অনামিকা ২

অনামিকা ২

অনামিকার কথা ভেবে আজও জারিনের শরীলে কাঁটা দিয়ে উঠে।
আবার যদি সে ফিরে আসে।
আবার যদি তাদের জীবন টাকে আবার এলোমেলো করে দেয়।কিন্তু প্রত্যয়ের ভালোবাসা জারিনের মন থেকে সব ভয় দূর করে দেয়।
প্রত্যয়ের বুকে মাথা রেখে সারাটা জীবন এভাবেই কাটাতে চায় জারিন।

ঠিক ৪ বছর পর…..

কিছুদিন হলো প্রত্যয় লেখাপড়া শেষ করে একটা ব্যবসা শুরু করেছে।বেশ ভালোই চলছি।
কিন্তু একদিন সকালে জারিনের হঠাৎ শরীল খারাপ হয়ে যায়।
কিন্তু সে কাউকে বলে না।
সেদিন বিকেলে জারিন লোকিয়ে ডাক্তারের কাছে চলে যায়।
সেখানে কিছু টেষ্ট করিয়ে যা ধরা পরে তাতে জারিনের চোখের কোণ থেকে এক ফোঁটা জ্বল গড়িয়ে পড়ে।
সে যা শুনলো তা কি সত্যি?এখনও ডাক্তারের কথা তার বিশ্বাস হচ্ছে না।
সে চিন্তা করতে থাকে কিভাবে এই কথাটা প্রত্যয়কে জানাবে।
সন্ধ্যায় প্রত্যয় বাড়ি ফেরে।অদ্ভুত একটা ব্যেপার লক্ষ করে সে।প্রতিদিন বাড়িতে আসতেই জারিন তার কাছে ছুটে চলে আসে কিন্তু আজ আসে নি কেন।চারপাশ খুজতে খুজতে হঠাৎ তার নজর বিছানার দিকে পড়লো।দুটো বাচ্চা পুতুল রাখা সেখানে,একটা মেয়ে অন্যটা ছেলে।সাথে একটা কাগজ।কাগজ টা হাতে নেয় প্রত্যয়।সেখানে লিখা ছিল””তোমার ইচ্ছে মতো যেকোন একটা পুতুল তুলে নাও।”
প্রত্যয় ভালোভাবে পুতুল গুলো দেখতে থাকে এর পর মেয়ে বাচ্চা পুতুলটাকে হাতে তুলে নেয়।ঠিক তখনই পেছন থেকে জারিন প্রত্যয়কে জরিয়ে ধরে।আর বলে উঠে””
:-আমার মিষ্টি মেয়ের বাবা টা আজ আসতে দেরি করলো কেন?(অভিমান করার অভিনয় করে)
:-জারিন!(চমকে)
জারিন লজ্জা পেয়ে চলে যেতে চায়।কিন্তু প্রত্যয় আটকে ফেলে।
:-কি হলো বলো ।
:-কিরে দেখতে পারছিস(পেট এর দিকে তাকিয়ে)তোর বাবা একটা লেইট লতিফ।প্রতিদিন এভাব লেইট করে।দেখ দেখ তুর মা কে একটুও ভালোবাসে না।
প্রত্যয়ের মুখ দিয়ে কথা বেরোচ্ছে না।শুধু একটা কথাই জিগ্যেস করলো “সত্যি জারিন?”জারিন প্রত্যয়ের বুকে মুখ লুকিয়ে ফেলল।দুজনে খুশিতে পাগল হয়ে যাচ্ছে।তাদের মুখ থেকে কোন কথা বেরোচ্ছে না।সেই মুহূর্ত টাকে তারা উপভোগ করছে।
পরদিন সকালে প্রত্যয় একগাদা মিষ্টি নিয়ে বড়ি আসে।সকলে জিগ্গেস করতে থাকে কিসের মিষ্টি।প্রত্যয় সবাইকে খুশির খবরটা দেয়।সবাই খুব খুশি।প্রত্যয়ের মা জারিন কে কালো টিকা লাগিয়ে দেয় যেন এই খুশিতে কারো নজর না লাগে।

কিন্তু কেও জানে না এই খুশিতে কারো অনেক আগেই নজর লেগে গেছিল।বেশি দিন নয় মাত্র কয়েকটা মাস।তার পর সব শেষ…………

এক এক করে দিনগুলো পার হয়ে যাচ্ছে।আলাদা করে প্রত্যয় ও তার পরিবার জারিনের খেয়াল রাখছে।খাওয়া থেকে ঘুম সবকিছুতে নজর রাখছে।একটু সরিল খারাপ হতেই সবাই অস্থির হয়ে যায়।
প্রত্যয় জারিনের পেটের কাছে গিয়ে কান পেতে থাকে।
একটু আওয়াজ হলেই আনন্দের সীমা থাকে না তার।
জারিন নিজের ভেতর আস্তে আস্তে একজনের অস্তিত্ব বুঝতে পারে।বুঝতে পারে কেও বড় হচ্ছে।
জারিন চায় সবার আগে সে প্রথম তার সন্তানকে কোলে নেবে।এদিকে প্রত্যয়ও তাই চায়।
এই নিয়ে জারিন আর প্রত্যয়ের মধ্য মিষ্টি ঝগড়া হয় সব সময়।
যে আসছে তাকে নিয়ে জারিন আর প্রত্যয়ের অনেক স্বপ্ন।
কিন্তু কিসের যেন একটা ভয় সবসময় কাজ করে জারিনের ভেতর।
কয়েক মাস পর নতুন অতিথি আসার সময় হয়ে যায়…..

একদিন হঠাৎ জারিন ব্যথায় ককিয়ে উঠে।চিৎকার করতে থাকে।
জারিন কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রত্যয় জারিনের হাতটা শক্তকরে ধরে রাখে।কিন্তু অপারেশন করার জন্য জারিন কে নিয়ে যাওয়া হয়।
যখন জারিন কে নিয়ে যাচ্ছিল প্রত্যয়ের কেন যানি মনে হচ্ছিল তার ভেতর থেকে প্রাণ টা কেও কেড়ে নিচ্ছে।
কিছুক্ষন পর ডাক্তার বেরিয়ে আসে।
প্রত্যয় তাকে জিগ্যেস করতে থাকে জারিন কেমন আছে।আর তার বাচ্চা কোথায়।
ডাক্তার প্রত্যয়ের কাঁধে হাত রেখে বলে।
সরি আমরা অনেক চেষ্টা করেও মা বা মেয়ে কাওকেই বাঁচাতে পারলাম না।
প্রত্যয় নিরব হয়ে যায়।যেন পাথর হয়ে গেছে সে।
সবাই প্রত্যয়কে ধরে কাঁদতে থাকে।
একটু পর একটা নার্স দৌড়াতে দৌড়াতে আসে।
:-ডক্টর ডক্টর অলৌকিক কিছু ঘটে গেছে।যে বাচ্চাটা একটু আগে মৃত ছিল সে হঠাৎ বেঁচে উঠেছে।

কথাটা শুনে ডক্টর সেখানে যেতে লাগলো।প্রত্যয় যেন আশার আলো দেখলো।সাথে প্রত্যয়ও দৌড়ে সেখানে গেল।
গিয়ে দেখে এক পাশে জারিনের দেহটা বেডের উপর পড়ে আছে,অন্যদিকে সেই ছোট্ট শিশুটি কাঁদছে।
প্রত্যয় আস্তে আস্তে বাচ্চার কাছে গেল।
ডাক্তার বাচ্চাটা কে প্রত্যয়ের হাতে তুলে দিয়ে বলল

:-আজ এক অলৌকিক কিছু আপনার বাচ্চাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।
ও এখন সম্পূর্ণ সুস্থ।
কিন্তু একটু আগেও ওর নার্ভ চলছিল না আরও অনেক সমস্যা ছিল।
কিন্তু কি করে আবার সে বেঁচে উঠলো মেডিকেল সাইন্সে এর কোন উত্তর নেই।

প্রত্যয় তার মেয়েকে নিয়ে জারিনের মৃত দেহের সামনে গেল।
:-চিৎকার করে কাঁদতে থাকে প্রত্যয়….ফিরে এসো জারিন এই দেখ আমাদের মেয়ে।
তুমি না ওকে প্রথম কেলে নিবে বলেছিলে,ওঠো জারিন।
দেখ আমি তোমার আগে ওকে কোলে নিয়েছি।তুমি অভিমান করেছো সেইজন্য?
এইযে কান ধরলাম আর এমন হবে না।এভাবে অভিমান করে থেকো না।তুমি জানো না আমি তোমায় ছাড়া থাকতে পারি না।উঠো জারিন…কথা বল.. উঠো….বলে কাঁদতে লাগলো।

ঠিক তখনই কোলে থাকা বাচ্চাটা প্রত্যয়ের চোখের কাছে হাতটা বাড়িয়ে দিল।যেন চোখ মুছে বলতে চাইছে…তোমি কেঁদো না আমি আবার ফিরে এসেছি।এইতো আমি।

পরদিন বিকেলে জারিনকে কবর দেয়া হয়।প্রত্যয় জারিনের সেই তাবিজ টা নিয়ে বসে থাকে।আর শুধু দরজার দিকে চেয়ে থাকে।
এই বুঝি জারিন এলো।
ঠিক তখনই পেছন থেকে কেও ঢেকে উঠে।প্রত্যয়….প্রত্যয় পেছনে তাকায়।
জারিন…
প্রত্যয় আমি আছি সবসময় তোমার কাছে তোমার পাশে…….. সব সময়।
তুমি আমাদের সন্তানের খেয়াল রাখ।সে ভালো থাকলে আমি ভালো থাকব।সে তো আমারই অংশ।
প্রত্যয়ের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে।
জারিন চলে যায় সেই না ফেরার দেশে।
এদিকে প্রত্যয় মনে মনে বলতে থাকে হে জারিন আমি আমাদের সন্তান কে খুব ভালো রাখবো।

প্রত্যয় বিশ্বাস করে তার মেয়ের মধ্যে জারিন আবার ফিরে এসেছে।

“””তাই সে বাচ্চারও নাম রাখে জারিন।”””

সে জারিনের খুব খেয়াল রাখে।শত কাজের মাঝেও জারিন কে সে সময় দেয়।খুব ভালোবাসে জারিন কে।এভাবে দিন যেতে লাগলো।

প্রায় ১৮ বছর পর….

আর দুই দিন পর জারিনের জন্মদিন।
সবাই খুব খুশি।সেদিন খুব বড় করে অনুষ্ঠান হবে।চার দিকে সবাই কাজে ব্যস্ত।
সময়ের পরিবর্তনে সবাই ভুলে যায় আর মাত্র দুইদিন পরই সেই দিন।
দুইদিন পর যে ২২ বছর পূর্ণ হতে চলেছে।জেগে উঠবে অনামিকা।
আর বদলে যাবে এই সুখের দিনগুলো।…………

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত