কনসার্ট

কনসার্ট

– দেখি কত টাকা আছে তোর কাছে?(আমি)
– দেখ একটা টাকাও নাই পকেটে।(হৃদয়)
– ফইন্নি শালা, তাহলে এখন খাবি কী দিয়ে? (আমি)
– সৌমিক দোস্ত কয়টা টাকা দে না?(হৃদয়)
– আম্মু বাসা থেকে বের হওয়ার সময় বিশ টাকা দিছিল।(সৌমিক)
– তারপর?
– আঠার টাকা রিচার্জ দিছি। দুই টাকা আছে, নিবি?
– তুই কাকে কী বলছিস! সে তো তোর থেকেও বড় ফইন্নি।
– আর তুই কী?
– আমিও তো তোদের দলেই।
– দোস্ত, ঐ দেখ দুইটা ছেলে!(হৃদয়)
– হুম। টানতেছে…
– কোন ক্লাস হবে বল তো?
– বেশি হলে ক্লাস সেভেন!
– আমরা কোন ক্লাস?
– অনার্স।
– চল, ফিটিং দেই!
– কী ফিটিং দিবি?
– ব্রি।
– হা হা হা হা।
– বেশি হাসলে তোর খাওয়া লাগবে না।
– আরেহ্ না। খাবো আমিও…
– তাহলে, চল…

আমরা তিন বন্ধু মিলে, ছেলে দুইটার কাছ থেকে ব্রি ফিটিং দিলাম। ছেলে দুইটা যেহেতু পিচ্চি, তাই ফিটিং দিতে খুব একটা কষ্ট হয় নি। আপনারা সবাই ফিটিং মানে বুঝেন তো? মানে, বেশ কয়টা সিগারেট ডাকাতি দিলাম।হি হি হি

– আচ্ছা, কালকের জন্য তোরা কেউ কিছু ভাবলি?(আমি)
– না দোস্ত। তোর কোন বন্ধুর বাড়িতে যেন কনসার্ট?(হৃদয়)
– স্বপনীল।
– ওকে। কাল আমরা যাচ্ছি, ফাইনাল।(হৃদয়)
– সৌমিক তুই কিছু বলছিস না যে, যাবি না তুই? (আমি)
– না রে, তোরা দুই জনই যা। আমার ভাল লাগছে না।
– দুররর বেটা! তুই না গেলে আমরা দুইজনের একজনও যাবো না। হৃদয় দৌড়ে এসে সৌমিকের গলাটা চেপে ধরে বলল…
– বল, যাবি না ক্যা???
– গললল…লা তো ছাড়। নয়তো বলবো ক্যামনে?
– ছাড় না ওর গলাটা। বল, কেন যাবি না?
– আসলে কাল আমার একটা ফ্রেন্ড আসবে, তাই ওর সাথে দেখা করতে হবে।
– ফেসবুক ফ্রেন্ড?
– হুম।
– মেয়ে?
– হুম।
– তুমি ওইসব ফেসবুক আর মেয়ে ফ্রেন্ড নিয়েই পড়ে থাকো। তোমার আর এ জীবনে প্রেম করা লাগবে না।
– সৌমিককে ছাড়া তো পুরা কনসার্টই মাটি হয়ে যাবে রে!
– কেনো, আমি ছাড়া মাটি হবে কেনো কনসার্ট?
– কুত্তা,তুই ছাড়া কনসার্টে গিয়ে ড্যান্স দিবে কে?
– হি হি হি হি।
– দেখছিস হৃদয়, বন্ধু আমার হাসছে। অব্যশই যাবে সে…
– হুম। যাবো কাল তোদের সাথে। ডান!
– তাহলে তোর মেয়ে ফ্রেন্ডটার কী হবে?
– ধ্যাত। মেয়ে ফ্রেন্ড! আগে ড্যান্স।
– গুড। বাপের ব্যাটা!

সৌমিককে ছাড়া আমরা কখনও কোন পার্টিতে যাই না। কারন, সৌমিক যে পার্টি বা কনসার্টে না যাবে, সে কনসার্ট একদম নিশ্চিত জলে গেল! ড্যান্সে অনেক বেশি আগ্রহী সে। উচ্চ সাউন্ডে গান পেলে সে আর ঠিক থাকতে পারে না। বলা চলে, ড্যান্স পোকা ছেলে সে। কনসার্টে গিয়ে যদি ড্যান্সই না দিতে পারলাম, তাহলে কী বসে বসে অাঙ্গুল চুসবো? সো, সৌমিককে কোন ভাবেই রেখে যাওয়া যাবে না।

পরের দিন সন্ধ্যায় আমরা স্বপনীলদের বাসায় পৌঁছালাম। বেশ গান বাজনা হচ্ছে এলাকার মধ্যে…

– দোস্ত আমি তো আর থাকতে পারছি না। (সৌমিক)
– কেনো?(আমি)
– গান চলছে বক্সে..
– তো?
– ড্যান্স দিতে হবে।
– এ হৃদয়! এ কাকে নিয়ে আসলাম আমরা?
– কেনো, তোর বন্ধু!
– এ বেটা! তোর বন্ধু হয় না?
– হ, আমারও তো বন্ধু।
– তাইলে?
– ক্ষির্ধা লাগছে, খেতে হবে!
– দাঁড়া, স্বপনীলকে আগে পাইয়া লইইই…

অনেক খোঁজা খুজির পর স্বপনীলকে পেলাম কনসার্টের ময়দানে। অনেক সুন্দর স্টেজ, বিভিন্ন রংঙের বাতি জ্বলছে। চমৎকার লাগছিল সবকিছু। যথেষ্ট সুন্দর করে সাজিয়েছিল সবকিছু। মনে হচ্ছিল, কোন গোয়াল ঘর থেকে চাঁন্দে এসেছি আমরা!! বক্সে ডি.জে চলতেছে অনবরত! খুউউউব ইচ্ছা করছিল, কয়েক সেকেন্ডের জন্য সৌমিকের রূপ ধারন করি।

– স্বপনীল তুই এখানে? তোকে ফোনে পাচ্ছিলাম না কেনো?(আমি)
– এই সাউন্ডের মাঝে আমি ফোনের রিংটং কীভাবে শুনবো, বল তো?
– হুম। সেটাও ঠিক। এই দুইটা আমার বন্ধু। নিয়ে আসলাম সঙ্গে করে।
– ভালই করেছিস। কখন আসছিস্ তোরা?
– এইতো, একটু আগে। স্বপনীল আমার কানের কাছে এসে বলল…
– দোস্ত, তোর এই বন্ধুটা এরকম করে কেনো?

আমিও স্বপনীলের কথায় সৌমিকের দিকে তাকালাম। আসলেই তো, সে ঠিক নাই। ক্যামন যেন করছে। হবে হয়তো ড্যান্সের জগতে সে এখন! আমি হৃদয়কে চিমটি কেটে সৌমিকের কান্ড দেখালাম।

– এই সৌমিক? কোন জগতে তুই?(হৃদয়)
– কেনো, তোদের পার্শ্বেই তো আছি।
– আমরা এত কথা বলছি, তোর যে কোন খেয়ালই নাই।
– বাদ দে। ওকে একটু ড্যান্সের জগতে থাকতে দে।
– ধ্যাত।

আগে কখনও আসা হয় নি স্বপনীলদের বাসায়। তাই, একদম অচেনা জায়গা। এখানকার কিছুই চিনি না আমরা। তারপরেও, স্বপনীলকে বাদ দিয়ে বেশ ভাব ভঙ্গি নিয়ে চলছি আমরা তিনজন। রাত নয়টায় অনুষ্ঠান শুরু হল। রাত আটটা থেকে নয়টা পর্যন্ত অতিথি অাপ্যায়ন, নয়টার পর পর স্টেজে ঝঁলক…

রীতিমত স্টেজে ডি.জে গানের সঙ্গে সঙ্গে মেয়েরা নৃত্য নিয়ে আসছে। এইদিকে, দর্শকও অনেক উত্তেজনাকর। বেশ ভালই চলছে সবার লাফালাফি। হৃদয় আমার নজর কাটিয়ে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে বলল “দেখ, এই রাতের বেলা কত মেয়েরা এসেছে অনুষ্ঠান দেখতে”। হ্যাঁ, সত্ত্যিই তো রাত দশটা বাজবে! আর, অনেক মা মেয়েরাও এসেছে অনুষ্ঠানের স্বাদ নিতে। এরা পারেও বটে! হঠাৎ সৌমিক আমায় ধাক্কা দিয়ে বলছে…

– চল, স্টেজে গিয়ে নাচবো?
– তোর কী মাথা পুরোটাই গেছে?
– একটু নাচলে কী হবে?
– কেনো, এখানে নেচে কী তোমার শখ মিটছে না?
– দুররর! পাশ থেকে হৃদয় এসে বলতেছে…
– চল, একটু ফাজলামি করি?
– কী করবি?
– এইযে আমাদের হাতের ডান পার্শ্বে দেখ, বেশ কয়টা মেয়ে এসে অনুষ্ঠান দেখতেছে।
– হুম। দেখতে পাচ্ছি…
– তারমধ্যে এই মেয়েটাকে দেখ?
– হুম। বেশ চুপচাপ।
– তাহলে, এবার দেখ কী করি!

কী যে বলে হৃদয় কিছুই তো মাথায় ঢুকে না। সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। কি করবে সে? না জানি, ফাজলামি করতে গিয়ে কী কান্ড ঘটিয়ে বসে।

সবার মত আমরা তিনজনও একসঙ্গে অনেক লাফালাফি করতেছিলাম। মাঝে মাঝে সৌমিকের মত ড্যান্সের জগতে। আবার মাঝে মাঝে বাস্তবে ফিরে আসছি। তবে, সৌমিক তো পুরোটা সময় ড্যান্সেরর জগতে। বেচারা এত ড্যান্স ক্যামনে দেয়? হঠাৎ করেই খেয়াল করলাম, হৃদয় হালকা ধাক্কা দিয়ে সৌমিককে আমাদের পার্শ্বে দাঁড়ানো মেয়েটার দিকে ঠেলে দিল। এ রে! বেচারা বন্ধু তো আমার মেয়েটার উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেল।

– এহহহহহহ! কী করলি তুই এটা? ওকে তো এবার চড় দিয়ে পুরো গোষ্ঠী উদ্ধার করবে?

হুমড়ি খেয়ে পড়বেই না কেনো? যে ভাবে লাফালাফি করতেছিল, যে কাউকেই হালকা ধাক্কা দিলেই আর সেই ঝোঁক সামলাতে পারবে না। হৃদয়ও জাস্ট সামান্য একটু মজা নিতে চেয়েছিল। কিন্তু, ঘটনা যে সাংঘাতিক ভাবে দুর্ঘটনায় পরিণত হবে, সেটা কে জানে! এবার মেয়েটা নিশ্চয় তিন জনের ই গোষ্ঠী উদ্ধার করে ছাড়বে!

– সৌমিক ব্যাথা পেয়েছিস?(হৃদয়)
– আরেহ্ বেটা! উঠঠঠঠ(আমি)
– উঠতে পারছি না তো!
– মেয়েটা উঠে দিব্বি খাঁড়া হয়ে রইছে! আর

তুই এখনও পড়ে আছিস? পরমুহূর্তে সৌমিকে টেনে তুললাম। হয়তো, সামান্য কোথাও ব্যাথা পেয়েছে।

– কয়টা বাজে এখন?(সৌমিক)
– হবেই তো রাত বারটা!
– চল, বাসায় চলে যাই?
– বাসায় যাবি মানে??
– কী হল এটা?
– কোথায়?
– আমি মেয়েটার উপর হুমড়ি খেয়ে পড়লাম ক্যামনে?
– বেশি লাফালাফি করলে তাই হবে!
– চল না বাসায় ফিরে যাই?
– সম্ভব না।
– মাইর খাওয়ার ইচ্ছা আছে তোর?
– হইছে থাম। মেয়েটার সাথে কথা বলতে দে…

কই আমি একটু ভদ্র সেজে মেয়েটার কাছে গিয়ে সরি বলবো! দেখি মেয়েটা লজ্জায় মাথা নিচু করে আস্তে করে অন্য পার্শ্বে চলে গেল। যাক্ বাব্বাহহহহ্! ফের দেহে প্রাণ ফিরে এল। তারপরেও, আমি পিছন থেকে গিয়ে সৌমিকের হয়ে জোরে একটা সরি বলে দিলাম।

– অাল্লাহ্! বাঁচাইলা তুমি(সৌমিক)
– হুম। মেয়েটা ভাল দেখে আজ বেঁচে গেলি। (আমি)
– মেয়েটা ভাল ক্যামনে বুঝলি? একটু পর দেখা গেল, এলাকার পোলাপান নিয়ে ঠিকই হাজির হইছে।(হৃদয়)
– তারথেকে ভাল হয়, চল আমরা স্বপনীলদের বাসায় ফিরে যাই।(সৌমিক)
– হুম। এটাই গুড আইডিয়া। চল, ভাগি এখান থেকে…

স্বপনীলকে অনুষ্ঠান থেকে খুঁজে নিয়ে ওদের বাসায় চলে আসলাম। যে কান্ড ঘটিয়েছে সৌমিক! মনে হইলেই দাঁত কেলিয়ে হাসতে ইচ্ছা করে।হি হি হি হি স্বপনীলের রুমে বসে ছিলাম। সৌমিক ধাক্কা দিয়ে বলল “আমি ফ্রেশ হতে গেলাম”। ইশারায় সৌমিককে যেতে বললাম। সৌমিক ফ্রেশ হতে চলে গেল।

– যা করলি রে তুই আজ?(আমি)
– দুররর! আমি কী বুঝছিলাম নাকি যে, হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাবে!(হৃদয়)
– মাইরি! মেয়েটার উপর পড়ছিল বলে, দাঁত মুখ ফেটে যাই নি ওর।
– হা হা হা। যথেষ্ট শান্ত শিষ্টও ছিল মেয়েটা!
– তুই আর দাঁত কেলিয়ে হাসিস না। হঠাৎ, সৌমিক দৌড়ে এসে বলতেছে…
– দোস্ত, কী দেখলাম আমি এটা?(সৌমিক)
– কসসস্ কী! ভুত দেখছিস বাথরুমে?
– ভূত দেখলে তো এতক্ষণে মরেই যেতাম!
– হা হা হা হা।
– তাহলে, কী দেখছিস?
– তোরা দুইজন চল আমার সাথে?
– হুম।

আমরা দুইজন উঠে তাড়া হুড়া করে সৌমিকের সাথে চলে গেলাম।

– ঐ দেখ….কালী!(সৌমিক)
– সে কী রে! একে দিয়ে তো কালী পূজা করা হবে।(হৃদয়)
– ছিঃ এসব কথা বলতে নাই। অাল্লাহ্ পাপ দিবে।(আমি)
– দোস্ত, আজ মনে হয় কপালে শনিই আছে! (সৌমিক)
– হেতে রে তো কনসার্টে ফর্সাই দেখলাম। তবে, এখন এরকম কালা লাগছে কেনো?(হৃদয়)
– হ, কনসার্টের অালোই সবই ফর্সা লাগছিল।
– নাহ্। সবই অাটা ময়দার কারসাজি!
– কিন্তু, এই মেয়ে এখানে ক্যামনে?(সৌমিক)
– আমরা কি জানি!
– তোদের আগেই বলছিলাম, “চল বাড়ির ছেলে বাড়ি ফিরে যাই”।
– হৃদয় ওকে ধরে একটু পিটা তো? সারাক্ষণ বাড়ি বাড়ি করে কী শুরু করছে ও?
– এ, চুপ কর।
কোথায় থেকে কী হল কিছুই বুঝলাম না। কনসার্টের মেয়েটা এখানে কীভাবে? আসলে, কথায় আছে না “যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত্রি হয়”। এসে পড়ে গিয়েছি বাঘের মুখে, কি করবো আমরা এখন? এসময় স্বপনীলকে ডাকা উচিত।

– স্বপনীল?
– (……….)
– ওইইইই স্বপনীল? কই তুই?
– কী হইছে রে? এত চিল্লাছিস কেনো?
– এই মাইয়া এখানে ক্যামনে?
– ক্যামনে মানে? তুই চিনিস নাকি ওকে?
– চিনি মানে! আমরা সবাই চিনি।
– কীভাবে এতকিছু?
– সব বলবো। আগে বল, মেয়েটা কে?
– আরেহ্সে  তো আমার বোনের বান্ধবী।
– হায় রে! আজ আমি শেষ! (সৌমিক)
– ধ্যাত।
– চুপ কর তো! থাপ্পর দিমু একটা!(হৃদয়)
– থাপ্পর তো তোকেই দেওয়া দরকার।(আমি)
– কেনো, হৃদয় আবার কী করছে?(সৌমিক)
– তুই বুঝবি না সেসব।
– হুহ।

হৃদয় যে ফাজলামী করে সৌমিকে ধাক্কা দিয়েছে, এটা এখনও সৌমিক জানে না। বেচারা মেনেই নিয়েছে, সে নৃত্য করতে করতে মেয়েটার উপর হুমড়ি খেয়ে পড়েছে”। জানতে পারলে হয়তো হৃদয়ের উপর রাগ করতে পারে, তাই আমরা তাঁকে কিছু জানাবো না।

স্বপনীলকে সব কিছু খুলে বলতেছি, এমন সময় হৃদয় এসে বলতেছে,”দোস্ত,দেখ মেয়েটা আমাদের দিকেই আসছে”। এসেই আমাদের দিকে ক্যামন করে যেন তাকিয়ে আছে। হতবাক হয়ে আমরাও তাকিয়ে আছি। কতটা আটা ময়দার কারসাজি হলে এরকম একটা মেয়েকে পরীর মত দেখাইছিল অনুষ্ঠানে!

– তোমরা?
– জ্বী। এক দেখাতেই আমাদের চোখের মধ্যে তুলে নিছেন!
– এখানে কেনো তোমরা? আর,তোমাদের মধ্যে কে যেন কনসার্টে?

সৌমিক আঙ্গুল দিয়ে অামায় দেখিয়ে দিয়ে বলল “এইতো সে কনসার্টে তোমার উপর!”

– “তোমার উপর কী” বল? (আমি)
– না। এই ছেলে তুমিই তো কনসার্টে আমার উপর পড়ে গিয়েছিলে। চিনতে পারছি!
– জ্বী আপু। হেতেই আপনার উপর?(আমি)
– আমি তো কনসার্টেই যাই নি।(সৌমিক)
– সে কী! মাইরি!

আমি কিছু বলতে গিয়েও, বললাম না। হৃদয় তো ফিক করে হেসেই দিল। সৌমিক কী বললো এটা! সে বলে কনসার্টেই যায় নি? হি হি হি

অনেকক্ষণ সময় নিয়ে মেয়েটার সাথে কথা বললাম আমরা তিনজন। আসলে, আমরা যতটা ভয় পাচ্ছিলাম মেয়েটাকে নিয়ে, সেরকম না মেয়েটা। যথেষ্ট ভদ্র আছে। তবে, কথা বলে বুঝতে পারলাম, অনেকটা গায়ে পড়া স্বভাবের মেয়েটা। প্রথম দেখাতেই আমাদের সবার সাথে য্যামনে কথা বলল! মনে হচ্ছিল, কনসার্টের ঘটনার কথা তাঁর মনেই নাই। আর, আমরা যে মেয়েটাকে কালী বলছিলাম? হ্যাঁ, গায়ের রং হালকা কালো আছে। তবে, মুখের ফেস কাটিং যথেষ্ট সুন্দর। উচ্চতায়, সিম সাম লম্বা পাতলা। শুধু গায়ের রংটাই অন্য মেয়েদের তুলনায় ব্যতিক্রম।

সৌমিক আর হৃদয়কে মেয়েটার সাথে গল্প করতে দেখে, আমি ফ্রেশ হতে গেলাম। ওরা গল্প করছে করুক। আমি একটু ফ্রেশ হয়ে আসি। এতক্ষণে অনেক কথাই বলা হয়েছে মেয়েটার সাথে। ফ্রেশ হয়ে এসে, হৃদয়কে বললাম, ” যা তুই ফ্রেশ হয়ে নে”।

– আচ্ছা, তোমাদের বাসা কই?(মেয়েটা)
– চাঁন্দে।
– মানে?
– নাই। তোমার কই?
– আমার অাকাশে।
– লেও ঠ্যালা! তাহলে, তো আমরা কাছাকাছিই আছি!
– হুম। সৌমিক তোমার গফ আছে?
– গফ কিতা!
– গফ বুঝো না?
– না। নাই বন্ধুর আমার কেউ নাই। পার্শ্বে থেকে সৌমিক বলল…
– চুপ করবি তুই?
– আচ্ছা, চুপ। নে তুই কথা বল…

আমি যা ভাবছিলাম, তার থেকেও বেশি গায়ে পড়া স্বভাবের মেয়েটা। কী কী যেন সিরিয়াস টাইপের কথা বার্তা জিজ্ঞাসা করছে। সৌমিকের দিকে তাঁকিয়ে বার বার মিটি মিটি হাসছে, আর সৌমিককে এটা ওইটা জিজ্ঞাস করেই যাচ্ছে। সৌমিকের হয়ে বাড়িয়ে বাড়িয়ে উত্তর দিচ্ছি আমি। সৌমক শুধু গাল গুলো ফুলিয়ে আমার দিকে রাগি লুক নিয়ে তাঁকাচ্ছে।

– সৌমিক বেশ সুন্দর তুমি! তাহলে, এত দিন প্রেম করো নি কেনো?(মেয়েটা)
– আজিব প্রশ্ন! (আমি)
– এমনি।(সৌমিক)
– করতে চায় তো! কিন্তু?(আমি)
– কিন্তু কী, কুত্তা????(সৌমিক)
– হুম বুঝছি।(মেয়েটা)
– কী বুঝচ্ছো আপু?(আমি)
– তোমার বন্ধুকে বুঝছি।
– এক ধাক্কা খেয়েই আমার বন্ধুকে বুঝে গেলে?
– হুম।
– হি হি হি

বলছিলাম না, মেয়েটা ক্যামন জানি গায়ে পড়া স্বভাবের। আর, হবেই না কেনো, গায়ের রং কালো হওয়ায়, কোন ছেলের হয়তো পাত্তা পায় নি। তাই, নিজেই পাত্তা দিয়ে কারো মন জয় করতে চায়।

– এই তোর বন্ধু কই?(সৌমিক)
– কে?
– স্বপনীল।
– স্বপনীলকে দিয়ে কী করবি?
– ক্ষুর্ধা লাগছে। খাবো না?
– ও মা! সে কী!! তুমি এখনও খাও নি?(মেয়েটা)
– তুমি মানে? তোমরা বলতে পারো না? আমি আর হৃদয় খাইছি নাকি?
– হুম। চলো, অান্টিকে বলে তোমাদের খাইতে দেই।
– হুম।

রাতের খাওয়া শেষ করে, “মাইয়ার মনে যে সৌমিকের সাথে পিরিতের শখ জাগছে” সব কিছু হৃদয়কে বললাম। একবার হুমড়ি খেয়ে পড়েই বন্ধু আমার গেছে ফাইসা।

পরের দিন সকাল_সকাল স্বপনীলদের বাসা থেকে কেটে পড়লাম। বেশিক্ষণ থাকলেই বিপদ বাড়বে। সৌমিকও আমার উপর বেশ রেগে আছে! বেচারা কাল রাতে ঠিক ভাবে ড্যান্স দিতে পারে নি, আবার মেয়েটার নজর তার উপরই এসে পড়েছে, গায়ের রং ফর্সা হলে, তাও একটা কথা ছিল!

তারপর থেকে অনেক সুন্দরই চলছিল আমাদের তিন বন্ধুর শয়তানি, ফাজলামী অার আড্ডা। একদিন বিকাল বেলা পার্কে হাঁটছিলাম তিনজন। হঠাৎ করেই পিছন থেকে সৌমিক উধাও! অনেক খুঁজলাম দুইজন, কিন্তু পেলাম না। চিন্তাও হচ্ছিল একটু,। আরার ভাবলাম,’না, সে তো দুই বছরের পিচ্চি না যে কোথাও হারিয়ে যাবে?’ ভেবেই নিলাম, হয়তো জোরে হিসু লাগছে! ছাড়তে গেছে কোথাও। হৃদয় আমাকে ধাক্কা দিয়ে বলল সামনের দিকে দেখ। সামনের দিকে তাঁকিয়েই তো শকককটট্। কী দেখলাম আমি এটা!

– খাইছে! আবারও, এই কালা মাইয়া??
– হ, তাই তো সৌমিক ভাগছে!(হৃদয়)
– এই যে, তোমাদের আরেক বন্ধু কই?
– সে তো মরছে।
– মরছে মানে???
– কবরে সে।
– ফাজলামী বাদ দিয়ে, ওর ফোন নাম্বারটা দাও?
– ওর তো ফোন নাই।
– নাই মানে?
– আসলে, ওইদিন রাতে তোমার বান্ধবীদের বাড়িতে খেয়ে যখন আমরা চিপায় গিয়ে ব্রি টানতেছিলাম, তখন মোবাইল সবগুলো ফিটিং।
– ফিটিং মানে??
– এত মানে মানে করো কেনো? ফিটিং মানে, তোমার বান্ধবীর এলাকার ছেলেরা এসে ডাকাতি দিয়ে মোবাইল সবগুলো নিয়ে গেছে।

– আমি বিশ্বাস করি না।
– তাহলে, কী করলে বিশ্বাস করবে তুমি?
– আমার সৌমিকের কিচ্ছু হয় নি।
– মাইরি! এক রাতের ধাক্কা খেয়েই সৌমিক তোমার হয়ে গেল?
– আচ্ছা, আমি বলি কী?(হৃদয়)
– কী বলিস তুই?(আমি)
– আমি সৌমিককে ফোন দিয়ে ডেকে দেই। (হৃদয়)
– ওইইইই, চুপ কর। কোথায় কী বলতে হয়, তাও জানিস না?(আমি)
– ভাইয়া তুমি অনেক সুইট। সৌমিকের নাম্বারটা দাও তো আমাকে?(মেয়েটা)
– নাম্বার দিতে হবে না। আমিই ফোন দিতেছি (হৃদয়)

কী করবো আমি আর? হৃদয় তো প্যাচ লাগিয়েই দিছে। আসতেই হবে সৌমিকের মেয়েটার সামনে।

– কই তুই?(হৃদয়)
– আমি তো তোদের পিছনে তিনটা গাছ পরে, বটগাছের আড়ালে লুকিয়ে আছি।
– লুকিয়ে কেনো বন্ধু?
– চুপ কর শালা! কথা বলবি না।
– কী হইছে রেগে আছিস কেনো?
– কালা মেয়েটা তোদের সাথে কী করে?
– কিছু না, এমনি কথা বলছে। আয় তুই…
– না। আগে, মেয়েটাকে যেতে বল।

হৃদয় মেয়েটাকে হাত আর মুখ দিয়ে ইশারা দিয়ে বলল “চলে যাওয়ার ভাব করে সামনের দিকে হেঁটে যেতে, নয়তো সৌমিক আসবে না কক্ষনো।

মেয়েটাও হেঁটে সামনের দিকে চলে গেল। হেতে রে চলে যেতে দেখে, সৌমিকও চলে আসল আমাদের কাছে। যেইমাত্র সৌমিক আমাদের কাছে চলে এসেছে, ওমনি মেয়েটাও এসে হাজির। মনে মনে বললাম, “চাঁন্দু এবার পড়েছো বাঘের হাতে! পালাবে কোথায় এখন?

– কোথায় ছিলে এতক্ষণ তুমি?(মেয়েটা)
– ইয়ে মানে…
– আমাকে দেখে আসতে চাচ্ছিলে না কেনো?
– না মানে ইয়ে….
– বলো কোথাও ছিলে?
– ইয়ে মানে, গেছিলাম একটু হিসু দিতে।

হি হি হি সে নাকি হিসু দিতে গেছিল? সৌমিক দেখি আমার দিকে প্রচন্ড রাগি লুক নিয়ে তাঁকিয়ে আছে। ইশারা দিয়ে বললাম,”আমার দিকে তাঁকিয়ে লাভ নাই। তোর হৃদয় বন্ধুর দিকে তাঁকা”।

– জানো, তোমার বন্ধু দুইটা না অনেক পঁচা।
– কেনো, কী করেছে?(সৌমিক)
– তোমাকে নিয়ে কী বলেছে, শুনবা?
– কী বলেছে আমাকে নিয়ে?
– বলেছে, তুমি নাকি মরে গেছো!
– কিহহহহহহ্! কোন হারামজাদা এই কথা বলেছে?

মেয়েটা বেশ সুন্দর করে আঙ্গুল দিয়ে আমায় দেখিয়ে দিল। ওরে শাল্লাহ্! একদিন কথা বলেই এত কিছু?

সিরিয়াসলি, মেয়েটার মানুষের মনের মধ্যে ঢুকার যথেষ্ট কৌশল আছে। ভাবছি, কখন যে সৌমিক আমাকে লাথি মারতে আসে! তার আগে কেটে পড়াই ভাল। তখন হৃদয় আমাকে এসে বলল ‘ওইদিকে একটু চল কথা আছে’। আমাকে টানতে টানতে অন্য পার্শ্বে নিয়ে এল।
– হইছে কী? এখানে নিয়ে আসলি কেন?
– আচ্ছা, মেয়েটা দেখতে তো খারাপ না। শুধু গায়ের রংটাই কালো।
– কী বলতে চাস্? ক্লিয়ার করে বল??
– সৌমিকের সাথে মেয়েটাকে মানাবে না?
– তোর কী পিটন খাওয়ার ইচ্ছা হইছে?
– কেনো?
– সৌমিক ওই মেয়ের সাথে কখনও প্রেম করবে?
– অবশ্যই করবে।
– তোর মাইর খাওয়ার ইচ্ছা হলে, সৌমিককে গিয়ে বল। আমি এইসবের মাঝে নাই!
– আরেহ্ দুররর! মারবে কেনো? বেচারা সারাজীবন ট্রাই মেরেও একটা প্রেম করতে পারে নি। আর, মেয়েটা হালকা কালো হইছে, তো সমস্যা কই?
– কই আবার! সমস্যা তো সৌমিকের।
– এত কথা না বলে, চল ওদের মাঝে কিছু একটা করে দেই।
– অকা। চল দেখি…

আমার তো ভয় করতেছে, একবার সৌমিককে বাঁচাতে গিয়ে মরার কথা বলেছি। সেটা আবার সৌমিকের কান পর্যন্ত গেছে। এবার এইকথা শুনলে না জানি কী করবে আমাক?

– এই যে, অাপু কোন ক্লাসে পড়ছো এখন?(হৃদয়)
– ইন্টার দিবো সামনে বার।(মেয়েটা)
– তাহলে তো হয়েই গেল।
– কী হয়ে গেল?
– আসলে একটা কথা বলতে চাচ্ছিলাম?
– হুম, বলো।
– সৌমিক না তোমাকে প্রথম দিন থেকেই পছন্দ করে।
– কিহহহহহহ্???(সৌমিক)
– কুত্তা ষাড়ের মত চিল্লাস্ কেনো? নিজেও বলতে পারি না আমাকেও বলতে দিবি না। আজকে সব বলতে দে আমাক…

– আমি কবে বলছি তোকে এইসব?(সৌমিক)
– চুপ কর। ওর আসলে লজ্জা একটু বেশি। তাই তোমায় কিছু বলতে পারছিল না।(হৃদয়)
– হুম। ঠিক বলেছে হৃদয়। দেখছো, আজ তোমাকে দেখে লজ্জায় তোমার সামনে আসতে চাচ্ছিল না।(আমি)
– তোদের কে শিখিয়ে দিছে এইসব কথা? (সৌমিক)
– শিখিয়ে দিতে হবে কেনো? তুই বলতে পারবি না। আর আমরা তোর বন্ধু হয়ে চুপ করে থাকবো?(আমি)
– সৌমিক তোমাকে অনেক ভালবাসে। তুমি কী বলো?(হৃদয়)
– আমিও তো সৌমিককে প্রথম দেখাতেই ভালবেসে ফেলেছি।(মেয়ে)
– বাংলা ছবির মত, তাই না? হি হি হি হি (আমি)
– সৌমিক তোমার এই বন্ধু আসলেই বেশি কথা বলে।(মেয়েটা)
– ওকে। বেশি কথা বলবে না আর ও। তোমরা প্রেম করো আমরা বরং চলে যাই।(হৃদয়)

আমি আর হৃদয় দুইজনই পিছন ফিরে চলে আসতে লাগলাম। দুই এক পা হেঁটে আসতেই কী জানি মনে হয়ে মজা নিতে আবার, সৌমিকের কাছে গেলাম।

– দোস্ত, নতুন প্রেম করতেছিস, আমাদের ট্রিট দিবি না?
– কুত্তা তোরা যাবিইইইইই এখান থেকে???
– কেনো রে, আমরা কী তোদের ডিস্টার্ব করলাম?
– যা ভাগ! হ্রামিরা

সৌমিক লাথি দিতে এসেও ব্যর্থ। কারন, ততোক্ষণে আমরা ভেংচি মেরে দৌড়ে পার্কের অন্য সাইডে চলে এসেছি। আমি হৃদয়কে বললাম…

– চল, আমরা বরং অন্য কোথাও গিয়ে ব্রি ফিটিং দেই!

*******************************************সমাপ্ত************************************

গল্পের বিষয়:
ফ্যান্টাসি
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত