মধ্য রাতের ভয়ানক গল্প

মধ্য রাতের ভয়ানক গল্প

খুব রাগ হচ্ছিলো রাতুলের উপর। সারা রাত আড্ডা দিয়ে একটু আগে ঘুমিয়েছিলাম। ছেলেটার চ্যাচানিতে ঘুমটাই মাটি। এই গভীর রাতে কাঁচা ঘুম নষ্ট হলে

কার রাগ হবে না? বাসায়ও আজ কেউ নেই, ফুফাতো বোনের বিয়েতে সবাই দেশের বাড়ি। ঘুম থেকে উঠে দরজাটা খুলে দিলাম “আয় ভিতরে আয় এত

রাতে চিল্লাচ্ছিস কেন? বাসায় আগুন লাগছে নাকি? ” রাতুল নিচের দিকে তাকিয়ে বললো ” আপনার বাসায় তো আজ কেউ নেই, চলেন যাই বস্তাটা তুলে

নিয়ে আসি, দিনের বেলায় তো আর সম্ভব না, এমন সুযোগ আর নাও মিলতে পারে”। রাতুল ঠিকই বলেছে এমন সুযোগ আর পাওয়া যাবেনা, তবুও

মেজাজটা ঠান্ডা হল না চড়া গলায় বললাম ” তাই বলে এত জোরে চ্যাচাতে হবে? আস্তে ডাকলেও তো পাড়তিস, আচ্ছা ভেতরে এসে বোস, আমি মুখে একটু

পানি ছিটিয়ে আসি”। রাতুল মাথা না তুলেই বলল” আমি বাইরেই আছি আপনি একটু তাড়াতাড়ি বের হন”। ঘুটঘুটে অন্ধকার, রাস্তা ঘাট কিছুই দেখা যাচ্ছে না

আমি রাতুল জঙ্গলের পথটা ধরে হাটছি। রাতুল বেশ জোরে জোরে হাটছে, আমি প্রায় সময়ই পিছিয়ে পড়ছি। টর্চটাতে কি যেন সমস্যা হয়েছে, বেশ চেষ্টা

করেও জ্বালাতে পারলাম না। গতকালই কিনেছি অথচ আজকেই নষ্ট হল, কাল সকালেই দোকানদারকে ঝাড়ি দিয়ে বদলে নিতে হবে। প্রায় তিন মাস আগে

আমি আর রাতুল বেশ কিছু টাকা ও সোনার গয়না মাটির নিচে পুঁতে রেখেছিলাম সেগুলোই তুলতে যাচ্ছি আজ। ওগুলো সোজা পথে আসেনি, তার জন্য

একজনকে খুন করতে হয়েছে। পাড়ার শেষ মাথায় একজন কিপ্টে বুড়ো থাকতো, বুড়োর ছেলে মেয়ে সবাই বিদেশে থাকতো, খুব একটা দেশে আসতো না

তারা। মাসে মাসে টাকা পয়সা পাঠিয়ে তাদের দ্বায়িত্ব শেষ করতো। বুড়ো দেশের বাড়ির জমি জমা সব বিক্রি করে নগদ টাকা সব নিজের কাছেই রেখেছিল,

ব্যাংকে টাকা রাখতো না যদি ফেরত না দেয়। খবরটা রাতুলই দিয়েছিল, কোন রকমে যদি রাতে বুড়োর বাড়িতে ঢোকা যায় দু,জন কোটিপতি। ঢুকেও ছিলাম,

সেদিন বুড়োর একমাত্র কাজের ছেলেটাও ছুটি নিয়ে দেশের বাড়িতে। রাতুলের পাঁকা খবর ছিল। কিন্তু বালিশের নিচ থেকে আলমারির চাবিটা বের করার

সময়ই ঘটলো বিপত্তি। বুড়ো কিভাবে যেন টের পেয়ে চোর চোর বলে চ্যাচাতে শুরু করলো, কি করবো বুঝতে না পেরে বালিশটা দিয়ে বুড়োর মুখে চাপা

দিলাম। তাতেই যে বুড়ো অক্কা পাবে সেটা তো আর জানতাম না। হায়াত নেই তাই মরেছে, তাছাড়া বুড়ো মানুষ অত বেঁচে থেকে কি করবে,, তাই কোন

মৃত্যুর জন্য কোন আফসোস ছিল না। প্রায় আধ বস্তা টাকা আর বেশ কিছু সোনার গয়না পেয়েছি। সেগুলো ঐ রাতেই জঙ্গলে পুতে রেখেছি। সব ভ্যাজাল

মিটে গেলে বের করে ভাগা ভাগি করে নেব। পুলিশ কদিন বেশ দৌড় ঝাপ করে কিছু চোর ছ্যাচড় ধরে মামলা শেষ করে দিল। আজ সে টাকাই তুলতে

যাচ্ছি। দু,বার হোচট খাবার পর বেশ রাগ হল রাতুলের উপর। একটু ধীরে চললে কি হয়? টাকা তো কেউ নিয়ে যাচ্ছে না, আমার আছাড় খাওয়া দেখে বদটা

কেমন খিল খিল করে হাসছে। জঙ্গলে পৌঁছেই রাতুল আমার হাতে একটা কোদাল ধরিয়ে দিল, যাক ছেলেটাকে বেশ কাজের বলতে হবে, আগেই সব প্রস্তুত

করে রেখে দিয়েছে। অনেকক্ষন ধরে খুড়ছি, কিন্তু বস্তার কোন হদিস পাচ্ছি না। কোদাল ফেলে রাতুলকে জিজ্ঞেস করলাম ” কি রে রাতুল ভুল জায়গায়

খুড়ছি নাতো?” রাতুল মাটিতে কোপ দিয়েই খিল খিল করে হাসতে লাগলো, তারপর হাসি থামিয়ে বলল ” বড় ভাই ঠিক জায়গায়ই খুড়ছি, এতদিন ধরে

এখানে পড়ে আছি ভুল হবার নয়”। হঠাৎ করে অন্ধকার ভেদ করে চাঁদটা যেন পূর্ণিমার আলো ছড়িয়ে দিল চারপাশে। গর্তটার উপরে মরে যাওয়া সেগুন

গাছটা ঠিক আগের মতই আছে এক চুলও পরিবর্তন হয়নি। বস্তাটা মাটিতে পুতে রেখে এই গাছটার নিচে কিছুক্ষন বসে ছিলাম আমি আর রাতুল। তখই

বুদ্ধিটা মাথায় আসে, রাতুলকে খুন করে যদি মাটিতে পুতে ফেলি তবে ভাগও দিতে হবে না সাক্ষীও থাকলো না। ঠিক এই গর্তটায়ই তো রাতুলকে পুতে

রেখেছিলাম তিন মাস আগে, এটা এতক্ষন ভুলেছিলাম কিভাবে? মেরুদন্ড বেয়ে শীতল একটা স্রোত নেমে গেল যেন। ঘামে পুরো শরীর ভিজে গেছে, পা

দুটো যেন মাটির সাথে আটকে গেছে এক চুলও নড়াতে পারছিনা। মনে হল কোদাল ফেলে দিয়ে রাতুল আমার দিকেই তাকিয়ে আছে যেন। অনেক কষ্টে ওর

দিকে তাকালাম পঁচন ধরা মুখে মাংস গুলো ঝুলে আছে, চোখ দুটো নেই, আছে একদলা আগুন। জ্ঞান হারাবার আগে শুনতে পেলাম ওর খিল খিল হাসি,

আর বলছে ” বড় ভাই ভয় নাই আজ থেকে আমরা এক সাথেই থাকবো……

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত