জঙ্গলের-একরাত্রি

জঙ্গলের-একরাত্রি

বহু বছর আগের কথা। সিংড়া ফরেস্টের কথা
অনেকেই জানেন হয়তো।
তখন ডিসেম্বর মাস।শীতকালীন অবকাশের জন্য
স্কুল বন্ধ দিয়েছে।

তো ঢাকাস্থ একটি সুনামধন্য স্কুলের কিছু ছাত্রছাত্রী সিদ্ধান্ত নিলো যে তারা ৭ দিনের একটা টুরে সিংড়া ফরেস্ট ভ্রমন করতে যাবে।
মুলত তাদের বাসনা এটা যে তারা স্বচোখে ভুত দর্শন
করতে যাবে।
কেননা তারা শুনতে পেরেছিলো যে সিংড়া ফরেস্টের
গহীনে এমন সব অদ্ভুত ঘটনা ঘটে যার রহস্য এখনো উন্মোচিত হয়নি।

যাওয়ার কথা ছিল ২০ সদস্যের একটি দল।কিন্তু এত সব ভয়ের কথা শুনে অনেকেই দ্বিমত পোষন করে।
তবে শেষ পর্যন্ত ৩জন ছেলে ও ২জন মেয়ে এই ভুত গবেষণায় নাম দিল।

ডিসেম্বরের ২১ তারিখ পাঁচ বন্ধু তারেক,পলাশ,পাখি,জেমি ও মামুন রওনা হলো সিংড়া ফরেস্টের অভিমুখে।
বাস ধরে রওনা হয়ে গেল তারা। বাসের ভিতর বসে তারেক ওর মামাত ভাই সুমনকে সিংড়া আসতে বললো।
সুমন আবার পাখি প্রেমী। ওর বাড়িতে নানা রকম পাখির সমারোহ। যেন বাড়িটা একটা চিড়িয়াখানা।
ও পাখি বিষয়ক একটা বই লিখছে। আর বইটা লেখা শেষ করতে পারলে ওর জন্য পিএইডি পাওয়াটা কোন ব্যাপারই হবেনা।
যাই হোক, তারেকের এমন প্রস্তাব শুনে সুমন রাজি হয়ে গেল কারন সে বনে গেলে অনেক ধরনের পাখি দেখতে পারবে যার ফলে পাখি বিষয়ক বইটা লিখতে সুবিধা হবে।আর বইটা ৩০ তারিখের মধ্যেই শেষ
করতে হবে তার।

তারেকদের সিংড়া পৌছাতে বিকাল হয়ে গেছে।
তারেক বাস্টপে নেমে দেখে সুমন দাড়িয়ে আছে।

তারেক ওর মামাতো ভাইয়ের সাথে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দেয়।সুমন ওখানে পৌছার আগেই ফরেস্টের কাছাকাছি একটা সুন্দর বাঙলো ভাড়া করেছিল।বেশ চড়া দাম দিতে হয়েছে ওকে।
সুমন ওদের ব্যাগপত্র গুলো গাড়িতে উঠিয়ে ওদেরকে নিয়ে রওনা হলো বাঙলোর দিকে।

বাঙলো পৌছে মামুন হঠাৎ বলে উঠলো,
এমা ডায়রিটা ফেলে এসেছি বাসে।খুব খারাপ লাগছিলো মামুনের এতো দিন ধরে কষ্ট করে ডায়রিটা লিখেছে আর সেটাই হারিয়ে ফেলেছে বলে।
কি আর করার ডায়রির মায়া ত্যাগ করে ওরা বাঙলোর ভিতরে ঢুকতে যাবে এমন সময় এক বৃদ্ধ ফকির এসে আচমকা পলাশের হাত ধরে বললো,চলে যা এখান থেকে।বাচতে চাস তো পালা। বলেই ফকিরটি খিল খিল করে হাসতে হাসতে চলে গেল।

বাঙলোর ম্যানেজার বললো,কিছু মনে করবেন না স্যার ও একটা পাগল। গত বছর ডিসেম্বর মাসে ওর ছেলেটা বনে কাঠ কাটতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরেছিল,ছেলেটার মাথায় মগজ ছিলোনা। সবাই বলছিল, ওকে কোন হিংস্র জানোয়ার খেয়ে ফেলেছে।
কিন্তু আশ্চার্যের ব্যাপার হলো এটা যে ঐ জঙ্গলে কোন হিংস্র জানোয়ারই নেই। তবে অনেকে বলে ওই বনে নাকি মধ্যরাতে কি সব জিনিস দেখা যায়। লোকের ধারনা বোধহয় ঐ মেরে ফেলেছে ছেলেটাকে।
সেই থেকে ওর বাবা পাগল হয়ে গেছে।তবে স্যার ভয় পাবেন না। ভূত বলতে পৃথিবীতে কিছু হয় নাকি।
চলুন স্যার, আপনাদের ঘর দেখিয়ে দিচ্ছি।

এ সব শুনে মামুনের ভিতর কেমন জানি খ্যাচ খ্যাচ করে উঠলো। হঠাৎ পাখির হাত ধরে বললো চলনা রে ইয়ার এখান থেকে….আমার কাছে কেন জানি স্বাভাবিক লাগছে না, চল ফিরে যাই।
পাখি ওর দিকে অস্বাভাবিক ভাবে তাকিয়ে ফিক করে হেসে বললো, শালা ভীতু কোথাকার। এত ভয় নিয়ে জেমির সাথে প্রেম করিস কিভাবে?
চল, ঘরে যাই।খুব টায়ার্ড লাগছে। অগতা কি আর করার ওর পিছন পিছন হাটতে শুরু করলো মামুন।
ম্যানেজার তারেক, মামুন,পলাশকে বাঙলোর বামদিকে একটা ঘরে সিফট করে দিল।
সুমন ভাই থাকবেন মাঝের রুমটাতে। আর পাখি ও জেমি থাকবে ডানদিকের ঘরটাতে। ঘরগুলো পাশাপাশি,প্রত্যেক টাতে এসি লাগানো।আর প্রত্যেক ঘরেআলাদা বাথরুম তো আছেই। তবে মামুনদের ঘরটা বেশ বড়। আর একটা বিষয় হচ্ছে ওদের ঘরের সাথেই আছে সুন্দর একটা বেলকুনি।

যেখান থেকে বনের দৃশ্যটা সুন্দর উপভোগ করা যায়।
মামুন হঠাৎই বলে উঠলো বস পেটে ছুচোয় ডন মারছে।
খাবার আসতে কতক্ষন?
এমন সময় ম্যানেজার এসে বললো স্যার আপনাদের খাবার রেডি।
মামুন সবাইকে ডেকে চলে গেল ডায়নিং-এ।
সবাই একত্রে মজা করে খাবার খাচ্ছে।
মামুন জেমিকে চিমটি কেটে বলছে, এমন খাবার
তো তুমি রাধতেই পারবেনা,দেখোনা জিভে জল এসছে।
জেমি ক্ষেপে গিয়ে বললো, দুর ছাই আমি আর
খাবোই না বলে খাবারে পানি ধেলে চলে গেল।
পিছন থেকে পাখি অনেকবার বললো,যাস না খেয়ে যা। মামুন বললো,যে যেতে চায় তাকে যেতে দাও আমি সব শেষ না করে উঠছি না।
সবার খাওয়া প্রায় শেষ ঠিক সেই মুহুর্তে জেমির মুখে একটা চিৎকার শোনা গেল।চিৎকার শুনে সবাই দৌড়ে গিয়ে দেখে জেমির হাত থেকে রক্ত ঝড়ছে।
পলাশ বললো কি হয়েছে রে তোর। জেমি চাপা কণ্ঠে বলে উঠলো, অন্ধকারে দেয়াল হাতরে সুইচ দিতে গিয়েছি আচমকা কি জানি আমাকে কামড়ালো।
দেখতে পাইনি।
তারেক লাইট অন করে বললো, তেলাপোকা হয়তো। পাখি জেমির হাতে মলম লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করতে যাবে এমন সময় পলাশ বলে উঠলো, এই তোরা দেখ দেয়ালে ওটা কিসের ছাপ?
মামুন এগিয়ে গিয়ে বললো, ওরে বাপরে এটাতো পাচটা আঙ্গুলের ছাপ।
সবাই একটু হকচকিয়ে গেল।পাখি সবাইকে শান্ত করে বললো,বুদ্ধু ওটা হয়তো জেমির হাতের ছাপ। দেখলিনা কত রক্ত ঝড়লো।

এমন সময় ম্যানেজার এসে একটা অবাক করা কথা বলে ফেললো,তিনি বললেন, স্যার
আমাদের প্রত্তেক টা ঘরেই তো এসি লাগানো আছে তেলাপোকা আসবে কিভাবে,আর তেলাপোকা কেন একটা মশাও খুজে পাবেন না গোটা বাঙলো মিলে।

এতক্ষন সুমন ভাই চুপ করে ছিলেন। তিনিও ম্যানেজারেরর সাথে সহমত প্রকাশ
করে বললেন,হ্যারে এখন পর্যন্ত একটা মশাও দেখতে পেলাম না। তেলাপোকা আসবে কোথা থেকে।

সবাই একটু চিন্তায় পড়ে গেল।পাখি বললো,হয়তোবা কোথাও লেগে কেটেছে।জেমি অতটা মালুম করেনি
হয়তো। ডায়নিং শেষ হলে সবাই যার যার ঘরে গেল
ঘুমাতে।সুমন হঠাৎ তারেক কে আটকিয়ে বললো এটার রহস্য কাল উৎঘাটন করবো শুয়ে পড়। এই বলে সে ঘরে ঢুকলো।
শোয়ার সময় পলাশ বললো, যাইহোক ছাপটা কেমন
জানি ছোট মনে হলো ওটাতো জেমির মনে হচ্ছেনা।
ওকে থামিয়ে দিয়ে তারেক বললো, কাল দেখা যাবে।
এদিকে সকালে উঠে পাখির রুমে গিয়ে
তারেক দেয়ালে…….
যা দেখলো তাতে সে হতভম্ব হয়ে সবাইকে ডাকতে শুরু করলো।

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত