মায়াজাল

মায়াজাল

অনেক্ষণ ধরে রুমে একা একা বসে আছি। মনটা খুব খারাপ। আজ সানির সাথে ঝগড়া হয়েছে। কিরে মায়া এভাবে মন খারাপ করে বসে আছিস কেন? কিছু হয়েছে? না মা,কিছু হয়নি। আমায় একটু একা থাকতে দাও।

আমি আর মা বাড়িতে থাকি। আমার বাবা আমার জন্মের আগেই মারা যান। সংসার চলে আমার ভাইয়ের টাকায়। চাকরির কারনে আমার ভাই ঢাকা থাকে। আমি আর মা ময়মনসিংহে। সানি আমার ছোটবেলার বন্ধু। কখনও ওর সাথে ঝগড়া হয়না। কিন্তু আজ হলো। অবশ্য কারনটা আমারই। কিছু দিন ধরে কি সব উদ্ভট জিনিস ঘটছে আমার সাথে। এইতো ৩ দিন আগে আমি দুপুরে ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ কেউ এসে পেছন থেকে আমায় ধাক্কা দিচ্ছে। আমি ভাবলাম মা। বিরক্ত হয়ে বললাম, কি শুরু করেছো মা। এই ভাবে কেউ ডাকে?..কথাটা বলে যেই ঘুরলাম দেখি কেউ নেই। বিরক্তি টা আরো বেড়ে গেলো। ওঠে মায়ের রুমে গিয়েদেখি মা ঘুমোচ্ছে। ২/৩ বার ডাক দিয়েও মাকে জাগাতেপারলাম না।বুঝতে পারলাম না কিছু।

বিষয় টা নিয়ে আর মাথা না ঘামিয়ে শুতে গেলাম।সন্ধ্যায় মাকে জিজ্ঞেস করলে মা বলে”আমিতো ঘুমাচ্ছিলাম। তোকে ডাকবো কিভাবে?” পরের দিন আমি কলেজ থেকে বাড়ি এসে দেখি বাড়িতে তালাদেয়া। মাকে ফোন দিতেই মা বলল পাড়ার এক আন্টির বাসায় গেছেন। আসতে দেরি হবে। আমার কাছে এক্সট্রা চাবি থাকায় দরজা খুলতে অসুবিধে হলো না। ঘরে এসে ব্যাগ রেখে গোসল করতে গেলাম।

হঠাৎ মনেহলো কিসের একটা আওয়াজ হলো। এর পর কারো হাঁটার আওয়াজ। একটু পর ফিস ফিস কথাবলার আওয়াজ। আমি মনে মনে ভাবছি মা তো বাড়িতে নেই তাহলে ঘরে কে? তাড়াতাড়ি গোসল সেরে আমি বেরিয়ে এলাম। খুঁজতে লাগলাম কোথা থেকে আওয়াজ গুলো আসছিল। সারা ঘর খুঁজেও কাউকে পেলাম না। একটু খঁটকা লাগলেও অত শত না ভেবে খাবার রুমে গেলাম। দেখলাম মা খাবার রান্না করে গেছেন। খেয়ে আমি আমার রুমে চলে গেলাম। একলা ভালো লাগছে না। তাই ভাবলাম গল্প পড়ি। তাই গল্পের বই খুঁজছিলাম। কিন্তু সব বই আমার পড়া হয়ে গেছে। তাই খুঁজা বন্ধ করে যেই ভাবলাম ঘুমাবো তখনি কিছু একটা পড়ে যাওয়ার আওয়াজ হলো। একটা বই। কিন্তু এই বই টা তো আগে কখনও দেখি নি। কাছে গিয়ে বইটা হাতে নিলাম।

নাম: A Life Of Darkness নিচে লিখা একটি সাল 1020। নামটি খুব আশ্চর্যরকম। বইটিতে যেন কিছু একটা আছে যা আমায় টানছে। খাঁটে গিয়ে বইটি আবারো ভালেভাবে দেখতে লাগলাম। এর পর পড়া শুরু করলাম। প্রথম পৃষ্ঠাতে আমার নাম লিখা। কি আশ্চর্য আমার নাম কি করে আসলো।

লিখা “মায়া” পৃষ্ঠা উল্টালাম, একটি ছবি আঁকা। একি এটাও তো আমার ছবি। কিন্তু এ কিভাবে সম্ভব। প্রায় ১০০০ বছর আগের বইয়েব আমার ছবি আর নাম কিভাবে এলো। এসব কি হচ্ছে। নিজেকে কোন মতে সামলে নিলাম।পরের পৃষ্ঠা উল্টালাম। কিছু লিখা দেখতে পেলাম। লিখা না এ যে একটা গল্প।”একটি মেয়ের গল্প।”স্পাকি নামে একজন রাজা ছিল। তিনি ছিলেন খুবই কঠোর পাষন্ড এবং অত্যাচারী। সে বন্দি দের খুব কষ্ট দিত আর তাদের মৃত্যু ও ছিল ভয়ানক। জীবিত থাকতে তাদের শরীর থেকে চামড়া ছাড়িয়ে নেওয়া হতো আর সেই চামড়া দিয়ে রাজা তার ঘরের আসবাপত্র বিছানার চাদর,জোতা সহ বিভিন্ন ব্যাবহার্য জিনিস তৈরি করতো।

এছারা অনেক বন্দির শরিরে কাঁটার বেড়ি (শিকল)পড়াতো। রাজ্জের সকলে তাকে খুব ভয় পেত। যে তার কথার অবাধ্য হত তাদের সে চরম শাস্তি দিত। এই অত্যাচারে অতিষ্ট মানুষের প্রার্থনা করা ছাড়া কোনো পথ ছিল না। এই সময় কোথা থেকে ওয়ারকিও নামে এক লোক আসলো এবং ভবিষ্যৎ বাণী করলো এই রাজার মেয়েই হবে সকলের আলোর দীশা। এই অন্ধকার থেকে তার হাত ধরেই মুক্তি মিলবে। এই ভবিষ্যৎ বাণী কোন ভাবে স্পপার্কির(রাজার)কানে গেলল। সে অই লোকটিকে বন্দি করে এবং তাকে কেঁটে টুকরো টুকরো করে সেই মাংস নেকরে কে খাওয়ায়। আর বলে দেখি তোর কলিজা কত বড় বলে হাতে সেই লোকের কলিজা টা নিয়ে খেয়ে নেয়। এই কাজ দেখে সকল প্রজাদের মনে যে আসা জন্ম নিয়েছিল তা মূহুর্তে মুছে যায়।

এদিকে স্পার্কির রাজ্য সামলাতে বেশ একঘেঁয়ে লাগে তাই সে চিন্তা করে জাদুবিদ্যা অর্জনের মাধ্যমে সে আরও শক্তিশালী হতে পারে। এই ভেবে সে সবচেয়ে বড় জাদুকরের কাছে কালো জাদু শিখা শুরু করে। প্রায় ১২ বছর পর তার শিক্ষা শেষ হয়। এমন সময় সে খবর পায়, লাবিহা নামক এক রাজ্যে জেনিভা নামে এক রাজকন্যার বিয়ের সয়ম্ভর সভা করা হচ্ছে। সেই রাজকন্যা নাকি খুবই ভাগ্যবতী। যে তাকে বিয়ে করবে সেও তার দ্বারা অনেক সমৃদ্ধির অধিকারী হবে।

এই কথা শুনে স্পার্কি লোভে পরে যায়। সে আরও সমৃদ্ধির অধিকারী হতে চায় আরও মানুষকে তার বস করতে চায়। তাই সে রাজকন্যাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু সে কালো জাদু করায় এবং অত্যাচারী হওয়ায় তার কাছে জেনিভার বাবা ডিওবার্গ বিয়ে দিতে রাজি হয় না। তাই স্পার্কি রাগে তার তন্ত্র ও জাদু বিদ্যার দ্বারা জেনিভার বাবা কে পরাস্ত করে এবং হত্যা করে। এদিকে জেনিভা কে সে বন্দি করে তার রাজ্যে নিয়ে আসে। জোর করে জেনিভাকে সে বিয়ে করে। দিনের পর দিন জেনিভার ওপর সে অত্যাচার করতো। জেনিভা অনেকবার স্পার্কির কবল থেকে মুক্ত হতে চেয়েছে। অনেক বার স্পার্কি কে খুন করতে চেয়েছে। কিন্তু পারেনি। স্পার্কির জাদু এতই শক্তিশালী যে তাকে মারা তো দূরের কথা সেই জাদু থেকে বেরনো অসম্ভব।

কিছুদিন পর হঠাৎ জেনিভা অসুস্থ হয়ে পড়ে। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে জেনিভার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবর। স্পার্কিও খুব খুশি। সেদিন সারা রাজ্য জুড়ে খুশির বন্যা বয়ে যায়।সকলের মনে একটাই আশা।তাদের আলোর দিশা হয়ে আসছে স্পার্কির সন্তান। যদি কেউ খুশি না হয়ে থাকে তবে সে হলো জেনিভা। কারন সে কখনও চায়না তার সন্তান ও তার স্বামি স্পার্কির মতো অত্যাচারী হোক। স্পার্কির মতো পশু যেন তার সন্তানের চরিত্রে জন্ম না নেয়। তাই সে সৃষ্টিকর্তার কাছে দিনরাত প্রার্থনা করে যাতে তার সন্তান একজন শুভ শক্তির অধিকারী হয়। এবং সেই যেন স্পার্কির ধ্বংশের কারন হয়। রাজ্জ্যের সকলের এবং জেনিভার প্রার্থনা বৃথা যায়নি। সকলের আশার আলো হয়ে কিছুসময় পরই জন্ম হয় সেই অসাধারণ কন্যার। সে ভুমিষ্ঠ হওয়ার মূহুর্তে যেন কিছু সময়ের জন্য এক স্নিগ্ধ বাতাস সারা রাজ্যময় বয়ে যায়। সারা রাজ্যের সকলে চোখে খুশির অস্রু বয়ে যায়। অবশেষে তারা মুক্তি পাবে।

জেনিভা তার কন্যার দিকে তাকায়। মুখটা দেখে খুব মায়া হয় তার। তাই সেই বিশেষ কন্যার নাম রাখেন মায়া। সত্যিই কি এক অসাধারন মায়া যেন মেয়েটির মুখে। যেন এক আলোর অাভা ছড়াচ্ছে শরীর থেকে।এদিকে স্পার্কির জানতে পারে সে কন্যা সন্তানের বাবা হয়েছে। খুশিতে সে আত্বহারা হয়ে ওঠে। আস্তে আস্তে মায়া বড় হতে থাকে। মায়া খুব ছোট হলে ও সে তার বাবার অত্যাচার আর নির্যাতন দেখে সহ্য করতে পারতো না। সে যত বড় হয়ে ওঠছে ততো তার মনে বাবার প্রতি এক ধরনের ঘৃনা জন্ম নিতে লাগলো। সে মনে মনে ভাবতো এসব জঘন্য কাজ কেন করা হচ্ছে।এসব বন্ধ করা হোক।

মায়া মাত্র ৭ বছরের। স্পার্কি তাকে তন্ত্র শিক্ষা দিতে চায়। কিন্তু জেনিভা তা চায় নি। তাই সে ভাবলো যেভাবেই হোক মায়াকে এই। রাজ্য থেকে বের করতে হবে। কারণ একমাত্র মায়াই সকলের মূক্তির পথ। তাই সে একদিন স্পার্কিকে বললো মায়াকে তার নানার রাজ্য (লাবিহা রাজ্য)দেখানো প্রয়োজন। এতে করে সে তার বাবার বীরত্বের কথা জানতে পারবে। স্পার্কিও ভাবে”হু কথাটা মন্দ না”। সে জেনিভাকে যাওয়ার অনুমতি দেয়। তবে তাদের সাথে স্পার্কির সবচেয়ে বিশ্বস্ত সহচর অর্গান কে পাঠায়। যাতে জেনিভা ও মায়ার ওপর সে নজর রাখে। এদিকে এক বিশাল সংখ্যক সৈন্য এবং অর্গান জেনিভা আর মায়া কে নিয়ে লাবিহা রাজ্যের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। অনেক রাত হয়ে যাওয়ায় তারা একটি শহরের কাছাকাছি রাত কাটানের সিদ্ধান্ত নেয়।

সবাই যখন গভির ঘুমে তলিয়ে যায় ঠিক সেই সময় জেনিভা মায়াকে নিয়ে বেরিয়ে যায়। হাঁটতে হাঁটতে সে কাছের শহরটাতে চলে আসে। চারদিক অন্ধকার। কেউ জেগে নেই। অনেক খুঁজে সে দেখতে পায় কিছুটা দূরে একটি জঙ্গলের মতো জায়গা। সেখান থেকে আগুনের আভা আসছে। সে ওই আভার কাছে আসতেই দেখে একজন সাধু লোক গভীর ধ্যানমগ্ন অবস্থায়। সে সাধুর কাছে সাহায্য চায়। সাধু তাকে বলে”আমি তোমার কথা সব জানি। এবং এও জানি এই মেয়ে সাধারণ কোনো মেয়ে নয়। তাই আমি তোমায় সাহায্য করব। এই কথা বলে সে মায়া কে কোলে নিয়ে নেয় আর বলে আমি তোমার মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছি।তাকে একজন সাহসি যেদ্ধা করে গড়ব এবং তার মধ্যে শুভ শক্তি জাগিয়ে তুলবো। জেনিভা শেষবার তার মেয়েকে চুৃুমু খায়। আর তার একটি আংটি সাধুকে দেয়। আর বলে তার মেয়ে যখন ১৬ বছর বয়সে পা রাখবে তখন যেন এই আংটি তাকে দেয়া হয়।

জেনিভার কাছে বিদায় নিয়ে সাধু চলে যায়। জেনিভা শেষ মূহুর্ত টুকু তার মেয়েকে প্রাণ ভরে দেখে নেয়। কারন সে জানে এই দেখাই তার আর মায়ার শেষ দেখা।এদিকে অর্গান জেগে যায় এবং জেনিভাকে খুজে না পেয়ে সে শহরের দিকে আসতে থাকে। জেনিভা তখন পাথরের মতো হয়ে যায়। সে পালানোর চেষ্টাও করে না। শুধু আনমনে হাঁটতে থাকে। আর মনে মনে এই ভেবে শান্তি পায় নিজে মূক্ত হতে না পারলেও সে তার মেয়েকে মুক্ত করতে পেরেছে। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ দেখে অর্গান তার সামনে। জেনিভাকে বন্দি করে নিয়ে যাওয়া হয় স্পার্কির কাছে। বার বার জিজ্ঞেস করার পরও জেনিভা কিছু না বলায় তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

জেনিভার মৃত্যু টা ছিল ভয়াবহ। জেনিভাকে একটি কুয়ার ভিতরে ফেলে দেওয়া হয় যার ভিতর ছিল অযস্র যোঁক। সেগুলো জেনিভার শরীর ভেঁদ করে যাচ্ছিল এবং সারা দেহের রক্ত শোষে নিচ্ছিল। আর জেনিভা ভাবছিল আমার এই মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে একদিন আসবে। একদিন আসবে আমার মেয়ে স্পার্কি। সেদিন কোথায় পালাবে তুমি। তোমার মৃত্যু তো আমার চেয়ে ভয়ংকর হবে। স্পার্কি তোমায় সময় ঘনিয়ে আসছে।তৈরি থেকো স্পার্কি…তৈরি থেকো হঠাৎ মনেহল দরজায় কেউ ধাক্কা দিলো। আমি চমকে উঠলাম। বইটা খাটে বালিশের নিচে রেখে দেখতে গেলাম কে এলো। দরজা খুলতেই দেখি মা। কিরে দরজা খুলতে এতক্ষন লাগে? কখন থেকে ডাকছি। শুনতে পাসনি? না,মা। আসলে একটু গান শুনছিলাম তো তাই।

বইটা পড়তে পড়তে এতই অন্যমনস্ক হয়ে গেছিলাম যে মায়ের ডাক পর্যন্ত শুনতে পাইনি। মাকে বইয়ের বিষয়ে তখন কিছু জিজ্ঞেস করিনি। এদিকে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।আমি চুপ চাপ ঘরে গেলাম। পড়তে বসেছি। কিন্তু মন বসছে না। সেই বইটার কথা বার বার মনে পড়ছে কি হয়েছিল তার পর? সে সাধু মায়া কে নিয়ে কোথায় গিয়েছিল? আর স্পার্কি কি তার জাদু মন্ত্র দ্বারা মায়াকে খুজে পেয়েছিল? নাকি আরও রহস্য বাকি। এইসব ভাবতে ভাবতে আর পড়া’ই হলো না। সেদিন মা অনেক জোর করার পরও ঘর থেকে বেরোলাম না খেতেও যাই নি। সকালে ঘুম থেকে ওঠে কলেজে গেলাম। সানি আসলো। কিরে আজ এত তাড়াতাড়ি আসলি কলেজে। কি ব্যাপার। কিছু না এমনি। ওহ,চল ক্লাসে যাই। সেদিন ক্লাসে একটুও মন বসছিল না। এর পর কি হলো তা নিয়েই ভাবছিলাম।

মায়া,এই মায়া,মায়া কি হয়েছে এভাবে চেচাচ্ছিস কেন। চেচাচ্ছি কি আর সাধে? আজ সর্নার ট্রিট দেয়ার কথা। চল যাই। আমার ইচ্ছে নেই। তুই যা। কিইইইইইই??? এই কোন মায়াকে দেখছি আমি। যে সবসময় ট্রিট এর কথা শুনলে সবার আগে গিয়ে বসতো সে আজ যাবেনা বলছে? তুই যাবি এখান থেকে? অই তোর কি হয়েছে বলতো। তোর মাথা। ধুর আমিই গেলাম। আরে শুন। মায়া এই বলে চলে আসি। আর এখন মন খারাপ। ধুর ওর সাথে এমন ব্যাবহার করাটা ঠিক হলো না। স্যরি বলতে হবে। ফোনটা হাতে নিয়ে সানিকে কল দিলাম। কিরে মায়া তখন এভাবে চলে গেলি কেন? স্যরি সানি। তোর সাথে এমন করা ঠিক হয়নি। আরে স্যরির কিছু নেই। আমি বুঝেছি মায়া ম্যাডামের মন খারাপ ছিল তাই তো? হুম রে। আচ্ছা এখনও কি মন খারাপ? না। আচ্ছা। এখন রাখি কাল কলেজে এসে গল্প করবো। বাই সানিকে স্যরি বলে মনটা একটু হালকা হলো। বইটা নিয়ে আবার বসলাম।

সাধু মায়াকে নিয়ে একটি পাহাড়ে আশ্রয় নেয়। ঘুমন্ত মায়া এবার জেগে ওঠলো। মায়া তার মাকে দেখতে না পেয়ে কান্না করছিল। সাধু তাকে বলল তোমার মা তোমার সুরক্ষার জন্য নিজের প্রাণ ত্যাগ করেছেন। তোমার মায়ের এই আত্মবলিদান তোমায় নতুন জীবন পেতে সহায়তা করেছে। তোমার মায়ের শেষ ইচ্ছে ছিলো অত্যাচারী স্পার্কির ধ্বংস। তোমার জীবনের এখন একটাই লক্ষ্য স্পার্কি কে হত্যা করা এবং নিরিহ মানুষ দের ওই পশুর হাত থেকে রক্ষা করা। তোমাকে তোমার মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরন করতে হবে।

নিজের শক্তি জাগাতে হবে। আমি তোমাকে তৈরি করবো অন্যদিকে স্পার্কি অনেক চেষ্টা করেও তাদের খুঁজ পেলো না। জাদু বিদ্যা কাজে লাগিয়েও বিফল হলো। কারণ সাধু তার মন্ত্রের দ্বারা একটি অদৃশ্য দেয়াল তৈরি করে রাখে। যে দেয়াল কোনো খারাপ শক্তি পার করতে পারবে না। এদিকে আস্তে আস্তে মায়া বড় হচ্ছে এবং সাধুর কাছ থেকে অস্ত্র বিদ্যায় পারদর্শী হয়ে ওঠছে। আর তার মধ্যে এক এক করে শুভ শক্তি জাগ্রত হচ্ছে। অন্যদিকে স্পার্কির সেই ভবিষ্যৎবাণীর কথা মনে পড়ে। সে ভাবতে লাগলো সত্যিই যদি আমার মেয়ে আমায় ধ্বংসের কারণ হয়! তাই সে আমরত্ব লাভের আশায় জগ্য করতে থাকে। বিশাল জগ্য।

এদিকে এক এক করে অনেক বছর পার হলো। কাল মায়া ১৬ বছরে পা রাখবে। আজকের দিনটাকে যেন সে প্রাণ ভরে উপভোগ করছে। আজকের চাঁদটাকে একটু বেশিই বড় লাগছে। আর তার আলো যেন মায়াকে এক অপরুপসৌন্দর্যের মায়ায় বেঁধে নিচ্ছে। শুধু আজকের রাত। তার পর মায়া এক নতুন জীবনে পা রাখবে। হঠাৎ মনে হল কেও আমার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে।একটা ছায়া মনেহল আমায় পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। কই না তো পেছনে তো কেউ নেই। আমারই মনের ভুল। বাহ কি সুন্দর বাতাস বাইরে। বইটা রেখে বাড়ান্দায় গেলাম। বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টি আমার খুব ভালোলাগে।অনেক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজলাম।

হাচ্ছু হাচ্ছু ইসসসস মনেই নেই বৃষ্টিতে ভিজলে আমার ঠান্ডা লাগে। এখন কি করি? বিছানায় শুয়ে আছি। মা ডাকছে অনেক্ষণ ধরে। কিন্তু উঠতে পারছি না। মনেহয় জ্বর এসেছে। কেন যে ভিজতে গেলাম। মা আমায় ঔষধ খাইয়ে চলে গেল। সবকিছু ঘোলাটে লাগছে। ধরে ছটফট করছি। এখন কয়টা বাজে ঠিক বুঝতে পারছি না। ঘুম আসছে না। মনে হলো ঘরের এক কোঁণে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। চোখে সব ঝাপসা দেখছি। তাই ঠিক বুঝতে পারছিনা। এমন সময় মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পেলাম। মুখটা ঠিক বুঝতে পারছি না। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘুমিয়ে পরলাম। সকালে ওঠে খুব ফ্রেস লাগছে। জ্বর টাও আর নেই। মাকে জিজ্ঞেস করলাম তুমিকি কাল রাতে আমার ঘরে এসেছিলে? কই নাতো! আমি যে দোখলাম কেউ আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। জ্বরের মাথায় কি দেখতে কি দেখেছিস। আয়তো দেখি জ্বরটা এখনও আছে কিনা।

কিন্তু আমার স্পষ্ট মনে আছে কেউ ছিলো। আজ আর মা আমাকে কলেজে যেতে দিলো না। তাই বাড়িতেই বসে আছি। এইযে মিস কি করেন। আরে সানি তুই। হুম ভাবলাম তুই কলেজে এলি না তাই আমিই চলে আসি। তোর কি কিছু হয়েছে? না,কিছু না। ভালো করেছিস এসে। তোকে কিছু দেখানোর আছে। বইটা হাতে নিয়ে সানিকে দিলাম। কিসের বই। খুলেই দেখ। একি তোর নাম এই বইয়ে আসলো কিভাবে আর তোর ছবিও তো দেয়া। তাও ১০০০ বছর আগের বইয়ে। কিভাবে সম্ভব। আমিও বুঝতে পারছি না। মাকে দেখাবো? না থাক আন্টি শুধুশুধু চিন্তা করবেন। সানিকে সব ঘটনা খুলে বললাম। সব শুনে সানি বলল আমি এখন যাই পড়ে এই নিয়ে কথা বলব। বলেই হুট করে চলে গেলো। সানির এরকম আচরণ একটু অস্বাভাবিক লাগল। ও তো এমন করে না কি হলো হঠাৎ? বুঝতে পারছি না। বইটা নিয়ে আবার পড়তে শুরু করলাম।

আজ,আজ সেই দিন। আজ মায়া ১৬ বছরে পা দিলো। খুব ভোরবেলা সাধু মায়া কে খুঁজছে। কিন্তু কোথাও পাচ্ছে না। কোথায় গেলো মায়া? মায়া,মায়া কোথায় তুমি। সাধু অনেক ডাকার পরও সাড়া না পেয়ে একটু ঘাবড়ে গেল। কোথায় যেতে পারে মায়া। ও তো আমার আদেশ ছাড়া কোথাও যায় না। হঠাৎ পেছন থেকে কেউ একজন ডেকে উঠল। বাবা আমায় খুঁজছিলে? (একটু বিচলিত হয়ে)মায়া কোথায় ছিলে তুমি? দেখো বাবা আমি এক অদ্ভুত ফুলের সন্ধান পেয়েছি। কি সুন্দর না ফুল টা? বলতে বলতে এমন সময় মায়া ছুরি বের করে সাধুর দিকে ছুড়ে মারলো। ছুরিটা গিয়ে পড়লো সাধুর থেকে সামান্য দূরে। একি একটা সাপ। আর একটু হলেই সাধুকে কামড় দিতো। কিন্তু মায়ার অস্ত্রের সামনে তাকে হার মানতে হলো।

মায়া আজ আমি তৃপ্তি অনুভব করছি। আমি পেরেছি তোমায় সঠিক শিক্ষা দিতে। আজ তুমি অস্ত্র শিক্ষা পূর্ণ করেছ। কিন্তু এখনও তোমায় শিক্ষা বাকি। বাবা একটি প্রশ্ন ছিল। হ্যাঁ মায়া বলো। তুমি কেন আমায় নিয়ে এত চিন্তা করো। এখন আমি আত্মরক্ষা করতে পারি তার সাথে অপরকেও রক্ষা করার ক্ষমতা আমার আছে। আমার কি আর কোনো শিক্ষার প্রয়োজন আছে? অবশ্যই আছে, তোমার জন্মই হয়েছে এক বিশেষ কারনে। যা খুবই কঠিন। তোমাকে যে অশুভ শক্তির বিনাস করতে হবে। কি সেই শক্তি? যার কারনে আমার জন্ম? তা আমি তোমায় বলবো না। এই নাও এই আংটিই তোমায় সব মনে করাবে। মায়া আংটি টা হাতে পড়ে। এক শীতল বাতাস তার সারা দেহে বয়ে যায়। চোখের সামনে অতীতের সব ভেসে উঠে।

একি এ কোন জায়গা? এসব কি হচ্ছে। মানুষের ওপর অত্যাচার। কে এই পাশন্ড। একটা মেয়েকে নিয়ে মহিলা কেন পালাচ্ছে। বাবার কোলেই বা কেন দিচ্ছে।নাাাআআআ। কেন কেন এই ভয়ঙ্কর মৃত্যু দিল এমনমমতাময়ীকে। কেন কেন কি হচ্ছে এসব। কেন হচ্ছে বন্ধ করো বন্ধ করো এই নির্মম খেলা। মায়া কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তার জ্ঞান ফিরে। দেখতে পায় সাধু তার সামনে। বাবা এইসব কি ছিলো। তুমি যা দেখেছো সব সত্যি। সেই অত্যাচারী ছিল তোমার বাবা স্পার্কি। আর যে মহিলাকে তার সন্তান নিয়ে পালাতেদেখেছো সে তোমার মা। এইসব কি বলছো বাবা। আমি তো তোমার মেয়ে।

না তুমি স্পার্কি আর জেনিভার মেয়ে। তোমার মাকে তোমার পিতা হত্যা করেছে। রাজ্যের সমস্ত মানুষদের ওপর অত্যাচার করছে। তোমার জন্মই হয়েছে ঐ স্পার্কি কে হত্যা করার জন্য। কিছুক্ষনের জন্য মায়া স্তব্ধ হয়ে যায়। এর পর বলে ওঠে আমি তৈরি। ঐ মানুষ নামের পশুকে আমি হত্যা করতে প্রস্তুত। এত সহজ না ওকে হত্যা করা। তোমাকে তার কালো জাদু ভেদ করতে হবে। আমি জানি তুমি তা পারবে। হে আমি পারব। আমাকে পারতেই হবে। আজ থেকে তোমার পথ চলা শুরু। যাও তোমার লক্ষ্যে পৌছাও। বাবা আমায় আশির্বাদ করুন আমি যেন আমার লক্ষ্যে পৌছাতে পারি। বিপদে পড়লে আমায় স্বরণ করো। আর এই ঘোড়া তোমায় পথ চিনিয়ে দেবে।

মায়া সাধু কে বিদায় দিয়ে বেরিয়ে পড়ে লিকাস রাজ্যের উদ্দেশ্যে। দিন যায় রাত যায়। মায়া সব বাধা পেরিয়ে এগোতে থাকে লিকাস রাজ্যের দিকে। অন্যদিকে স্পার্কির জগ্য প্রায় শেষ হওয়ার পথে। আর মাত্র দশ দিন। তার পর সে অমরত্ব লাভ করবে। মায়া লিকাস রাজ্যে পৌছে যায়। রাজ্যের দূর্দশা দেখে তার চোখ থেকে পানি বের হয়। সে থামে না। এই চরম অত্যাচার দেখে তার চোখে আগুনের শিখা জ্বলতে থাকে। সে রাজ্যের একটি গোপন স্থানে আস্রয় নেয়। রাতের অন্ধকারে সে রাজ্যের ভেতর প্রবেশ করে আর চারদিক ভালোভাবে দেখতে থাকে। হঠাৎ একজন তাকে দেখে ফেলে। মায়া পালাতে চেষ্টা করে কিন্তু তাকে ঘিরে ফেলে প্রহরী। আর সেই লোকটা।

অর্গানের হাত থেকে পালানো এত সহজ না। কে তুমি?এই রাজ্যে আসার সাহস পেলে কিভাবে। নামটা শুনে মায়ার মনে পড়ে যায়। এসেছি তোদের মতো পশুদের ধ্বংস করতে। বলেই অস্ত্র চালাতে থাকেসব প্রহরী মারা যায়। এখন শুধু অর্গান আর মায়া। দুজন যুদ্ধ করতে থাকে। এক সময় অর্গান পরাস্ত হয়। মায়া তাকে শেষ করে দেয়। আর বলে মা আমি একটা পশুকে শেষ করতে পেরেছি মা।এবার ওই স্পার্কির পালা। সকাল হতেই সারা রাজ্য জোরে সকলের মুখে একটাই কথা। কেউ অর্গান কে মেরেছে। এবার স্পার্কিরও মরবে। এই খবর স্পার্কির কানে যায়।

সে চিন্তায় পড়ে যায় কে তার সহচর কে এভাবে মারতে পারে। কার এতো সাহস। সে তার জাদু প্রয়োগ করে।মায়া দেখতে পায় তার হাতের আংটি থেকে লাল আভা ছড়াচ্ছে অাংটিটা থেকে লাল আভা বেরচ্ছ। হয়তো কিছু ইঙ্গিত দিচ্ছে। কিন্তু মায়া তা বুঝতে পারছে না। এমন সময় মায়া নিজের মধ্যে এক অদ্ভুত শক্তি উপলব্ধি করে। যা সে আগে কখনও করেনি। স্পার্কির জাদু শক্তি প্রয়োগের কারণে মায়ার শুভশক্তির জাগরণ হয়। তাই স্পার্কির অশুভ শক্তি মায়ার কোন ক্ষতি করতে পারে না। এদিকে স্পার্কি খুবই দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলো। কে এমন হতে পারে যার উপর তার কালোজাদু কাজ করলো না? কে সে তাকে জানতেই হবে!!!! মায়া বুঝতে পারছে না কেন এমন হচ্ছে। মায়া পরদিন রাতে আবার স্পার্কির প্রাসাদে প্রবেশ করে।মায়া খুব সাবধানে হাঁটছে আর স্পার্কির কাছে যাওয়ার সুযোগ খুঁজছে। ঠিক সেই সময় মায়া একটা ফাদে আটকে যায়। এমন সময় শত শত সৈন্য তাকে ঘিরে ধরে। পালানোর কোন পথ নেই। তখনি অন্ধকার থেকে কারো অট্ট হাসি শোনা যায়।

হাহাহাহাহাহা শেষপর্যন্ত আমার ফাঁদে পা দিতেই হলো তো!!! কে তুমি, এতো বড় সাহস আমায় প্রাসাদে ঢুকেছো। এসেছি তোকে শেষ করতে শয়তান। তোর মতো পাপির বেঁচে থাকার কোন যোগ্যতাই নেই। মৃত্যুই তোর শেষ ঠিকানা। স্পার্কি রেগে যায়, স্পার্কি তার সৈন্যদের নির্দেশ দেয় মায়া কে হত্যা করতে। শত শত সৈন্য মায়ার ওপর আক্রমন করে। মায়া তাদের সাথে লড়তে থাকে। লড়তে লড়তে এক সময় দেখা যায় মায়ার শরীর থেকে আলো ছড়াচ্ছে। সেই আলোতে কেউই ঠিকমতো দেখতে পারছে না।মায়া এদিকে এক এক করে সব সৈন্যদের শেষ করে ফেলে। এবার সে স্পার্কির দিকে এগোতে থাকে।স্পার্কি তার মায়া শক্তি প্রয়োগ করে। মায়াকে যেন কোনো এক অদৃশ্য শক্তি ঠেলে ফেলে দিলো। মায়া তাকে দেখতে পারছে না। এদিকে সে একের পর এক আঘাত করছে মায়ার শরীরে। মায়া ক্লান্ত হয়ে পড়ে।ঠিক সেই সময় তার সাধুর কথা মনে পড়ে। সে সাধুকে শরণ করে। সাধু তার ডাকে সারা দেয়। মায়া আস্তে আস্তে দূর্বল হয়ে পড়ছে। সাধু উপস্থিত হয়।

মায়া নিজের ভেতরে থাকা শক্তিকে আহব্বান করো। সেই শক্তিকে জাগাও। তুমি পারবে। তোমার মধ্যে সেই শক্তি আছে। তাকে কাজে লাগাও মায়া। এদিকে মায়ার অবস্থা খারাপ। এমন সময় তার হাতের আংটি টা থেকে আবার লাল আভা ছড়াতে শুরু করলো। আর সেই আভা থেকে একজন সুন্দরী মহিলা কে দেখা গেলো। এ যে মায়ার মা জেনিভা।মায়া তাকে প্রাণ ভরে দেখতে লাগলো। এদিকে সেই অদৃশ্য ছায়া মায়ার ওপর আঘাতের পর আঘাত করতে লাগলো। মায়া তার মায়ের চোখের দিকে চাইলো। হঠাৎ মায়ার শরীর হাওয়ায় ভাসতে লাগলো।তার শরীর থেকে এবার লাল আলো আসতে লাগলো। তা দেখে স্পার্কি ভয় পেয়ে গেলো। মায়া চোখ খুলল। তার চোখে আগুন জ্বলছে। সে তার অস্ত্রটা দিয়ে এক বারে সেই অদৃশ্য কে শেষ করলো। স্পার্কি ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করতে লাগলো।

কে তুমি, কে আমি তো তোমার মেয়ে স্পার্কি। আমি মায়া। যার হাতে তোমার মৃত্যু লিখা। আজ আমি আমার মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরন করবো। বলে স্পার্কির দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। স্পার্কি ভয়ে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু পারে না।মায়া তাকে আটকে ফেলে। মায়া তার মাথায় আঘাত করে। স্পার্কি অজ্ঞান হয়ে যায়। জ্ঞান ফিরলে স্পার্কি দেখে সারা রাজ্যের প্রজারা তাকে দেখছে। মায়া তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।নিজেকে সে কাটার বেড়িতে(শিকল)এ আবদ্ধ দেখতে পায়। এবার তার শাস্তির পালা। তার মৃত্যু হবে ভয়াবহ। এমন মৃত্যু কেও আগে কখনও দেখে নি তুমি আমার মায়ের হত্যাকারী। এই রাজ্যের সকল মানুষের নির্যাতনকারী। তোমার মৃত্যু এতো সহজ হতে পারে না। তোমায় মৃত্যু হবে। আর এমন ভাবে হবে যা কেউ কখনো কল্পনাও করেনি। এবার স্পার্কি কে একটা গাছের সাথে ঝুলিয়ে দেযা হলো। স্পার্কির চোখে ভয়ের ছাপ। মায়ার আদেশে স্পার্কির শরীরে বিষধর পিপড়া ছেড়ে দেওয়া হলো।

স্পার্কি ব্যাথায় যন্ত্রনায় চিৎকার করতে লাগলো।ওদিকে যখন পিপড়া স্পার্কির শরীরে কামড়াচ্ছিল তখন একটি খাচা উন্মুক্ত করা হলো।যে খাঁচার ভেতরে ছিল খুদার্থ নেকড়ে। নেকড়ে ঝুলন্ত স্পার্কির পা লাফিয়ে লাফিয়ে ছিড়তে লাগলো। স্পার্কির চিৎকার হাজার গুন বেড়ে গেলো। যন্ত্রনায় সে আর পারছে না। এদিকে মায়া তাকে বলছে তোমায় আরো মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করতে হবে। আরও যন্ত্রণা আরও এবার একটি শকুন ছেড়ে দেওয়া হলো। শকুনটি স্পার্কির মাথায় গিয়ে বসলো আর সেখান থেকে মাংস ছিড়ে খাচ্ছিল। স্পার্কির যখন মর মর অবস্থা।তখন সে বলতে লাগলো। মায়া আমি আবার আসবো তোমায় শেষ করতে।

আমার কালো জাদু এতো সহজে মরবে না মায়া। আমি আবার আসবো। আবার তখন স্পার্কির শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হলো আস্তে আস্তে স্পার্কির দেহ পুড়ে ছারখার হয়ে গেলো। ঠিক সেই সময় মায়ার আংটিটা থেকে লাল আভা বেরনো শুরু করলো। আভাটার ভেতর জেনিভাকে দেখা গেলো। জেনিভা মায়াকে বলতে লাগলো। এই শেষ নয় মায়া। ও আবার ফিরে আসবে। তোমার জীবনে। তোমাকে তার সামনাসামনি হতে হবে। আবার তাকে শেষ করতে হবে। কিন্তু মা ও আবার কিভাবে আসবে। আমি তাকে মৃ্ত্যুর জগতে পাঠিয়েছি। না তুমি তার শরীর কে শেষ করতে পেরেছ। কিন্তু তার আত্বা জাদুর সাহায্যে এখনও বেঁচে আছে।

আমি ওর মুখমুখি হতে প্রস্তুত। না ও এখন আসবে না। আসবে আরও শক্তি অর্জন করে। আমি কিভাবে বুঝবো ও ফিরে এসেছে? বুঝবে। হয়ত এই তুমি তখন থাকবে না। তোমার পুনর্জন্ম হবে। তুমি এখন যেমন ঠিক তেমনই হয়ে বড় হবে। তোমার তখন কিছু মনে থাকবে না ১৬ বছর বয়সে তোমাকে আমি সব মনে করাতে সাহায্য করবো। তখন তুমি মনে সাহস রেখো। মনে রেখো আমি ছাড়াও আরও অনেকে তোমার সাহায্য করবে। মায়া এবার আমায় যেতে হবে। মনে রেখ সবসময় তোমার পাশে আমি আছি। বিদায়। এরপর যা ঘটলো মায়া সেই রাজ্যের দায়িত্ব নিলো এবং রাজ্যের সবাই খুবই খুশি এবং শান্তিতে থাকতে লাগলো।

এর মানে আমিই সেই মায়া যার আবার জন্ম হয়েছে। কিন্তু স্পার্কি এখানে এসেছে এমন কিছুতো এখনও মনে হয়নি। তখন শেষ পৃষ্ঠায় আংটির একটা ছবি দেখা গেলো। আরে এই আংটি টা ইতো কিছুদিন আগে মা আমায় দিয়েছিল। মায়া আংটিটা আলমারি থেকে বের করে বইয়ের আংটির সাথে মিলাতে থাকে। হ্যাঁ হুবহু একই আংটি। প্রায় ১ সপ্তাহ আগের কথা। মায়া তখন ১৬ বছরের জন্মদিন ছিল। সবাই খুব খুশি ধুমধাম করে পালন করা হয়েছিল। ঠিক সেদিনই তার মা তাকে এই আংটি দিয়েছিলো। মায়া আংটিটা হাতে পরে নেয়। ঠিক তখনই আংটিটা থেকে আবার লাল আভা বেরনো শুরু করলো মায়া অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। মায়ার সারা ঘর আলোতে ভরে যায়। এদিকে তার মা দেখতে পায় মায়ার ঘর থেকে লাল আলো আসছে। বিষয়টা বুঝতে না পেরে মায়াকে ডাক দেয়।

মায়া, তোর ঘরে কিসের আলো। মায়া ভয় পেয়ে যায় সাথে সাথে আলোটা বন্ধ হয়ে যায়। মায়া বুঝতে পারে তাকে অনেক বড় বিপদের মুখোমুখি হতে হবে। এমন সময় সানি আসে। মায়া মায়া কিরে সানি কি হয়েছে? তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন? মায়া ভীষণ বিপদ। অনেক বড় বিপদ। কি বিপদ। কার বিপদ? তোর। আমার আবার কি বিপদ? আমি একজনের কাছে গেছিলাম। সে বলল কি বলল? বলল! বলল তোর ওপর কোন এক আত্মার ছায়া আছে।তোর খুব বিপদ। তুই চল এখুনি আমার সাথে। কিন্তু কোথায়? তুই চলতো। সানি প্রায় টেনেই নিয়ে যাচ্ছে আমায়। একটা নির্জন জায়গায় এসে কিছুটা দূরে একটা ঘর দেখতে পেলাম। কিরে এমন জায়গায় নিয়ে এলি কেন? চলতো আগে। আমরা ঘরের কাছে গেলাম। ঘর বললে ভুল হবে অনেকটা ঝোপঝাড় মতো।ভাঙ্গা আর লতা পাতায় ভরা।ঘরে ঢুকে দেখলাম কেউ নেই।সানি কাকে যেন খুঁজছে। কিরে সানি কাকে খুঁজিস। সেই বাবা টাকে।

এমন সময় পিছন থেকে আমার নাম ধরে কে যেন ডাকলো। মায়া তুমি এসেছো? কে আপনি, আর আমার নাম জানলেন কিভাবে? আমি সব জানি।আমি তোমায় সাহায্য করবো। কিন্তু কিভাবে। তা নাহয় আমার ওপরই ছাড়ো।আজ তুমি বাড়ি যাও। কেন আপনি আমাদের সাহায্য করবেন না? তোমার যে আরও অনেক কিছু জানার বাকি। সময় হলে তুমি নিজেই আসবে।তোমাকে যে আসতেই হবে। এই কথা বলে লোকটি চলে যায়। আমি আর সানিও আমাদের বাড়িতে চলে আসি। অনেক্ষণ সানি আমার সাথে বসে থাকে। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। এবার ওকে একরকম জোর করেই বাড়িতে পাঠালাম। পাগলটা আমার জন্য খুব দুশ্চিন্তা করছে। ওর বিশ্রাম দরকার।

রাত ১২ টা বাজে।আমার ঘুম আসছে না।কিভাবে আমি এই অশুভ শক্তির মোকাবেলা করবো। যদি না পারি? কেন পারবে না মায়া? কে, কে এখানে। কে কথা বলছে? সামনে এসো। আমি মায়া, আমায় চিনতে পারোনি? না কে তুমি? চিনবে ঠিক সময় চিনতে পারবে।আমি তোমার ক্ষতি চাই না।তোমায় সাহায্য করতে চাই। এখন আমি যা বলছি তাই করো।কি করতে হবে আমায়? তোমাকে স্পার্কিকে মারার রহস্য খুজে বের করতে হবে। তার জন্য তেমায় জোড়াসাকো নামে এক জায়গায় যেতে হবে। সেখানে গিয়ে আমি কি করবো? তা তো আমি তোমায় বলবো না। তোমায় নিজেই খুঁজে বের করতে হবে।

বলতে বলতে কন্ঠটা থেমে গেল। সেই কন্ঠ আর শোনা গেলো না।আমি ভাবছি কি করবো এখন।কিভাবে যাবো? মাকে বললে যেতে দেবে না।নাহ একাই যাবো।আর সানিকে নোওয়া যাবে না, এমনি অনেক চিন্তা করে আমায় নিয়ে।তার ওপর এইসব বললে আমার সাথেই চলে আসবে। এখন শুধু ভোর হওয়ার অপেক্ষা।দরকারি সবকিছু গুছিয়ে নিলাম।এখন শুধু অপেক্ষা। এইতো আজান দিলো। আর কিছুক্ষণ পর চারদিকে একটু আলো ফুটতেই আমি বেরিয়ে এলাম। কিন্তু জোড়াসাকো কোন দিকে তাতো জানি না।এখন কি করি। হঠাৎ দেখলাম একটা লোক রাস্তাদিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। ভাবলাম উনাকে জিজ্ঞেস করে দেখা যাক। আঙ্কেল জোড়াসাকো কোনদিক দিয়ে কিভাবে যায় আপনি কি জানেন?

হ্যাঁ মা। এখান থেকে চুরাকাঠির একটি বাস ধরবে।সেখান থেকে একটি জঙ্গলের রাস্তা পার হয়ে ২ দিন পর জোড়াসাকোতে গিয়ে পৌছবে। অহ আচ্ছা।লোকটি চলে যাচ্ছিলো। লোকটাকে ধন্যবাদ টাও দেওয়া হলো না।তাই পিছনে তাকালাম। একি কোথায় গেলো? ২সেকেন্ড আগেইতো এখানে ছিল।এত তাড়াতাড়ি কোথায় যেতে পারে? উনিকি সত্যিই মানুষ ছিলেন। নাকি অন্যকিছু। ভাবতে ভাবতে বাস স্ট্যান্ড এসে গেলাম। জোড়াসাকো জোড়াসাকো বলে একটা লোক চিৎকার করছে। মনেহয় বাসের হেলপার। আমি সেইদিকেই হাঁটা দিলাম। বাসে উঠতে যাবো ঠিক সেই সময় কেউ পেছন থেকে আমায় হেঁচকা টানে বাস থেকে নামিয়ে দেয়। এ.. এ…একি আমায় আশা করোনি এখানে তাইনা? না! মানে ঠাসসসসসসসসসসস আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমরা বাসে উঠলাম।আমি নিচের দিকে তাকিয়ে আছি।

গালটা মনেহয় এখনও লাল হয়ে আছে। থাকবে না? এতো জোরে কেউ মারে? চারপাশের লোকজন কেমন ড্যাব ড্যাব করে আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিল। সানি এখনও রেগে আছে। বুঝতে অসুবিধে হলো না। নইলে এতক্ষণ কথা না বলে থাকতে পারতো না।আমিও কথা বলছি না। একটু পর দেখলাম ও কাঁদছে। একি এই পাগল কাঁদছিস কেন। তুই বুঝিস না তোকে ছাড়া আমি থাকতে পারি না?এক মুহূর্ত তোকে ছাড়া ভালো লাগে না। আর তুই আমায় ছেড়ে চলে যাচ্ছিলি? বলেই বাচ্চাদের মতো কাঁদতে লাগলো। ওর কান্না দেখে আমারও খুব কান্না পাচ্ছিল। ধুর পাগল আমি কি সারা জীবনের জন্য যাচ্ছিলাম?আচ্ছা আর কখনও এমন করবো না। প্রমিস? আর কখনো যাবি না তো? প্রমিস। আর কখনো না। আচ্ছা তুই কিভাবে জানলি আমি এখানে?

সারা রাত ঘুমোতে পারিনি।তাই ভোর হতেই চলে আসি।বাসার সামনে আসতেই দেখি তুই ব্যাগ গুছিয়ে বেরোচ্ছিস। ভাবলাম দেখি কই যাস। অবাক হয়ে গেলাম যখন দেখলাম তুই একা একাই কথা বলছিলি রাস্তায়। একা????? মানে?? আমি তো এক আংকেলের সাথে কথা বলছিলাম। কিন্তু সেখানে তো কাউকে দেখতে পেলাম না। তার মানে ওটা মানুষ ছিল না। হুম তাই মনেহয়। কিন্তু আমায় সাহায্য করেছে। এরপর সানিকে কাল রাতের সব ঘটনা বললাম। হঠাৎ একটা বাস থামলো। যাত্রা বিরতি। আমি আর সানি নামলাম। সকালের নাস্তা করে আবার গাড়িতে এসে বসলাম। আমি চিন্তা করছি কিভাবে কি করবো।কোথায় যাবো। এদিকে সন্ধ্যা হয়ে এলো। রাত ১০ টা। হটাৎ কি হলো। বাসটা থেমে গেলো একটা জঙ্গলের পাশে। ড্রাইভার দেখলো কিন্তু কেন এভাবে থেমে আছে বুঝতে পারলো না। অনেক চেষ্টা করেও ঠিক করতে না পারায় এইখানেই রাত কাটাবে বলে ঠিক করা হলো। সকালে অন্য একটা বাস আমাদের গন্তব্যে পৌছে দেবে।

বাসের সকলেই ঘুমিয়ে গেছে। সানিও ঘুমাচ্ছে। কিন্তু আমার ঘুম আসছে না। হটাৎ কিসের একটা আওয়াজ হলো বাইরে। আমি জানালা দিয়ে দেখতে চাইলাম কিন্তু অন্ধকারে কিছুই দেখা গেলো না। একটু পর আবার শব্দ হলো। কি তা দেখার জন্য বাস থেকে নামলাম। চারদিকে বড় বড় গাছ। কিছুই দেখা যাচ্ছে না। আমার সামনে দিয়ে কিছু একটা চলে গেল মনে হলো। কি তা দেখার জন্য একটা টর্চ ধরলাম। ভাগ্যিস বেরোনোর সময় সাথে নিয়েছিলাম। কিছুটা এগিয়ে দেখলাম কিছুই নেই।ফিরে আসবো এই সময় আবার আওয়াজ। ব্যাপার টা কি। কি এখানে?

একটু এগিয়ে যেতেই দেখলাম একটা বিশাল বড় গাছ। এতো বড় গাছ আগে কখনও দেখি নি। হটাৎ শুনতে পেলাম কেউ কাঁদছে। মনেহয় গাছটার ওপাশ থেকে আওয়াজ টা আসছে। এই জঙ্গলে কে আসতে পারে? টর্চটা ভালোভাবে ধরলাম। কই কেউ তো নেই।কি হচ্ছে আমার সাথে? একটু ভয় পেলাম। গাড়িতে যাবার জন্য ঘুরতেই দেখলাম একটা কঙ্কাল যার মুখে আগুন জ্বলছে। আর ওটা আমার দিকে আসতে লাগলো। আমি যেন এক মুহূর্তের জন্য পাথর হয়ে গেলাম। এরপর কিছু না বুঝেই দৌড় দিলাম। ছুটতে ছুটতে হঠাৎ কিছু একটার সাথে ধাক্কা খেলাম। ভয়ে আমি আবার ছুটতে চাইলাম। কিন্তু ওটা আমাকে ধরেই রেখেছে। চোখ বন্ধ করে আমি প্রাণপণে চেষ্টা করছি। আর চিৎকার করছি। নিজের শরীরে ঝাকুনি অনুভব করলাম।ভালোভাবে চেয়ে দেখি সানি। মায়া মায়া তোর কি হয়েছে। এমন করছিস কেন।সানি সানি ওখানে অজ্ঞান হয়ে গেলাম। জ্ঞান ফিরতেই দেখলাম সানি আমার সামনে বসে আছে। আমি উঠে বসলাম।তুই ঠিক আছিস তো মায়া? হ্যাঁ ঠিক আছি।

কি হয়েছিল তোর। এমন করছিলি কেন? চারদিকে মানুষ সব আমায় দেখছে। তাই বললাম কিছুনা, একটু ভয় পেয়েছিলাম। ওফফ আমি তো তোকে না দেখতে পেয়ে অনেক ভয় পেয়েছিলাম। তাই নেমে দেখলাম জঙ্গলে একটা আলো দৌড়াচ্ছে। গিয়ে দেখি তুই টর্চ। নিয়ে দৌড়াচ্ছিস। তুই একা বেরোতে গেলি কেন। আমায় ডাকতে পারতি। সানিকে একটু পর সব বললাম। মায়া আমাদের যাওয়াটা কি ঠিক হচ্ছে? তোর যদি বিপদ হয়। হলে হোক তবুও। আমি স্পার্কিকে শেষ করবো।আমার জন্মই হয়েছে ওকে শেষ করতে। কিন্তু কাল যা হলো তার পরও? হ্যাঁ সানি। আমাকে পারতেই হবে। তুই বরং চলে যা।আমার জন্য তোরও বিপদ হবে। তুই ভাবলি কি করে তোকে ছেড়ে আমি চলে যাবো।তোর জন্য আমি সব করতে পারি বুঝলি?

কিন্তু আর কোনো কিন্তু না। এই লড়াই আমরা দুজনেই লড়বো। পরদিন সকালে আমরা জোড়াসাকোতে পৌছাই। বাস থেকে নামি। কিন্তু কোথায় যাবো ঠিক বুঝতে পারছি না। এখানে তো কউকে পাচ্ছিও না যে জিজ্ঞেস করবো। এমন সময় এক বৃদ্ধ আমাদের কাছে এল। কে তোমরা? দেখেতো মনেহয় শহর থেকে এসেছো।তা এ গ্রামে কেন এসেছো? ওহ রাজবাড়ি দেখতে? তা অনেকেই আসে কিন্তু বেশিক্ষণ থেকো না সন্ধ্যার পর ঐ জায়গা ভালো না। নিজে নিজেই কথা বলে চলে গেল। আমাদের কিছু বলতেই দিলো না। চল সানি রাজবাড়ি তে যাবো। কিন্তু কেন? ওইখানেই রয়েছে রহস্য। তুই কি করে বুঝলি? মনে হচ্ছে ওই লোকটা আমাদের পথ চিনিয়েছে।চল না গিয়ে দেখি কি হয়।

কিন্তু আমরা তো রাস্তা চিনি না। ওইতো দেখ রিক্সা চল। রিক্সার সামনে গিয়ে বললাম রাজবাড়ি যাবেন। রিকশা ওয়ালা কিছুক্ষণ ভেবে বললো যাবো ওঠেন। রিক্সা ওয়ালা জিজ্ঞেস করলো। আপা রাজবাড়ি দেখতে আসছেন? হ্যাঁ! ভালো কিন্তু বেশিক্ষণ থাইকেন না, জায়গাটা ভালো না। সন্ধ্যার পর কেউ যাইতে সাহস পায় না। কেন? ওইখানে নাকি ভূত আছে। সাহস কইরা অনেকে ওইখানে গিয়া পাগল হইয়া গেছে। লন আইসা পড়ছি। রিক্সা ওয়ালাকে ভাড়া দিয়ে বিদায় করলাম।রাজবাড়িটা অনেক আগের মনে হচ্ছে। ভূতুড়ে পরিবেশ। গেইটে দারোয়ানকে দেখলাম। তার কাছে গিয়ে রাজবাড়ির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতেই বললো এই রাজা নাকি খুব ভালো ছিল। কিন্তু রহস্যজনক ভাবে পুরো রাজবাড়ির সবাই মারা যায়। তারপর থেকে এখানে ভূতের উৎপাত। সেও নাকি রাতে এখানে থাকে না। আমি রাজবাড়ির দরজা খুলে দিতে বললাম। কি করবেন এখানে গিয়ে তার চেয়ে বাইরে থেকে দেখেই চলে যান।

আমি জোর করায় বাধ্য হয়েই দরজা টা খুলল।রাজবাড়িটা বেশ বড়। আর ভেতরে আসবাবপত্র আর দেয়ালের কাঁরুকাজে বোঝা যাচ্ছিল এই রাজা খুব সৌখিন ছিল। কিন্তু রহস্যজনক ভাবে মারা যাওয়ার কারনটা কি? ভাবতে ভাবতে ভেতরে গেলাম। দারোয়ান আমাদের সবগুলো কক্ষ দেখালো। কিন্তু একটা কক্ষে দেখলাম তালা দেয়া। কেন জিজ্ঞেস করতেই বলল এই কক্ষ যুগযুগ ধরেই বন্ধ। এটা নাকি কেউ খুলতে পারে না। যেই খুলতে যায় সেই নাকি নাক মুখে রক্ত উঠে মারা যায়। তাই কেউ কখনও ওটা খোলার সাহস পায়নি। এমন কি আছে যে কারণে কেউ খুলতে পারে না? আমাকে জানতেই হবে। আমরা কি রাতে এই প্রাসাদে থাকতে পারি? কি বলছেন এসব জানের ভয় নাই? আমি থাকতে চাই। কি বলছিস মায়া? হ্যাঁ সানি আমি থাকবো। ঠিক আছে থাকতে পারেন। কিন্তু কোন অঘটন ঘটলে আমায় দায়ী করবেন না কিন্তু। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। এখন শুধু রাতের অপেক্ষা। আমাকে জানতেই হবে কি এই রহস্য।

এখন মাত্র রাতের অপেক্ষা। আমি আজ এই রহস্য যেভাবেই হোক ভেদ করেই ছাড়বো। এদিকে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। একটু পরেই অন্ধকার নেমে আসবে। আমি আর সানি সেই ঘরটার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। ঘরের তালাটা বেশ পুরনো আর বিশাল বড়। জানিনা কি হবে খুব চিন্তা হচ্ছে। হঠাৎ কিছু একটা পড়ে যাওয়ার শব্দ হলো। আমি চমকে যাই। সানি শব্দটা শুনলি? কিসের শব্দ কোনো শব্দ তো হয় নি। কি বলিস আমি তো মাত্র শুনলাম। চিন্তায় তুই এখনই ভুল ভাল ভাবছিস। হয়তো তাই।

হঠাৎ এক দমকা হাওয়া এল। চ লে যা ও মনে হলো হাওয়া আমায় কানে কানে বললো। আমি চমকে গেলাম। কে কে কথা বলছে? কিরে মায়া কে কথা বললো। জানি না কেউ একজন ছিল। আমার কানে কানে কথা বললো। কিন্তু কাউকে তো দেখলাম না। অশরীরি কিছু মনে হয়। হঠাৎ সেই দরজার ভেতর থেকে অদ্ভুত সব শব্দ আসতে লাগলো। চারদিকে প্রবল হাওয়া বইতে লাগলো। মনে হচ্ছে বড় ঝড় হচ্ছে। লাইট গুলো জ্বলতে নিভতে শুরু করলো। এক ভয়ংকর হুংকার শুনা গেল। আমি ভয় পেয়ে যাই। কিন্তু না আমায় যে এই রহস্যের ভেদ করতেই হবে। ভয় পেলে চলবে না।

এক ভয়ংকর দানব আকৃতির কিছু দেখা গেল। সানিকে হাওয়ায় ভাসিয়ে ঘরের এক কোণ থেকে অন্য কোণে ফেলে দিলো। সানি জ্ঞান হারিয়েছে। ওই ভয়ংকর দানবটি আমার দিকে আসতে লাগলো। আমি ওর সামনে কিছুই না। ও আমায় এক ঝটকায় মেরে ফেলতে পারে। দানবটা আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। আমি নড়তেই পারছি না। ও আমাকে হুংকার দিয়ে আমাকে মারতে উদ্ধত হয় ঠিক তখনই আমার আংটিটা থেকে লাল আভা বেরোতে লাগলো। দানবটি ভয়ে পিছিয়ে গেল। মনেহলো দানবের মধ্যে কোথাও একটা মায়া আছে। কেমন যেন অসহায় লাগছে। আমি দানবটির কাছে গেলাম। দানবটি তখনও ভয়ে দেয়ালের সাথে লেপ্টে আছে। আমি দানবটির মাথায় হাত দিতেই আংটি থেকে নিল আভা বেরলো।

আর আস্তে আস্তে দানব থেকে মানুষের আকৃতি নেয়া শুরু করলো। আমি পিছিয়ে পরি। একি এযে এক মাঝ বয়সী পুরুষ। আমি সানির কাছে গিয়ে সানিকে টেনে তুলি। আশপাশ খুঁজে একটু পানি এনে সানির চোখ মুখে ছিটিয়ে দিই। সানি সানি দেখলাম ও চোখ মেলে তাকালো। ওফফ বাঁচলাম। এবার সেই লোকটির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করি।কে আপনি? আমি এই প্রাসাদের রাজা। আপনি? হ্যাঁ আমি। কিন্তু আপনি এই দৈত্যে পরিণত হয়েছিলেন কিভাবে?

অনেক বছর আগের কথা। আমি আমার রাজ্য নিয়ে সুখেই ছিলাম। একদিন এক সাধু আমার প্রসাদে আসে।আমি তাকে যথেষ্ট আপ্যায়ন করি। কিন্তু তবুও তিনি কোন কারনে আমার ওপর ক্রুদ্ধ হয়। এবং তার অভিসাপে আমি দানবে পরিনত হই আর আমার পরিবারেরে সবাই মারা যায়। কিন্তু তাদের আত্মা এখনও বন্দি। সেই সাধু বাবা আমায় বলেছিলেন একদিন শুভশক্তির কারনে আমি আবার মানুষে পরিনত হব। এবং সেই শুভ শক্তির কারনেই আমার পরিবারের সকলের আত্মা মুক্তি পাবে। তুমিই সেই শুভ শক্তি। তুমিই পারবে তাদের মুক্ত করতে। কিভাবে আমি আপনার পরিবারকে মুক্ত করতে পারবো? ওই দরজা খুলে। কিন্তু কিভাবে?

তার জন্য তোমায় এই গ্রামের শেষ সিমানায় একটা পুরনো ও বিশাল জঙ্গল আছে। সেই জঙ্গলে গিয়ে দেখতে পাবে একটি নদী সেই নদী পার করে একটি বাড়ি সেই বাড়ির ভেতর একটি কক্ষ আছে। সেই কক্ষেই আছে এই ঘরের চাবি। তোমাকে সেখানে যেতে হবে। তবে মনে রেখো সেখানে পদে পদে বিপদ। আমি প্রস্তুত সানি তুই কি যেতে পারবি?। হ্যাঁ পারবো। তেমন কিছু হয়নি। কিন্তু তোর এখন একটু বিশ্রাম দরকার। তুই থাক আমি একাই যাবো। না আমিও যাবো। চুপ করে বিশ্রাম নে আমি একাই যাবো। মহারাজ আপনি ওর একটু খেয়াল রাখবেন। হ্যাঁ অবশ্যই। আমার জন্যই তো এমন হলো। আমি আসি সানি। নিজের খেয়াল রাখিস। মায়া,শোনো। বলুন! এই নাও একটা তাবিজ। এটা তোমাকে রক্ষা করবে। ধন্যবাদ এবার আমি আসি।

আমি প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে হাঁটতে থাকি। অনেক্ষণ হাটার পর দেখলাম একটা জঙ্গল। এইতো সেই জঙ্গল যার কথা মহারাজ আমায় বলেছিলেন। আমি জঙ্গলে প্রবেশ করলাম। খুব ঘন আর খুবই অন্ধকার ও নির্জন। একা একা জঙ্গলে হাঁটছি। খুব একা লাগছে এই নির্জন জঙ্গলে। কেমন অদ্ভুত। সাধারন জঙ্গলের মতো না। হঠাৎ একটা শিয়ালের ডাক শোনা গেল। এই জঙ্গলে তা যেন আরও ভয়ংকর লাগছিল। আমি হাটছি। কেন জানিনা মনে হচ্ছে কেউ আমার পিছু নিয়েছে। আমার হাঁটার সাথে সাথে সেটাও হাটছে। আর থামতেই সেও থেমে যাচ্ছে।

যেতে যেতে একটা ফাকা জায়গা দেখে হঠাৎ পিছনে ঘুরলাম।দেখি একটা মেয়ে। বয়স ১০/১১ হবে। আমি দেখে ফেলেছি দেখে ভয় পেয়ে গেল। আমি জিজ্ঞেস করলাম কে তুমি? সে আমায় বললো। আমি ফারাবি। আমি আমার বাবার সাথে জঙ্গলে এসেছিলাম কাঁঠ কাটতে কিন্তু বাবা কখন যে আমাকে রেখেই চলে গেল বুঝতে পারিনি। আস্তে আস্তে আমি জঙ্গলের গভিরে চলে আসি। আর বেরোতে পারিনি। মনে মনে ভাবলাম আহারে বেচারি এই জঙ্গলে একা নিশ্চই খুব ভয় করছিল। তুমি আমার সাথে যাবে?

মেয়েটা মাথা নেড়ে সায় দিলো। আমি আর ফারাবি হাঁটতে লাগলাম। এইতো সেই নদী। কিন্তু এটা পাড় হবো কিভাবে। এখানে যে কোনো নৌকা নেই। তাতে কি হয়েছে? আমরা তো ভেলা বানাতে পারি। কিন্তু ফারাবি এখানে ভেলা বানানো কি সম্ভব? তুমি দেখই না। বলে মেয়েটা জঙ্গলের ভেতরে চলে গেল। কিছুক্ষন পর একটা ভেলা নিয়ে এলো। এই নাও নৌকার বদলে ভেলা। কিন্তু এই সময়ে তুমি সব জোগার করলে কিভাবে আর বানালেইবা কখন। ওইসব বাদ দাও। ওঠো এবার। আমি আর ফারাবি ওঠলাম। ভেলাটা আমি বাইছি। হঠাৎ কি একটা জলে ডুব দিলো। কি ছিল ওইটা। আবার শব্দটা শোনা গেল। শুনলে ফারাবি? হ্যাঁ কিছু একটা আওয়াজ হলো। আবার হলো। একি এযে একটা হাত।

মানুষের তো এত বড় হাত হতে পারে না। কি এটা। আমি প্রচন্ড ভয় পাচ্ছি। দেখলাম হাতটা আমাদের ভেলার চারপাশে ঘুরছে। আমাদের ভেলাটাকে উল্টে দিতে চাইছে। আমি বৈঠার মতো যেটা হাতে ছিল সেটা দিয়েই ওই হাতটাকে মাড়তে লাগলাম। প্রাণপণে চেষ্টা করছি কিন্তু ওর সঙ্গে পারছি না। ফারাবি ভেলার অপর পাশে,ও ভেলাটা শক্ত করে ধরে মাথা নিচু করে বসে আছে। মনেহয় খুব ভয় পেয়েছে। এবার আমি আমার যতটুকু শক্তি আছে সবটা দিয়ে জোরে একটা বারি দিই। হাতটা একটু দূরে চলে যায়।

যত তারাতারি সম্ভব আমরা পাড়ে পৌছাই। ফারাবিকে প্রায় টেনে ভেলা থেকে নামাতে হয়। ও এমন ভাবে ভেলাটা ধরে রেখেছিল যা ছাড়াতে বেশ কষ্টই করতে হয়েছে আমায়। নদিটা থেকে একটু দূরে গিয়ে থামি আমি আর ফারাবি। দেখলাম ফারাবি কোন কথা বলছে না। কি হলো ফারাবি। খুব ভয় পেয়েছিলে তখন? ও মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো। আমি ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম, ভয় পাওয়ার কি আছে? আমি আছি তো। তোমার কিচ্ছু হবে না। আমিতো জানি ফারাবি খুব সাহসী। হুম আমিই হয়তো ভুল বুঝেছি। আসলে ফারাবি একটা ভিতু একটুতেই ভয় পেয়ে যায়। না আমি ভিতু নই।

তাই বুঝি তাহলে একটু হাসো তো। এইতো সত্যিই ফারাবি সাহসী। যাক মেয়েটার ভয়টা একটু কমাতে পারলাম। তুমি তো আমার থেকে সাহসী মায়া। ওই হাতটার সাথে কিভাবে লড়াই করলে। আমাকে বাঁচালে। হুম আমরা দুজনই সাহসী। হাহাহা। এখন আমি আর ফারাবি দুজন হাটছি। ফারাবি সাথে থাকায় আমার নিঃঙ্গতা কেটে গেল। কিন্তু সানির জন্য একটু চিন্তা হচ্ছে। আপু আপু ওই দেখ একটা বাড়ি। হে এইতো সেই বাড়ি। এই বাড়িটার বিশেষ কক্ষে আছে সেই চাবি। কিন্তু একি এগুলো কারা? আমি আর ফারাবি লুকিয়ে পড়ি। দেখলাম মানুষের আকৃতির কিছু লোক কিন্তু এগুলো মানুষ না। দল বেঁধে ওই বাড়িতে প্রবেশ করছে। ওরা প্রবেশ করতেই সেই বাড়িটি একটি প্রাসাদে পরিনত হলো। কি বিশাল প্রাসাদ। কিন্তু এই প্রাসাদে প্রবেশ কিভাবে করবো?

মায়া চলো আমরা প্রাসাদের পেছন থেকে প্রবেশ করি। সেখানে গোপন রাস্তা আছে। কিন্তু তুমি জানলে কিভাবে? না মানে গল্পে শুনেছি পিছনে নাকি সব প্রাসাদের গোপন দরজা থাকে তাই। অহ!হুম এটাই ভালো হবে। আমরা খুব সাবধানে প্রাসাদের পেছনে যাই। অনেক খুঁজার পর একটা গোপন রাস্তা পেলাম। আমি আর ফারাবি রাস্তা দিয়ে খুব সতর্ক হয়ে হাঁটতে থাকলাম। রাস্তাটা খুব অন্ধকার। তাই দেখতে ভিষণ কষ্ট হচ্ছে। আমি আর ফারাবি একে অপরের হাত ধরে ছিলাম। হঠাৎ আমার হাত ফারাবির থেকে আলাদা হয়ে গেল।

ফারাবি ফারাবি কোথায় তুমি ফারাবি। কোথাও পাচ্ছি না ফারাবিকে। এত তাড়াতাড়ি কোথায় চলে গেল মেয়েটা? এই অন্ধকারে কোথায় খুঁজবো আমি ফারাবি কে? অনেক খুঁজে না পেয়ে আবার হাঁটতে লাগলাম। কিছুই করতে পারলাম না। মেয়েটা চোখের সামনে কোথায় চলে গেল। ভাবতে ভাবতে যাচ্ছি। সামনে আলো দেখা গেল। আমি সাবধানে চলতে লাগলাম। তাকিয়ে দেখলাম চারদিকেসেই মানুষ রুপি আত্মা গুলো। কি ভয়ংকর ওদের চেহারা। দাঁঁত গুলো এত্ত বড়বড়। আর শরীরে যেনো এক ফোটা রক্ত নেই। একটা লোককে ধরে এনেছে।কি করবে ওরা।

ওওহহহ নাআআআ একি করলো। লোকটাকে ছিড়ে ক্ষত বিক্ষত করে দিল। লোকটার শরীরের রক্ত মাংস সব খাচ্ছে। কি বিশ্রী নাহ আর পারছি না। এই নৃশংসভাবে মৃত্যু কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। হঠাৎ ঠান্ডা কিছুর স্পর্শ পেলাম আমার কাঁধে। পেছনে ঘুরে দেখি সেই আত্মা গুলোর মধ্যে একজন আমায় দেখে ফেলেছে। মুহূর্তেই অনেক গুলো একসাথে আমায় ঘিরে ধরেছে। পালানোর কোনো পথ নেই। আমাকে নিয়ে যাচ্ছে ওরা। কোথায় নিয়ে যাচ্ছে যানি না। শুধু জানি হয় আজ আমার শেষ দিন নাহয় ওদের।

আমাকে নিয়ে একটি কক্ষে বন্দি করে রাখা হলো। চার দিকের দেয়াল গুলোতে রক্তের ছাপ। কত মানুষকেই না ওরা এখানে হত্যা করেছে। ছিড়ে খেয়েছে তাদের দেহ। কি নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয় তাদের। তাহলে কি ফারাবিকেও তারা না এ হতে পারে না। ফারাবিকে আমি কথা দিয়েছি। ওর কিছু হতে দেব না। ফারাবির কিচ্ছু হতে পারে না ফারাবি কোথায় আছে? আমাকে জানতেই হবে। আমি চারদিকে খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু পালানোর কোন পথ পেলাম না। কিছুই করার নেই। যতক্ষণ না ওরা আমাকে বের করছে। আমাকে অপেক্ষা করতে হবে। তখনই দরজায় শব্দ হলো। একটা আত্মা আমায় নতুন পোষাক পড়াতে এসেছে। কিন্তু কেন? যে লোক কে মারা হয়েছিল তাকে তো এমন পোষাক পড়ানো ছিল না। আমায় নতুন পোষাক পরিয়ে রাজকন্যা দের মতো সাজানো হলো। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। কেন এমন করা হচ্ছে। এর পর আমাকে নিতে আরও কয়েকটা আত্মা এলো। আমি ওদের সাথে যাচ্ছি। এক বিশাল কক্ষে আমায় আনা হলো।

এসো মায়া কে? কে আমার নাম ধরে ডাকছে। সেই কক্ষের সিংহাসনে একটা মেয়েকে দেখা যাচ্ছিল। খুব চেনা চেনা লাগছে। আরে একি!!!!! এযে ফারাবি।কিন্তু এখানে কিভাবে। আর এই পোষাকে। তার মানে তুমি নিশ্চয় অবাক হচ্ছো। আমি এখানে কি করে। আমি এই রাজ্যের রানী। তুমি? হ্যাঁ আমি,আর তোমাকে কেন এইভাবে সাজিয়ে এনেছি জানো? তোমার জীবনী শক্তি আমি কেঁড়ে নেব। এর পর আর আমায় কেউ মারতে পারবে না। তোমার এই আশা কখনও পূরন হবে না ফারাবি। হাহাহাহাহা কে মারবে আমায়? তুমি? হাহাহাহা! হেসে নাও যতো হাসতে পারো। তোমার মৃত্যু আমার হাতেই।

বলেই দেয়াল থেকে একটা তলোয়ার নিয়ে ফারাবির সামনে চলে যাই। ফারাবির গলা কেঁটে দিই। কিন্তু ওর তো কিছু হলো না। ফারাবি হাসতে হাসতে বলে। আমায় মারার ক্ষমতা কারো নেই। হঠাৎ একটা জোরে হাওয়া আসে। আর আমায় কানে কানে বলে। দেখছো যাহা সবি ভ্রম সবি হলো ভুল! ডাইনির প্রাণ চাও? ছিন্ন করো চুল। মানে ফারাবি ডাইনি। আর ডাইনির চুল কাটলেইতো ও মারা যায়। দেখলাম ফারাবির চুল অনেক লম্বা। ফারাবি আমার সামনে গিয়ে সকল আত্মাদের আহব্বান করছে। হে আমার অনুগত আত্মারা। তোমাদের খুশির সংবাদ দিচ্ছি। আজ আমি অমর হতে যাচ্ছি। সব আত্মারা ফারাবির জয়দ্ধনি দিতে লাগলো।

ফাররাবি যখন একটু অন্যমনস্ক হলো ঠিক তখনই আমি একটানে ফারাবির চুল গুলো ধরে ফেললাম এবং এক কোপে সব চুল কেটে দিলাম। ফারাবি চিৎকার করতে লাগলো। চারদিকে যতো আত্মা ছিল সব এক এক করে মিলিয়ে যেতে লাগলো। চার দিকে অন্ধকার।হয়ে আসছে। এমন সময় হঠাৎ দেখতে পেলাম সিংহাসনের ভেতর থেকে আলো আসছে। এটা কিসের আলো? দেখতে পেলাম সেখানে একটা চাবি এই সেই প্রতিক্ষিত চাবি।

আমি চাবিটা হাতে নিলাম। ঠিক তখনই চরাদিকে সবকিছু কাঁপতে লাগলো। ভূমিকম্প হওয়ার মতো আমি দৌড়ে সেই প্রাসাদ থেকে বেড়িয়ে আসি। বেড়নোর সাথে সাথে প্রাসাদটি ভেঙ্গে মাটিতে মিশে গেল। এবার আমার ফেরার পালা। আমি একা হাঁটছি আর ভাবছি। সত্যিই ফারাবি ডাইনি তাতো আমি বুঝতেই পারিনি কিছুক্ষণের মধ্য ভেলা নিয়ে আসা। প্রাসাদের পেছনে দরজা আছে জানা। আর সেই হাতটার সাথে যখন লড়াই করছিলাম তখন চুপ করে বসে থাকা। এসবের মানে আামার আগেই বোঝা উচিৎ ছিল। সত্যিই আমি এখনও পুরোপুরি প্রস্তুত হই নি। একা একা হাঁটতে মোটেই ভালো লাগছে না। তখন নাহয় ছোট মেয়ের বেসে ফারাবিই ছিল। কিন্তু একা লাগে নি।

খুব একা লাগছে বুঝি? সেই হাওয়া আবার। কে তুমি? আমায় কেন সাহায্য করছো? তোমায় তো বলেছিলাম ঠিক সময়ে আমায় চিনতে পারবে। কিন্তু হাওয়াটা চলে গেল। আমি নদীর কাছে চলে এসেছি। এইতো সূর্য উঠছে। এই বিশাল অভিষপ্ত রাত পেড়িয়ে সূ্র্য টাকে দেখে খুব ভালো লাগছে। কিন্তু ফারাবির সেই ভেলাটাতো কোথাও দেখতে পারছি না। হয়তো ওর সাথে সাথে ভেলাটাও শেষ হয়ে গেছে। আমি আশপাশে খুঁজে একটা নৌকা পেলাম। বেশ পুরনো। তবে মজবুত।

একটা ছিদ্রও রয়েছে। কিন্তু এটাই এখন আমার শেষ সম্বল। আর নদীটা বেশি বড় না হওয়ায় যাওয়া যাবে। আশপাশ থেকে কিছু পাতা গুজে দিলাম ছিদ্র টায়। বৈঠার জন্য ডাল ব্যাবহার করছি। নৌকা বাইছি। আর একটু একটু পানি উঠছে। আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাইতে লাগলাম। পাড়ের কাছাকাছি আসতেই নৌকা অর্ধেক ডুবে গেল। আমি লাফ দিয়ে পাড়ে উঠলাম। যাক আমায় নিয়ে তো আর ডুবেনি। এবার জঙ্গলে হাঁটছি। সকাল সকাল জঙ্গলটা বেশ সুন্দর লাগছে। চারদিকে পাখির কিচির মিচির। মনেহয় ফারাবির মৃত্যুতে জঙ্গলটা আবার প্রাণ পেল। আমি রাজপ্রাসাদে চলে আসি। সেখানে ভেতরে ঢুকেই দেখি সানি নেই আর রাজাও নেই। একটু ভয় পেয়ে যাই। কিন্তু আমাকে অবাক করে সানি পেছন থেকে আমার কাঁধে হাত রেখে বলল। আমায় খুঁজছিস? সানি কেমন আছিস এখন। দেখ আমি চাবি নিয়ে এসেছি। এবার স্পার্কির মৃত্যু অবধারিত।

হ্যঁ মায়া। আমায় চাবিটা দে। সানির আচরণ কেমন অন্যরকম লাগলো। ওতো এত শান্ত হয়ে তো কথা বলে না। আর আমি ঠিক আছি কিনা একবারও জিজ্ঞেস করেনি। আর চাবি কেন চাইছে। কিছু একটা গণ্ডগোল তো আছেই। আমি তা পরীক্ষা করার জন্য সানিকে বললাম। সানি মনে আছে? অনেকদিন আগে আমাদের বাড়িতে তুই আমার মাথায় পাথর ছুঁড়ে মেরেছিলি। হে মনে আছে। এবার চাবিটা দে। না তুমি সানি নও। কে তুমি? হাহাহাহা ধরেই ফেললে? ও নিজের বিভৎস রুপে ফিরে এল। এক শয়তান রুপে। হ্যাঁ মায়া আমি স্পার্কির সহচর ডিওবার্গ। মনে নেই মায়া? কিন্তু তোমায় তো ১০০০ বছর আগেই আমি মেরে ছিলাম। তুমি এলে কিভাবে? আমাকে আমার প্রভু স্পার্কি ফিরিয়ে এনেছে। এইবার আমি তোমায় শেষ করবো। সানি কোথায়। আর মহারাজ কোথায়।

এইতো সানি। তোমার পিছনে। তাকিয়ে দেখি সানির হাত পা বাঁধা। আর মহারাজ? কে মহারাজ। আমিইতো ছিলাম সে। তোমাকে মিথ্যে বলেছিলাম। ভেবেছিলাম ফারাবির হাতে তোমার মৃত্যু হবে। কিন্তু না। তা হলো না। তাতে কি আমি তোমায় মারবো। একথা বলে ডিওবার্গ তার মন্ত্র দ্বারা মায়ার হাত পা বেঁধে ফেললো। মায়া কিচ্ছু করতে পারছে না। কি মায়া।ভাবছো তো কেন তোমার শক্তি কাজ করছে না? কারণ আমি তোমায় যে তাবিজ দিয়েছিলাম সেটা।সেই তাবিজের কারনে তোমার শক্তি কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। বুঝেছি তাহলে এই কারনে আমার শক্তি কাজ করছে না। আমি আমার হাত থেকে কোনরকম ভাবে তাবিজটা ফেলে দিই। সাথে সাথে আমার আংটি থেকে লাল আভা বেরনো শুরু করলো। নিজের ভেতর অদম্য এক শক্তির অনুভব করছিলাম আমি। সারা শরীর যেন ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।

নিজের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই আমার। আমার হাত পা এখন আর বাধা নেই। নিজের অজান্তেই আমি আমার হাত উপরে তুললাম। ডিওবার্গ উপরের দিকে উঠতে লাগল। আমি ওর দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম। কেন যানিনা ও আমায় দেখে ভিষণ ভয় পাচ্ছিল। অন্য হাত মেলে ধরতেই আমার হাতে তলোয়ার চলে এল। আমি ডিওবার্গ এর শরীরে ঢুকিয়ে দিলাম। ও ধোয়ার মতো মিলিয়ে গেল। এতক্ষণ আমি যা করছিলাম তার মধ্য কিছুই আমার নিয়ন্ত্রণে ছিল না। মনে হচ্ছিল আমার শরীরে এ আমি নই। অন্যকেও যেন আমার ভিতর। হঠাৎ সেই ঠান্ডা অনুভূতি বন্ধ হয়ে গেল। পাশে তাকিয়ে দেখি সানি আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সানি তুই ঠিক আছিস তো? ওই শয়তান টা তোর কিছু করে নি তো? কিরে কিছু বল। শুধু তাকিয়ে আছে। অই কথা বল কি হয়েছে তোর। কি বলব? তোর যে রুপ দেখলাম তার পর কথা বলার সাহস নেই। কি বলছিস এইসব। কি রুপ? তোর চোখ লাল হয়ে গেছিলো। আর শরীর থেকে আলো ছড়াচ্ছিলো। কি বলছিস! আমার তো তেমন কিছু মনে হয়নি। ও হ্যাঁ জানিস আমার নিজের মধ্যে কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না।

হুম,বুঝেছি। আসলে তোর আগের শক্তি এখনও আছে কিন্তু তুই জানিস না। হয়তো। তুই জানিস আমার খুব চিন্তা হচ্ছিল। একা একা গেছিস তার ওপর শয়তান টা তোকে কোথায় না কোথায় পাঠিয়েছে এইসব ভেবে খুব ভয় পাচ্ছিলাম। আমারও তোর জন্য চিন্তা হচ্ছিল। আচ্ছা চল দেখি সেই ঘরটাতে কি আছে। আমি চাবিটা তালায় দিলাম। তালা খুলে গেল। দরজা খুলতেই দেখলাম একটা বাক্স। আমি বাক্সটা খুললাম ভিতরে আর একটা চাবি। কিন্তু এই চাবি কিসের।একটা কাগজ ও আছে। কাগজ টা হাতে নিলাম। সেটায় লিখা। যানি তুমি আসবে আজ মন আকাশে মেঘের সাজ জানতে চাও চাবির কর্ম? জানতে হবে মৃত্যু রহস্য। মৃত্যু রহস্য? কার মৃত্যু রহস্য। কিভাবেই বা জানবো।আমি কিছুই ভাবতে পারছি না। মায়া চল এবার আমাদের বাড়ি যাওয়া উচিত। সবাই নিশ্চয় খুব চিন্তা করছে। হুম, সানি চল।

আমারা প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে এলাম। বাস স্টেন্ড এ পৌছে কিছু খেয়ে বাসে উঠলাম। আমি শুধু ভাবছি কার মৃত্যু রহস্য। আর কোনো সূত্র কেন দেওয়া নেই। কার কাছথেকে জানবো তাও লিখা নেই তাহলে কিভাবে বুঝবো এখন আমায় কি করতে হবে? ২ দিন পর আমরা আবার ময়মনসিংহে পৌছাই। একটা রিক্সা ডেকে বাসার দিকে রওনা হই। রিক্সা থেকে নেমে বসার সামনে আসতেইমনেহলো কান্নার আওয়াজ আসছে ভেতর থেকে। আর অনেক লোকও ভেতরে। আমি তাড়াতড়ি ভেতরে ঢুকে দেখি মা কাঁদছে। চারদিকে আমাদের সব আত্বীয় স্বজন। আমাকে দেখে ভূত দেখার মতো সকলে তাকিয়ে আছে। আমি ছুটে মায়ের কাছে গেলাম।

মা তোমার কি হয়েছে? এমন ভাবে কাঁদছো কেন? তুই এমন করবি কখনও ভাবি নি। আমাদের বললেই তো আমারা তোর সাথে সানির বিয়ে করিয়ে দিতাম। এভাবে পালিয়ে যাওয়ার কি ছিল? কিন্তু মা! কোন কিন্তু না। আজই তোর আর সানির বিয়ের ব্যাবস্থা করা হবে। মা আমার কথাটা শোনে যাও। আমি তো পালিয়ে যাইনি আমিতো কথার মামাঝখানে নানাজান এগিয়ে এসে বললেন। তোমার কোনো কথা আর কেউ শুনবে না। এমনি প্রতিবেশী সকলে আমাদের অনেক অপমান করেছে। আজ তোমার আর সানির বিয়ে তৈরি থেকো।

নানাজানের মুখের উপর কথাবলার সাহস কারো নেই। আমারও না। আমার আর সানির কথা কেউ শুনলো না। একটু পরেই কাজি এনে আমাদের বিয়ে পড়ানো হলো। আমি মোটেই এই বিয়েতে রাজি ছিলাম না। আজ আমাদের বাসর রাত। সানি,আমি কখনোই এই বিয়েটা করতে চাইনি। সরি সানি। আমার জন্য তোর লাইফটা শেষ হয়ে গেলো। কি বলছিস মায়া! হ্যাঁ সানি, জানিনা স্পার্কি কে মারতে গিয়ে কোনো বড় বিপদে পড়বো কিনা যানি না। তোকে এসবে জড়াতে চাই না। আমার কিছু হয়ে গেলে হোক কিন্তু না মায়া তোর কিছু হবে না। কিন্তু সানি আমার জীবন সাধারণ কোনো জীবন নয়। এই জীবনের একটা উদ্দেশ্য রয়েছে। মা

য়া তোকে আমি সাহায্য করবো। আর এখন তো আমি তোর স্বামি। না সানি এই বিয়েটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারবো না। আমায় ক্ষমা করে দিস। বলেই বারান্দায় চলে গেলাম। সানি ঘড়ে বসে আছে। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে। বাড়ান্দায় বসে আছি। কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম বুঝতে পারলাম না। সকালে উঠে দেখি আমি খাটে শুয়ে আছি। আর সানি চেয়ারে বসে। গুড মর্নিং মায়া। এটা আমাদের বিয়ের পর প্রথম সকাল। যাই হোক তুই বিয়েটা মেনে নে আর নাই নে। বিয়েটা তো অস্বীকার করতে পারবি না আমরা স্বামি স্ত্রী। আমি এখানে কি করে এলাম?

হু,ম্যডাম আমি কোলে করে এনেছি আপনাকে বাড়ান্দায় গিয়ে দেখি নাক ডেকে ঘুমাচ্ছেন। তাই ভাবলাম নিয়ে আসি। আমায় ডাকতে পারতি। হু ডাকি আর আপনি আমার ওপর চড়াও হন। আপনি যে ঘুমের মধ্য ডাক একদমই পছন্দ করেন না সে আমি বেশ ভালোই জানি। আমি উঠে ঘরের বাইরে গেলাম। সবাই এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন আমি বিশাল বড় অপরা ধকরেছি। মামি আমার দিকে এসে বললো। কিরে মায়া তুই এখনও শাড়ি পাল্টাসনি কেন। আর এভাবে কেউ ঘর থেকে বেরহয়? তোর এখন বিয়ে হয়েছে একটু বুদ্ধিও এখনও হলো না।

মামি আসলে আমি হ্যাঁ শাড়ি পরতে পারিস না এইতো। আয় আমি পাল্টে দিচ্ছি। মামির সাথে শাড়ি পাল্টে নিচে নেমে এলাম। দেখলাম সানির বাড়ির সবাই এসেছে। আমায় দেখে সানির মা এগিয়ে এলো। সেই ছোট থেকেই ওদের দেখছি। আমি তো মনে মনে মায়াকেই সানির জন্য পছন্দ করেছিলাম। কিন্তু তোরা এমন করবি ভাবি নি। যা হয়েছে ভালোই হয়েছে। এবার চল আমাদের বাড়িতে চল। আমি আমার বৌমাকে নিয়ে যাবো।আন্টি একটা কথা বলার ছিলো। আন্টি কি! আমি আজ থেকে তোমার মা। কি বলবে বলো। আমি চাই আরও কিছুদিন এই বাড়িতে থাকতে। আমাকে থাকতে দেবেন?

কিন্তু,আচ্ছা ঠিক আছে থাকো। সানিও থাকবে তোমার সাথে। কিন্তু কিছুদিন মাত্র তার পর আমার বৌমাকে আমি বাড়ি নিয়ে যাবো। সারাদিন মেহেমান দের নিয়ে সবাই খুব মজা করলো। আশেপাশের সবাই আমাকে আর সানিকে দেখতে এলো। আমার এসবে মন বসছে না। শুধু মনে হচ্ছে কোন মৃত্যু রহস্যের কথা সেখানে লিখা ছিল। রাত হয়ে গেছে। আমাকে আর সানিকে আবার একই রুমে থাকতে হবে। আমি জানি চেয়ারে ঘুৃমানো খুব কষ্টের। তাই আমি বিছানার মাঝখানে বালিশের দেয়াল তৈরি করে দিলাম।

এসব কি করছিস মায়া। শোন বিছানার ওই সাইড তোর আর এই সাইড আমার। নে এবার ঘুমিয়ে পড়। কেন একসাথে শুলে কি হয়? আমরা তো স্বামি স্ত্রী। হিহিহি! অই ফাজলামো বন্ধ না করলে ঘর থেকে বের করে দেবো কিন্তু। আচ্ছা আচ্ছা থাক আর করবো না। কান ধরলাম। কি বউ পেয়েছিরে বাবা। আস্ত শাকচুন্নি। কি বললি? কিছু না। আপনার অনুমতি পেলে ঘুমাই? হু। অনেক রাত হয়ে গেছে। সানিও ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু আমার চোখে ঘুম নেই। সেই কথাটা এখনও ভাবছি। মা…য়া…সেই বাতাস থেকে অদৃশ্য কারো কন্ঠ। কে কে তুমি। আমায় তোমার পরিচয় দাও। হ্যাঁ মায়া আজ সময় হয়েছে আমার পরিচয় দেয়ার। আমি যারিন। তোমার বন্ধু।

প্রায় ১০০০ বছর আগের কথা। যখন তুমি স্পার্কি কে হত্যা করো তখন তুমি সেই রাজ্যের সমস্ত দায়িত্ব নাও। একদিন সকালে তুমি বনজঙ্গলে ঘেরা পাহাড়ে ঘুরতে বের হও ঠিক তখনই বাঁচাও বাঁচাও! কে এভাবে অত্মচিৎকার করছে? মায়া দৌড়ে সেদিকে ছোটতে থাকে। দেখা যায় একটা মেয়ে। তার পিছনে একটা বাঘ। ক্রমশ মেয়েটিকে তাড়া করছে। মেয়েটি প্রাণপনে দৌড়াচ্ছে। হঠাৎ একটা তির যেন সব স্তব্ধ করে দিল। বাঘটি মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। মেয়েটিও দাঁড়িয়ে গেছে। মায়া মেয়েটির কাছে যায়। কে তুমি?এই পাহাড়ে কি করছো? আমি যারিন। এই বনে হারিয়ে গেছি। তোমার মা বাবা কোথায়? তাদের আমি কখনও দেখি নি। আমি এক বৃদ্ধার কাছে মানুষ হয়েছি। ওনি মারা যাওয়ায় আমার এখন কেউ নেই।আমার সাথে যাবে?

কিন্তু আপনাকে দেখেতো কোনে রাজ্যের রানি মনেহচ্ছে। আমি আপনার সাথে কিভাবে যাবো? হে তুমি আমার সাথেই যাবে। আমি তোমায় আমার প্রসাদে রাখবো। আমি মায়ার সাথে যাই। কিছুদিন পর একদিন হঠাৎ হঠাৎ একদিন সাধু বাবা মায়াকে ডেকে পাঠালেন। মায়াকে বললেন তোমার সময় শেষ হয়ে এসেছে। এবার তোমাকে এই পৃথিবী ছেড়ে যেতে হবে। তার কারন মায়ার নতুন করে জন্ম নেবে। এইজন্য তোমার আত্মাকে প্রস্তুত হতে হবে। কিন্তু কিন্তু কি বাবা। তোমার সাথে আরও একজনকে মরতে হবে। এবং তাকে স্ব ইচ্ছায় আত্ব বিসর্জন দিতে হবে। জোর করে হবে না।কিন্তু এমন কাকে আমরা পাবো। কে করবে এই কাজ?

জানি না তবে সাবধান এই কথা যেন কেউ না জানে মায়ার মৃত্যুটা একটা রহস্য হয়ে থাকবে। কিন্তুু বাবা কাউকে না জানালে কিভাবে হবে? খুঁজে বের করো এমন কাউ কে। যে একবার বলতেই এই কাজের জন্য রাজি হবে। মায়া চিন্তায় পরে যায়। মায়া আমায় সব বলল। আসলে আমি আর মায়া ততোদিনে খুব ভালে বন্ধু হয়ে গেছি। তাই মায়া আমাকে সবটা জানালো। মায়ার কথাগুলো শোনে আমি বললাম। আমি তোমার সাথে আত্ম বলি দেবো। কিন্তু। কোনো কিন্তুু না। তোমার জন্যই আমি বেঁচে আছি। আর তোমার জন্য আমি সব করতে পারি। সেদিন রাত্রে আমি আর মায়া শুদ্ধ হয়ে সাধু বাবার সামনে যাই।

তখন তিনি বলেন মায়ার মৃত্যু নতুন জন্মের জন্য। আর যারিনের মৃত্যু মায়াকে সাহায্য করার জন্য। মায়া প্রথমে তুমি এই চক্রের ভেতর আসনে বসবে। আমি বলার পর যারিন তোমার সাথে বসবে। আমরা সাধু বাবার কথা মতো তাই করি। তিনি আমাদের বললেন স্ব ইচ্ছায় মৃত্যু বরন করছো তোমরা। নিজের আত্মাকে বিশুদ্ধ রাখো। এর পর আমাদের চারদিকে আগুন দেয়া হয়। আমরা সেই আগুনে শেষ হয়ে যাই। সাধু বাবা আমার আত্মা কে এক নিরাপদ স্থানে বন্দি করে রাখেন। আর মায়ার আত্মাকে নতুন করে জন্ম নিতে সাহায্য করেন।

তুমি যেদিন ১৬ বছরে পা রাখলে সেদিন আমায় তোমার কাছে পাঠানো হয়। তোমায় সব মনে করাতে। সেই বই আমি তোমায় দিয়েছিলাম। তুমি হয়ত জানো না সেই সাধু বাবা এখনও আছেন। কি?কোথায় তিনি? মনে নেই মায়া ওইদিন সানি তোমায় যার কাছে নিয়ে গেছিল। মানে ওনি সাধু বাবা? হ্যাঁ মায়া। তুমি তার কাছে যাও। সব জানতে পারবে। আমি কালই যাব ওনার কাছে। যারিন আবার অদৃশ্য হয়ে গেল। আমি ঘুমাতে পারছি না। কি হবে কাল। সানিকে জানাতেই হবে। সারা রাত ঘুমোতে পারলাম না। আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি।হঠাৎ কারো স্পর্শ পেলাম পিঠে। চমকে গেলাম।

কিরে মায়া এখানে দাড়িয়ে আছিস কেন। তাও এতো সকালে। সানি আমাকে ওই লোকটার কাছে নিয়ে চল। কোন লোকটা? ওইযে তুই যার কাছে জেনেছিলি আমার বিপদ। কিন্তু এত সকালে কেন? সানিকে সব খুলে বললাম। আমি আর সানি বাড়ি থেকে বেরোলাম। আমরা ঠিক সেই জায়গায় এসে পড়ি। আমি ঘরে ডুকে দেখি কেউ নেই। বাবা বাবা বলে চিৎকার করছি কিন্তু কেউ সাড়া দিচ্ছে না। তখন ঘরে আবার ডুকলাম কেন জানিনা মনে হলো ঘরের কোণে কেউ আছে। আমি কাছে গিয়ে দেখি সাধু বাবা। বাবা আপনি আপনার পরিচয় আগে কেন দেন নি। মায়া তুই কার সাথে কথা বলছিস। কেন বাবা কে তুই দেখতে পারছিস না?

এখানে তো কেউ নেই। কি বলছিস এইতো ইনি। এবার বাবা আমায় বললেন। শান্ত হও মায়া। ও আমায় দেখতে পারছে না। কারণ আমি মায়া দ্বারা অদৃশ্য হয়ে রয়েছি। কিন্তু আমি কিভাবে দেখছি। তুমি শুভ শক্তির অধীকারি তাই। বাবা আপনি ওর সামনে আসুন। বাবা সামনে এলেন। একি মায়া এ কি করে সম্ভব। বাবা কিভাবে এলো।এতক্ষন তো ছিলো না। সবই সম্ভব। মায়ার নতুন জন্ম। আত্মা সবই সত্যি। আর আমার অদৃশ্য হওয়া টাও। বাবা আমায় বলোন আমি কি করবো। কিভাবে স্পার্কি কে হত্যা করবো।

স্পার্কি কে শেষ করতে হলে তোমাকে তার মুখোমুখি হতে হবে। কিন্তু কিভাবে? মায়া তুমি সেদিন একটা চাবি পেয়েছিলে মনে আছে? হে! ওই চাবিটা একটি দরজার চাবি। সেই দরজার ভেতরে রয়েছে একটি বই। সেই বই তোমাকে স্পার্কির আত্মার কাছে যেতে সাহায্য করবে। কিন্তু ওই দরজা কোথায় পাবো। সেই জন্য তোমায় এক পূরনো কবরস্থানে যেতে হবে।সেখানে গিয়ে সবগুলো কবরের মধ্য এমন একটি কবর রয়েছে যেটির মধ্যে কোনো মৃতদেহ নেই বরং আছে একটি সুরঙ্গ তোমাকে সেই সুরঙ্গের ভেতর ঢুকতে হবে।সেখানে ওই দরজা পাবে। সেখান থেকে তোমায় ওই বই উদ্ধার করতে হবে।

আমি পারবো। এতো সহজ নয় মায়া। স্পার্কি শক্তি বই আনতেই জেগে উঠবে। আর তোমার ক্ষতি করার চেষ্টা করবে। আর সেই কবরের খুঁজ পাওয়া এবং তার ভেতর ডোকে বই আনা খুবই কঠিন। অনেক পিশাচ শক্তি সেখানে রয়েছে। তারা কিছুতেই তোমায় তোমার লক্ষে পৌছাতে দেবে না। তোমায় সাবধান হতে হবে মায়া। হ্যাঁ বাবা আমি যে কোনো শক্তির মোকাবেলা করতে প্রস্তুত।

মায়া আমিও যাবো তোর সাথে। না সানি তোকে এই ভয়ংকর জায়গায় আমি নিয়ে যাবো না। এতে তোর ক্ষতি হবে। আমি তা চাই না। না আমি যাবই। তোকে আমি কোথাও একা ছাড়বো না। মায়া ওকে যেতে দাও। তোমার সাহায্যের দরকার হতে পারে। কিন্তু বাবা ওর যে ওই অশুভ শক্তির সাথে লড়ার কোনো শক্তি নেই। সানি এদিকে এসো। এই মালাটা গলায় পড়ে নাও। ওরা তোমার ক্ষতি করতে পারবে না। ধন্যবাদ বাবা। এই শহরের শেষ প্রান্ত একটি কবরস্থান আছে। কমল দিঘি কবরস্থান। সেইখানে মাত্র একটা কবর দেখবে যার ওপর পুতুল আঁকা। সেইটার ভেতরেই পথ। সেখানেই তোমাদের যেতে হবে। হ্যাঁ বাবা। আপনি আমাদের জন্য আশির্বাদ করবেন আমরা যেন আমাদের কাজে সফল হতে পারি। সাবধানে যেও।

আমরা বাড়িতে চলে আসি। রাত তখন প্রায় ১২ টা। সবাই ঘুমিয়ে গেছে। আমি আর সানি আস্তে আস্তে বেড়িয়ে গেলাম। এমন সময় গাড়ি পাওয়া মুসকিল অনেক খুঁজে একটা রিক্সা পেলাম। আমি আর সানি যাচ্ছি। কিছুক্ষন পর আমরা সেই কবরস্থানে আসলাম। বিশাল বড় কবর স্থান। কিভাবে খুঁজবো আমরা। আমি আর সানি দুজন দুইদিকে খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু কোথাও পাচ্ছি না।

মায়া বল সানি। একটা জিনিস লক্ষ্য করেছিস? কি? আমরা ঘুরে ঘুরে একই জায়গায় খুঁজছি। তাই তো! আমাদের আরও সাবধান হতে হবে। চল মায়া এক সাথে যাই। হঠাৎ একটা গাছে শব্দ হলো। মনে হলো গাছের ডালে ভারি কিছু পড়েছে। সানি টর্চ ধরলো কিচ্ছু পেলাম না। আবার আর একটু এগিয়ে দেখলাম একটা কবর।এইতো মায়া। এইতো কবরের উপর পুতুল আঁকা। চল। আমরা কবরের কাছাকাছি যেতেই পিছন থেকে কেউ ডেকে ওঠলো। মায়া কন্ঠটা কেমন যেন প্রাণ হীন কে! আমি পিছনের দিকে তাকালাম। ভয়ে পিছিয়ে গেলাম। কি ভয়ংর দেখতে একটা মহিলা। মনে হলো মাত্র কবর থেকে উঠে এসেছে। মায়া মায়া দেখ সব কবর ভেঙ্গে যাচ্ছে।

আমাদের চোখের সামনে এক এক করে লাশগুলো উঠতে লাগলো। এগিয়ে আসছে আমাদের দিকে। আমি আর পথ না দেখে হাত উপরে তুললাম।সেই তলোয়ার টা আমার হাতে চলে এলো। এক এক করে আমি এদের শরীর ক্ষত বিক্ষত করছি। কিন্তু সেগুলো আবার জোড়া লাগছে আবার এগিয়ে আসছে। না এভাবে চললে হবে না সানি তুই কবরের সুরঙ্গটা বের কর। সানি সেই দরজা খুলল। সানি এই নে চাবি। তুই বইটা নিয়ে আয়। আমি এদিকে সামলাচ্ছি। সানি চলে গেলে। আমি সেই মৃত দেহগুলো কে সামলাচ্ছি।এভাবে অনেক্ষণ চলল। হঠাৎ সব মিলিয়ে গেল। বুঝলাম না কিছুই। পেছনে দেখি সানি। একটা বই হাতে নিয়ে বেড়িয়ে আসছে। সানি তুই ঠিক আছিস? বইটা পেয়েছিস? হ্যাঁ পেয়েছি। আর যা ঘটেছে বাড়িতে গিয়েই বলি চল।

চল এবার যাওয়া যাক। আমরা বাড়িতে চলে এলাম। ঘরে ঢুকলাম। সানি বলল ওর পানি পিপাসা পেয়েছে। ঘরে পানি ছিলনা তাই পানি আনতে রান্না ঘরের দিকে গেলাম। এসে দেখি মা উঠে বসে আছেন। ঘড়ির দিকে তাকালাম। ৪:০০ বাজে। এমন সময় তো মা জেগে থাকে না। মায়ের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে মা? মা কোনো উত্তর দিলো না। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম। এবারেও কিছু বললেন না। মায়ের শরীরে হাত রাখতেই চমকে গেলাম। এমন ঠান্ডা কেন। মা আমার দিকে তাকালো।

আমি পিছিয়ে যাই। মায়ের চোখের মনি লাল হয়ে আছে। মাকে কেমন যেন অন্য রকম লাগছে।দূর থেকেই মাকে জিজ্ঞেস করি। কি হয়েছে তোমার মা? আমি তুর মা নই।(রেগে) কে তুমি? মায়া এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেছিস। আমাকে?হাহাহাহা আমি ফিরে এসেছি মায়া। তোকে শেষ করতে। হাহাহা মা থেকে সেই বহুরুপী একটি পুরুষের আকার ধারণ করলো। হাহাহা মায়া আমি তোর বাবা হাহাহা। বাবা! স্পার্কি? হ্যাঁ আমি। তোকে শেষ করবো। তবে এভাবে না। তুই আমার চেয়ে অনেক বেশি যন্ত্রনা পাবি মায়া। অনেক বেশি।

কি করবে তুমি? তোমার মৃত্যু আমার হাতে। এর জন্যই আমার জন্ম। এবার আমি দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে এসেছি। এবার আমি তোকে মেরে আমার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেব। অপেক্ষা কর মায়া।মিলিয়ে গেল স্পার্কি। আমি দৌড়ে সানিকে গিয়ে সব বললাম। সানি আমায় শান্তনা দিয়ে বলল ভয় পাসনা আমি আছি। চল এই বই থেকে স্পার্কি কে মারার রহস্য দেখি। সানি বই খুলল। আরে এই বইয়ের লেখা তো কিছুই বুঝতে পারছি না সানি। কি বলছিস মায়া। আমি তো বুঝতে পারছি। কিন্তু কিভাবে? জানি না। কাল সকালে বাবার কাছে জানতে হবে। হ্যাঁ তাই ভালো। হঠাৎ নানাজানের ঘর থেকে চিৎকারের আওয়াজ হলো। দৌড়ে আমি আর সানি দেখতে গেলাম। একি নানাজান মাটিতে পড়ে আছেন কেন? আমি আর সানি নানাজান কে তুললাম। সানি পানি আনলো। আমি চোখমুখে পানি দিতেই নানাজান চোখ খুললেন। চোখে আতঙ্ক। কি হয়েছে নানা জান?

আমি আমি ঘুমাচ্ছিলাম হঠাৎ দেখি আমি ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ মনেহল কেউ আমার বুকের ওপর ভর করে বসে আছে। চোখ খুলে দেখি একটা কালো ছায়া। আমি ভয় পেয়ে যাই। জোরে চিৎকার দিতে চেষ্টা করি। কিন্তু পারি না। আমার বুকে প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছিল। আমি অনেক কষ্টে চিৎকার দিয়ে বিছানা থেকে পড়ে যাই। নানাজান আপনি বিশ্রাম নিন। এসব আপনার চোখের ভুল। নানাজানকে কোন মতো শান্ত করতে চাইলাম।সবাই ততক্ষনে উঠে পরেছে। নানা জানের এই অবস্থা দেখে সবাই ঘাবড়ে গেলো। আমি সানিকে নিয়ে একটু আড়ালে যাই। সানি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের বাবার কাছে যেতে হবে।

:হুম মায়া তুই ঠিকই বলেছিস। চল বইটাও সাথে নিয়ে নিই। নানাজানের অবস্থা একটু ভালো হতেই আমি আর সানি বেড়িয়ে যাই। বাবার কাছে আসি। বাবা এসব কেন হচ্ছে। কি কারনে হচ্ছে। মায়া বিচলিত হইয়ো না। এই সবই স্পার্কির কারণে হয়েছে। ও জেগে উঠেছে। বাবা এখন আমি কি করবো? ও যদি আমার পরিবারের কারে ক্ষতি করে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না। তোমাকে পথ বলবে সেই বই। বইটা বের করো। সানি বই বের করে সাধুর সামনে দেয়। এবার বইটা পড়ো। কিন্তু বাবা আমিতো এই বইয়ের কিছুই বুঝতে পারছি না কিভাবে পড়বো? কি সব বলছিস মায়া। এখানের সবই তো আমি বুঝতে পারছি। বাবা এটা কি হচ্ছে? তোমরা ওখানে যাওয়ার পর কি হয়েছিল? আমি আর সানি কবর পেয়েছিলাম। ঠিক তখনই চারদিক থেকে মৃত মানুষেরা উঠতে লাগলো। আমি তাদের আটকাচ্ছিলাম। তাই সানিকে বলেছিলাম বই আনতে। সানি মায়া তোমায় চাবি দিলে ভেতরে গিয়ে কি তুমি বই এনেছিলে?

হ্যাঁ। আমি সেই সুরঙ্গ দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করি। পুরো পথটাই ছিল অন্ধকার। আমি তাও সামনে এগোতে থাকি। সামনে একটু আলোতে একটা দরজা দেখা গেল। আমি চাবি দিয়ে দরজাটা খুলার জন্য এগোই। দরজা খুলে যায়। ভিতরে একটি আলমারি ছিল। সেটা স্পর্শ করতেই একটা বৈদ্যুতিক শক লাগলো আমার। আমি ছিটকে পড়ে যাই। এর পর আবার আলমারির কাছে যাই। এবার আর আমার শক লাগে নি। আমি আলমারির ভেতরে একটি বই দেখতে পাই। তা নিয়েই আমি চলে আসি। হুম বোঝলাম। তাহলে আমার ধারনাই ঠিক। কি ধারনা বাবা।

মায়া তুমি হয়তো জানো না। ওই ঘর যে কেউ খুলতে পারে না। যে মন থেকে শুদ্ধ এবং যার মনে অশুভ উদ্দেশ্য নেই কেবল মাত্র সেই ঢুকতে পারে। সানির মধ্য সেটা ছিল আর তাই সে দরজা টা খুলতে পেরেছে। আর সানি তখন তোমার যে ঝটকা লাগলো তাহলো তোমার মধ্য এমন এক শক্তি প্রবেশ করেছে যার ফলে তোমি পৃথিবীর যে কোনো বইয়ের ভাষা বুঝতে পারবে। এবং এই বইও তুমিই শুধুমাত্র পড়তে পারবে। আর কেউ না। সানি তুমি এখন সাধারন কেউ নও। মায়ার সাথে তোমাকেও এই যোদ্ধ করতে হবে। তবেই স্পার্কিকে শেষকরা সম্ভব হবে। হ্যাঁ আমি সবসময় মায়ার পাশে থাকতে চাই। এই যোদ্ধেও। কিন্তু বাবা এতে সানির কোনো ক্ষতি হবে না তো?

না মায়া। সানির ভেতরেও এখন শুভ শক্তি রয়েছে এই দুই শুভ শক্তির মিলনেই স্পার্কির আত্মাকে শেষ করা সম্ভব হবে। সানি তুমি বই পড়া শুরু করো। এমন সময় সানির ফোন আসে। মায়া মা বাবা এক্সিডেন্ট করেছেন। এখন হাসপাতালে। কি বলছিস সানি কি করে হলো? জানি না। কেউ একজন ফোন করে আমায় বললো। এর সবকিছুই স্পার্কির কারনে হচ্ছে। সানি মায়া তোমরা যাও। তাদের এখন সাহায্য প্রয়োজন। আমি আর সানি বেরিয়ে পড়লাম। বইটা বাবার কাছে রেখে গেলাম। এখন আমরা আইসিইউ(জরুরি বিভাগ) এর সামনে। খুব টেনশন হচ্ছে। সানি একেবারে ভেঙে পরেছে। আমি আমার বাড়িতে ফোন করে সবাইকে জানালাম।

সানি এভাবে ভেঙে পরিস না। সব ঠিক হবে। আঙ্কেল আন্টির কিচ্ছু হবে না। সব আমার জন্য হয়েছে। না মায়া তোর এতে কোনো দোষ নেই। এর জন্য নিজেকে দায়ি করিস না। ডক্তার বেরিয়ে এলেন। সব নরমাল আছে। তারা এখন সুস্থ। আমরা কিছুক্ষণ পর তাদের দেখতে গেলাম। যাক একটা টেনশন দূর হলো। সারাদিন সেখানেই কেটে যায়। রাতে সবাই বাড়ি চলে আসি। সানিকে কোনমতে জোর করেই আনা হয়। সবাই খেয়ে নেয় অনেক জোড়াজোড়ির পরও সানি কিছু মুখে দিলো না। সারাদিন সানি কিচ্ছু খায়নি। আমি ওর জন্য কিছু খাবার নিয়ে যাই।

সানি। সারাদিন কিচ্ছু খাসনি এবার কিছু খেয়ে নে। আমার ইচ্ছে করছে না। সানি সব আমারই দোষ। না মায়া এসব বলিস না। তাহলে খেয়ে নে। খিদে নেই। কিন্তু আমার যে খুব খিদে পেয়েছে। ও তোইও তো কিছু খাস নি। খেয়ে নে। না। কেন? কথায় আছে স্বামি না খেলে বউদের খেতে নেই। তুই আবার এইসব কবে থেকে মানিস? কেন? আজ থেকে এখন থেকে। লাগবে না। খেয়ে শুয়ে পর। আচ্ছা খাবো না যা।

আমি অভিমান করে শুয়ে পড়লাম। জানি আমি অভিমান করলে ও তা ভাঙাবে। ওর মনটা ভালো করতে হবে যেভাবেই হোক। আমি ঘুমের ভান ধরে শোয়ে আছি। আমায় সানি ডাকছে। উঠলাম না। এবার জোর করে উঠিয়ে বসালো। এভাবে বসালি কেন? আমি খাবো না। তোকে খেতেই হবে। তাহলে তুই আগে খা। না। তুই! না তুই। তুই। উফফ যা দুজনে একসাথে খাবো। খাওয়ার পর সানি ঘুমিয়ে পড়েছে। আমার ঘুম আসছে না। সত্যিই অবাক লাগে। আমি তো কখনও এমন ছিলাম না। ঘুম ছাড়া থাকতেই পারতাম না। আর এখন ঘুম আসেই না। ভাবতে ভাবতে বাড়রান্দায় চলে গেলাম। কিছুক্ষণ পর সানি এলো। একি তুই এখনও ঘুমাস নি? না ঘুম আসছে না। সানি তুই ঠিক আছিস তো। হুম আর এখনতো বাবা মাও অনেক ভালো আছেন।মায়া কাল বাবার কাছে গিয়ে দেখতে হবে বইয়ে কি আছে?

কিছুদিন পরে যা এখনও তো আঙ্কেল আন্টি হাসপাতাল থেকে আসলো না। পুরোপুরি সুস্থও হয় নি। না মায়া আমি আর রিস্ক নিতে পারবো না। স্পার্কি আমাদের বড় কোনো ক্ষতি করার আগেই অর আত্মাকে শেষ করতে হবে। আমরা অনেক্ষণ বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকি। কাল সকালেই বাবার কাছথেকে বই নিয়ে সেই রহস্য জানতে হবে। অনেক রাত পর্যন্ত জেগে ছিলাম। পরের দিন সকালে আমি আর সানি আঙ্কেল,আন্টি কে দেখতে যাই।আজ তারা কথা বলতে পারবে। সানি তাদের কাছে গিয়েই কেঁদে ফেলল। তারা সানিকে সান্তনা দিল। কাঁদিস না বাবা দেখ আমাদের কিচ্ছু হয় নি। কিন্তু বাবা এই এক্সিডেন্ট হলো কিভাবে? আমি গাড়ি চালাচ্ছিলাম। তোর মা আমার পাশেই ছিল তখন আমরা হাইওয়ে ধরে যাচ্ছিলাম।গাড়িও কম ছিলো। হঠাৎ দেখলাম একটা লোক আমি গাড়ির সামনে এসে গেল।

লোকটাকে বাঁচাতে গাড়ির ব্রেক দিলাম। তাও গাড়ি থামলো না। লোকটার ওপর দিয়ে চলে গেলো।নকিভাবে যে গাছে গিয়ে ধাক্কা লাগলো বোঝতে পারলাম না। এর পর কিছু মনে নেই। কিন্তু বাবা সেখানে তো তোমাদের ছাড়া আর কাউকে আহত পাওয়া যায়নি। জানিনা রে। হয়তো মৃত্যুদূত আমাদের নিতে এসেছিল। না বাবা এসব বলো না। তোমরা আরও অনেক দিন বাঁচবে। বাবা মা কে খাইয়ে সানি আমায় নিয়ে বাইরে চলে আসলো। কি হলো সানি। এভাবে আনলি কেন। তুই বুঝেছিস বিষয় টা? হুম। এটা স্পার্কির কাজ। আমি ওই স্পার্কি কে শেষ করেই শান্তি পাবো। আমিও সানি। কিন্তু তাড়াহুড়া করলে চলবে না মায়া চল সাধু বাবার কাছে যাই। আমরা বাবার কাছে আসলাম।

বাবা স্পার্কিকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শেষ করতে হবে। আপনি বইটা দিন। বাবা বইটা দেয়। সানি পড়তে থাকে।স্পার্কি খুবই শক্তিশালী একটি প্রেত আত্মা। তাকে মারার জন্য শুভ আত্বাদের সাহায্য নিতে হবে। তার জন্য ঠিক পূর্ণিমাতিথি তে একটি যজ্ঞ করতে হবে। সেই জগ্যের মাধ্যমে সব শুভ আত্মাদের আহব্বান জানাতে হবে। তার পর স্পার্কিকে মারার জন্য একটি বিশেষ অস্ত্র আছে আনতে হবে। সেই অস্ত্র পাবে বৃগ নামক এক গুহায় যা মেঘ পাহাড় এ অবস্থিত। সেখান থেকে সেই বিশেষ অস্ত্র আনতে হবে। তার পরই স্পার্কির আত্মাকে শেষ করা সম্ভব। এই কাজ অনেক বিপদজনক। আর ২ দিন পর পূর্ণিমা। সেইদিনই যজ্ঞ করতে হবে। বাবা আমাদের পরিবারের কোন ক্ষতি করবে নাতো স্পার্কি? করার চেষ্টা তো করবেই। তোমাদের সাবধান থাকতে হবে। বাবা আপনি আমাদের বাড়িতে একদিন আসুন।

ঠিক আছে মায়া। আমি যাবো। তোমাদের বাড়ির মধ্যে একটা সুরক্ষা রেখা করে আসবো। এতে স্পার্কি সহজে তা পেরোতে পারবে না। বাবা তাহলে আজই আসুন। বাবাকে সাথে নিয়ে আমরা বাড়িতে গেলাম। সবাই অবাক। মায়া কে ইনি? মা নানাজানের এই ঘটনার জন্য ওনাকে এনেছি নানাজান কে একটু দেখতে এসেছেন। খুব ভালো মানুষ।ঠিকআছে। বাবাকে নানা জানের সাথে দেখা করালাম। তিনি নানাজানকে দেখলেন। তার সাথে কথা বলার পর থেকে নানাজানকে অনেকটা সুস্থ লাগছিলো বাবা যাবার সময় বাড়ির চারদিকে একটা রেখা টেনে দিলেন।

এর ভেতরে স্পার্কি প্রবেশ করতে পারবে না। বাবাকে বিদাই চলে এলাম। আমি অনেকটা সস্তি পেলাম। যাক এখন ও কারো ক্ষতি করতে পারবে না। ঘরে গিয়ে বিছানায় শুয়েছিলাম। কখন ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতে পারলাম না। কতক্ষণ ঘুমিয়েছি জানিনা মনে হলো কারো হাত আমার মুখের উপর রয়েছে। চমকে গেলাম। মায়া মা তুুমি। হ্যাঁ মায়া তোমায় দেখতে এলাম। কেমন আছো মায়া?তুমিতো সবই জানো। মায়া কখনো নিজেকে একা বা অসহায় ভেবো না। তোমার সাথে আমরা সবাই আছি। পাশ থেকে যারিনের আওয়াজ শুনলাম।

মায়া তোমার পাশে আমিও আছি।মা,যারিন তোমরা আমায় পথ দেখিয়েছো। আমি জানি তোমরা সবসময় আমার পাশে আছো। আমায় আশির্বাদ করো। যেন স্পার্কিকে শেষ করতে পারি। হুম মায়া। এবার আমরা আসি। দরকার হলে আমাদের ডেকো। তারা হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো।আমি চেয়ে চেয়ে দেখলাম। ঘুম চলে গেছে। আর ভালে লাগছে না। সব কিছু বদলে গেছে। তখনি সানি এলো মেডাম। আমিকি এই বিষয়ে সাহায্য করতে পারি? কিভাবে। আরে দেখ। না কি করি। সারপ্রাইজ!! কি সারপ্রাইজ? সন্ধ্যায় রেডি থাকিস তখনইি জানবি কি সারপ্রাইজ। আমি সন্ধ্যায় একটা লাল জামা পড়লাম।

আরে মেডামকে যে রানির মতো লাগছে হয়েছে,আর পাম দিতে হবে না। কি সারপ্রাইজ সেটা বল। ওহ আমিতে ভুলে গেছি। তোর সারপ্রাইজ টাই আনা হলো না। তাহলে আমায় রেডি হতে বলেছিলি কেন বাদর কোথাকার। আমি বাদর হলে তুইও বাদরি। কিভাবে? বাদরের বউ তো বাদরিই হয়। কিইইইইই। তোরে আজ হইছে হইছে আর মারিস না। ওহ বাবা হাড় বোধয় আর একটাও আস্তনাই। ধুর। আচ্ছা শোন। চল আজ বাইরে যাবো। আমি যাবো না। আরে চল না।সারপ্রাইজ দেখবি না? হুম। তাহলে চল। আমি আর সানি বড়ি থেকে বেরিয়ে পরলাম। এই সানি ওদিকে কোথায় যাচ্ছিস। চল দেখতে পাবি। সানি আমায় সাগরের কাছে নিয়ে গেল। রাতের সাগর এতো সুন্দর আগে কখনও দেখি নি। ইচ্ছে করছে এখানেই সারাজীবন কাটিয়ে দিই। আরে সানি কোথায় গেলো। সানি…সানি…সানি।

কেথাও কেউ নেই। যেতে যেতে দেখলাম এক জায়গায় অনেক আলো। বাহ কি সুন্দর করে সাজানো। কিন্তু কে এতো সুন্দর করে সাজাবে? পেছনে কারে সাথে ধাক্কা লাগলে। ওহ সানি তুই এসেছিস। দেখ কি সুন্দর করে সাজানো। সানি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আরে কিছু বল। কি হয়েছে তোর। সানি সানি আমার হাত ধরলো। কেমন যেন ঠান্ডা। সানির চোখ থেকে লাল আভা বেরোচ্ছে। সাথে আমার আংটি থেকেও। আমি দূরে ছিটকে গেলাম। কে তুমি?

আমি তোমার মৃত্যু দূত মায়া। কি বলছিস এসব সানি কি বলছিস এসব সানি? হঠাৎ সানির শরীর বদলে গেল। এ যে সানি নয়। মায়া কোথায় পালাবে আমার হাত থেকে? আজ আমি তোমায় চির নিদ্রায় পাঠাবো। ও আমার দিকে আসতে লাগলো। এমন সময় দেখলাম ওটা হঠাৎ থেমে গেল। মাটিতে লুটিয়ে পড়লো ওই আত্মার দেহ। মিলিয়ে গেল। সামনে তাকিয়ে দেখি সানি দাঁড়িয়ে আছে। ও কি সত্যিই সানি?

মায়া সরি মায়া আমি একটু দূরে গিয়েছিলাম। ভাবিনি এই সময়ের ভেতর এতো কিছু হয়ে যাবে। আমায় ক্ষমা করে দিস। কিন্তু সানি ওই টা মিলিয়ে গেলো কিভাবে। আমি ওকে মেরেছি কিভাবে। জানি না। হঠাৎ ই মনে হলো আমি ওকে মারতে পারবো। হাত বাড়িয়ে ওর গলা চেপে ধরতেই ও মিলিয়ে গেল। এটা তোর শক্তি। হু হয়তো। চল এবার আর কোন ভয় নেই। এই দেখ মায়া এইটাই তোর সারপ্রাইজ। এই সবকিছু আমি তোর জন্য করেছি। সত্যিই খুব সুন্দর। মায়া একটা কথা বলি? রাগ করবি না তো? হুম বল। আমি তোকে খুব পছন্দ করি। তুই আমার খুব ভালো বন্ধু। কিন্তু। কিন্তু কি?

এই বন্ধুত্ব বিয়েতে রূপান্তরিত হয়েছে ঠিকই। কিন্তু তুই আমায় কখনো ভালোবাসিসনি। মায়া বিশ্বাস কর। আমি তোকে অনেকদিন ধরে ভালোবাসি। তোর সাথে সারা জীবন থাকতে চাই। তোকে খুব ভালোবাসি। কিন্তু সানি আমি পারবো না আমি তোকে বন্ধু হিসেবে দেখি। আর কিচ্ছু না। অনেক দেড়ি হয়ে গেছে চল বাড়ি ফিরি। শোন মায়া একটা জিনিস তোর জন্য এনেছি। নিবি? প্লিজ না করিস না। কি? এই নূপুরটা কি তোর পায়ে পড়িয়ে দিতে পারি?

হুম। ওর হাতে দুইটি নুপুর ছিল কিন্তু ও আমায় একটা পড়িয়ে দিলো। কিরে একটা পড়ালি কেন? পরে বুঝবি। মানে? সঠিক সময়ের অপেক্ষা কর বুঝবি। আমি আর কিছু বললাম না। চল মায়া বাড়িতে যাই। পরদিন সকালে আমি ঘরে বসে আছি। মা এসে বললেন কিরে মায়া তৈরি হসনি?সবাইতো তৈরি। কেন মা কোথাও যাবে? একি তুই ভুলে গেছিস? আজতো তোর বাবার বন্ধুর মেয়ের বিয়ে। তোমরা যাও মা আমার ভালো লাগছে না।

সেকি তুই বাড়িতে একা থাকবি নাকি? চলতো। বিয়ের পর তো কোথাও যাসনি। মা জোর করে আমায় তৈরি করে নিয়ে গেলো। বিয়ে বাড়িতে এমনিতেই আমার যেতে ভালো লাগে না। তার ওপর যা ঘটছে তাতে মন আরও খারাপ। হঠাৎ চারদিকে কান্নার আওয়াজ। কাছে গিয়ে শুনি বর নাকি গাড়ি এক্সিডেন্টে মারা গেছে। এমন একটা সংবাদে সত্যিই মেয়েটার জন্য আমার খারাপ লাগছে। ঠিক সেই সময়। পেছন থেকে কে যেন আমায় ডাকলো। পেছনে তাকিয়ে দেখি একটা লোক। আমায় বলল তোর জন্য সব হয়েছে মায়া।

আমি ওই ছেলেকে মেরে ফেলেছি। তুই যার কাছে যাবি আমি তারই ক্ষতি করবো। তোকে শান্তিতে থাকতে দেবো না। এসব বলে লোকটা ভিরে হারিয়ে গেল। আমি বুঝলাম এটা স্পার্কি।এতো লোকের মাঝে আমায় এসব বললো অথচ কেউ শুনলো না। মনে মনে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে নিজেকে। কেন আমি আসতে গেলাম। না আসলে তো মেয়েটাকে এভাবে কষ্ট পেতে হতো না। কাউকে না বলেই আমি বেরিয়ে পড়লাম। একটা গাড়ি ডেকে উঠে পড়লাম। কিছুক্ষন পড় মনে হলো। গাড়ির ড্রাইভারকে তো আমি বলি নি কোথায় যাবো। তাহলে ওনি গাড়ি চালাচ্ছেন কিভাবে। আর আমায় কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন। এইযে শুনছেন? কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায়। আমিতো আপনাকে ঠিকানা বলি নি। তোমার ঠিকানাতো একটাই মায়া। সেখানেই তোমায় নিয়ে যাচ্ছি।

একি এযে মনে হচ্ছে কোন আত্মা। কি করবো আমি গাড়িটার দরজা অনেকবার খুলতে চেয়েও পারলাম না। হঠাৎ গাড়িটা থামালো। গাড়ির ওই আত্মাটা কোথায়? দেখতে পারছিনা তো? আমি গাড়ি থেকে নামলাম। চারদিকে তাকিয়ে দেখি বিশাল এক মাঠ। তাতে অনেক গুলো ফাসির দরি টানানো। কেমন যেন অদ্ভুত জায়গা। এ কোন জায়গায় নিয়ে এলো আমায়। একটু পর পেছনে তাকিয়ে দেখি গাড়িটাও নেই।

কোথাও কেউ নেই। চারদিকে ফাসির দড়ি আর আমি। কেমন যেন মনে হচ্ছে এ মানুষের জগৎ নয়। আমি এক অন্য জগৎ এ চলে এসেছি। চারদিকে নিস্তব্ধ। মনেহলো কেউ খুব তাড়াতাড়ি আমার সামনে দিয়ে চলে গেল। এবার পেছন থেকে। এত তাড়াতাড়ি যাচ্ছে আমি বুঝতেও পারছি না ওটা কি। কিন্তু এটা নিশ্চিত এ কোনো মানুষের কাজ হতেই পারে না। আমি চিৎকার করে জিজ্ঞেস করছি। কে তুমি। কি চাও আমার থেকে?কোনো জবাব নেই। আমি যেন একটা খেলার পুতুল মাত্র।

আমার কোনো কথার জবাব দেয়ার প্রয়োজন বোধ করছে না সে। একটা দমকা হাওয়া আমার দিকে এলো।আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি। চোখটা খুলে দেখি আমি একটা বাড়ির সামনে। কি করে এলাম আমি এখানে। এ কেমন মায়া। বাড়ির দরজা টা নিজে নিজেই খুলে গেল। আমি এগিয়ে গেলাম সেই দরজার দিকে। ভেতরে অনেক অন্ধকার। কিছুই দেখা যাচ্ছে না। হঠাৎ কারো আওয়াজ এলো। এই কন্ঠটা আমি আগেও কোথাও শুনেছি। হ্যাঁ এতো আমার খুব চেনা কন্ঠ। আমি চিৎকার করে ডাকলাম কে আপনি। কে আমার সামনে আসুন।মায়া আমি তোমার বাবা।

বাবা হ্যাঁ মায়া।আমি তোমার এই জন্মের মৃত বাবা। আপনি যদি আমার বাবাই হন তাহলে সামনে আসুন।কোথায় আপনি? আমি ভেতরে মায়া। ভেতরে এসো। না আপনি আমার বাবা নন। আমার বাবা অনেকদিন আগেই মারা গেছে। আমিই তো। ভেতরে এসো মায়া। তোমায় সব বলব।

আমি ভেতরে গেলাম ঠিক তখনই তখনই দরজা আটকে গেলো। চার দিকে অন্ধকার। পেছন থেকে কেউ আমায় ধাক্কা দিলো। আমি মেঝেতে পড়ে যাই। কেমন যেন ভেজা ভেজা আর পচা গন্ধ। মায়া আমি তোমার বাবা মায়া আমার কাছে আসবে না মায়া? কন্ঠটা পাল্টে গেলো। একটা মেয়ের কন্ঠের মতো।হাহাহাহা বোকা মেয়ে।তুমি কি ভেবেছিলে? আমি তোমার বাবা? আমি পিশচী। কি চাও তুমি কেন আমায় এখানে এনেছো?

স্পার্কিকে শেষ করতে চেয়েছিলে না তুমি? তোমার সে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে মায়া। কারন আজই তোমার শেষ দিন। আলো জ্বলে উঠলো। আমার সামনে একটা ভয়ংকর চেহারার মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার হাতে একটা পুতুল। আমায় দেখে অদ্ভুত একটা হাসি দিলো।দেখলাম আমার হাতে রক্ত। পেছনে তাকিয়ে দেখি একটা লোকের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে রাখা।আমি ভয় পেয়ে যাই।

তোমারও এই পরিণতিই হবে মায়া। ওকে দেখে কেমন যানি মায়া হচ্ছে। ও আমার কাছে এসে একটা ছুরি বের করে। আমি নির্বোধের মতো ওর দিকে তকিয়ে আছি।ছুরিটা বের করে আমার একটা হাতে টান দেয়। রক্ত ঝরতে থাকে। তাও আমি ওর দিকে তকিয়েই আছি। যেন আমায় বস করে নিয়েছে। না এভাবে থাকলে চলবে না। আমায় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আমি নড়তে চাচ্ছি কিন্তু পারছি না। আমায় পারতেই হবে।

এদিকে মেয়েটি আমার হাত থেকে রক্ত তার হাতে নিয়ে খেয়ে নিলো। আমি বুঝতে পারছি এভাবে বেশিক্ষণ থাকলে আমার বিপদ হতে পারে। আমি অনেক চেষ্টা করছি। পারছি না। হঠাৎ আমার আংটি থেকে লাল আভা বেরলো। আমার উপর থেকে মেয়েটার মায়া কেটে গেলো। আমি আমার অস্ত্র দিয়ে ওকে আঘাত করলাম। ওর কিচ্ছু হলো না। কি করবো এখন। বার বার ওকে আঘাত করছি তাও কিচ্ছু হচ্ছে না। কিন্তু কেন? সেই মেয়েটিও আমার উপর ঝাপিয়ে পরেছে।

কেমন যেন অদ্ভুত। মেয়েটার কিচ্ছু হচ্ছে না কেন?অনেক্ষণ ধরে দুজনে লড়াই করছি। ওর বড় বড় দাঁত গুলো বেরিয়ে এসেছে। হঠাৎ কোনো ভাবে আমার অস্ত্র ওর পুতুলের পায়ে লাগে। সাথে সাথে ওর পায়েও দাগ হয়ে গেল। যেন এই মাত্র কেউ আঘাত করেছে। আমি বুঝতে পারলাম কি করলে ওকে শেষ করা যাবে। আমি ওর হাতথেকে পুতুলটা কেড়ে নিতে চাইলাম। পারলাম না।

শেষে ওর হাতে থাকতেই আমি ওর পুতুলের শরীরে তলোয়ার টা ঢুকিয়ে দিলাম। মেয়েটাও মাটিতে পড়ে গেল। এবার ওর পুতুলের মাথাটায় আঘাত করলাম মেয়েটা গায়েব হয়ে গেলো। দরজা টা খুলে গেল। আমি বেরিয়ে এলাম। একি আমি বিয়েবাড়িতে এলাম কি করে? পেছনে তাকিয়ে দেখি কোনো দরজা নেই। একটা দেয়াল। তাহলে এতক্ষণ আমি কোথায় ছিলাম। সবই কি আমার কল্পনা? হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি রক্ত ঝড়ছে। মানে এটা কল্পনা নয়। সত্যি। কিন্তু এখানে কি করে এলাম বুঝতে পারছি না। কোথা থেকে সানি দৌড়ে এলো।

মায়া তোর হাতে কি হয়েছে? এভাবে রক্ত ঝড়ছে কেন। নাহ! তেমন কিছু না একটু কেটে গেছে। ঠিক হয়ে যাবে। কাটলো কিভাবে তাও এতোটা? বাড়িতে চল সব বলবো। আমার এখানে ভালো লাগছে না। কিন্তু আগে ড্রেসিং টা তো করতে হবে। কিচ্ছু লাগবে না প্লিজ চল। কিন্তু,আচ্ছা চল। আমি আর সানি বাড়িতে চলে এলাম। সানি আমার হাতটা বেন্ডেজ করে দিলো। এবার বলতো কি হয়েছে। আমি ওকে সব বললাম। তুই আমাকে ডাকিসনি কেন। এতো একা যাওয়ার সখ? সানি রাগে ঘর থেকে চলে গেল। সানি শোন সানি নাহ আটকাতে পারলাম না। ঘরে বসে আছি। বড্ড একা লাগছে। আর খুব শীত লাগছে। তাই চাদর গায়ে শুয়ে পরলাম। চোখ খুলে দেখি সানি আমার মাথায় কাপড় ভিজিয়ে দিচ্ছে। আমি কিছু বলতে যাবো। তার আগেই বলে উঠলো। তোর কি আমার কথা একটুও মনে পড়ে না? তোর কিছু হলে আমার কতোটা কষ্ট হয় তা বুঝিস না? আমায় একটুও ভালোবাসতে ইচ্ছা করেনা তোর তাই না?

সানি না আর কিচ্ছু বলতে হবে না। আমি বুঝেছি আমি তোর কেউ না। কিন্তু মনে রাখিস তুই আমার সব। জানিনা তখন কেন খুব কান্না পাচ্ছিলো। আমি ওকে জড়িয়ে ধরলাম। জানি না ভালোবাসি কিনা। তবে তোকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না সানি। কিন্তু আমি জানি আমি তোকে খুব ভালোবাসি। একটু পরেই মায়ের ডাক শুনলাম। সানি মায়ার জ্বর কি কমেছে? না মা এখনও কমে নি। কমবে কিভাবে আপনার মেয়েতো অসুখ বাঁধাতে ওস্তাদ। কিইইইই! আমি ইচ্ছা করে অসুখ বাঁধাই? তা নয়তো কি। তোকে আহ উঠতে পারছি না। আরে আরে কি করিস, উঠিস না। মার টা নাহয় পরেই দিস। আগে সুস্থ হয়ে নে। ধুর! অই এখন রেস্ট নে। হুম।

সকাল হয়েছে। জ্বরটাও অনেক কম। আমি উঠতে গেলাম। এমন সময় সানি আমায় আবার শুইয়ে দিল।আজ আর উঠতে হবে না। চুপ চাপ শুয়ে থাক। আমি ঠিক আছি। না ঠিক থাকলেও উঠবি না। কিন্তু আঙ্কেল আন্টিকে দেখতে যাবি না? না যাবো না। কেন? কারণ তারা ঠিক তোর পেছনে। পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখি সানির বাবা মা। আপনারা! কখন এলেন। এইতো একটু আগে। তোমাদের দেখে চোখ জুড়িয়ে গেল। আঙ্কেল আন্টি আসুন বসুন। না আসবো না। চলে যাবো। কেন আন্টি। তোমার আন্টি আর আমি রাগ করেছি। কেন আঙ্কেল। কতোবার বলেছি মা বাবা ডাকতে?

ওহ আচ্ছা মা বাবা আসুন। এইতো আমার মেয়ে। অনেক্ষণ তাদের সাথে কথা বললাম। আজ তারা এই বাড়িতেই থাকবে। আচ্ছা মায়া তুমি বিশ্রাম নাও আমরা পরে আসি। তারা আমার ঘর থেকে চলে গেলো সাথে সানিও। ভালো লাগছে না। হঠাৎ হঠাৎ মনে পড়লো আজই তো সেই যজ্ঞ করা হবে। আমাদের যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব বাবার কাছে যেতে হবে। কিন্তু বাড়িতে কি বলবো? সানি বললো। তুই চিন্তা করিস না মায়া আমি ব্যবস্থা করবো। সানি চলে গেল। কিছুক্ষণ পর এসে বললো চল বাবার কাছে যাবো। কিভাবে ম্যানেজ করলি? সেসব জেনে কাজ নেই চল তো। আমি আর সানি বাবার কাছে গেলাম।

মায়া,সানি আজ আমরা শুভ আত্মাদের সাহায্য চাইব।তোমরা তৈরি থেকো। সারা দিন আমরা যজ্ঞের বিভিন্ন জিনিস জোগাড় করলাম। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। বাবা আমাদের শুদ্ধ হতে বললেন। আমরা বাবার কথা মতো তাই করলাম। এবার যজ্ঞে বসলাম। যজ্ঞ শুরু হলো। আগুন জ্বলছে। সেখানে ঘি ঢালা হচ্ছে। কিছুক্ষণ পরই এক দমকা হাওয়া বয়ে গেল। এমন সময় মনে হচ্ছে আমাদের চারদিকে বিশাল ঝড় বইছে। সব তছনছ হয়ে যাচ্ছে।

অথচ আমাদের গায়ে তার বিন্দু মাত্রও লাগছে না। আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। বাবা বলে উঠলেন হে শুভ আত্মারা আমাদের সাহায্য করো। এসো আমাদের কাছে এসো চারদিকের দমকা হাওয়া আারও বেড়ে গেল। দেখতে পেলাম চারদিক থেকে আত্মারা আমাদের ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। এরা সবাই আমাদের সাহায্য করতে এসেছে। হে শুভ আত্বারা তোমরা তোমাদের শক্তি দিয়ে আমাদের সাহায্য করো। স্পার্কিকে শেষ করতে তোমাদের সাহায্য আমাদের প্রয়োজন। দেখলাম সবাই তাদের হাত আমার আর সানির দিকে বাড়িয়ে দিল। আর একটি অদ্ভুত আলো তাদের হাত থেকে আমাদের শরীরে প্রবেশ করছে। নিজের ভেতর এক অদম্য শক্তির আভাস পাচ্ছি আমি।

কিছুক্ষণ পর বাবা বলে উঠলেন। ধন্যবাদ তোমাদের শুভ আত্মারা। তোমরা এখন ফিরে যেতে পারো। বাবা,এটা কি ছিল? মায়া তোমার আর সানির শরীরে এখন সেই সব শুভ শক্তি রয়েছে যা এই আত্মাদের মধ্য ছিল। এখন তোমরা যাবে সেই পাহাড়ে আর গুহা থেকে সেই অস্ত্র নিয়ে আসবে। এই নাও সানি এই অস্ত্র তোমার। মায়ার নিজের অস্ত্র আছে কিন্তু তোমার নেই। এটা দিয়ে তুমি যেকোনো আত্মাকে শেষ করতে পারবে। এবার যাও তোমরা।

আশির্বাদ করুন। আমরা রওনা দিলাম। গাছপালা ঘেরা চারপাশ। আমি আর সানি হাঁটছি। চাঁদনী রাত তাই চারদিক বেশ ভালোভাবেই দেখা যাচ্ছে। অনেক্ষণ ধরে হাঁটছি। মায়া ওইযে দেখ সেই গুহাটা। হুম একটু দূরে। চল যাই। গুহার সামনে আসতেই পাহাড় নড়তে লাগলো। পাশে তাকিয়ে দেখি শত শত পিশাচ আমাদের ঘিরে ফেলেছে।কি ভয়ংকর। আমি আর সানি অস্ত্র বের করি। তাদের সাথে লড়াই করছি এদিকে কিন্তু যতই শেষ করছি ততই আসছে। মায়া এগুলো তো শেষই হচ্ছে না। কি করবো এখন? নিশ্চই এমন কিছু আছে যা আমরা বুঝতে পারছি না ভালো করে দেখ।

আমি আর সানি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। ঠিক তখনই দেখলাম একটা পিশাচ এর মাথা দুইটি। নিশ্চই একে মারলে কিছু হবে। আমি সবগুলোকে পেড়িয়ে সেই পিশাচের এক কোপে মাথাটা আলাদা করে দিই। বাকি গুলো উধাও হয়ে যায়। এবার গুহার দরজাটা খুলি। ভেতরে ডোকে দেখি চারদিক খুব অন্ধকার। সানি একটি মশাল জ্বালিয়ে আনলো। ভেতরে ঢুকলাম। আরও একটা দরজা। দরজা টাতে লিখা জন্ম হতে যতক্ষন আয়ু হবে তার!! মৃত্যুর ততক্ষণ পর হাসে সে আবার!! মায়া এটা আবার কি? ভাবতে দে। জন্ম যতক্ষণ মৃত্যুর পর আবার ততক্ষন পর হাসবে মানে জন্মাবে। কোন জিনিস হতে পারে?

পেয়েছি মায়া কি? উত্তর। বল! সূর্য। বলতেই দরজা টা খুলে গেল। আমরা ভেতরে ঢুকতেই দেখতে পেলাম সেই অস্ত্র। আমি আর সানি দুজন একসাথে সেটা তুললাম। মায়া অবশেষে আমরা পেরেছি। এবার স্পার্কির দিন শেষ। হুম সানি কালই হবে ওর শেষ দিন। আমি আর সানি সেখান থেকে বাবার কাছে চলে এলাম। এসো মায়া এবার তোমার লড়াই শুরু। এবার বাসায় যাও। সেখানেই জানতে পারবে তোমাদের কি করতে হবে। কিন্তু কিভাবে?

গেলেই জানতে পারবে। আমি তোমাদের বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করব। আমি আর সানি তাড়াতাড়ি বাড়িতে গেলাম। বাড়িতে ঢুকে দেখি কেউ নেই। ঘরের সবটা খুজে দেখলাম কিন্তু কাউকে পেলাম না। হঠাৎ কারো আওয়াজ হলো। পেছনে তাকিয়ে দেখি বাড়ির সবাই দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু তাদের চেহারা কেমন যেন প্রান হীন লাগছে চোখ গুলোর মনি যেন সাদা। মুখে কেমন যেন দাগ পড়েছে। সবাই কেমন গোঙ্গাচ্ছে। মুখে রাগের আভা। অপলক দৃষ্টিতে সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি কাছে যেতেই সবাই মিলে আমায় ধরে ফেলল। আমি নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না। তাদের শরীরে যেন অনেক শক্তি। সানিও চেষ্টা করছে। এক পর্যায়ে অনেক কষ্টে ছাড়াতে পারলাম।

মায়া, চল পালা সবাইকে স্পার্কি বস করে ফেলেছে। আমরা ঘর থেকে বেড়িয়ে বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে দিলাম। ঠিক তখন মায়া পেছনে তাকাতেই হঠাৎ সব অন্ধকার হয়ে গেল। একটু পরেই আলোতে দেখলাম আমরা একটা প্রাসাদে। স্পার্কি ভয়ঙ্কর রুপে একটি সিংহাসনে বসে আছে। মায়া চিনতে পারছো? এই সেই প্রাসাদ যেখানে তুমি আমায় মৃত্যু দিয়েছিলে। আজ তোমার পালা মায়া। স্পার্কি উঠে এলো। আমি স্পার্কির মোকাবিলা করছি।

কিন্তু ওর সঙ্গে পারছি না। বার বার ও আমায় হারিয়ে দিচ্ছে। আমি পড়ে গেলাম। এবার সানি এগিয়ে এলো।সানি আর স্পার্কি লড়াই করছে। স্পার্কি সানিকেও পরাস্ত করলো। সানি প্রচন্ড আঘাত পেল। হাহাহা এবার কি করবে মায়া। ও আমাদের দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। এবার সেই অস্ত্র টা হাতে নিলাম। স্পার্কি সামনে আসতেই আবার আমি উঠে দাঁড়ালাম। যেই স্পার্কির শরীরে আঘাত করতে যাবো স্পার্কি মিলিয়ে গেল। ওর নাগাল পাচ্ছি না আমি। পেছন থেকে মনেহলো কেউ আমায় আঘাত করলো। আমি আবার মাটিতে পড়ে গেলাম। এবার আর উঠতে পারছি না।

মায়া তোমার জন্য আমি আবার ফিরে এসেছি।নিজের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে। এবার আমি তা করবোই। তবে তার আগে তোমার সামনে সানিকে মারবো। স্পার্কি সানির দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। না তুমি সানিকে কিচ্ছু করতে পারবে না স্পার্কি। আমি স্পার্কির সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমার মোকাবেলা করো স্পার্কি। স্পার্কির শরীর পাহারের মতো বিশাল হয়ে গেল। আমি আগের থেকে দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে এসেছি মায়া এবার কি করবে তুমি?

মনে মনে ভাবছি, না স্পার্কির সামনে আমায় হারলে চলবে না। আমাকে পারতেই হবে। আমি আমার সমস্ত শক্তি আহব্বান করলাম। আমার পাশে মা আর যারিন দাঁড়িয়ে আছে। যাও মায়া তুমি পারবে এগিয়ে যাও। নিজের শক্তিকে আহব্বান করো।

আস্তে আস্তে নিজের ভেতর সেই শক্তি গুলো জাগিয়ে তুলছিলাম আর আমার শরীর থেকে সেই আভা বেরোতে শুরু করলো। আর পিছু হটলে চলবে না। আমি স্পার্কির মোকাবেলা করতে প্রস্তুত। স্পার্কি আমায় আঘাত করার চেষ্টা করে কিন্তু আমি সরে গিয়ে ওর দেহে অস্ত্র ঢুকিয়ে দিই। ওর শরীর থেকে ধোয়ার মতো বেরোতে থাকে। আমি সরে যাই।

মায়া এবারও তুমি আমায় শেষ করলে। কিন্তু আমি আবার আসবো মায়া।আমি আবার স্পার্কি শেষ হয়ে যায়। আমি সানির কাছে ছোটে যাই।সানি অজ্ঞান। ওকে ধরে বাড়িতে নিয়ে যাই। প্রায় ৫ বছর পর। আজ আমি আর সানি খুব খুশি। আজ আমরা বাবা মা হয়েছি। আমাদের মেয়ের নাম কি হবে সানি?

ওওমমমমম ছোট মায়া। কি? এটা কেমন নাম? হিহি আমিতো চাই আমার মেয়েও যেন তার মায়ের মতো সাহসী হয়।হাহাহা…এইভাবেই কেটে যাক সময়। ছোট্ট মায়াকে নিয়ে জন্ম হোক এক নতুন মায়াজালের।

(সমাপ্ত)

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত