শহরের আতঙ্ক

শহরের আতঙ্ক

ভয়ানক এক আতঙ্কে সমস্ত শহরটা যেন ভুতুড়ে নগরীতে পরিনত হয়েছে।সন্ধ্যার অন্ধকার ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে ফাকা হয়ে যায় রাস্তাঘাট।খুব জরুরী প্রয়োজন বেরুনো দু একজন হুশ করে চলে যাওয়া গাড়ী বা স্কুটার ছাড়া রাজপথে জন মানুষের চিহ্ন খুজে পাওয়া ভার।অফিস ছুটি হলে মানুষের ভিড় আর ধাক্কাধাক্কির সেই চিরন্তন চিত্র এই শহর থেকে অদৃশ্য আজ প্রায় দুই মাস।
সন্ধ্যা নামতেই বন্ধ হয়ে যায় দোকান পাট,খদ্দেরের অভাব।তাছারা দোকানিরাও কেও রাতের বেলা ঘরের বাইরে থাকতে চায় না।জানের ভয় সবারি আছে।কারন রাত হলে কার উপর ভয়ানক আক্রোশ নিয়ে হানা দিবে ভয়ংকর নেকড়ে মানব কেও জানে না।
হ্যাঁ,নেকড়ে মানব। যাকে ইংরেজিতে ওয়্যার উল্ফ{Ware Wolf}.নেকড়ে মানব এমন একধরনের প্রাণী যারা পুর্নিমার রাতে চাঁদ এর আলোতে মানুষ থেকে নেকড়েতে পরিনত হয়।নেকড়ে মানবের ভয়ে একবিংশ শতাব্দির শুরুর দিকে শহরটা কাপছে।গত ২মাস মোট ১৯ জন মানুষ নেকড়ে মানবের শিকার হয়েছে।গলা ফালাফালা করে ছেড়া ছিল প্রতিটা শিকারের।দেখেই বুঝা যায়,কোন ম্যানিয়াকের কাজ।তবে নগর বাসির ধারনা অন্য রকম।তাদের বেশির ভাগের ধারনা এটা ম্যানিয়েক নয় নেকড়ে মানবের কাজ। নেকড়ে মানব ছাড়া এমন ভংকর হত্যা কেও করতে পারবে না।নেকড়ে মানবকে নগরবাসীরা ২বার দেখেছিল।তাও শিকারের উপর হামলা করার সময়।প্রত্যক্ষদর্শিরা কসম ও খেয়েছিল।বলেছিল,বিশালদেহধারি নেকড়ের মত একটা প্রানী।তবে প্রাণীটার বিস্তারিত বনর্না দেওয়া সম্ভব ছিল না।যারা দেখেছে তারা বলেছে ওই সময় নাকি তারা বেশ অন্ধকারে ছিল,ঘটনাস্থল থেকে প্রায় একশো মিটার দূরে। পুরো পরিষ্কার ভাবে তারা দেখতে পাইনি খুনিকে।
পুলিস বলেছে নেকড়ে মানব আসলে স্রেফ কল্পনা।কোন উন্মাদের কাজ এটা।কিন্তু ঘটনাটা ফুলিয়েফাপিয়ে তুলেছে সংবাদপত্রগুলো। তারাই রক্তহিম করা হেডিং ছেপে ভয়ানক কাহিনি লিখে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে সাধারন মানুষের মনে। গুজোবটা এমন ছড়িয়েছে যে মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে ভয়ংকর এক দানব এসেছে তাদের শহরে।রক্তপিপাসু এই খুনির হাত থেকে কারো নিস্তার নেই।আর এই ভয়ের চোটে লোকে চার দেয়ালের মধ্যে বন্দি করে রেকেছে নিজেকে।
তবে একটা ব্যাপার নিয়ে সকলে বিভ্রান্ত।গল্প উপন্যাসে নেকড়ে মানবের সম্পর্ক আছে এরা মানুষ থেকে নেকড়ে তে পরিনত হয়। আর এই রুপান্তরটা সাধারণত ঘটে পুর্নিমা রাতে। কিন্তু এই শহরের হত্যা গুলোর সাথে পুর্নিমার কোন সম্পর্ক আছে বলে এখন খুজে পাওয়া যায়নি।এই শহরের আতঙ্ক নেকড়ে মানব নিজের ইচ্ছে খেয়াল খুশি মত যখন পারছে একের পর এক হুন করে যাচ্ছে।আর খুন করার নির্দিষ্ট সময় রাত হলেও বেশ কিছু দিন ধরে দিনের বেলায় ও খুন হছে।তবে একটা লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে,প্রতিটা খুনের দশ কি বার দিন পর পর আরেকটা খুন হচ্ছে।তবে গত পনের দিন ধরে কোন খুন না হলেও ভয় কমেনি জনগণের।শহরের প্রতিটা মানুষ আতঙ্কিত হয়ে রয়েছে,এই বুঝি তার পালা এল বলে।বিশ তম শিকার বুঝি এবার তাকেই হতে হবে।
্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্,
আবু মিয়া বেশ দুলকি চালে সন্ধ্যার ফাকে রাস্তা দিয়ে হেটে চলেছে।লোকজন নেই বলে তার বেশ সুবিধাই হচ্ছে।যে কাজ করতে যাচ্ছে তাতে মানুষের উপস্থিতি একেবারেই কাম্য নয়।কাজটা তাকে করতে হবে খুব গোপনএ।শিকারের চিৎকার কেও শুনে ফেললেই ঝামেলা।অবশ্য শহরের যা অবস্থা সে দেখতে পাচ্ছে তাতে গলা ফাটিয়ে কেও চিৎকার করলেও অন্ন্যরা শুনতে পাবে না।পেলেও বিপদে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে ও আসবে না।
নিখুত একটা প্লান করেছে আবু মিয়া জেল থেকে বের হয়েই।পরিকল্পনা মাফিক কাজ করতে পারলেই কেল্লা ফতে হয়ে জাবে।আবু মিয়ার আর ছোট খাটো চুরি চামারি করতে হবে না,রাতারাতি বড়লোক হয়ে যাবে আবু মিয়া।নেকড়ে মানবের কথা মনে হয় আবু মিয়া জানত না,জানলেও তেমন পাত্তা দিত না,আর যদি পাত্তা দিত তাহলে আর এই রাজপথে আর আবু মিয়া কে দেয়া যেত না।আবু মিয়ার ভয় নেকড়ে মানব না,পুলিস।তাই পুলিস দেখলে চট করে কোন এক চিপা গলি তে ঢুকে পরে।
পুলিসে তার বিশ্বাস নেই।আবু মিয়ার কাধে যা আছে তা দেখলে পুলিস সহজেই বুঝে যাবে আবু মিয়া কি করতে যাচ্ছিল।আবারো শ্রীঘরে ঢুকতে হবে আবু মিয়াকে।
মিসেস চৌধুরীর কথা মনে পরতেই অল্প একটু হাসলো আবু মিয়া।দারুন এক শিকার বেছে নিয়েছে এবার সে।ধনী,মধ্যবয়স্ক এই মহিলা এক গার্মেন্টস কোম্পানির মালিক।থাকেন শহরের উপকণ্ঠের দোতালা বাড়িতে।বাড়িতে এক বুড়ো দারোয়ান আছে।সে সারাদিন ডিউটি দেয়।রাত আট টায় বাসায় খেতে যায় এক ঘণ্টার জন্য,আবু মিয়া কে এই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে।মিসেস চৌধুরী সম্পর্কে সে সব তথ্য জোগাড় করে ফেলেছে।ভদ্রমহিলা এক থাকেন,শহরে এসেছেন মাস ৩/৪ হবে হয়তো।মাঝে মাঝে পার্টিতে যান।উপর মহলের সাথে তার সম্পর্ক বেশ ভালো সে কথা আবু মিয়া বুঝেছে খবরের কাগজে এক বিদেশী রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ভদ্রমহিলার ছবি দেখে।সেদিন পার্টিতে বেশ দামী গহনা পরে এসেছিল মিসেস চৌধুরী।জেল্লা ফুটে বেরচ্ছিল গহনা থেকে।
মিসেস চৌধুরীর ঠিকানা বের করতে আবু মিয়ার তেমন একটা সময় লাগেনি।তারপর বেশ কয়েকদিন নজরে রেখে সব গতিবিধি বুঝে নিয়েছে।লক্ষ্য শনিবার কোথাও যান না তিনি।আর শনিবার রাত ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তার বাসায় শুধু তিনি একাই থাকেন।এই সময় টাই বেছে নেয় আবু মিয়া।অনেক কষ্টে খেটেখুটে প্লানটা বের করেছে আবু মিয়া।ছিচকে চুরি আর ভাল লাগে না আবু মিয়ার কাছে।তাই এবার সে একটা বড় ধরনের কিছু করতে চান।তবে আবুর বিশ্বাস তার পরিকল্পনা ঠিকঠাক হয়ে কাজ টা সম্পন্ন হবে।গন্ত্যবে পৌঁছে দ্রুত আবু দেয়াল টপকিয়ে ভিতরে ঢুকে যায়,এমনিতেই নেকড়ে মানবের কথা ভেবে বাহিরে কেও বের হয়না ভয়ে তাই সব জায়গা ফাকা হওয়াই আবুর বেশ সুবিধা হয়েছে।সাবধানে এগিয়ে গেল আবু মিয়া সদর দরজার দিকে,ওখানে সেট করা বাল্বটা হাতে রুমাল পেচিয়ে খুলে আনল আবু,সাথে সাথেই চারপাশ অন্ধ্যকারে ঢেকে গেল।এর পর সে ব্যাগ থেকে একটা পোর্টেবল টেপ রেকর্ডার বের করে কলিংবেল বাজালো আবু।
ভিতর থেকে মিষ্টি কণ্ঠে কারো সুর ভেসে আসল।দরজায় কান পেতে শুনছে আবু,কেও নিশ্চয় আসছে দরজার দিকে।অবশ্যই মিসেস চৌধুরী।মহিলা ম্যাজিক আইতে চোখ রাখলেও দেখতে পাবে না আবুকে,সে আগেই বাল্ব খুলে রেখে বেশ বুদ্ধিমানের মত কাজ করেছে।
“কে ?” গম্ভির,আত্মবিশ্বাসী একটা কণ্ঠ ভেসে আসলো।
আবু সঙ্গে সঙ্গে টেপ-রেকর্ডার অন করে দিলাম।“আমি মনিকা,শিলার বন্ধু।শিলা একটা জিনিস পাঠিয়েছে আপনাকে।ভেতরে আসতে পারি আমি ?”
টেপ-রেকর্ডারে মহিলার কন্ঠ টেপ করে রেখেছিল আবু।তবে ওপাশ থেকে মিসেস চৌধুরীর বুঝার উপায় নেই যে এটা রেকর্ড করা টেপ।শিলা তার এক ঘনিষ্ট বান্ধবী সেটা আবু আগে থেকেই জানত।
“অবশ্যই! ” বলে মিসেস চৌধুরী দরজা খুলে দিলেন।
আবু টেপ রেকর্ডার সরিয়ে রেখে ভেতরে ঢুকতে প্রস্তুতি নিতে লাগল।
দরজা খুলে যাচ্ছে দেখে আবু দরজায় জোড়ে একটা ধাক্কা দিয়ে দরজা পুরোটা খুলে ফেলল।তারপর বিদ্যুৎ গতিতে ভিতর ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল আবু মিয়া।কোমরে গোজা রিভাল্বারটা বের করে মিসেস চৌধুরীর দিকে তাক করে বলল,“কোন শব্দ নেই,বাচতে চাইলে আমি যা যা বলি তাই কর !”
মিসেস চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে আবুর হৃদস্পন্দন আরো বেড়ে গেলো আবুর,ভদ্রমহিলা ঘরের ভিতরেও এত দামি গহনা পরে থাকেন।মিসেস চৌধুরী কিন্তু ভয় পাননি,তিনি বলে উঠলেন,“কি চাও তুমি ?”
“বলছি না কোন কথা নয়,”খ্যাঁক করে উঠল আবু।পিস্তল নাচাল।“উঠে দাড়া,শরিরের সব গহনা খুলে ফেল,আর সিন্দুকের চাবি দে,নাইলে গুলি করে মাথা ফুটো করে ফেলব”
ধীরে ধীরে উঠলেন মিসেস চোউধুরি।রাগে তার চোখ জ্বলছে।মহিলার দিকে তাকিয়ে আবুর শিরদাঁড়া বেয়ে ঠাণ্ডা স্রোত নামতে লাগল।এগিয়ে আসছেন আবু মিয়ার দিকে।কটমট করে তাকিয়ে আছেন আবুর দিকে।ওনার চোখ এমন হলুদ হয়ে গেল কেন?
গলার ভিতর থেকে চাপা একটা গর্জন বেরিয়ে আসল।শরিরের আকার বদলাতে শুরু করেছে।
ভয়ে কাপুনিতে আবু মিয়ার হাত থেকে রিভাল্বার পরে গেল।চোখের সামনে যেই চিত্রটা দেখছে আবু সেটা বিশ্বাস করতে পারছে না।মুখ হাঁ করল চিৎকার দেবার জন্য কিন্তু তার আগেই ধারালো থাবা নিয়ে আবুর উপর ঝাপিয়ে পড়ল মিসেস চোউধুরি।একটানে ছিঁড়ে ফেলল আবুর গলা।বিশতম শিকার হলেন আবু মিয়া এক নেকড়ে মানব নয় মানবীর।
……………………………………………………. সমাপ্ত ………………………………………………..

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত