ফেরার পথে

ফেরার পথে

গল্পের মধ্যে গল্প জন্ম।
আজকাল সময়-টা খুব খারাপ যাচ্ছে, বাড়িতে অশান্তি, পড়তে যাই যেখানে সেইখানে অশান্তি। জীবন টাই একটা অশান্তি হয়ে গেছে। ভালো লাগেনা কিছু। তারপর আর কি লিখি, মাথায় আসছেনা। প্ল্যাটফর্মে বসে আমি তখম গল্প লিখছিলাম মোবাইলে।

প্রতিদিন কার মতন আমি পড়া শেষ করে গ্যালোপিং আপ কৃষ্ণনগর লোকালের অপেক্ষা করছিলাম। আমার বাড়ি নদীয়া জেলার, কালিনারায়ণ পুরে।

সপ্তাহে দুইদিন বাদে, বাকি পাঁচদিন রোজ পড়া থাকে, আমি কলকাতায় টিউশন পড়তে যাই।

যেটুকু সময় প্ল্যাটফর্মে বসে কাটায় সেটুকু সময় গল্পচর্চা করি। সেদিন ও করছিলাম। একমনে চিন্তা করছিলাম। আমি প্ল্যাটফর্মমের একেবারে শেষে নিরিবিলি একটা জায়গাই বসে ছিলাম। কিন্তু আমার ভাবনার জগৎ এ বাঁধা পড়লো।

একটা মেয়ের বিকট আওয়াজে, না সে আমার উপর চিৎকার করছে না। চিৎকার করছে তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার উপর।

ছেলেটাকে দেখে মনে হচ্ছে মেয়েটার বয়ফ্রেন্ড, কিন্তু এইভাবে চিৎকার করছে কেন? ভালো করে শুনে দেখি।

মেয়ে – তুমি যদি আজ আমার সাথে না ঘুরতে যাও তাহলে আমি এখুনি রেলে গলা দেবো। সেই কদিন ধরে এক কথা ঘেনিয়ে যাচ্ছি, আমাকে তো আজ অবধি কোথায় ঘুরতে নিয়ে যাওনি। তোমার নাকি সময় হয়না। কাজ করো। আচ্ছা আমার কি কোনো ইচ্ছা থাকতে পারে না। আজ যদি তুমি আমাকে ঘুরতে না নিয়ে গিয়েছো, তাহলে আজ আমি রেলে গলা দেবো।

ছেলে – শোনো বাবু, এইরকম করেনা। এখন তো বিয়ের সময় ক্যাটারিং এ কাজ চলছে। দুটো পয়সা হলে তোমাকে ভালো কিছু কিনে দিতে পারবো। একটু বোঝো, আচ্ছা আমি কথা দিচ্ছি। তোমাকে কাল ঘুরতে নিয়ে যাবো আজ একটু তাড়া আছে। অনেক কাজ আমাকে আজ ছেড়ে দাও, সোনা।

মেয়ে – তারমানে কাজটাই সব তোমার কাছে তাইতো, আমি কেউ না তাইতো, এইনাও ধরো তোমার দেওয়া মোবাইল ফোন। আমি চললাম।

ছেলে – এই এতো তোমার তেজ কেন? একটু বোঝো। তখন তিন নম্বর লাইন দিয়ে একটা থ্রু ট্রেন সজোরে ধেয়ে আসছিলো, মেয়েটা ওই ছেলেটার দিকে পেছন ফিরেও তাকালোনা। ছেলেটাও না তাকিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেলো।

কিছুটা দূরে গিয়ে মেয়েটা পেছন ফিরে ছেলেটার দিকে তাকালো। মেয়েটা হয়তো খেয়াল করেনি সে একেবারে তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মের আগা সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো। এদিকে ধেয়ে আসা থ্রু-ট্রেন ক্রমাগত হর্ণ বাজাচ্ছে। এমন সময় মেয়েটা প্ল্যাটফর্ম দিয়ে পিছলে পড়ে যায়। আর নিমেষের মধ্যে একটা থ্রু-ট্রেন ঝড়ের গতি-তে চলে যায় ওই মেয়েটার শরীরের উপর দিয়ে।

এতো শোরগোল জনগণের কোলাহল যুক্ত প্ল্যাটফর্ম তখন ওই মেয়েটার চিৎকারে স্তব্ধ হয়ে যায়। মেয়েটার প্রেমিক দৌঁড়ে আসে, ততক্ষণে ট্রেন বেড়িয়ে গেছে এসে দেখে তার প্রেমিকার দেহের রক্তে আশেপাশের সব লাল বর্ণের হয়ে গেছে।ছেলেটা চিৎকার করে মাটিতে বসে পড়ে।

আমি বেশীক্ষণ প্ল্যাটফর্মে থাকতে পারিনি, ওইরকম একটা দৃশ্য চাক্ষুষ দেখে কেউবা নিজেকে সামলা-তে পারে আমি বাড়ি চলে গিয়েছিলাম।

কিন্তু ওইযে ছেলেটা এইরকম একটা ঘটনা নিজের চোখে দেখে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। তারপর থেকে ওকে আমি ওই স্টেশনেই ক্রমাগত দেখতাম। বড়োবড়ো দাঁড়ি, বড়ো বড়ো চুল। ছেলেটা খালি তার গার্লফ্রেন্ডের নাম ধরে প্ল্যাটফর্মের এপারওপার হাঁটাচলা করতো। কাঁদতো। ছেলেটার গার্লফ্রেন্ডের নাম ছিলো রিয়া, আর ছেলেটার নাম সুজয়।

দিন-টা সেদিন বুধবার ছিলো। সেদিন ধর্মঘট ছিলো সন্ধ্যাবেলায়। আমি পড়তে গিয়েছিলাম স্টেশনে এসে শুনি ট্রেন অবরোধ। কিন্তু আমাকে তো বাড়ি যেতেই হবে। একটা ট্রেন আছে কিন্তু সেই রাত ১১.৩০ এ। ওটা যদি না পাই তাহলে আমাকে এখানেই আজ থেকে যেতে হবে। বিশাল রাগ ধরছিলো আমার কিন্তু আর কোনো রাস্তাও ছিলোনা। আমি প্ল্যাটফর্মে পাক্কা পাঁচঘন্টা কাটালাম। আর ভালো লাগছেনা। আর আধাঘন্টা পর ট্রেন। একবার উঠতে পারলেই শান্তি। তখনি আমার বিরক্তি বোধ দূর হয়ে গেলো একটা অদ্ভুত কাঁন্নাতে। আমি এপাশ ওপাশ ঘুরে দেখলাম কোথা থেকে আসছে এই আওয়াজ। এদিকে রাত তখন প্ল্যাটফর্ম অনেক ফাঁকা। হাতেগোণা কয়েকজন লোক। আমি খেয়াল করলাম একেবারে তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মের শেষের দিকে একটা ছেলে কাঁদছে সে আর কেউ নই। সে তো সুজয় কিন্তু ও কি বলছে?

আমি ভালো করে শুনিলাম ও কি বলছে।

রিয়া..আমাকে তোমার কাছে নাও। আমাকে কেউ ভালোবাসেনা। তুমি কি এখনো রেগে আছো। আমি আজ কত-টা কষ্টে আছি তুমি বোঝো। আজ যদি তুমি আমাকে না দেখা দাও কিংবা আমাকে তোমার কাছে না ডাকো তাহলে জানবো তুমি আমাকে ভালোই বাসোনা।

এইবলে ছেলেটা শুয়ে পড়লো। আর মাঝেমধ্যে রিয়া তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মের নীচের মেঝেতে। কিছুক্ষণ পর মাইকে ঘোষণা হলো আপ রাণাঘাট লোকাল ও একটা থ্রু – ট্রেনের।

থ্রু-ট্রেন-টা সম্ভবত তিন নম্বর লাইন দিয়ে আসছিলো। আমি আওয়াজ পাচ্ছিলাম থ্রু-ট্রেনের হর্ণের। হঠাৎ একটা অদ্ভুত জিনিস দেখলাম।

ছেলেটা শুয়ে আছে কেউ যেন তার মাথার চুল ধরে লাইনের কাছে টেনে নিয়ে যাচ্ছে আরে এই ছেলে-টা করে কি। তারপর যা হলো একেবারে অবিশ্বাস্য। ওই ছেলেটা এক সময় প্ল্যাটফর্ম থেকে এক হাত উপরে উঠলো তারপর তিন নম্বর লাইনে গিয়ে ছিটকে পড়লো। আর ওর উপর দিয়ে ট্রেন-টা চলে গেলো। যেই ট্রেন-টা চলে ওমনি দেখলাম একটা নীল আলো কোথা থেকে উড়ে এলো এসে সুমন যেখানে আছাড় খেয়ে পড়লো ওইখানে ওই নীল আলোটা গেলো কিছুক্ষণ পর ওই নীল আলোটা লাল আলোর সাথে ঘুরতে ঘুরতে উপরে উঠলো এবং দুইজনেই সজোরে গতিবেগ নিয়ে সামনের দিকে চলে গেলো।

বাবু….বাবু….এইবাবু….

আমি ধড়মড় করে পড়ার টেবিল থেকে উঠে, মা কে সাড়া দিলাম – যাই মা।

ডাইরির দিকে তাকালাম সুজয় আর রিয়ার প্রেম কাহানী লিখছিলাম তা শেষ করে ফেলেছি।

……………………………………………..সমাপ্ত…………………………………………..

 

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত