ভয়ংকর সেই ষ্টেশন

ভয়ংকর সেই ষ্টেশন

সবে মাত্র এস,এস,সি পরিক্ষা দিয়েছি।
দেড় মাস একটানা পড়া-লেখা করে বেশ হাপিয়ে উঠেছিলাম।
পরীক্ষা শেষ হতেই ব্যাগ গুছিয়ে চলে গেলাম রাজশাহী!!!
এক বড় ভাইয়ের বাসায়। ৫-৭ দিন ভালোভাবেই কাটলো। প্রচুর মজা করলাম।বেড়ালাম।
একদিন বিকেলে যথারীতি রাজশাহী কলেজের মাঠে বসে খেলা দেখছি।
স্থানীয় লোকদের মুখে শুনলাম ভাঙ্গুরা (সুলেমান শাহ) এর মাজারে নাকি ওরস হচ্ছে।
আমি আবার বরাবরই মাজার,পূজা,সহ বিভিন্ন আনন্দ আনুষ্ঠানের প্রতি দুর্বল।
যে ভাবা সেই কাজ। হ্যাঁ আমি যাব।একাই যাব।কেউ যানবে নাহ!!!
বাসাই যাচ্ছি বলে রাজশাহীকে বিদায় জানালাম।
রাজশাহী ষ্টেশন এ গিয়ে ভাঙ্গুরার টিকেট কাটলাম। তখন বাজে সন্ধ্যে ৭:৩০ টা। ট্রেন ছাড়বে রাত ১০:০০ টা শুন্তেই মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল।
কিন্তু পরমূহূরতে যখন মাজারের ওরসের চিন্তা করলাম ভেতরে ভেতরে খুব উত্তেজিত লাগলো। মাজারে যাব হাজার হাজার মানুষের মাঝে মিশে যাব।**** খাব। খুব ভালো লাগছিল।
—–ঘুম ভেঙ্গে গেল টিটির ডাকে।টিকিট প্লিজ!
মানে সামনে ভাঙ্গুরা??? হ্যাঁ।কখন যে ঘুমিয়ে গেছিলাম বুঝতেই পারিনি।
ঘরিতে তাকালাম রাত ১:০০ বাজে। তার মানে রাজশাহী থেকে আসতে ৩ ঘণ্টা লাগলো।
নেমে পড়লাম ট্রেন থেকে। আমার সাথে সাধু গোছের ৮/১০ জন নামলো।
তারাও মনে হয় মাজারে যাবে।
তাদের জিজ্ঞাস করলাম ওরস কত দূর?
শুনেও না শোনার ভান করে ২ টা ভ্যান রিজার্ভ করে চলে গেল। খুব রাগ হল তখন।
রাজশাহী থেকে যেমনটা ভেবেছিলাম এখানে এসে দেখি পুরাই উল্টো।
স্টেশন মাস্টার একটা চায়ের দোকানদার আর আমি ছাড়া জাগ্রত কোন ব্যাক্তি নেই……
একটা গাড়িও পেলাম নাহ।গন্তোব্য প্রায় ১ ঘন্টার পথ। কি করবো কিছু বুঝেউউঠতে না পেরে চায়ের দোকান থেকে একটা সিগারেট নিয়ে বসে টানছি আর স্টেশন দিয়ে হাটছি।বুঝতে পারছিনা কি করবো।
হাটতে হাটতে অনেকটা ছারিয়েই এলাম। সিগারেটও শেষ। এমন সময় ভ্যানের ক্রিংক্রিং আওয়াজ।আমি তো পুরাই অবাক।রাত বাজে ১:৪০ টা…..
আবার ভাবলাম ওরসে হয়ত কেউ যাচ্ছে। আচ্ছা আমি যদি ওদের সাথে যাই।কেমন হয়!
কথাটা মনে করতেই বললাম দাঁড়াও।
ভ্যানটা দাঁড়িয়ে গেল।কি আশ্চর্য ভ্যানে আর কেউউ নেই।
–ভাইজান কোনটি যাইবেন??
—গোলাপ নগর।যাবা??
—ওরসে যাইবেন?
—হ্যঁ।
—তয় ভাড়া কিন্তু বেশী লাগবো।
—আরে যা লাগে দিব।আগে চল তো!
যাক বাবা একটু আরাম পেলাম। মনে মনে খুব শান্তি লাগছে।
কিন্তু তখনো আমি জানিনা আমার সাথে কি ঘটতে চলেছে।
আমি একটু পর একোটা সিগারেট জ্বালাতেই লোকটা বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
–ভাইজান সিগারেট খাইয়্যেন নাহ!
—কেন??
—সমস্যা আছে।
ছোটবেলা থেকেই আমি আবার একগুঁয়েমি স্বভাবী।
বললাম যে তোমার লাগ্লে বল একটা দেই। সিগারেট আমি ফেলবোনা।
এবার যা দেখলাম তা দেখার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম নাহ!
হঠাত করেই লোকটা ভ্যানিস হয়ে গেল। কি বলবো আমি কিছু বুঝে উঠতেই পাড়ছিলাম নাহ। বোটকা গন্ধে চারিদিক ভরে গেল।প্রত্তন্ত অঞ্চল হওয়ায় আমি কোন লোক তো দূরে থাক সামান্য আলোও দেখছিলাম নাহ।
এবার যা দেখলাম তাতে আমার শরির জমে গেল। একটা গরুর মত প্রানি আমার দিকে ধেয়ে আসছে। মাথা নেই।চোঁখ দুটো অস্বাভাবিক বড়।ঠিক বুকের উপর।
কি করব কিছুই মাথায় আসছেনা। দূয়া কালেমা কম জানিনা।কিন্তু মনে হচ্ছিল কিছুই আমি জানিনা।
আজ আমি শেষ।
কিন্তু পরক্ষনেই খুব দৌড় দিতে ইচ্ছা হল। আমি চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম নাহ।
মনে হচ্ছিল পা দুটো লেগে গেছে।
আমি ঘামছি।তো ঘামছিই।
জিনিসটা আমার সামনে আসতেই তার রুপ পরিবর্তন করলো।
কি সে ভয়ঙ্গকর বিশ্রী রুপ।আজো গায়ে কাটা দেয়।
এত কিছু আমি আর সহ্য করতে পারলাম নাহ।
জ্ঞাব হারালাম।
সকালে জেগে দেখি আমি মাজারের দরগার পাশে শুয়ে আছি।
পরে জানতে পারলাম একদল সাধু-সন্যাসি পথিমধ্যে আমাকে অচেতন অবস্তায় পেয়েছে।
তার পর থেকে কোন দিন আমি একা একা কোথাও বেড়াতে যাই নি।
আবির রায়হান
শালগারিয়া,পাবনা সদর,পাবনা

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত