মানুষ খেকো ভয়ংকর এক ভুতুড়ে দ্বীপ

মানুষ খেকো ভয়ংকর এক ভুতুড়ে দ্বীপ

Home / দর্শনীয় – বিখ্যাত ও অর্থনৈতিক / মানুষ খেকো ভয়ংকর এক ভুতুড়ে দ্বীপ !
মানুষ খেকো ভয়ংকর এক ভুতুড়ে দ্বীপ !
অক্টোবর ২১, ২০১৫ – দর্শনীয় – বিখ্যাত ও অর্থনৈতিক

ভুত! এই শব্দটি শুনলেই যেন মনটা ভয়ে দুরুদুরু করে উঠে। যে যতই সাহসী ব্যক্তি হন না কেন ভুতের ভয় পায় না এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া কঠিন। অনেকেই বলে ভুত বলে কিছু নেই, কিন্তু যে ভুত বিশ্বাস করে না সেও যে ভুতের ভয় পায় না তা সে বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে না। আমরা জানি ভুত থাকে বড় গাছ, কবরস্থান, শ্মশান, পুরনো বাড়িতে, কিন্তু আপনাকে যদি কোনও দ্বীপের কথা বলা হয় আপনি কি বিশ্বাস করবেন? হয়তো করবেন, কারণ দ্বীপে ভুত থাকতেই পারে।

তবে যদি বলা আমেরিকার কোনও দ্বীপে ভুত আছে তাহলে কি বিশ্বাস করবেন? এবার হয়তো আপনার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। কারণ, আলো ঝলমল আমেরিকায় ভুত আসলো কোথা থেকে! তবে আপনাকে আরও অবাক করে দেয় যে, আমি যে ভুতুড়ে দ্বীপের কথা বলছি সেটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত।
দ্বীপে পরিত্যক্ত একটি অডিটোরিয়াম

আধুনিক চকচকে নিউইয়র্ক শহর থেকে বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ খুঁজে পাওয়া গেছে। কোনও মানব বসতি নেই সেই দ্বীপে। চমকে উঠতে হবে এই দ্বীপের সুনসান নীরবতায়। শহর থেকে বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপের নাম উত্তর ব্রাদার আইল্যান্ড (North Brother Island)। এর আরেক নাম Abandoned Island. এই দ্বীপকে ঘিরে নানা ধরনের গল্প ও কল্প কাহিনী প্রচলিত আছে। ধারনা করা হয় এই দ্বীপে এক সময় মানুষ বসবাস করতো এবং নিউইয়র্ক সিটির মতোই আলো ঝলমলে ছিল এই দ্বীপটি। তাহলে এমন কী হয়েছিল এ দ্বীপের যে মানুষজন দ্বীপটিকে ছেড়ে চলে গেছে? অনেকেই বলেন মহামারির আক্রমণে জনমানুষ শূন্য হয়েছে দ্বীপটি। কেউ বলেন অদৃশ্য আত্মাদের উৎপাতে মানুষ ছেড়েছে এই দ্বীপ। আবার অনেকই বলেন সমুদ্র থেকে পানি এসে বিলীন হয়ে গিয়েছিল এই দ্বীপটি। তবে ব্রাদার আইল্যান্ড দ্বীপ নিয়ে গবেষণা করা ব্যক্তিরা বলেছেন এই দ্বীপের বয়স খুব বেশি নয়। ১৮৮৫ সালের দিকে এই দ্বীপে মানুষের চলাচল ছিল। তখন নিউইয়র্কে সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে রোগীকে সরিয়ে আনা হতো এই দ্বীপে। নির্জন এই দ্বীপে গড়ে তোলা হয় একটি হাসপাতাল। টাইফয়েডের চিকিৎসা দেওয়া হতো এখানে। চিকিৎসা চলাকালীন অনেক রোগীই এখানে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে এবং তাদের মৃত্যুই এই দ্বীপকে অভিশপ্ত করে তুলেছে। সেই থেকে এ দ্বীপের প্রতি মানুষের কৌতূহল ও ভীতি দুটোই বেড়ে চলে। তখন থেকেই অনেকে এই দ্বীপকে মৃত্যুপুরী বলে মানতেন। মার্কিনীরা ভাবে মৃতদের আত্মারা এ দ্বীপের নির্জনতায় লুকিয়ে থাকে। রাতের আঁধারে এরা জেগে ওঠে এবং মানুষের প্রাণ হরণ করে।

দ্বীপ সম্পর্কে ভয়ংকর এই সব তথ্য ছড়িয়ে পড়লে মানুষের আনাগোনা কমতে শুরু করে এই দ্বীপ থেকে। এক সময় দ্বীপটি ছেড়ে দলে দলে চলে যেতে শুরু করে মানুষেরা। ফলে হাসপাতালটিও পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে এক সময়। এই দ্বীপ সম্পর্কে মানুষের ভীতি দূর করার জন্য ১৯৫০ সালের দিকে এই দ্বীপে একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র বসানো হয়। তখন হেরোইন আসক্ত মানুষের চিকিৎসা চলত এখানে। কিন্তু এই দ্বীপে আনার পর রোগীরা এতোটাই পাগলামি করতো যে, তাদের পাগলামি দেখে অনেক চিকিৎসকই পালিয়ে বেঁচেছেন এই দ্বীপ থেকে। এরপর আবারও পরিত্যক্ত হয়ে যায় হাসপাতালটি এবং ক্রমে জনমানব শূন্য হয়ে পড়ে ব্রাদার আইল্যান্ড। দ্বীপটিকে ঘিরে তারপর থেকেই বের হতে থাকে নানান ধরনের গল্প ও কেচ্ছা কাহিনী। যারা এই দ্বীপে ছিলেন তাদের বর্ণনায় বেরিয়ে আসে লোমহর্ষক একেক ঘটনা। ভুত-প্রেতের সাক্ষাৎ পাওয়ার দাবিও করেন অনেকে। দ্বীপ থেকে ফেরত আসা অনেকেই অশুভ আত্মার ভয়ানক সব কর্মকাণ্ডের গল্প বলতে শুরু করে যা শুনে সাধারণের মনে ভয় আরও বাড়তে থাকে। ব্রাদার আইল্যান্ড স্থায়ীভাবে প্রেতের দ্বীপ বলে কুখ্যাতি পায় এক হেরোইন আসক্ত ব্যক্তির কথায়, যাকে চিকিৎসার জন্য এই দ্বীপে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সে এই দ্বীপ থেকে ফিরে এসে জানায়, এই দ্বীপে রাতে মৃত মানুষেরা চলাফেরা করে আর শোনা যায় রাত ভর কান্নার আওয়াজ। দ্বীপের আনাচে-কানাচে জ্বলে আগুন। দ্বীপটিকে দূর থেকে দেখলে মনে হতো স্বপ্নপুরী কিন্তু এর ভেতরে ঢুকলে সবুজ গাছের নিচে অন্ধকারে ডুবে যেতে হতো। এই অন্ধকার পেরিয়ে দ্বীপে চলাচলের রাস্তা খুঁজে পাওয়া ছিল কঠিন। অনেকেই ভুল রাস্তায় হেঁটে ক্লান্ত হয়ে ঢুকে পড়তো পাথুরে গুহায়। এ দ্বীপের পাথুরে গুহাগুলো কেবল অন্ধকারেই মুখ খুলে বসে থাকে। যখন কেউ এ গুহায় ঢুকত অমনি বন্ধ হয়ে যেত গুহার মুখ।

ব্রাদার আইল্যান্ড ছেড়ে মানুষ জন চলে যায় ১৯৬৩ সালের দিকে কিন্তু হাসপাতালটি সেখানে সে অবস্থাতেই পড়ে ছিল। মাদকাসক্তদের বসতবাড়ির ও আসবাবপত্র এখনো আগের মতোই পড়ে রয়েছে সেখানে। ১৯৭০ সালের দিকে দ্বীপটি বিক্রি করার চেষ্টা হয়। কিন্তু এই দ্বীপটি কিনতে কেউই আগ্রহী হয়নি। আসলে এমন অভিশপ্ত আর ভুতুড়ে দ্বীপ কিনে কে বিপদে পড়তে চায়? তারপর থেকে কয়েক দশক ধরে দ্বীপটি পরিত্যক্ত অবস্থাতেই ছিল।

২০১০ সালের দিকে ব্রাদার আইল্যান্ডকে হঠাৎ করেই আবার আলোচনায় আনেন এক শখের পর্যটক। ঘোরা ফেরার মধ্যে তিনি পথ ভুলে পৌঁছে যান এই দ্বীপের কাছে। তিনি তুলে আনেন এই দ্বীপের একের পর এক বোমা ফাটানো ছবি। দ্বীপের ভেতরের চিত্রগুলো দেখে অনেকেই আগ্রহী হন নতুন করে এই দ্বীপের ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে।
অবশ্য বেশির ভাগ মানুষই তাদের এই আগ্রহকে বাড়াবাড়ি বলে অভিযোগ করছেন। তারা বলছেন ব্রাদার আইল্যান্ড দ্বীপের ক্ষুধা আবারও জেগে উঠেছে। সে ভুলে ভালিয়ে মানুষদেরকে আবারও তার তীরে নিয়ে যাচ্ছে। সময়ের সুযোগে সে আবারও তার পেট ভরবে এই সব মানুষদের রক্ত-মাংস দিয়ে।

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত