অদ্ভুতুড়ে গুহা আর সুন্দরি পরি

অদ্ভুতুড়ে গুহা আর সুন্দরি পরি

২০০ বছর আগের কথা, তখন ব্রিটিশ শাসন আমল পুরো দমে চলছিলো, আমি একজন সাধারন কাঠোরে, কাঠ কেটে বাজারে বিক্রি করে যা পাই তাই দিয়ে কোন মতে ডাল-ভাত খেয়ে দিন চলছিল, আগের কার দিনের কথা কি আর বলব,

লোক বল খুবই কম ছিল ঘন বসতি বলতে হাতে গুনা ২ কি ৩ হবে, আমার গ্রামের পিছনেই রয়েছে বড় একটি জংগল যেখান থেকে প্রতিদিন কাঠ আনতাম, জংগলের গভীরতা টা খুবই গভীর, এলাকার মুরব্বি রা বলেন এই জংগল কোথায় গিয়ে শেষ তা আজও কেউ জানেনা, আগের দিন বলে কথা ভুতে-প্রেতে সবার বিশ্বাস টা খুব শক্ত, তাতে আমার কি আমার তো দিন ভালই কাটছে,

এক দিন জংগলে কাঠ কাঠতে অনেক গভিরে চলে গেলাম, সাধারনত এতো গভিরে কখনই যাই নি, সেই যাই হউক, দেখলাম সেখানে রাশি রাশি আম গাছ আপেল গাছ, এখানে কেউ কোন কালে পা মারায়নি তাই অনেক আম/আপেল গুলা পেকে নিচে পড়ে নষ্ট হয়েগেছে দেখলাম, আমার ইচ্ছা হল একটা আম খাবার জন্যে, আমি ১ আম পেড়ে খেলাম, কি মিষ্টি আম,

এত মজার আম এই জিবনে প্রথম খেলাম, আম খেয়ে কাঠ কাটতে লেগে গেলাম, অন্য দিকে কোন মনযোগ নেই, প্রায় ৫/৬ মিনিট হয়ে গেছে একটু ক্লান্তি অনুভব করলাম, রেস্ট নেওয়ার জন্যে আম গাছের নিচে বসলাম আর আরেকটি আম মুখে নিলাম খাওয়ার জন্যে, সেই সময়ে আচমকা ভয় গেলাম, বনের নিস্তব্ধতায়! কিন্তু কত এই বনে এসেছি কাঠ কাটতে এই ধরনের ভয় কখনই মনে আসলোনা, তবে আজ কেন…..

হঠাৎ দেখলাম এক জন বয়সকো লোক আমার থেকে ১০ হাত দুরে বসে আছে, গায়ে সাদা ছেঁড়া কাপর পরা, লম্বা চোল, দেখে অনেক টা পাগলের মতন দেখায়, আমি তো অবাক এই গভির অরন্যে পাগল বেশি লোকটা কে হতে পারে, তাকে তো আমাদের গ্রামে বা গ্রামের বাজারেও কখনো দেখিনি, ভয় পেয়ে গেলাম এক রকম, ভয়ই বা পাবনা কেন! আমার দিকে চেয়ে আছে এক পলকে, হঠাৎ হেসে উঠল আর বলল ভয় পাচ্ছ বুজি, নাহ ভয় পেও না কোন অসুবিধা নেই, আমি মানুষ নই আমি একজন জ্বিন! যে তোমাকে এক্ষনি শেষ করে ফেলতে পারে!

আমি যত টানা নোংরা দেখতে মানুষের রুপে এর চেয়ে আর বেশি ভয়ংকর আমার নিজের রুপে, আমার বিশ্রী রুপ দেখলে তোমি মারা যাবে ভয়ে বলে একটা হাসি দিল খুব বিশ্রীভাবে, তা দেখে ভয়ে আমার খাশ-আত্না উরে গেল, আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি, যখন জ্ঞান ফেরে, আমি নিজেকে পাই এক অন্ধকারের মধ্যে, কিছুই মনে করতে পারছিলাম না, শক্তি নিয়ে উঠে দাড়াতে চেষ্টা করি কিন্তু মাথা দেওয়ালে লেগে যায়, অনেক জোরেশোরে, এতে আঘাত পেয়ে যাই মাথায় অনেক।

প্রচন্ড যন্ত্রনা হতে লাগল, আরো কিছু সময়ের জন্য বসে রইললাম, একটু পরে বুঝার চেষ্টা করলাম আমি আসলে কোথায় আছি, অন্ধকারে হাতরাতে হাতরাতে বুজলাম আমি একটা সুরংগের ভিতরে আছি তাও অনেক গভিরে, তাই আলো বাতাস আসছেনা, ভয়ের কাল চাদর চেপে দরল আমাকে, আমি কেন এখানে কিছুই মনে করতে পারলাম না, হঠাৎ দুর থেকে একটি বিশ্রী হাসি শুনতে পেলাম, মনে পড়ে গেল সাথে সাথে সব কিছু! আর ভয় আরো বেড়ে গেলে,

ভাবতে লাগলাম আজ বুজি সেই বিশ্রী জ্বিন আমাকে শেষ করে দিবে, ভাবতে লাগলাম কি ভাবে এখান থেকে ছুটবো, বাতাসের মতন কে যেন ফিশ-ফিশিয়ে বলল এখান থেকে ভাগ নাইলে শেষ হয়ে যাবে, কে কথা কইল, নতুন ভয় বিরাজ করলো মনে, আবার বলল ভাগো যদি জিবন বাঁচাতে চাও, আমি ভয়ে ভয়ে বললাম কে তুমি!? বলল আমি, বাতাস জ্বিন! আসো তুমায় আমি রাস্তা দেখাই! বাঁচতে হলে আমার সাথে এসো, ভয়ে ভয়ে বললাম তুমাকে কি করে বিশ্বাস করি তোমাকে দেখাও যায় না,সে বলে এখানে মরার জন্য আসেছ আর আমি তুমায় বাঁচাবো তাই নিতে এসেছি, জোনাকি-পোকার মতন

সামনে আলো দেখাচ্ছি আসো আমার সাথে, আমি অ-গ্যাতা তার কথা বিশ্বাস করে চলতে লাগলাম তার পিছনে, অনেক চরাই-উতরাই পার হচ্ছি, কাটা ভরা রাস্তা, মাজে মধ্যে হাড্ডি আমার শরিলে লাগে অন্ধকারে বুজিনা এটা মানুষের না পশুর হাড্ডি, ভয়ে আর শরিলে আঘাত প্রাপ্ত হয়ে একরকম মনবল হারিয়ে ফেলার উপক্রম হতে চলেছে, নাজেহাল আমি তাকে বললাম আর কত দুরে, সে কিছুটা কর্কশভাবে বলল বেশি কথা বলনা আরও অনেক দুরে,

কিছুই করার নাই,তার দেখানো রাস্তায় চলছি তো চলছি,দুরে এক জায়গায় দেখলাম অনেক আগুন, সে আগে ভাগেই আবার ফিশ-ফিশিয়ে বলল শুন সামনে আগুন এই রাস্তায় আমরা যাবোনা, আর আগুন তুমি চুতে পারবেনা বিপদ হবে, এই কথা খুব জড়ালো ভাবে ২ বার বলল! আমি বুজে নিলাম, এই জ্বিনের কাছেও আছে কু-মতলব, তাকে কিছু না বলে আমি ফন্দি আটলাম আগুনের কাছে কিভাবে যাওয়া যায়, হঠাৎ করেই তাকে বললাম আমি আর পারছিনা পাড়ি দিতে এই গুহা, আমার পানি প্রয়জন বলে থেমে গেলাম,

সে রাজি হলনা, আমি বললাম দেখো পানি ছাড়া আমার সম্ভব নয় সামনে যাওয়া, আমি পুরা-পুরি শক্তি হিন এখন, অনেক পরে সে বলল ঠিক আছে আমি অন্য জায়গা থেকে দেখি তোমার জন্যে কিছু পানি পাই কিনা, তবে তুমি আগুনের কাছে যেওনা, আমি রাজি হলাম সে চলে গেল আমার জন্যে খাবার পানি আনতে, আমি আর দেরি না করে আগুনের কাছে গিয়ে হাড্ডির মধ্যে খরকোটা লাগিয়ে মশালের মতন বানিয়ে তাতে আগুন লাগিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম,

আর এর পিছনে ফিরেই দেখি গোহার মুখ দেখা যাচ্ছে সাথে সূর্য এর আলো গাছপালা সব দেখা যাচ্ছে, আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম জ্বিন আসলে থাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্যে, আকস্মিকভাবে শুনলাম সেই বিশ্রী জ্বিনের আওয়াজ, এরপর দেখলাম আমার সামনে সেই বিশ্রী জ্বিন কে তার নিজের রুপে দাঁড়িয়ে আছে, কি বলব তার সেই বিশ্রী রুপের কথা! এতো ভয়ংকর যে ভয়ে অজ্ঞান হওয়ার কথা কিন্তু আমি সাহস করে দাড়িয়ে থাকি তার সামনে আর বলছে আগুন হাত থেকে ফেলে দাও, আমি না করলাম, সে হেসে হেসে বলল, শুন তর বাতাস জ্বিন কে মেরে ফেলেছি, বাতাস জ্বিন আমার শিকার কে নিজের শিকার বানানোর জন্যে তার আস্থানায় নিয়ে যাচ্ছিল, আর তুই কোন চিজ, আগুন ফেলে দে, আমি বলি কখনই না!

আমি বলি বাতাস জ্বিনের ষরযন্ত্র আমি বুজে ফেলেছি বলেই আগুন হাতে নিয়ে নিয়েছি, তোকে আর বাতাস জ্বিন কে শেষ করার জন্যে, তুই বাতাস জ্বিন কে মেরে আমার কাজ সহজ করে দিলি বলে আমিও ভয় ভুলে জ্বিনের সামনে পৈশাচিক ভাবে হাসলাম, জ্বিন ভরকে যায়! আমি সুযোগ বুজে জ্বিনের গায়ে একটা মশাল ছুড়ে মারি আর সেই জ্বিন টা জ্বলতে থাকে, আর আত্ন-চিতকার দিতে থাকে, আমি বলি এটা তর খারাপ কাজের ফল, রাগে ক্রুদ্ধ ভাবে জ্বলতে থাকে আগুনের শিখায়, বলে আজ আমাকে মারার মাধ্যমে বেচে গেলি,

আমিও রাগান্বিত হয়ে আরেকটা মশাল ছুড়ে মেরে আগুন বাড়িয়ে দেই, আচমকা লক্ষ করলাম, সেই গুহা ভাংতে লাগলো জ্বিন বলল তুইও বাচবিনা এই গুহা এখন ধ্বংস হয়ে যাবে বলে হাসতে লাগলো আমি রাগে শেষ হাতে থাকা মশাল টাও ছুড়ে মারলাম জ্বিনের গায়ে আর চিতকার করতে করতে পুড়ে যাচ্ছিল সেই জ্বিন, আমিও দেরি না করে গুহার আলো আসা মুখের দিকে প্রানপনে ছুটতে লাগলাম, একসময় গুহা থেকে বের হয়ে গেলাম, তার পর দেখি গুহা টি নিজে নিজে মিলিয়ে গেলো সেখানে শুধু ঘাস আর ঘন বন ছাড়া আর কিছুই নেই, খুজতে লাগলাম আমার কাঠ কাটার কাঠোরা টা আর গ্রামে ফিরার রাস্তা, বন টা অনেক বিশাল, যে দেখেই যাই শুধু একরকম লাগে দেখতে, এমনেই ক্লান্ত, ক্লান্তির এক পর্যায় শুয়ে পরি…

আচমকা ঘুম ভাংগে কার ডাকে!! আমি ভয় পেয়ে গেলাম আবার কোন জ্বিন টিন তো নয়, ঘুম মাখা চোখে দেখি এক পরির মতন সুন্দর মেয়ে আমার সামনে দাড়িয়ে আছে! আমি ভয় আর অবাক হয়ে গেলাম, মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে আছে, এক মায়াবি দৃষ্টি নিয়ে, বলল তোমি আমাকে জ্বিনের হাত থেকে বাচিয়ে ছো জ্বিন টা কে মেরে ফেলে, আমি পরির দেশের পরি দের রানি, সে আমাকে অনেক বছর ধরে তার গুহা তে বন্ধি করে রেখেছিলো, কিন্তু তুমি মানুষ্য মহা পুরুষ আমাকে জ্বিনের হাত ধেকে মুক্তি দিয়ে আলো বাতাসে নিয়ে আসলে!

তুমি আমাকে বিয়ে করে তোমার দেশে নিয়ে যাও হে মানুষ্য পুরুষ, আর কিছু চাইনা! শুধু তোমার হতে চাই! আমিও তার প্রেমে মোহিত হয়ে গিয়েছি প্রথম দেখায়, সে বলল তোমি কোন দেশে থাকো, পরে তাকে আমি আমার সব ঘঠনা খুলে বললাম, সব শুনে সে আমার হাতে হাত রেখে শুন্যে উড়াল দিয়ে উড়ে উড়ে নিয়ে গেল আমার গ্রামে, পরের দিন তাকে আমি বিয়ে করে ফেললাম, শুরু হল আমাদের বিবাহিত জিবন।

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত