাই রফি কিছুদূর যাওয়ার পর বললো “আমায় তো নোবেল দেওয়া উচিৎ।”
– কেনো?
– ট্রাক কোলে তুলে নিয়েছি।
– ধ্যাত

রাত তখন প্রায় বারোটা।
রফির স্পর্শ পেতে নিধী জেগে গেলো।সে তখন উঠে রফির মাথায় হাত দিয়ে খেয়াল করলো জ্বরে শরীরের তাপ,মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
এমন অবস্থায় বালিকা চিন্তায় পরে গেলো।বাসায় বৃদ্ধ শ্বশুর ছাড়া আর কেউ নেই।
“কাউকে ডাকবে” সেটা সম্ভব নয়,বাহিরে তুমুল ঝড়।
এখন যা করার তাকে করতে হবে।
.
অতঃপর প্রাথমিক চিকিৎসার জ্ঞান কাজে লাগিয়ে নিধী রফির মাথায় পানিপট্টি দিতে লাগলো।

তারপর কিছুক্ষণ বাদে রফির মাথায় হাত দিয়ে খেয়াল করলো তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে।
তবে হঠাৎ কাঁপনি শুরু।
তখন বালিকা কাথা গুলো রফির শরীরে মেলে দিলো।
তবুও কাঁপনি থামতে নারাজ।
এবার কোনো উপায় না পেয়ে নিধী শরীরের সবটুকু উষ্ণতা উজার করে রফিকে জড়িয়ে ধরলো।

সকালে রফি ঘুম থেকে উঠে দেখে ক্লান্তি ভরা মুখে তাঁর বধূ খুব শক্ত করে তাকে জড়িয়ে ধরে আছে।
ঝড়ের পর সূর্যের মিষ্টি রোদ নিধীর মুখে পড়ে যেনো ক্লান্তি আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
তখন সে নিধীর সব ক্লান্তি দূর করে হাত দিয়ে সূর্যের থেকে আড়াল করে কপালে আলতো ছোঁয়া এঁকে দিলো।
সাথে সাথে নিধী উঠে গেলো এবং আতংক ভরা মুখে রফির কপালে হাত দিয়ে বুঝে নিলো জ্বর আছে কি না।
তারপর জ্বরের কোনো আভাস না পেয়ে রফিকে জড়িয়ে ধরে আবার ঘুমিয়ে গেলো।
বালিকার এমন কর্মকাণ্ডে রফির মনে নিধীর প্রতি ভালবাসা আরো বেড়ে গেলো এবং তখন সে নিধীকে আলতো ভাবে জড়িয়ে ধরে আস্তে করে বললো “পাগলী বউ।”
……………………………………………………  সমাপ্ত  …………………………………………….

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত