ট্যাটু

ট্যাটু

মেট্রোর টিকিট কাউন্টারে ঋতিকার সামনে ছিল মেয়েটা। খুরচো পয়সা নিয়ে ঝামেলা হচ্ছিল,তাই মেয়েটি অনেকক্ষন কাউন্টার আঁটকে ছিল। এ রোজদিনের ঘটানা। কিন্তু ঋতিকার চোখ আঁটকে ছিল মেয়েটির পিঠে। অদ্ভূত একটা ট্যাটু। ধবধবে ফরসা পিঠে ডিপ কাট কুর্তির জন্য মেরুন আর কালোয় আঁকা ট্যাটুটা কেমন যেন ঝলমল করছিল। ট্যাটুর ডিজাইনটা এক্কেবারে হাটকে। সেই জন্যই মন দিয়ে দেখছিল ঋতিকা। মেয়েটি কাউন্টার ছেড়ে চলে যাওয়ার সময়,ঋতিকার দিকে একবার পিছন ফিরে তাকালো। একপলকেই ঋতিকা বুঝল,মেয়েটা প্রচন্ডই ফরসা,তবে চোখের মণি নীল। একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল বোধহয় ঋতিকা। কাউন্টারের ভেতর হাত বাড়িয়ে একটা দশের নোট দিল ঋতিকা। টোকেনটা নিয়ে দ্রুত প্ল্যাটফর্মের দিকে চলল। তখনই খেয়াল হল ভুলটা হয়েছে। স্মার্ট কার্ডটা রিচার্জ করার ছিল,তা না করে ভুল করে টিকিট কেটে ফেলেছে। কাল সকালেই রিচার্জ করে নিতে হবে।

আগের মেট্রোটা ছেড়ে দিয়েছে, ঋতিকা। বড্ড ভীড় ছিল। এটাতে উঠেই উল্ঠোদিকের দরজার কাছটায় দাঁড়িয়ে যায়,ঋতিকা। হেড ফোনটা কানে লাগিয়ে মিউজিক প্লেয়ারটা অন করে। ঋতিকার অনেকদিনের ইচ্ছা একটা ট্যাটু করাবে। ওর অফিসের জ্যাসমিন সারা শরীরটা প্রায় ভরিয়েই তুলেছে ট্যাটুতে। ঘাড়ের কাছে ড্রাগন, ডানদিকে বুকে একটা কিউপিড, কোমরে কাঁকড়াবিছে,গোটা পিঠ জুরে ঈগল আর বাম পায়ের গোড়ালিতে একটা ফ্লোরাল ডিজাঈন। অনেক খরচ করেছে আর সেগুলো প্রপারলি এক্সিবিটের জন্য কনসাশলি পোষাক পড়ে—রিভিলিং কিন্তু ও দিব্যি ক্যারি করতে পারে। ওর বয়ফ্রেন্ডও নাকি ট্যাটু প্রিয়,তারও শরীরময় ট্যাটু। জ্যাসমিন বলছিল বয়ফ্রেন্ডের আবদার মেনে এবার হিপে একটা বাটারফ্লাই করাবে। অতটা সখ যদিও নেই,তবে ঋতিকার ইচ্ছে বুকের কাছে একটা ট্যাটু করাবে,পোষাকে ঢাকাই থাকবে। তবুও ওর শরীরে ওই ট্যাটুটা ওর বন্ধুর মতন থাকবে। কৌশিক,মানে ঋতিকার ফিঁওন্সে ওর ওসবে আগ্রহ নেই। তাই ওকে বলেও লাভ নেই। এক্কবারে ফুলশয্যার দিন দেখবে,সারপ্রাইজড হবে। জ্যাসমিনের কাছেই জানতে হবে কোথায় ভালো ট্যাটু করায়। আজ মেট্রোর কাউন্টারে মেয়েটার ট্যাটুটা দেখে পুরোনো ইচ্ছেটা চাগাড় দিয়ে উঠেছে। আর ওমন একটা ট্যাটুই করবে। ছবিটা চোখে ভাসছে এখনো। বাড়ি ফিরে একটা স্কেচ করে রাখবে।

বাড়ি এসে স্নান করল ঋতিকা। কাল শনিবার, পরপর দুদিন ছুটি আছে। তারউপর কৌশিকও অফিসের কাজে কদিন কোলকাতার বাইরে। তাই সামনের দুদিন পুরো ফ্রি,এরমধ্যেই ট্যাটুটা করাতে হবে। আয়নার সামনে বসে দেখল চোখের তলায় বেশ ডার্ক ট্যান হয়েছে,পার্লারেও যেতে হবে। টাওয়েল গা থেকে সরিয়ে দেখল বসে থাকলে কোমরের কাছে গোটাদুয়েক ভাঁজ পড়ছে,অর্থাৎ আবার কিছুটা ওয়েট পুট ওন করেছে। বিয়ে মিটলেই জিম জয়েন করে নেবে। ওই খরচটার জন্য বরের ঘাড় ভাঙাটাই,ঋতিকা লজিকাল বলে মনে করে। স্ত্রীকে সুন্দর রাখা স্বামীর প্রাইমারী কর্তব্য। মা এক্ষুনি ঘিয়ে চুপচুপে পরোটা আর আলুভাজা নিয়ে আসবে। ইগনোরেবল কয়েক কেজির জন্য ওমন সুখাদ্যের প্রতি অবিচার করা ঠিক হবে না। ভাবতে ভাবতেই মা এসে ঢুকল ঘরে,হাতে পরোটার প্লেট।

—কি রে এমন অসভ্যের মতন বসে আছিস কেন?

—দেখছিলাম।

—কি?

—আমি একটু মোটা, তাই না।

—সে তো বরাবরই। তার উপর রোজ জাংক ফুড খাবি!

—ও,সব দোষ আমার তাই না?আর এই যে তুমি পরোটা নিয়ে এলে। তাতে পাপ হয় না বুঝি?

—না,হয় না। কারন রাতে স্ট্যু আর রুটি।

—ছিঃ। আর তোমাদের জন্য বুঝি বাটার চিকেন?

—পাগলী কোথাকার। রাতে সবার স্ট্যু। চেঞ্জ করে খেয়ে নে। তারপর একবার আসিস তো।

—কেন?

—কাল তোকে নিয়ে তোর বিয়ের শাড়ী কিনতে যাব। আগে একটা লিস্ট করে নেব।

—কাল না। কাল আমার পার্লার যাওয়ার আছে।

—তবে কবে যাবি?

—পাক্কা,রোববার।

মা বসার ঘরে চলে গেছে। টিভি দেখছে হয়ত,আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। পরোটা গুলো খেয়ে একটু আক্ষেপই হচ্ছিল,ঋতিকার। আরও মুটিয়ে গেলে ওই শুয়োরের মত ৩৬—৩৬—৩৬ ভাইটাল স্ট্যাটসে ট্যাটু করার কোন মানেই হয় না।

স্কেচবুকটা ড্রয়ার থেকে টেনে নিয়ে বসল ঋতিকা। হুবুহ এঁকে ফেলল ট্যাটুটা। একটা বর্শাধারী শিকারি,তবে মুখটা এলিয়েনদের মতন। চারপাশ দিয়ে সারপেন্টাইল লতা আর ফুল। লালচে মেরুন আর কালো রঙটাতে সত্যিই সুন্দর লাগছে। ফোন করল জ্যাসমিন কে। ও বোধহয় কোন পার্টিতে আছে। প্রচন্ড হৈ-হুল্লোড়ের আওয়াজ আসছিল। লাউড মিউজিকের জন্য কিছুই শুনতে পাচ্ছিল না জ্যাসমিন। ফোনটা কেটে দিয়ে একটা টেক্সট করল হোয়াসঅ্যাপে। জ্যাসমিন অফ-লাইন। ফোনটা চার্জে বসিয়ে মায়ের কাছে এসে বসল ঋতিকা। সেই একঘেয়ে সিরিয়াল দেখে চলেছে মা। ল্যান্ড ফোন থেকে কৌশিককে ফোন করল ঋতিকা। সারাদিনের ফিরিস্তি,পৌনপুনিক ভালো মন্দের খোঁজ খবর নেওয়া অভ্যেস হয়ে গেছে।

রাতের খাওয়া সেরে নিজের ঘরে আসে, ঋতিকা। জ্যাসমিন রিপ্লাই করেছে। ট্যাটু সেন্টারের নাম,অ্যাড্রেস,রেট চার্ট সব দিয়ে দিয়েছে। একটা থ্যান্কস পাঠিয়ে শুয়ে পড়ল। খুব পাচ্ছিল। শোয়া মাত্রই ঘুমিয়ে পড়ল ঋতিকা। ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখলো একটা ট্রেন ছুটছে। ঋতিকার ট্যাটুটা পোষাক ভেদ করে স্পষ্ট হচ্ছে। উলঠো দিকের ভদ্রলোক হোহো করে হাসছেন। দেখতে অনেকটা লালমোহন বাবুর মতন। কাঁটা চামচ দিয়ে কেটে কেটে ডবল ডিমের ওমলেট খাচ্ছেন। আর একটা কাঁকড়া বিছে লেজের ডগার হুলটা তাগ করে আছে ঐ ট্যাটুর দিকে। কি তীব্র যন্ত্রনা দংশনে।

ঘুম ভেঙে গেল ঋতিকার। মশারির মধ্যে একটা মশা ঢুকেছে। নাইট ল্যাম্পের আলোয় টিপ করে চাঁটি মারতেই রক্ত খেয়ে ট্যাঁপা হয়ে মশাটা পটকে গেল। রক্তটা নাইটিতে মুছে নিয়ে সম্ভাব্য ডেঙ্গি,ম্যালেরিয়া,চিকুনগুনিয়া আর একটু আগে দেখা স্বপ্নের কথা ভাবতে ভাবতে আবার ঘুমিয়ে পড়ল ঋতিকা।

একবার চটকে যাওয়া ঘুম আবার গাঢ় হয়ে চোখে নেমে আসলে সে ঘুম সহজে ভাঙে না। ছুটি বলে মাও ডাকেনি। চড়চড়ে রোদ্দুর মুখে পড়তে তবে ঘুম ভাঙল। কৌশিকের মেসেজ এসেছে। ক্লায়েন্ট মিট শুরু হবে তাই ফোন বন্ধ রাখবে,রাতে হোটেলে ফিরে কল করবে। মনেমনে প্রতিজ্ঞা করেছে কিছুতেই সকালে ব্রেকফাস্টে লুচি খাবে না। রান্না ঘরে ঢুকে ওটসের খোঁজ করেছে। ব্রেকফাস্ট করেই বেরোবে। পার্লার,ট্যাটু সব সেরে তবে ফিরবে।

পার্লারটা পাড়াতেই,একদমই ভীড় ছিল না। তবুও ঘন্টাখানেক লাগল। এরপর সেই যোধপুর পার্ক অবধি যেতে হল,জ্যাসমিনের দেওয়া ঠিকানায় পৌঁছাতে। বেশ গোছানো ট্যাটু পার্লারটি একটি মাঝ বয়েসি মহিলার । ঋতিকা ট্যাটু করাবে জানাতে একটা ক্যাটেলগ এগিয়ে দিলেন ওই মহিলা।

—স্পেসিমেন আছে। কোথায় ট্যাটু করাবেন,ম্যাডাম।

—ডান দিকে চেস্টে। তবে আমার পছন্দের ডিজাইন আছে। সেইটে করতে হবে। সম্ভব?

—ডেফিনিটলি ম্যাডাম। ডিজাইনের সফ্টকপি বা প্রিন্টেট ইমেজ থাকলে দিন।

ব্যাগ থেকে ডিজাইনটা বের করে ভদ্রমহিলার হাতে দেয় ঋতিকা।

—এই রকমই হওয়া চাই।

—তা হবে,তবে আপনার কমপ্লেক্সন অনুযায়ী ডার্ক ম্যারুনের বদলে পিংকটা বেশি ভালো হবে।

কম্পিউটারে চবিটার কপি করে সাইজ মত প্রিন্ট করে নিলৈন ভদ্রমহিলা। সব রেডি করে ঋতিকাকে হেলানো চেয়ারে বসালেন। হাল্কা মিউজিক চলছে ঘরে। ঋতিকার বেশ লাগছিল। শেষ পর্যন্ত সখ পূরন হচ্ছে। ঋতিকার টি-শার্ট আর ব্রাটা খুলে চামড়ার উপর স্কেচ আউট লাইনটা করেনিচ্ছিলেন ভদ্রমহিলা।

—একটু ভেতরে করবেন,যাতে ট্যাটুটা সবসময় দেখা না যায়।

—ট্যাটুটা একটু রিভিলিং না হলে ভালো লাগবৈ না।

—তা হোক। আমারটা একটু ডিপে করুন।

—তাহলে ওটা আপনার কাপ এরিয়ায় পেনিট্রেট করে যাবে।

—কোনো অসুবিধা নেই।

ভদ্রমহিলা ট্যাটু আঁকায় মন দেয়। একটু লাগছিল বটে ঋতিকার কিন্তু কাজটা কমপ্লিট হয়ে গেলে দারুণ লাগছিল। বাড়ি ফিরে স্নান খাওয়া সেরে বিছানায় একটু গড়িয়ে নিল ঋতিকা। মাকেও বলেনি ট্যাটুর কথা। লোকানোই থাক। এতদিন নিজের কার্ভি চেহারার জন্য বিশেষ রিগ্রেট ছিল না,কিন্তু আজ ট্যাটু করিয়ে ফিরে আসার পর থেকেই মনে হচ্ছে আর একটু স্লিম হলে ভালো হোতো। ওয়েস্টার্ন ওরারড্রোবের সাথে ওই ট্যাটুটা বেশ যাবে। তবে পরপর কদিন অফিসেও কলার্ড টি অথবা ফুল নেক কুর্তি পড়েই গেছে,যাতে বুকের কারুকার্য গোপনেই থাকে। জ্যাসমিন কে শুধু দেখিয়েছে ওয়াশরুমে,ও বেশ অ্যাপ্রিসিয়েট করল।

গোপন কথাটি আর গোপন রইল না। সেদিন যখন কৌশিকের সাথে ডিনারে গেল, সালোয়ারের ভেতর দিয়ে ট্যাটুটা একটু উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিল বটে,তা সেটা ওড়না টেনে ম্যানেজ করে নিয়েছিল ঋতিকা। কিন্তু মায়ের চোখে পড়ে গেল। সেদিন অফিসের পার্টিতৈ শাড়ী পড়ে যাবে ঠিক করেছিল। ম্যাচিং ব্লাজজটা একটি ডিপ কাট। ট্যাটুর প্রায় অর্ধেক দেখা যাচ্ছিল। লুক থ্রু শিফনের আঁচলের তলা দিয়ে ট্যাটুটার জন্য ঋতিকাকে বেশ বোল্ড লাগছিল। মা দেখেই আঁৎকে উঠলেন

—তোর বুকের কাছে ওটা কি?

—ট্যাটু। আগের হপ্তায় করেয়েছি।

—বলিস নি তো!

—বলার কি আছে?আমি কি পার্লারে গেলে ভ্রুপ্লাক করিরেছি না লোয়ার অ্যাবডোমেনে ওয়াক্সিং করেছি তোমাকে বলি?

—মুখের কি ভাষা। কৌশিক জানে?ও কিছু বলেনি?

—জানে না। ওকে তো দেখতেই হবে একদিন। তবে আপত্তি করবে কেন,আমি তো ওর গোঁফ নিয়ে আপত্তি করিনি!

—আর বিশ্রী ছবিটা। অলক্ষুণে,শণি ঠাকুরের মতন।

—মা,তুমি না!এটা ফ্যাব। জ্যাসমিন বলেছে।

—ও তো বলবেই। দিঙ্গি মেয়ে একটা।

ক্যাব এসে যাওয়ায়,তর্কটা বন্ধ করতে হল। ঋতিকা খেয়াল করেছে,পার্টিতে প্রায় সব্বাই ওর ট্যাটুটা খেয়াল করছে। মন্দ ফিল হচ্ছিল না। তবে পার্টিতে একটুকুও হার্ড ড্রিংকস নেয় নি ঋতিকা,স্পাইসি খাবার গুলোও নিবল করে এড়িয়ে গেছে। কেবল স্যালাড,একটু পাস্তা আর ফ্রেস লাইম সোডা,ব্যাস। ট্যাটুটা করা ইস্তক ঋতিকা ফিগার ফোবিয়াক হয়ে উঠেছে। ডায়েট,ওয়াকআউট সব চলছে। সামনের মাসে বিয়ের আগেই স্লিম হতে হবে। ওর চেষ্টাটা চোখেও পড়ছে। পুরোনো কুর্তি,সালোয়ার,টপ সবই লুজ লাগছে। জিনসের কোমরটাও আর টাইট লাগে না। বডি শেপার ছাড়াই ফ্রক পড়তে পারছে,বেলি ফ্যাটটাও লোকানোর চেষ্টা করতে হয় না। সবচেয়ে অবাক হল সেদিন ঘড়ি পড়ার সময়। সন্ধ্যায় কৌশিক বলেছিল মুভি দেখাতে নিয়ে যাবে। সুন্দর করে সেজেছিল ঋতিকা। ট্যাটুটা আড়াল করার জন্যই হাই নেক ডিজাইনার ব্লাউজ দিয়ে হ্যান্ডলুমের ব্লু শাড়িটা পড়ল ঋতিকা আর ম্যাচ করে অ্যান্টিক জুয়েলারি। শান্তিনিকেতনী কাজ করা সাইড ব্যাগটাও নিল। এসবের সাথে অ্যাস কালারের লেদার ব্যান্ডের ঘড়িটা বেশি মানাবে। ওইটা পড়তে গিয়ে খেয়াল করল ঋতিকা রিস্টটাও দুটো ঘর পাতলা হয়ে গেছে। তার মানে সিগনিফিক্যান্টলি ওয়েট লুজ করছে। ওয়েট টা একবার চেক করে নিতে হবে।

কৌশিক ওয়েট করছিল আইনক্সের সামনে। হাতে গিফ্ট প্যাক। কৌশিক বলেছিল অ্যাসাইমেন্টটা সাকসেসফুল হলে একটা গিফ্ট দেবে। ঋতিকাকে দেখতে পেয়ে হাত নাড়াল।

—একটু লেট হয়ে গেল। অনেকক্ষন ওয়েট করালাম।

— তা মিনিট পনেরো হবে। দেরির কারন কি মেকআপ?

—ইস,তেমন মেকআপ করার সময়ই পেলাম না।

—আরও। এরপর তোমায় মেরুভাল্লুক মনে হত।

—ঠিক আছে যাও,আমি তাহলে যাই!

—আরে রাগ করতে নেই। জোক করছিলাম।

হাত বাড়িয়ে গিফ্ট প্যাকটা এগিয়ে দেয় কৌশিক সাথে একগোছা টিউলিপ। টিউলিপ ঋতিকার খুব পছন্দের।

—এটায় কি আছে?

— বাড়ি গিয়ে দেখ। চল এখন মুভি শুরু হয়ে যাবে।

মুভির পর কৌশিক জোর করছিল ডিনারের জন্য। রাজি হতেই হল। রেস্টুরেন্টে এসে ঋতিকা নোটিশ করল ফুলগুলো কেমম শুকিয়ে গেছে। এত দামী ফুলগুলো,যখন কৌশিক দিল তখনও ঝলমল করছিল। হঠাৎ করে এমন মিইয়ে গেল কেন। কৌশিককে দেখালে ও বিশেষ পাত্তা দিল না। বাসি ছিল হয়ত,আমায় বোকা পেয়ে ঠকিয়েছে এই বলে মাটন রেজালায় কনসেনট্রেট করল।

ফুল গুলো মিইয়ে গেলেও বাড়ি অবধি নিয়ে এল । কৌশিক ভালবেসে কিনেছে। মেকআপ তুলতে গিয়ে নজর পড়ল মুখটা বেশ সাদাটে লাগছে। হিমোগ্লোবিন ড্রপ করল নাতো। চোখটাও ঘোলাটে,একবার ব্ল্যাড টেস্ট করিয়ে নিতে হবে। গিফ্ট প্যাকটা খোলা হয়নি। রেপারটা খুলে দেখল একটা দামি লিপস্টিক। রঙটা খুব ব্রাইট। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে লিপস্টিকটা একবার ট্রায়াল দিল। রাতপোষাকের নুডলস্ট্র্যাপটা কাঁধ গলে নেমে এসেছে। একদিকের বুকটা প্রায় উন্মুক্ত। ট্যাটুটাও স্পষ্ট। সাথে বোল্ড রেড লিপস্টিকে ঋতিকাকে বেশ অ্যাপিলিং লাগছিল। একটা সেলফিও তুলল। ভেবেছিল ওটা কৌশিককে পাঠাবে। কিন্তু ছবিটা পাঠাতে গেলে এডিড করতে হবে,না হলে ট্যাটুর সারপ্রাইজটা কৌশিকের কাছে ফাঁস হয়ে যাবে। বিছানায় এসে শুলো ঋতিকা। ছবিটা ক্রপ করে এটাই হোটাসঅ্যাপের ডিপি করা যেতে পারে। ফোটো এডিটিং অ্যাপলিকেসনে ছবিটা ওপেই করেই মুডটা খিঁচড়ে গেল। কি বাজে ছবি। মুখটা ফ্যাটফ্যাটে সাদা। লিপস্টিকের রঙটা রক্তের মতন লাগছে যেন। চোখের মণিটাও ঘোলা,মরা চোখের মতন। ছবিটা ডিলিটই করে দিল।

ঋতিকার ঘরের জানলায় একটা টবে সুন্দর কমলা রঙের ক্লিভিয়া ফুটেছিল। সেগুলোতে রোজ জল দিত ঋতিকা। কাল রাতেও আনেকগুলো কুঁড়ি ছিল।সব কেমন মিইয়ে গেছে।মনটা খারাপ হয়ে যায়। তার মধ্যে আবার হুলো বেড়ালটা ঘরে এসে ধুকেছে।খেয়াল করেনি ঋতিকা, খা্ট থেকে নামতে গিয়ে পা দিয়ে ফেলল ওরই ঘারে।হুমড়ি খেয়ে পড়ে গোড়ালি মচকাল।আবার অফিস কামাই। কিন্তু সন্ধ্যেতেও ব্যথা কমল না। ক্রমশ পা ফুলতে থাকলো। গোটা রাত এপাশ-ওপাশ করে সকালে উঠেই ছুটতে হল এক্স-রে করাতে।হেয়ার লাইন ক্র্যাক রয়েছে। পায়ে প্লাসটার হল।

বিয়ের আগে আর অফিসে জয়েন করা হল না ঋতিকার। পা সেরে গেলেও শরীর ভীষণ দুর্বল হয়ে গেছে।বিয়েতেও ধকল গেল। ঘটনাটা ঘটল ফুলশয্যার দিন রাতে। সব রিলেটিভ ছলে গেছে। বেডরুমে ঋতিকা আর কৌশিক।বিছানা জুড়ে গোলাপের পাপড়ি। এবার কৌশিক কে সারপ্রাইজটা দিতে হবে। কৌশিক প্রথমবার দেখবে ঋতিকার বুকের ট্যাটু। সব গয়না খুলে রেখেছে ঋতিকা। কৌশিকের ঠোঁট ঋতিকার ঠোঁট ছুঁয়েছে। ঋতিকার ব্রায়ের স্ট্র্যাপ টা কাঁধ গলিয়ে নামিয়ে নিয়েছে কৌশিক। ঋতিকার গলার নরম ভাঁজ ছুঁয়ে কৌশিক আস্তে আস্তে নামছে নিচে, ঋতিকার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। ঠিক তখনই ভয় পেয়ে ঠিকরে দূরে সরে এল কৌশিক। কৌশিকের চোখ যেন ঠিকরে আসতে চাইছে।

-কি ওটা?কৌশিকের আঙুল ঋতিকার বুকের দিকে।

ঋতিকাও কথা বলার মতন নেই। ঋতিকা বুক যেন ক্ষত বিক্ষত হয়ে গেছে, রক্ত ঝরছে, অথচ একটুও জ্বালা যন্ত্রণা নেই।কৌশিক থরথর করে কাঁপছে, কৌশিকের ঠোঁটে ঋতিকার রক্ত। ঘরের ডিম আলোতেও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ঋতিকার বুকের ট্যাটু আকারে যেন বড় হয়ে উঠছে। বর্শার ফলা চিকচিক করছে রক্তে।

ভোরে যখন জ্ঞান ফিরল, ঋতিকা তখন হসপিটালে।বিকেলে এল কৌশিক, অর মুখটাও কেমন ছোট হুয়ে আছে।

– এখন কেমন ফিল করছো?

-বেটার, তবে খুব ড্রাওজি লাগছে।

-সেটা থাকবেই, তোমার শরীরে কোথাও একটা হেমারেজ হয়েছে। রক্তক্ষরণ হচ্ছে। ডিটেক্ট করা যায় নি।

-আমি জানি?

-মানে?

-ওই ট্যাটুটাই সব।

-তুমি ট্যাটুর কথা বলনি আমায় কোনদিন।

-ভেবেছিলাম সারপ্রাইজ দেব। কিন্তু ওই ট্যাটু করানোর পর থেকেই আমি কেমন নেগেটিভ হুয়ে গেছি। তোমার দেওয়া ফুলগুলো আমার হাতে পড়তেই শুকিয়ে গেল।আমি নিজেও কেমন শুকিয়ে জেতে থাকলাম। নট অনলি ফিজিক্যালি, মেন্টালি অলসো। আমার ক্রিয়েটিভিটি চলে গেছে। আমার হাতে বসানো গাছটা মরে গেছে। এখন তুমিও হার্ট।

-যত সব ননসেন্স। যদিও আমি নিজেও ট্যাটু দেখে ভয় পেয়েছিলাম। ওটা দেখতে একটু ক্রিপি।

-আর রক্ত?

-হতে পারে তোমার নিপলে কামড় দিয়ে ফেলেছিলাম।

-না। আমি তবে সবার আগে ফিল করতাম, কৌশিক।সকালে উঠে দেখি আমি হসপিটালে। আমার এই ট্যাটুর রঙ ছিল পিঙ্ক, এখন দেখ টকটক করছে লাল। ইট সাকস ব্লাড।

-আবার উদ্ভট কথা ভাবছ।

-আমি পড়েছি। এই যে ট্যাটুর ছবিটা, ইট ইজ হুনহাউ।

-হুনহাউ? কি সেটা?

– মৃত্যু দেবতা। মায়া মাইথোলজি।

************************************** (সমাপ্ত) *************************************

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত