মায়াজাল পর্ব -১

মায়াজাল পর্ব -১

রিয়ার ঘুমটা হঠাত্ ভেঙে যায় ৷রিয়া প্রায় প্রতেক রাএেই এই স্বপ্নটা দেখে ঘুমের মধ্যেই হাটতে হাটতে থাকত৷ একবারতো সিড়ি দিয়ে পড়ে ওর মরণ বাচন নিয়ে টানাটানি পড়ে গেছিল৷ রিয়ার বাবা রিয়ার এই সমস্যার জন্য বহু নামি সাইকিয়াষ্ট দেখেয়েছেন কিন্তু ফল কিছুই হয়নি. সবাই শুধু কিছু ডিপ্রেশান পিলস দিয়ে বলেছে যেএটা শুধুমাএ একটা নাইট মেয়ার টেনশন এবং ডিপ্রেশন থেকে হয়. কিন্তু কোনো পিলসেই কিছু হয়নি. রিয়ার মনে হয় এই একটাই স্বপ্ন দেখবে . নাইট মেয়ার রোগেতো একটাই স্বপ্ন বার ঘুরে আসেনা৷ কিন্তু রিয়া অনেক ভেবেও কিছু বুঝতে পারেনি. অতপর রিয়ার বাবা ও মার শত অনিচ্ছা সত্বেও ওর ইচ্ছানুযায়ী ওকে ওড়িশার একটা মেডিকেল কলেজে পড়তে পাঠায়. রিয়ার বাবা মা প্রথম দিন মেয়েকে তার হস্টেলর রুমে পৌছে দিতে যায়. আর আসার আগে ওর রুমমেট জিয়াকে রিয়া রাতে ঘুমে হাটার সমস্যার কথা বলে ওকে একটু খেয়াল রাখতে বলে. জিয়া বলেছিল৷

– আপনারা চিনতা করবেন না আংকেল আনটি .আমি রাতে শোয়ার আগে দরজা চাবি দিয়ে লক করে শোবো. আর রিয়ার খেয়াল ও রাখবো
রিয়ার বাবা মার জিয়াকে বেশ মিশুকে ও ভালো মনে হয়েছিল. তাই ওর ভরসায় নিজেদের কলজের টুকরো রিয়াকে হস্টেলে রেখে এসেছিল. আর সত্যিই জিয়া খুবই ভালো ছিল. কিছুদিনের মধ্যেই রিয়ার সাথে একবারে বোনের মতো হয়ে গেছিল. দুজনে দুজনের বই খাতা জামাকাপড় থেকে শুরু করে প্রতেকটা জিনিস শেয়ার করত. এইভাবে রিয়ার বেশ ভালই কাটছিল কলেজে ২ মাস. স্বপটাও আর আসত না দেখে রিয়া ওর মা বাবাকেও বলেছিল. ওর মা বাবা খুবব খুশি হয়েছিল এটা ভেবে এইবার ওদের মেয়ে ঠিক হয়ে গেছে.একদিন ক্লাস অফ থাকায় রিয়া জিয়াকে বলে যে
রিয়া- চল আজ পুরো কলেজটা ঘুরে দেখি. এসে থেকে ২মাস হয়ে গেল কলেজটাই দেখা হল না৷
জিয়া- ঠিক বলেছিস..চল ঘুরে দেখি৷
ওরা ঘুরতে ঘুরতে কলেজ কাম্পাস থেকে প্রায় অনেকটার দুরে বিছিন্ন একটা আধপোড়া বিলডিং দেখতে পায়৷ ওরা বিলডিংটার কাছে এগিয়ে যায়৷ বিলডিং এর গেটে তালা মারা ছিল আর গেটের বাইরে একটা বোর্ডে লেখা ছিল “প্রবেশ নিষেধ “৷ রিয়া জিয়াকে বলে
রিয়া- এই বিলডিংটা এরকম আধপোড়া কেন?…কলেজ কতৃপক্ষ এটাকে বন্ধ রেখেছে কেন…
জিয়া- কি জানি ..চল দারোয়ান কাকা কে জিজ্ঞাসা করি..উনিতো আজ ৩০ বছর এই কলেজে কাজ করেন..উনি জানবেন ..
রিয়া- ঠিক বলেছিস ..চল যাই..
রিয়া আর জিয়া দারোয়ান কাকুর কাছে এসে আধপোড়া বিলডিংটার কথা জিজ্ঞাসা করলে ওনার মুখটা ভয়ে ফেকাসে হয়ে যায়..উনি বলুন
– তোমরা ওদিকে কি করতে গেছিলে?
রিয়া- আমারাতো জাসট কলেজটা ঘুরে দেখছিলাম..তখনই ওটা দেখলাম ..
দারোয়ান – আর ওদিকে যাবেনা..ওটা একটা অভিশপ্ত বিলডিং..
রিয়া- (অবাক হয়ে) অভিশপ্ত বিলডিং????
দারোয়ান – হুম..আজ থেকে ২৪ বছর আগে ওটা পুড়ে গেছিল..তারপর থেকে ওটা বন্ধ আছে..
জিয়া- কিন্তু পুড়লো কি করে??..আর কেউ কি মারা গেছিল..??
দারোয়ান – হুম ..আমাদের কলেজের এক ব্রেন সার্জন্ট ড: অতনু চৌধুরী আর তার মেয়ে ড: রাই চৌধুরী ..রাই এই কলেজেই এম.এস পড়ছিল..আর ওর বাবা একজন ভালো ডাক্তার হলেও উনি একধরনের পাগলামো রির্সাচ করতেন৷
জিয়া ও রিয়া দুজনেই অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা কাল
– পাগলামো রির্সাচ???৷৷ সেটা আবার কি??
দারোয়ান – উনি মৃত পথযাএী মানুষকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তাদেরকে পুনর্জীবন দিতে চাইতেন..এই কারণে উনি কেনসার বা একদম শেষ পর্যায়ের রুগিদের ওই বিলডিং এ নিয়ে গিয়ে অপরেশন করতেন..প্রথমে হাসপাতাল ওনার সাথ দিলেও..পরপর পাচটা অপারেশনের পর প্রতেকের মৃত্যু হলে হাসপাতাল ওনাকে এই রির্সাচ করতে বারণ করেন..কিন্তু উনি এতটাই মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন যে রাতে রুগি চুরি করে বিলডিং এ নিয়ে অপরেশন করতেন..এইরকম ২ বার করার পর হাসপাতাল ওনার ডাক্তারির লাইসেন্স বাতিল করে ওনাকে এই কলেজের পাগলাগারদে চিকিত্সার জন্যে রাখা হয়..ওনার মেয়ে রাই ও বাবার এই রির্সাচে মত দিত না..রাই ওর বাবাকে অনেক বুঝিয়েছিল যে মানুষটা আর কিছুদিন বাদে মরে যাবে..তাকে তার সময়ের আগে মেরে কি লাভ..তাকে কিছুদিন বাচতে দাও..কিন্তু ওনি কিছুই শোনেন নি..একদিন রাতে হঠাত্ তিনি পাগলা গারদ থেকে বেরিয়ে একটা রুগি চুরি করে বিলডিং এ নিয়ে যায়..আর ঠিক তখনই ওনার মেয়ে রাই সেটা দেখে ওই বিলডিং এ যায়..আর তার কিছুক্ষণ পরই বিলডিং এ আগুন লেগে যায়..তাতে ডাক্তার আর তার মেয়ে দুজনেইর মৃত্যু হয়৷
জিয়া- কিন্তু আগুন লাগল কি করে??
দারোয়ান – সেটা আজ পর্যন্ত অজানা..কেউই জানে না৷
জিয়া- তারপর ওই বিলডিং এ আর মেরামত হয়নি কেন?
দারোয়ান – মেরামত করার চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু যতবারই মেরামত করতে যেত তখনই বিভিন্ন ভৌতিক ঘটনা বা কারুর মৃত্যু হত..তাই ওই বিলডিং আজ ২৪ বছর ধরে বন্ধ আছে..ওখানে যাওয়া বারণ..সবাই বলে ওখানে আজও ডাক্তার আর ওর মেয়ের আত্মা ঘুরে বেড়ায়.
.রিয়া আর জিয়া দুজনেই অবাক হয়ে বলে
“কি??”
দারোয়ান – আমার কাজ আছে ..আমি যাচছি ..তবে তোমরা ওদিকে আর যাবেনা..
এইবলে দারোয়ান চলে যায়..রিয়া আর জিয়া বিলডিংটার বিষয়ে কথা বলতে বলতে হস্টেলে তাদের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিজেদের মধ্যে বিলডিংটার রহস্য নিয়ে আলোচনা করতে থাকে..রিয়া রিয়াকে বলে
“চল না আজ রাতে গিয়ে দেখি কি আছে ওখানে??”
জিয়া- তুই পাগল হয়েছিস ??..তুই শুনলি না দারোয়ান কি বলল..ওখানে ভৌতিক ঘটনা ঘটে..ওই ডাক্তারের আত্মা ঘুরে বেড়ায়..
রিয়া- তুই না..এই ২০১৭ তেও ভুত মানিস??..আর তুই না বিজ্ঞানের ছাএী..তুই মূর্খদের মতো কথা কেন বলছিস??..
জিয়া- আমি যাবোনা..আর তোকেও যেতে দেবোনা..
রিয়া- তুই একটা ভিতুর ডিম..তোকে যেতে হবে না..
এইবলে রিয়া ওর বেডে গিয়ে শুয়ে পরে..জিয়া ও ঘুমিয়ে পরে কিন্তু লাইট অফ করেনা ভয়ে…অনেক রাএে রিয়ার চিতকারে রিয়ার হঠাত্ ঘুম ভেঙে যায়..ও উঠে দেখে রিয়া ওর বেডে বসে ভয়ে কাপছে আর ওর সারা শরীর ঘামে ভিজে চুপেচুপে হয়ে গেছে..জিয়া রিয়ার বেডে গিয়ে ওর পাশে বসে ওর কাধে হাত দিয়ে বলে
“আবার ওই স্বপ্নটা দেখেছিস??”
রিয়া কাপা গলায় বলে
“হুম..তবে এইবার আমি যা দেখেছি আমার শরীরের প্রতেকটা যন্ত্র ভয়ে কেপে উঠেছে..”

আরো গল্প পড়তে লিংক এ ক্লিক করুন……

মায়াজাল পর্ব -২

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত