পরী…

পরী…

-এই ভাইয়া..

এতক্ষণে আসার সময় হলো, কতক্ষণ তোর জন্য দাড়িয়ে আছি।

হঠাৎ করেই মেয়েটি এসে আমার হাত ধরে হাটতে লাগলো। কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না,কি হচ্ছে এসব। মেয়েটিকে কখনো দেখেছি বলে মনে পড়ছে না। তবে এরকম ভাবে আসার মানেটাই বুঝতে পারছি না।

আমি নীল, ছোট একটি ভাই ছাড়া আর কোন বোন বা ভাই নেই। প্রতিদিনের মতো আজো কলেজ থেকে বাড়ি ফিরছিলাম রাস্তাদিয়ে হাটার সময় হঠাৎ করে মেয়েটি এসে হাত ধরে কথাগুলো বলতে বলতে হাটতে থাকলো।
আমি কথা বলার ভাষা খুজে পাচ্ছি না, হা করে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছি আর বোঝার চেষ্টা করছি কি সমস্যা মেয়েটির। কিন্তু মেয়েটিকে দেখে সাধারণই মনে হলো, কিন্তু এ রকম ব্যাবহারের কারণটা খুজে পাচ্ছিলাম না।

হালকা-পাতলা গড়নের মেয়েটি দেখতে একদম পুতুলের মতো। আর কথা-বার্তা শুনে আর পোষাক আষাকে স্মার্টই মনে হয়। কিন্তু চোখে মুখে ভয়ের ছাপ, হাতটি একদম শক্ত করে ধরে আছে।
আমাকে এভাবে হা হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে মেয়েটি হাত ছেড়ে দিয়ে কিছুটা সরে গেল। অন্যদিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো…
-সরি ভাইয়া, আসলে ওখানকার কিছু বখাটে ছেলেগুলো বাজে বাজে কথা বলছিলো, একা একা রাস্তায় বের হতেও সাহস পাচ্ছিলাম না আর ঠিক তখনি আপনাকে দেখে বুদ্ধিটা মাথায় আসলো। কিছু মনে করবেন না প্লিজ।।

এতক্ষণে আসল ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম, মেয়েটির মাথায় যে সমস্যা থাকার বদলে অনেক বুদ্ধি আছে সেটা বুঝতে পারলাম।
-কিছু মনে করেননিতো ভাইয়া।
মেয়েটার ডাকে বাস্তবে ফিরলাম।
-আরে নাহ, এখানে কিছু মনে করার মতো তো কিছু নাই।
-আপনার নামটা কি ভাইয়া….???
-নীল
-আমি পরী
-ওহ, অনেক সুন্দর নাম, তো এখানে এসেছিলে কেন……???
-বন্ধুদের সাথে বেড়াতে এসেছিলাম, কিন্তু হঠাৎ করেই ওদের খুজে পাচ্ছিলাম না। তাই এদিকে খুজতে খুজতে এসেছিলাম আর বাকীটুকো তো আপনি জানেন।।
-আচ্ছা, এখনতো কোন সমস্যা নেই তোমাকে গাড়িতে তুলে দেই চল।
-আমিতো রাস্তাঘাট তেমন চিনি না কিভাবে যাবো।

এক সমস্যা শেষ না হতেই আরেক সমস্যা শুরু হলো। কি আর করার আমার সাথেই যেহেতু এসে পড়েছে সেহেতু আমাকেই দায়িত্ব নিতে হবে।
পরীকে নিয়ে রিকশায় উঠলাম। ওর দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওর চোখে আগের মতো কোন ভয় নেই, আছে এক পরম শ্রদ্ধার আবেশ। এখনো পরী আমার হাতটা ধরে আছে, যেন ছাড়তে ভয় পাচ্ছে এখনো।
-ভাইয়া একটা কথা বলি…….??
-হুমম বলো,
-কে কে আছে আপনার…..??
-আব্বু আম্মু আর ছোট ভাই।
-আপনার কোন বোন নেই…….??
-হুমমম, এই যে আমার পাশে বসে আছে।
কিছু না বলে পরী আমার কাঁধে মাথা রেখে বললো,
-সত্যি, আপনি আমার ভাইয়া হবেন।
-হুমম, রে পাগলি সত্যি সত্যি সত্যি
-জানেন ভাইয়া, আমি বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে। আমার সব ফ্রেন্ডের ভাইয়া আছে শুধু আমার নেই। এখন আমি সবাইরে বলতে পারবো,, আমারো ভাইয়া আছে। আমার ভাইয়া অনেক ভালো।

ওর এলাকায় চলে এসেছি, ওকে রিকশায় তুলে দিয়ে বিদায় নিলাম।
আমি সেখানেই দাড়িয়ে আছি, রিকশা আস্তে আস্তে দুরে হারিয়ে যাচ্ছে। পরীর রিকশার ফাঁকা দিয়ে তাকিয়ে আছে, ওর মুখে গোধুলীর আলো পড়েছে চোখের কোণের ছোট্ট জলের ফোটা চিকচিক করছে। ওর মুখে হাসি, আমার ঠোটের কোণেও হাসি। এখন আমরা জানী, পরীর একটা ভাইয়া আছে আর আমার একটা পরী আছে।।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত