বামন বট গাছ

বামন বট গাছ

গ্রামের শেষ প্রান্তে বিশাল এক মাঠ ।
মাঠের মাঝখানে অনেক পুরানো একটা বট গাছ দাড়িঁয়ে আছে ।
শুধু পুরানো না অনেক পুরানো এই গাছ । তবে আশ্চর্যজনক বিষয় হল গাছটা বেশি উচুঁ না । এত বয়স গাছটার অথচ খর্ব আকৃতির । ডালাপালা চারদিকে অনেক । লোকমুখে শোনা যায় কোন এক বামন প্রেতাত্মা এই বটগাছে আছে তাই গাছটাও বামন হয়েছে । তাই গ্রামের মানুষ একে অভিশপ্ত বামন গাছ বলে ।

গাছটা নিয়ে ভয়ংকর ঘটনাও শোনা যায় মানুষের মুখে ।
অনেক বছর আগের কথা ।

কেউ একজন মাঠে গরু চরাতে এসে বিশাল এক সাপ দেখে বট গাছে । সাপটা গ্রামের মানুষের ক্ষতি করে পারে ভেবে লোকটা সাপুরিয়াদের খবর দেয় । পরদিন সাপুরিয়ারা যখন আসে গ্রামের সব মানুষ মাঠে জমায়েত হয় । ওরা যখন বীণ বাজানো শুরু করলো তখন হঠাৎ বটগাছে জোরালো বাতাস বইতে লাগলো । প্রচন্ড ঝড় শুরু হল মাঠে । যদিও আকাশ একদম পরিষ্কার । ভয়ে মানুষজন পালাতে শুরু করলো । কিছুক্ষণপর বটগাছের নিচের মাটি ফেটে ভয়ংকর এক সাপের মুখ বের হল । সাপটার ফোঁসফোঁসেই ঝড় শুরু হয়েছে মাঠে । সাপুরিয়ারা সব ভয়ে পালিয়ে গেল । যাওয়ার সময় ওরা গ্রামের লোকজনকে বলে গেল,”আপনারা কোনদিনও এই সাপকে ধরার চেষ্টা করবেন না । তাহলে কেউ-ই বাচঁতে পারবেন না । এটা কোন সাপ নয় । ভয়ংকর এক প্রেতাত্মা ।”
তারপর থেকে মানুষজন ভয়ে বটগাছের কাছে খুব একটা যেত না ।

ঘটনাটা অনেক বছর আগের ।
আস্তে আস্তে মানুষ ভূলে গেল ভয়ংকর সেই ঘটনা । তার কিছুদিন পর ঘটলো আর এক অদ্ভুত ঘটনা ।

গ্রামের দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা জহির প্রতিদিন ওর গরুগুলোকে ঐ মাঠে চড়াতে নিয়ে যেত । একদিন ওর একটা বাছুর হারিয়ে গেল । অনেক খুজেঁও বাছুরটা পেল না ও । রাত হয়ে গেছে তখন ।
জহিরের বউ বলল,”চল, মাঠে খুজেঁ আসি ।”
কথামত জহির আর ওর বউ হারিকেন হাতে মাঠে গেল ।
পূর্ণিমা রাত ।
চাদেঁর আলোয় মাঠে ওরা বাছুর খুজঁতে লাগলো । একটুপর জহিরের বউ হয়রান হয়ে বটগছর তলায় বসলো । জহির একাই মাঠে বাছুরটা খুজঁতে লাগলো । হঠাৎ জহিরের বউয়ের মনে হল কে যেন ওর কাধেঁ হাত দিল । পিছনে তাকিঁয়ে ও কিছুই দেখতে পেল না । মনের ভুল ভেবে ও তেমন কিছু ভাবলো না বিষয়টা নিয়ে । মাঠেই বাছুরটাকে খুজেঁ পেল জহির । ওরা বাড়ি ফিরে আসলো । কিন্তু পরদিনই সকালে বাছুরটা মারা যায় । এই ঘটনাটা অতটা অস্বাভাবিক নয় ; কাকতালীয় ভাবা যায় । কিন্তু অদ্ভুত ঘটনাটা ঘটে কয়েক মাস পর । সেদিন জহিরের বউয়ের কোলজুড়ে একটা ছেলে আসলো । জন্মের পর জহিরের বউ দেখলো ওর ছেলের কাধেঁ হাতের আঙ্গুলের ছাপ । আৎকে উঠলো ও। জহিরও ওর ছেলের পিঠে এই ছাপ দেখে ভয় পেল খুব । মনে একটাই চিন্তা ছেলেটার কোন ক্ষতি হবে না তো !! কিছুদিনপর ওরা ওদের ছেলেকে নিয়ে একজন হুজুরের কাছ যায় । সবকিছু শুনে হুজুর একদিন পর ওদের আসতে বললেন ।
পরদিন হুজুর বললেন,”তোমাদের ছেলে কোনদিনও লম্বা হবে না । সারাজীবন বামন হয়ে থাকবে ।”
সত্যিই সেই ছেলেটি যতদিন বেচেঁ ছিল ততদিন বামন ই ছিল !!

সেই ঘটনার পর ঐ গাছটা গ্রামবাসীর কাছে আরও ভয়ংকর আর অভিশপ্ত হিসেবে পরিচিত হয় ।

সময় গড়িয়ে বাড়তে থাকে ।
ভয়ংকর ঘটনাগুলোর দাগ গ্রামবাসীর মন থেকে আস্তে আস্তে মুছে গেল । গ্রাম আস্তে আস্তে উন্নত হল । তবে বটগাছ আর সেই মাঠ আগের মতোই থেকে যায় ।

ঝুমু ওর দাদুর কাছে শুনেছে বটগাছের ভয়ংকর কাহিনী । ভয় পেলেও মনে মনে বিশ্বাস করে নি ও ঘটনাগুলো । সেদিন সন্ধ্যাবেলা ও এলোমেলো চুলে বটগাছের পাশ দিয়ে হাটঁছিল । খোলা মাঠে ওর হাটঁতে খুব ভালো লাগে । হালকা অন্ধকার নেমেছে চারদিকে । হঠাৎ ও দেখলো মাঠের এক কোণে কেউ একজন কাদঁছে । ঝুমু হেটেঁ লোকটার কাছাকাছি যেতেই লোকটা অদৃশ্য হয়ে গেল । খুব অবাক হল ঝুমু । এইমাত্র দেখা লোকটা কোথায় হাওয়া হয়ে গেল !! চারদিকে তাকাতেই ও দেখলো সেই লোকটা বট গাছের নিচে বসে কাদঁছে । ঝুমু হেটে বটগাছের নিচে গেল । আবারও লোকটা হাওয়া !! এবার ভয় পেয়ে গেল ও। দাদুর কাছে শোনা ঘটনাগুলো মনে পড়তে লাগলো ওর। হঠাৎ ওর পিছনে খুট করে শব্দ হল । ঝুমু ভয়ে ভয়ে পিছনে তাকিঁয়ে দেখলো সাদা কাপড় পড়া একটা বামন বটগাছের ডালে বসে কাদঁছে । ঝুমু ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করলো, কে ? কে…… ?
বামনটা মুখ তুলে তাকালো । মুখটা দেখে ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলো ঝুমু । বামনটার মুখে শুধু দুটো গর্ত । জিভটা সাপের মতো চিকন , কালো । ভয়ংকর ফোঁস ফোঁস শব্দ বের হচ্ছে মুখ থেকে ।

পরদিন সকালে ঝুমুর লাশ বটগাছে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গেল । আশ্চর্য হলেও সত্য ঝুমুর দেহটা তখন বামনাকৃতি হয়ে গিয়েছিল ।

আবারও ভয়ে থমথমে হয়ে গেল পুরো গ্রাম ।

আজ পূর্ণিমা রাত ।
রহস্যময় চাঁদ আলো ছড়াচ্ছে মাঠজুড়ে ।
অভিশপ্ত গাছটাতেও আলো ছুঁয়েছে । হঠাৎ নড়ে উঠলো গাছের একটা ডাল । হয়তো ভয়ংকর সেই বামন প্রেতাত্মা তার উপস্থিতি জানান দিচ্ছে।
রাত বাড়ছে ।
আর নির্জন মাঠে ঠাঁয় দাড়িঁয়ে আছে অনেক ভয়ংকর ঘটনার সাক্ষী অভিশপ্ত বামন বট গাছ ।

……………………………………………সমাপ্ত…………………………………..

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত