স্বামী ছিনতাই

স্বামী ছিনতাই

আজকে আমি একটা সাংঘাতিক কাজ করে ফেলেছি। একজন মহিলার স্বামী ছিনতাই করে এনেছি! ভাবা যায়?
অবশ্য ছিনতাই করার পিছনে একটা বিশেষ কারণ আছে।ওই মহিলাটি গত কয়েক দিন যাবত আমার পিছনে গরুর মত লেগে আছে যেন আমি মরা শকুন।ঘটনাটা শুরু থেকেই বলি,

একদিন ওই মহিলা আমাকে মেসেজ দিলো,
– আপনি নাকি বহুবিবাহ করেছেন? কথাটা সত্যি?
– এখনো একটা বিয়ের অর্ধেক বিবাহ করতে পারলাম না।আবার বহুবিবাহ?
– মর্ম,মৈত্রী,তন্ময়,ইফতি,ফ্রাইডে এরা তাহলে কারা?
– এরা তো আমার পার্ট টাইম হাজব্যান্ড।

ব্যস! শুরু হয়ে গেলে কাহিনীর সূত্রপাত। এই মেসেজ টির স্ক্রিনশট আমার লিস্টের সকল ফ্রেন্ড ও শুভাকাঙ্ক্ষী,বড় ফ্যান,টেবিল ফ্যান,ভক্ত,শক্ত,নরম সবার কাছে পাঠিয়ে দেয়া হলো।তারপর শুরু হয়ে গেলো তুমুল আন্দোলন!

আন্দোলনের দু একটা পোস্ট ছিল এরকম,

“বিবাহ বিরাগী সমিতির পরিচালক হয়ে কিভাবে মিশুনি বহুবিবাহ করতে পারেন? মানিনা মানবো না।সমিতি থেকে ওনাকে বরখাস্ত করা হোক।”

আসলে বিবাহ বিরাগী নামে একটা সমিতির মহা পরিচালক পদে আমি আছি।তাই সবাই এত ক্ষেপে গেছে! কিন্তু ঘটনার সত্যতা কেউই যাচাই বাচাই করলো না এটাই আশ্চর্যের বিষয়।এইসব মহিলা রা রসিকতার ‘র’ ও বুঝেনা কিন্তু নষ্ট করে দেয় আমার মত ফুটফুটে তরুণীর সেলিব্রেটি হওয়ার স্বপ্ন! আহারে! এত দুঃখ কই রাখি?

ফেসবুকের বিভিন্ন সাংবাদিক ও রিপোর্টার গণ আমাকে জোরালো প্রশ্নের সম্মুখীন করলেন। সেই প্রশ্নের উত্তর গুলিও বড় বড় পেইজে ভাইরাল করা হলো।

একটা সাক্ষাতকার ছিল এরকম,

– মিশুপু আপনি তাহলে স্বীকার করছেন এনারা আপনার পার্ট টাইম হাজব্যান্ড?
– জি।কিন্তু বাস্তবে এদের কোনো অস্তিত্ব নেই।
– তাহলে বিয়ে পড়ানো হলো কিভাবে?
– বিয়ে পড়ানো হয়নি।
– বিয়ে না পড়ালে এনারা স্বামী হলো কিভাবে?
– গল্প উপন্যাসের চরিত্র নিয়ে আপনারা মাতামাতি করলে আমার কিছুই বলার থাকবে না।পরিস্থিতি খারাপ হলে আমি ভিনসেন্ট ভ্যানগগের মত আত্মহত্যা করবো তখন আপনারা বুঝবেন জাতি আসলে কি হারালো?
– আমরা দুঃখিত মিশুপু।আসলে এগুলো শুধুমাত্র গল্পের চরিত্র তা আমরা অবগত ই ছিলাম।কিন্তু কতিপয় মহিলারা খিচুরি পাকিয়ে ফেলেছেন।তাই..
– আপনারা বসে বসে সেই খিচুড়ি খান।

সাক্ষাতকারে এই পর্যন্ত ই বলেছিলাম। তারা প্রকাশ ও করেছিল পুরোটা।কিন্তু ওই গুটিবাজ মহিলা এটা ইডিট করে শুধু “বিয়ে পড়ানো হয়নি ” পর্যন্ত রেখে নিজের টাইম লাইনে পাবলিক করে পাবলিশ করলেন। কতিপয় মহিলা আবার সেই পোস্ট শেয়ার দিয়ে নিজেদের ওয়ালে রেখে আন্দোলন গতিশীল করতে সাহায্য করলেন! ভাবা যায়?

ধীরে ধীরে কথাটা ফেসবুক ছাড়িয়ে আমাদের এলাকায় প্রবেশ করলো। আর রক্ষে নেই! আব্বু জানতে পারলে আমাকে ব্লু হোয়েল খেলিয়ে মারবেন।তার আগেই একটা ব্যবস্থা করতে হবে।
দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে ওই মহিলার এড্রেস ঘেটে তার স্বামীর আইডি খুঁজে বের করলাম। তারপর সরাসরি এটাক করলাম ওনার উপর।
উনি রাত্রে বাড়ি ফিরছিলেন। বাসার সামনে থেকে তুলে এনেছি।এবার বুঝবে কত ধানে কত চাল আর কত গমে কত ময়দা?

ছিনতাইকারীর নাম হাসানুল বান্না। লিখতে ভুল হয়ে গেলো। ছিনতাইকারী তো আমিই।তবে যে ব্যক্তিকে ছিনতাই করেছি তার নাম বান্না।সন্ত্রাসী টাইপের নাম।কিন্তু লোকটা খুবই ভিতু।

বললাম,আপনার স্ত্রী যেসব শুরু করেছে সেগুলো না থামালে আপনার লাইফে রিস্ক আছে।

– আমায় বিয়ে করবেন? করুন না।আপনাকে আমার বেশ পছন্দ হয়েছে।আপনি চাইলে আমার স্ত্রী কে ডিভোর্স দিয়ে দিবো।

– লও ঠ্যালা।আমি আপনাকে তুলে এনেছি আপনার স্ত্রী কে শাস্তি দেয়ার জন্য।বিয়ে করার জন্য নয়।
– আমার স্ত্রী কে শাস্তি দিতে চাইলে আমায় বিয়ে করুন।
– ধুর মিয়া।বিড়ি খাইতে খাইতে ঠোট আলকাতরা বানাইছেন আর আপনাকে বিয়ে করবো আমি?
– আপনি বললে রাসনা খাইতে খাইতে ঠোট কমলা বানাইবো।
– রাসনা কি?
– ট্যাং চিনেন? ওই ট্যাং এর বাচ্চার নাম রাস্না।
– আপনাকে রাস্না খাইতে হবেনা।আপনি গু খেয়ে ঠোট হলদিয়া বানাইলেও আমি বিয়ে করবো না।অন্যের স্বামীর দিকে আমি হাত বাড়াই না।
– পা বাড়ান?
– পাও বাড়াই না।কথা না বলে চুপচাপ বসে থাকেন মিয়া।
– জি।একটা বিড়ি পাইলে ভালো হইত।

আমি আমার খেলনা পিস্তল টা তাক করতেই বান্না মিয়া চেঁচিয়ে বলল,খালা কইছি মাইরেন না।
– খালা বললেন কেন?
– মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি থাকে।তাই আপ্নে আমার খালা, আমার মাসি,আপ্নে আমার শ্বাশুরি।আমারে মাইরেন না।

– মারবো না।শুধু একটা পা খোড়া করে দিবো।
– খালাম্মা এমন কইরেন না।
– ওকে।এক্ষুনি আপনার স্ত্রী কে ফোন করেন।
– কি বলবো?
– বলবেন, তুমি একটা বিচ্ছু মহিলা।তুমি একটা ছাড়পোকার ছানা।তুমি মলমূত্রের কীট।তোমার সাথে আমি আর থাকবো না।তুমি যদি মিশুপুর সাথে শত্রুতা বন্ধ না করো,আমি আত্মহত্যা করবো। নয়ত নিজেই মিশু পু কে বিবাহ করবো।এবার বলো এসব বন্ধ করবে কি না?

আমি বান্না মিয়ার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে আছি।ওনার হাত পা বাধা।নিজেই ওই মহিলাকে কল দিয়ে ওনার কানে ধরলাম। আরেক হাতে পিস্তল।

পিস্তলের দিকে তাকিয়ে বান্না মিয়া ভয়ে ভয়ে বললেন,তুমি একটা পোকা মহিলা।তুমি ছাড়পোকার বাচ্চা।তুমি হাগুমুতুর উড়ন্ত পোকা।তোমাকে আমি তালাক দেবো।আজকেই তুমি নিজের ভুল স্বীকার করে ফেসবুকে পোস্ট করো।মিশু খালার কাছে মাফ চাও।না হলে আমি তোমাকে তালাক দেবো। আর যদি কখনো এই কাজ করো,আমি নিজেই মিশু আপাকে বিয়ে করবো।

আমি খিকখিক করে হেসে উঠলাম।বেচারি হেব্বি ডায়ালগ দিচ্ছে তো!

তারপর উনি আরো যোগ করলেন,এখন বলো কি করবে? এক্ষুনি পোস্ট করো নইলে আমি বাড়ি ফিরবো না।

কিছুক্ষনের মধ্যেই দারুণ ফল দেখতে পেলাম।বিস্ময়কর!

ওই মহিলা পোস্ট করে এমন সব কথা বলেছেন যা আমি ভাবতেই পারিনি।নিজের ভুল স্বীকার করে মাফ ও চেয়েছে! এই লোকটা তো দারুণ কাজের ডায়ালগ ঝাড়তে পারে!

বললাম, আপনি আমার কথা মত কাজ করবেন। আপনার পিছনে স্পাই লাগানো থাকবে সবসময়। যদি কোনো কেস করেন,গুলি করে ওরা আপনার খুলি ফুটো করে দেবে।

হাসানুল বান্না ভয়ে শুকিয়ে বললেন, আচ্ছা।এবার ছেরে দিন মা,কাইন্দা বাচি।

আমি হাসতে হাসতে ওনাকে ছেড়ে দিলাম।

এরপর আবারো আগের মত ফেসবুকে কুইনবদন্তী শুরু হয়ে গেলো আমার! ইহাহা ইহাহা!

গল্পের বিষয়:
হাস্যরস
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত