হবু শশুর

হবু শশুর

মতিঝিলে বাংলাদেশের প্রায় সবকটি ব্যাংকের হেড অফিস অবস্থিত। সেখানেই যেকোন একটি ব্যাংকের ম্যানেজার জনাব ইলিয়াস রহমানের সাথে দেখা করতে এসেছে ফয়সাল। পিয়ন তাকে ওয়েটিং রুমে বসতে বলে এক কাপ চা দিয়ে গেছে। ১০ মিনিট হয়ে গেলও চা টা ওভাবেই পরে আছে এবং ঠান্ডাও হয়ে গেছে। ফয়সালের মোটেও সেদিকে খেয়াল নেই বরং তার ভিতরে অসম্ভব অস্থিরতা ও উৎকন্ঠার ঝর বয়ে চলেছে। কোন পন্থায় সে ইলিয়াস রহমানের শক্ত মন পোক্ত ভাবে জয় করতে পারবে মনে মনে তার একটা পরিকল্পনাও এটে নিল।

ইলিয়াস রহমান হলেন ইরার বাবা। শুধু ইরার নয়!! একাধারে মোট তিনটি কন্যা সন্তান ও একটি পুত্র সন্তানের জনক তিনি। ইরা হল তার মেজো মেয়ে। তিন কন্যা সন্তানের পর জন্ম নেয় একটি পুত্র সন্তান। অনেকটা ৩-১ গোলে জেতার মত ব্যাপার। তিনটি গোল খেয়েও হাল ছাড়েননি তিনি, বরং একটি পুত্র সন্তানের আশায় বুড়ো কালে ছক্কা হাকানোর মত এক ছক্কাতেই বেজায় খুশি। তাতে যদি কন্যাদের প্রতি তার এতটুকু টান কমতো বা অনিহা আসতো তবেও একটু সস্থি পেত ফয়সাল।

কেননা তখন সে ইরা কে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করত এবং ইরার বাবা তাতে রাগ না করে বরং হাল ছেড়ে বাঁচত!! কিন্তু ছেলের পাশাপাশি মেয়েদের প্রতিও অগাধ ভালবাসা তার। আর সে জন্যই একটা বাবার বুকে ছুরিকাঘাত করে সেই রক্ত পান করে কোন প্রকারের সুখ আহরণ না করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ফয়সাল। আর তাই বিবেকের আদালতের রায় পালন করার জন্যই খোদ ইলিয়াস রহমানের সামনে তার অফিসেই এসে হানা দিয়েছে সে। উদ্দেশ্য- যেভাবেই হোক ইরার প্রতি তার ভালোবাসার কথা ওনাকে জানাতে হবে।

-“স্যার আপনারে ভিরতে যাইতে কইছে। সোজা গিয়া ডান দিকের রুমটাই ম্যানেজার স্যারের” পিয়নের কথায় সেদিকে তাকাল ফয়সাল এবং দুরুদুরু কাঁপা কাঁপা বুক নিয়ে ধীরে ধীরে এগুলো সে ইরার বাবার রুমের দিকে। কিন্তু এখনো ঠিক হয়নি কিভাবে শুরু করবে সে, তিনি যদি বদ মেজাজী হন তবে আর রক্ষে নেই। তবে দুনিয়ার সব মেয়ের বাবারাই খুব রাগী হয় বলেই ধারণা তার। দরজার কাছে দাড়িয়ে বলল ফয়সাল- -“আসতে পারি?” ফয়সালের দিকে না তাকিয়েই ম্যানেজার সাহেব বললেন – “yes come in”

জড়োসড়ো হয়ে ফয়সাল ঢুকলো রুমের ভিতরে। ফয়সাল খেয়াল করলো ইলিয়াস সাহেব কোন একটা বিষয় নিয়ে খুব আনন্দিত, পা ঝাকাচ্ছেন মাঝে মাঝে, গুন গুন করে গানও গাইছেন এবং মুখ টিপে টিপে হাসছেন। কিছুদিন হল কোথাকার কোন বিলেত ফেরত ডাক্তারের সাথে মেয়ের বিয়ে ঠিক করছেন তিনি। বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন এবার মেজো মেয়ের পালা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ হওয়া স্বত্বেও ফয়সালের কপাল ঘামছে। তবে কি সে প্রচন্ড ভীত? কিন্তু ভয় পেলে তো চলবে না!! যদিও প্রচণ্ড দুঃসাহসিকতার পরিচয় দিতে চলেছে সে। কিন্তু মনকে সেটা বুঝতে দিলে তো চলবে না। এই মুহূর্তে তাকে ভীষণ শক্ত থাকতে হবে। আর সে জন্যই মনের ভয় কে দূর করার জন্য সামনে বসে থাকা হবু শ্বশুর কে নিয়ে একটা কবিতাও লিখে ফেলল মনে মনে–

“”মুখ টিপে ওই হাসি- তোমার, ভিষণ ভালোবাসি তোকে,

লাগছে একটা খাসি আমার, হাতে আছে রাশি আমি,

বাজাব তোর বাশি তাতেও, হবেনা মোর কাশি ওরে,

আমি যে এক চাষী গলায়, দিতেও পারি ফাসি আমার,

লাগছে ভিষণ হাসি আমি, একটা বিড়াল পুষি তাহার,

নাম রেখেছি পুছি তোকে, মারবো একটা ঘুসি মাথায়,

গজাবে তোর ঠুসি তাতেই, লাগবে আমার খুশি তোকে,

খাওয়াবো আজ ভুষি তাই, আঙ্গুলটা মোর চুসি।””

এরপর আর কোন লাইন মাথায় এলোনা। যদিও এতে টনিকের মত কাজ হয়েছে। সে তার বুকটা যথা সম্ভব টান টান করে গিয়ে দাড়ালো ইলিয়াস সাহেবের সামনে। কিন্তু ইলিয়াস সাহেব এখনো সেদিকে না তাকিয়ে কয়েকটা ফাইল নাড়াচাড়া করতে করতে বললেন-

-“বসুন। বলুন কিভাবে সাহায্য করতে পারি আপনাকে?”

ঘরটা এতটাই সুনসান ও নিরব যে ঘড়ির কাটার টুক টুক শব্দ স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। ফয়সাল সামনের একটা চেয়ার টেনে তাতে বসে পড়ল এবং নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল – -“আমি আপনার মেজো মেয়ে ইরা কে ভালোবাসি!! প্রচন্ড ভালোবাসি। ওকে বিয়ে করতে চাই!!”…!!!

ইলিয়াস সাহেবের ব্যাস্ততা থেমে গেল। গুন গুন গান এবং মুখ টিপে হাসিও মিলিয়ে গেলো, এমনকি নড়াচড়া পর্যন্ত থেমে গেল। সাথে সাথে ঘড়ির কাটার শব্দও মনে হচ্ছে থেমে গেছে। ফয়সাল এখনো নির্বিকার!! স্থির দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে ইলিয়াস সাহেবের দিকে। এবার ইলিয়াস সাহেব ধীরে ধীরে মাথা তুলে তাকালেন সামনে বসে থাকা জন্তুটার দিকে। জন্তু বললাম এই জন্য যে, সাধারণত কোন ঘৃণ্য পশুর দিকে আমরা ঠিক এভাবেই তাকাই। কিন্তু হঠাৎ কি যেন হল ফয়সালের, নিরবতা ভেঙে ছটফট ভঙ্গিতে বলল –

-“প্লিজ আপনি আগেই উত্তেজিত হবেন না। দয়া করে আমার সম্পূর্ণ কথা শুনবেন এবং তারপর আমাকে যা খুশি বলবেন।”

ইলিয়াস সাহেব ধীরে ধীরে চেয়ারে হেলাল দিয়ে একই ভঙ্গিতে ফয়সালের দিকে তাকিয়ে থাকলেন, কিন্তু মুখে একটি আওয়াজ পর্যন্ত করলেন না। যেন পাথর হয়ে গেছেন। তার শ্বাস প্রশ্বাসের গতি বলে দিচ্ছে কি ভয়ংকর রাগ তাকে চেপে ধরেছে। ফোঁস ফোঁস শব্দে কাল নাগিনী সাপের ফনার মত যখন তখন ছোবল বসাতে প্রস্তুত তিনি।

আচ্ছা পৃথিবীর সমস্ত কন্যার বাবারা এমন কেন? মেয়ের প্রেম কে কিছুতেই তারা মেনে নিতে চান না কেন? মেনে না নিক, কিন্তু মেয়ের পছন্দ কে একটু যাচাই বাছাই তো করতেই পারে!! কিন্তু নাহ!! মেয়ে যদি রাজ্যের রাজপুত্রকেও ধরে আনে তবুও বাবার কাছে সেই ছেলে মুচি, ম্যাথরের সমতুল্য।

ইলিয়াস সাহেব এই মুহুর্থে ফয়সালের দিকে অনেক টা সেই দৃষ্টি নিয়েই তাকিয়ে আছেন। ঠিক যেন একটা ম্যাথর এই ভর দুপুরে ব্যাংকের ম্যানেজারের রুমে এসে বলছে,- “জনাব, আপনার বাড়ির গুয়ের টাংকি পরিষ্কার করতে হবে? লাগলে বলবেন, আমার হবু শশুর হিসাবে আপনার কাম ফ্রীতে করে দিব। এই নিন আমার কার্ড। এতে আমার নাম্বার দেয়া আছে। যখন ইচ্ছা ফোন দিবেন”

আচ্ছা ম্যাথরদের কি ভিজিটিং কার্ড হয়? যদি হত তবে ফয়সালের কার্ড হত অনেক টা এমন “প্রোঃ জনাব, মোঃ নাঈম ফয়সাল সভাপতি, কেন্দ্রীয় ম্যাথর কমিটি গুলশান, ঢাকা। মোবাঃ 01711-xxxxxx” এমন সময় হুট করে পিয়নের আগমন হল এবং খানিকটা বিচলিত ভঙ্গিতে বলল – -“স্যার, গ্রাহকদের টয়লেটের কমোড নষ্ট হইয়া গেছে গা। হাজার পানি ঢাইলাও কাম হইতাছে না!! উপরে গু ভাসতাছে। মনেকয় ম্যাথর ডাকন লাগবো। আমি অহন কি করমু স্যার?”

ইলিয়াস সাহেব পিয়নের দিকে নরম দৃষ্টিতে তাকিয়ে কমল সুরে বললেন – -“গু গুলো একটা পিরিচে নিয়ে এসো, আমি বসে বসে খাই!! অনেক দিন গু খাইনা!!” পিয়নের মুখটা দপ করে নিভে গেল। ইলিয়াস সাহেব হুংকার দিয়ে বললেন – -“Get Lost!!!”

সাথে সাথে পিয়ন দৌড়ে পালালো। এবং ইলিয়াস সাহেব ফয়সালের দিকে পুনরায় আগের মূর্তি ধারণ করলেন এবং খানিকটা চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন –

-“তোমার নাম কি?”

-“ফফ ফয়সাল… নাঈম ফয়সাল”

-“শোন ফয়সাল, তোমাকে আমি ১০ মিনিটের সময় দিলাম,

এর ভিতরে যা কিছু বলার বলে বিদায় হও” ফয়সাল বেশ খুশি হল।

১০ মিনিট সময় তার জন্য অনেক। দিক বেদিক না ভেবে সে বলা শুরু করল –

“আজ থেকে প্রায় তিন বছর আগে ইরার সাথে আমার পরিচয় হয়। বলতে আপত্তি নেই, ইরার মত মেয়ে এ যুগে মেলা ভার। প্রথমে বন্ধুত্ব দিয়ে শুরু হলেও পরে ধীরে ধীরে তা ভালবাসায় রূপান্তরিত হয়। আর আজ সেই ভালবাসা এসে ঠেকেছে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। আমরা দুজন দুজনকে ছাড়া একটি মূহুর্থের জন্যও থাকতে পারিনা, হয়তো বাঁচতেও পারবনা একে অপরকে ছাড়া।

আমরা অনেক ভেবেচিন্তে দেখেছি We are made for each other. আপনি ভাবছেন নির্লজ্জের মত এসব কথা আপনাকে কেন বলতে এসেছি? আসলে আমার বাবা নেই!! সে বেঁচে থাকলে তিনিই আসতেন আপনাকে কথা গুলো বলতে। আমি আর ইরা পালিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কেননা ইরার ধারণা আপনি কোনদিনই আমাদের সম্পর্ক মেনে নিবেন না। কিন্তু জানেন, ইরা আপনাকে কষ্ট দিতে চায়না।

প্রচন্ড ভালবাসে ও আপনাকে। আজ সন্ধ্যা ৬ টার ট্রেনে আমাদের পালিয়ে যাবার কথা। এই সিদ্ধান্ত নেয়ার পর বেশ কয়েকদিন ধরেই ও শুধু আপনার জন্য কাঁদে আর বলে ‘আব্বুকে আমি এতবড় কষ্ট কিভাবে দিব?’। দেখুন আমাকে দেয়া ওর শেষ কয়টি এসএমএস, শুধু আপনাকে ঘিরে। ওর চোখের ভিতরে আমি আমার প্রতি ভালবাসা আর আপনার প্রতি অপরাধ বোধ চরমভাবে ভাবে লক্ষ্য করেছি। ইরা, না পারবে আমাকে ছেড়ে থাকতে, না পারবে আপনাকে কষ্ট দিতে। তবুও আমি ওকে ধর্য্য ধারন করতে বললে, ও জানায়, আপনি ওর বিয়ে ঠিক করেছেন অন্য কারো সাথে। আর তাই আজ আমাদের এই কঠোর সিদ্ধান্ত।

আমি জানি আমি ইরা কে নিয়ে পালালে হয়তো সুখী হবো, কিন্তু আপনার মনে কষ্ট দিলে সেই কষ্ট অভিশাপ হয়ে সারা জীবন দংশন করবে আমাদের কে। আপনি হয়তো ভাবছেন তাহলে আপনাকে কেন এগুলো বলছি!! আমি শুনেছি আপনিও ভালোবেসেই বিয়ে করেছেন। তাই ভাবলাম প্রেমিক মনের আকুতি বোঝার ক্ষমতা হয়তো আপনার থাকবে, যেখানে আপনি নিজেই এক সময় প্রেমিক ছিলেন। এ ছাড়াও আপনি আমার বাবার মত। আপনি কষ্ট পাবেন এমন কিছু আমিও করতে চাইনা ‘বাবা’!!”

মনের অজান্তেই ফয়সাল এখানে ইলিয়াস সাহেবকে ‘বাবা’ সম্মোধন করে ফেলল। ইলিয়াস সাহেব অবশ্য একইভাবে নির্বিকার ও নিরুত্তর দৃষ্টি নিয়ে ভাবলেশহীন ভাবে তাকিয়ে আছেন। কোন প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছেনা। শ্রোতার প্রতিক্রিয়া বুঝতে না পারলে বক্তার জন্য বক্তব্য পেশ করা খুব কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়ায়। তবুও ফয়সাল বলে চলল –

“তাই ইরা কে না জানিয়েই সোজা চলে এসেছি আপনার কাছে, একটা বার সবকিছু খুলে বলতে। আমি জানি এগুলো শুনে আপনি হয়তো ইরার পায়ে শিকল বেধেঁ দিবেন, জোর করে ওকে আপনার পছন্দের ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইবেন। কিন্তু আমি শুধু এতটুকুই আপনাকে বলতে এসেছি যে, আমার দ্বায়িত্ব আমি পালন করে গেলাম। কিন্তু আপনি ইরা কে আটকাতে পারবেন না।

কোন ভাবেই না। কারণ আমাদের ভিতরের বোঝাপড়া সম্পর্কে আল্লাহ্ ব্যাতিত আপনার বা দুনিয়ার আর কারো কোন ধারণা নেই। আজ নাহয় কাল, কাল নাহয় পরশু আমার কাছে ও আসবেই। দুঃখ শুধু একটাই সবাই আমাকে আর ইরা কে খারাপ জানবে এবং সমাজে আপনার সম্মানহানী ঘটবে। যা আমি কখনই চাইনা বিধায় এগুলো আপনার কাছে বলে গেলাম”

১০ মিনিটের আগেই শেষ হলো ফয়সাল বক্তব্য। তারপর ট্রেনের টিকিট দুটো ইলিয়াস সাহেবের টেবিলের উপরে রেখে চোখের পানি মুছতে মুছতে উঠে দাড়ালো এবং ইলিয়াস সাহেব কে একটা সালাম দিয়ে বের হয়ে আসতে চাইলো কিন্তু পিছন থেকে ইলিয়াস সাহেব তাকে থামালেন এবং চেয়ারে দোল খেতে খেতে বললেন –

-“টিকিট দুটো নিয়ে যাও। তোমরা আজ ৬ টার ট্রেনেই পালাবে এবং ওই ট্রেনের কোন এক বগিতে আমিও থাকবো!! তারপর তোমরা যেখানে গিয়ে বিয়ে করবে বা পালিয়ে থাকবে সেখানে আমিও থাকবো তোমাদের আশপাশে। দূর থেকে আমি আমার মেয়ের কান্না দেখবো। এবং যখন দেখবো ও সেই ছোট্ট খুকুর মত ‘আব্বু আব্বু’ বলে কাঁদছে ঠিক তখনই ওর সামনে গিয়ে হাজির হব!! ছোট বেলায় যেভাবে ওর কান্না থামাতাম ঠিক সেইভাবে বুকে জড়িয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে ওর কান্না থামাবো। কিন্তু খবরদার, আগে থেকে এগুলোর কিছুই যেন আমার মেয়ে জানতে না পারে। আমিই হবো পৃথিবীর প্রথম বাবা যে কিনা মেয়ের সাথে নিজেও পালিয়েছে”!!

বলে হোহো করে অট্টহাসি দিলেন জনাব ইলিয়াস সাহেব। এবং একটু গম্ভীর হয়ে একই সাথে বললেন-

-”সিনেমার গল্পের মত ভালবেসে পালিয়ে বিয়ে করে আমার মেয়েকে যদি কষ্ট দাও, বা কনদিন যদি আমি তা টের পাই তবে খুন করে ফেলবো তোমাকে সেদিন।” ফয়সাল হতবুদ্ধি হয়ে জড়ো বস্তুর মত দাড়িয়ে আছে। নিজের কান কেও বিশ্বাস করতে পারছে না। জীবন এত মধুর? এত মিষ্টি? সে স্বপ্ন দেখছে নাতো? কোন হাসি নেই, কান্না নেই, সুখ নেই, দুঃখ নেই, তবুও তার দুচোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। মানুষ কষ্ট পেলে চোখ দিয়ে পানি পরে আবার সুখ পেলেও চোখ দিয়ে পানি পরে। তবে কিসের পানি এটা? এত পানি কোথাই ছিল? তবে কি সুখ ও দুঃখের বাইরেও অন্য কিছু আছে? হয়তো আছে, হয়তো নেই। ফয়সাল তার হবু শ্বশুর কে বলল –

-“আপনি কাঁদছেন?” ইলিয়াস সাহেব ফয়সালের এই প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে ফয়সালের কাধেঁ হাত রেখে বলল –

-“অনেক বড় সাহসের পরিচয় দিয়েছ তুমি। I am proud of you. সব ছেলে এবং মেয়েরা তোমার মত হলে হয়তো অধিকাংশ বাবা মায়ের মুখে চুনকালি পরতো না” বলে আবারো হো হো করে হেসে দিলেন তিনি। পুরো ঘটনাটার কিছুই জানেনা ইরা, এবং যেদিন জানবে সেদিন কি প্রতিক্রিয়া হবে তার, সেকথা ভেবে আরোও জোরে জোরে হাসলেন জনাব ইলিয়াস রহমান। এমন সময় আবারো পিয়নটা হুট করে আসলো এবং বলল –

-“স্যার, অনেক খোঁজাখুঁজি করে একটা ম্যাথরের ভিজিটিং কার্ড পেয়েছি। তাকে কি ফোন দিয়ে আসতে বলব?” এবার আর পিয়নের প্রতি তেমন কোন বিরক্তি প্রকাশ করলেন না ম্যানেজার সাহেব। বরং নরম সুরেই বললেন –

-“হ্যাঁ বলো” কেন জানি ফয়সালের খুব ইচ্ছা হল পিয়নের কাছ থেকে ভিজিটিং কার্ড টা নিয়ে দেখতে!! ম্যাথর টার নামও কি ফয়সাল? নাকি অন্যকিছু? অন্যকিছুই হবে হয়তো। ফয়সাল কষ্টে শিষ্টে সে ইচ্ছা দমন করলো, তবে এটা তো জানতে পারল যে – ম্যাথরদেরও ভিজিটিং কার্ড হয়!!

গল্পের বিষয়:
হাস্যরস
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত