ভৌতিক আত্মা

ভৌতিক আত্মা

সময়টা ছিল শীতকাল,

দিনটা ছিল মঙ্গলবার।গ্রামে শনি আর মঙ্গলবার এই দুইদিন হাট বসে।

দূরদূরান্ত থেকে লোকজন আসে এই হাটে বেচাকেনা করতে।কয়েক বছর পর নানু বাড়ি আসলাম বেড়াতে।

দুপুরের দিকে খালা বলল আজকে তো হাটবার ইচ্ছে করলে ঘুরে আসতে পার ভালো লাগবে।বিকালের দিকে বেড়িয়ে পরলাম।

নানু বাড়ি থেকে প্রায় ১ কিঃমিঃ হবে হাট পর্যন্ত।পিচ ঢালা রাস্তা দিয়ে গ্রামের দৃশ্য দেখে দেখে হেঁটে যাচ্ছি।৩৫ মিনিট সময় লাগল হাটে পৌছতে ।

হাটে এসে দেখি প্রচুর লোকের সমাগম । কেউ আসছে কিছু বিক্রি করতে,

কেউ আসছে কিছু কেনাকাটা করতে আর আমার মত কিছু সংখ্যক আসছে তা দেখতে। হাট শেষ হতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আসল।

পাশের কোন গ্রাম থেকে আযানের ধ্বনি ভেসে আসছে।সম্পুর্ন হাট শেষ হতে আর কিছু সময় লাগল।
.
অনেক সময় ধরে খালের উপরে ব্রিজের রেলিং এ বসে আছি,

কিন্তু কোন লোক কে দেখতে পাচ্ছি না যার সাথে আমি এই ঘুটঘুটে অন্ধকার রাস্তাটা পাড় হয়ে বাড়িতে যেতে পারি।

আমি অন্ধকার রাস্তায় হাঁটতে খুব ভয় পাই তার উপরে আমাবস্যা রাত।পাশের ঝোপঝাড় থেকে ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।

ব্যাঙগুলো শীত নিদ্রায় ব্যস্ত। তাই আর বসে না থেকে নিজেই ব্রিজ থেকে নেমে রাস্তায় উঠে হাটতে লাগলাম আর মনে মনে আল্লাহকে ডাকতে লাগলাম।

গাছ থেকে কিছু একটা পড়ার আওয়াজ আসল আমি ভয়ে হাটার গতি বাড়িয়ে দিলাম।বিভিন্ন ধরনের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি ঝিঝি পোকার আওয়াজ,

চিকার আওয়াজ অনেক দূর থেকে কুকুরের আওয়াজ ও ভেসে আসছে।

সামনে হঠাৎ ছায়ার মত কিসের নড়াচড়া দেখলাম আরেকটু কাছে গিয়ে এগুতেই দেখি এক মেয়ে।

মেয়েটা কে দেখে বুকে সাহস আসল যাক এই অন্ধকার রাস্তায় একজন কে পাওয়া গেল।

তার সাথেই এখন বাড়ি যাওয়া যাবে কিন্তু সে কতটুকু পর্যন্ত যাবে সেটা তো জানি না।

আমি যত দ্রুত হেটে তার কাছে আসার চেষ্টা করছি তত দ্রুতই সে দূরে সরে যাছে।
.
তার কাছাকাছি গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম
.
-আপনি কোন বাড়ি যাবেন?
.
-মুন্সি বাড়ি।
মনে মনে খুশি হলাম কারন মুন্সি বাড়ি থেকে নানু বাড়ির কাছেই হেঁটে ৫মিনিটে পৌছা যাবে।
.
-আপনার নামটা জানতে পারি?
.
-মিলি।
.
-মুন্সি বাড়ি কার কাছে যাবেন?
.
মিলি:-জয়নাল মুন্সি আমার বাবা।
.
মিলিকে যে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছি শুধু সেই প্রশ্নের উত্তরই সে গম্ভীর গলায় দিচ্ছে।

ভদ্রতা বলেও তো একটা কথা আছে সেও তো আমাকে প্রশ্ন করতে পারে কিন্তু নাহ সে ভাব ধরে আছে বুঝা যাচ্ছে।
.
-আপনি কি পড়ালেখা করেন?
.
মিলি:- হাঁ, ঝালকাঠি গভঃ ওমেন কলেজ।
.
-ঝালকাঠি গভঃ ওমেন কলেজে কিসে পড়েন?
.
-একদশ শ্রেণীতে।
.
আমি আমার পরিচয় দিলাম কিন্তু তার মুখ থেকে কোন কথাই বের হল না।তার মুখটাও অন্ধকারে দেখা যাচ্ছিল না।

বাকি পথটুকু আমি আর কোন কথা বাড়ালাম না।মুন্সি বাড়ি কাছাকাছি আসতেই যেই মিলি কে বিদায় জানাতে ফিরলাম দেখি সে নেই।

কি মেয়ে রে বাবা চলে গেল অথচ একবার ও বলে গেল না??
.
সকালে নাস্তা করার সময় খালাকে রাতের ঘটনা সব খুলে বললাম।
.
-তোমার নাস্তা করা শেষ হলে তোমাকে নিয়ে মুন্সি বাড়ি যাব।
.
মনে মনে খুশি হলাম কারন মেয়েটার সাথে দেখা হলে কিছু কথা শুনিয়ে দিতে হবে।
খালা একটা তালা বদ্ধ ঘরের সামনে এনে বলল, এটাই জয়নাল মুন্সির বাড়ি।
.
-এই বাড়িতে তো কেউ নেই।
.
-এই বাড়িতে ৫বছর ধরে কেউ থাকে না।
.
আমি অবাক হলাম কি বলছেন আপনি??
বাড়ির পাশের বাঁশ বাগানে নিয়ে গিয়ে একটা কবর দেখিয়ে বলল এটা মিলির কবর।
.
-তাহলে গতকাল রাতে আমার সাথে যে মেয়েটা ছিল সে মেয়েটা কে??
-সেটা তুমি বুঝে নাও কে ছিল কাল রাতে।
.
মিলি ছিল বাবা মার একমাত্র মেয়ে।

বাবা অন্যের জমি চাষ করত আর মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে মিলিকে এস এস সি পাস করিয়ে কলেজে ভর্তি করায়।

যে বছর সে ভর্তি হয় সে বছর এক ছেলের সাথে তার বিয়ে হয়।

মিলির ইচ্ছে ছিল পড়ালেখা শেষ করে মা বাবার দু:খ ঘুচাবে তাই সে বিয়েতে প্রথমে রাজি ছিল না।

ছেলে পক্ষ বলল বিয়ের পরে মিলিকে তারা পড়াবে সেই কথাতে মিলিও বিয়েতে রাজি হয়ে যায়।
বিয়ের দু মাস পরে মিলির শ্বশুর বাড়ি থেকে তার কলেজে যাওয়া বন্ধ করল তারপর যৌতুকের জন্য মানসিক চাপ দিতে লাগল।

চুপ করে সহ্য করছিল সবকিছু কারন সে জানত তার মা বাবার পক্ষে যৌতুক দেয়া সম্ভব না।

মানসিক চাপে যখন কিছু হচ্ছিল না তখন শুরু হল শারীরিক নির্যাতন। তা সহ্য করতে না পেরে মিলি তার বাবা মার কাছে চলে আসে।

মিলির চিন্তায় চিন্তায় একদিন তার বাবা হার্ট স্ট্রোক করে মারা যায়।
গ্রামের সবাই মিলিকে বুঝিয়ে তার শ্বশুর বাড়িতে পাঠাল। একদিন খবর আসল মিলি সুইসাইড করেছে।

মিলিকে হারানোর পরে তার মা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে এখন পথে পথে ঘুরছে।সেই থেকে এই মুন্সি বাড়ি খালি পরে আছে।

খালার কাছে এই কথাগুলো শোনার পর হাত দিয়ে চোখ মুছতে থাকি।তিনি আমার পিঠে হাত দিয়ে বললেন কেঁদো না বাড়ি চলো।

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত